নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এক যান্ত্রিক পাগল। যান্ত্রিক তবে যন্ত্র নই। অনুভূতিগুলোতে জং ধরে গেলেও আবেগটা রক্তে মিশে আছে। জীবনের ছোট ছোট দুঃখগুলো আমার কাছে বড় বড় আনন্দ হয়ে ধরা দেয়।

যান্ত্রিক পাগল

কিছু অসমাপ্ত ভাঙা গল্পের পার্শ্বচরিত্র হতে চাই

যান্ত্রিক পাগল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিস্টেম: আমাদের চালায় নাকি আমরা তৈরি করি?

২৩ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৩৭

সেদিন শাহবাগ যাওয়ার জন্য মিরপুর-১ বাসস্টপেজে দাঁড়িয়ে আছি। বেলা তখন প্রায় সাড়ে এগারোটা। হঠাত এক পরিচিত ভদ্র লোকের সাথে দেখা। তাকে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হলাম। যদ্দুর জানি তিনি কখনও নিজের গাড়ি ছাড়া চলাচল করেন না। অবশ্য করতেও হয় না। যখন তার নিজেরই তিন তিনটে গাড়ি।
তিনি আমায় দেখতে পেয়ে খানিকটা এগিয়ে এসে হাসিমুখে জানতে চাইলেন,
"কি খবর? কেমন আছ?"
"জ্বি আঙ্কেল। আলহামদুলিল্লাহ্‌। আপনি এখানে?"
অবাক স্বরেই প্রশ্ন করলাম।
"আরে বল না। সকালে উঠে দেখি অনিক (তার ছেলে) আমার গাড়ি নিয়েই ভার্সিটি চলে গিয়েছে। তার গাড়িটা নাকি একটু ডিস্টার্ব দিচ্ছে। আর তোমার আন্টিও নাকি দুপুরে কোথায় বেরোবে। তার গাড়িটাও পেলাম না। তাই বাসেই যেতে হচ্ছে আজ।"
"ওহ! আচ্ছা। তা বাসায় সবাই কেমন আছে? অনিকের খবর কি? কোন মেডিক্যালে এখন?"
অনিককে আমি আগে থেকেই চিনতাম। একই ব্যাচের আমরা। যদ্দুর জানতাম সে মেডিক্যাল ভর্তির জন্য বেশ তোড়জোড় করেই কোচিং করত। সাথে একজন প্রাইভেট টিচারও ছিল। সবই মেডিক্যাল ভর্তির প্রয়াস।
"না না। মেডিক্যালে না। ও এখন ইউ.আই.ইউ তে আছে।"
"কেন? ওর না মেডিক্যালে পড়ার ইচ্ছা ছিল? হয়নি?"
"আর হওয়া! জানোই তো কোয়েশ্চেন ফাঁস হয়ে সেবার কেমন একটাটা অবস্থা হল। ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট যারা যোগ্য, তারাই চান্স পেল না। অথচ একেকটা গর্দভ ঢাকা মেডিক্যাল এ চান্স পেয়ে বসে আছে।"
বেশ ক্ষোভের সঙ্গেই কথাগুলো বললেন তিনি। আরোও যোগ করলেন,
"এখন তো যেকোনো পরীক্ষার প্রশ্নই দশ-বিশ টাকা দরে লজেন্সের মত দোকানে দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। সব সিস্টেমের দোষ। প্রশাসনের দুর্নীতির মাত্রা চরমে পৌঁছেছে। যদি পারতাম পুরো সিস্টেমটাকেই চেঞ্জ করে দিতাম।"
তিনি হয়ত আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু বাস চলে আসায় বিদেয় নিতে হল আমাকে।
তবে তার শেষ কথাগুলো আমাকে বেশ নাড়া দিয়েছিল।
প্রশাসনের দুর্নীতি ও সিস্টেমের পরিবর্তন।
প্রসঙ্গত বলে রাখা ভাল, তিনি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন ইঞ্জিনিয়ার।
আমি জানি না, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন সরকারি ইঞ্জিনিয়ারের বেতন কত। তবে এটুকু বলতে পারি, বেতন যতই হোক না কেন তা দিয়ে ঢাকার বুকে দু'চারটে ফ্ল্যাট, তিনটে গাড়ি, ছেলে মেয়েদের প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ানো, বিলাসবহুল জীবন কিছুটা চোখে লাগার মতই।
জানি না। হয়ত তিনি সৎ উপায়েই এসব কিছু উপার্জন করেছেন। আমি এ সম্পর্কে কোন মন্তব্যও করতে চাই না।
তবে একটা প্রশ্ন করতে চাই, ন'টা-পাঁচটা ডিউটিতে সাড়ে এগারোটার পর অফিসে যাওয়া কিংবা দুটোর পরপরই অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়াটা কি দুর্নীতি নয়?
তিনিই কিনা সিস্টেম পরিবর্তনের কথা বলেন।
অনেকেই এমন আছেন। ঘুষ কেন নেন প্রশ্ন করা হলে উত্তর দেন,
"এই অল্প ক' টাকা বেতন দিয়ে কি হয়? আমি কি ইচ্ছা করে ঘুষ খাই নাকি? সব সিস্টেমের দোষ।"
কথা হচ্ছে, সিস্টেমটা আসলে কি জিনিস?
সিস্টেম আমাদের চালায়? নাকি আমরা সিস্টেম তৈরি করি?
বদলাতে হবে কোনটা? সিস্টেম?
নাকি নিজেদের?
সবার উত্তর তখন একটাই,
"আরে ভাই থামেন। সবাই না পাল্টালে আমি একাকা পালটে গিয়ে কি করব? আমি একা পাল্টালে সিস্টেম বদলাবে? বদলাবে না।"
এর উত্তর আমি দেই না। জেগে জেগে ঘুমালে আর কিইবা করার থাকে।
আমি বিশ্বাস করি,
"পালটে দেয়া নয়, পালটে যাওয়াটাই মূখ্য।"
নিজেকে বদলাতে চাই সবসময়। হয়ত কোন একদিন সিস্টেমটাও বদলে যাবে।
সে আশাতেই বাঁচি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.