নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এক যান্ত্রিক পাগল। যান্ত্রিক তবে যন্ত্র নই। অনুভূতিগুলোতে জং ধরে গেলেও আবেগটা রক্তে মিশে আছে। জীবনের ছোট ছোট দুঃখগুলো আমার কাছে বড় বড় আনন্দ হয়ে ধরা দেয়।

যান্ত্রিক পাগল

কিছু অসমাপ্ত ভাঙা গল্পের পার্শ্বচরিত্র হতে চাই

যান্ত্রিক পাগল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিদ্যে জাহির

২৬ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৪

বাঙালির একটা চিরায়ত ধর্ম আছে। আমরা সব জায়গায় মজা খুঁজে বেড়াই। কোন সিরিয়াস সিচ্যুয়েশনেও কেউ আমাদের মজা নেয়া আটকে রাখতে পারে না। মনে হয় জাতি হিসেবে এটা আমাদের অলসতাই প্রকাশ করে।
আরো একটা কাজ আমরা খুব ভালো পারি। কিছু না হতেই আমরা নিজেদের বিদ্যে জাহির করতে ভালবাসি।
ধরুন, আপনার জ্বর হয়েছে। মাথাটাও বেশ ধরেছে। আপনার ইঞ্জিনিয়ার বয়ফ্রেন্ডকে আপনার অসুস্থতার কথা জানালেন। সাথে সাথে তিনি ইঞ্জিনিয়ার থেকে ডাক্তার হয়ে যাবেন। সবার আগে যে বাক্যটা উচ্চারণ করবেন তিনি তা হল,
"নাপা এক্সট্রা আছে তো?"
বাহ!! ঘরে ঘরে ডাক্তার।
একজন ইঞ্জিনিয়ার যখন অল্প সময়ের মধ্যে ডাক্তার হয়ে যাচ্ছেন, তাহলে একজন ডাক্তার কত তাড়াতাড়ি আপনার চিকিৎসা করতে পারবেন ভেবেছেন একবার?
নাহ! ভাবার অবশ্য দরকারও নেই।
বেশ কিছুদিন আগে পেপারে পড়েছিলাম। এক লোকের ডান পা ভেঙেছে সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ডাক্তার বললেন অপারেশন করতে হবে। খুব ভালো কথা। রোগী ও তার পরিবার রাজি হলেন। টাকাও জমা করলেন।
অপারেশন থিয়েটারে রোগীকে ঢোকানো হল। যথাযথভাবে তাকে এনেস্থিসিয়া দিয়ে অজ্ঞান করা হল। এরপর অপারেশন করা হল।
কয়েক ঘণ্টা পর যখন রোগীর জ্ঞান ফিরল, সাথে সাথেই আবার অজ্ঞান। না না। এবার আর এনেস্থিসিয়া নয়। রোগী নিজেই অজ্ঞান হয়ে গেলেন।
কারণ?
কারণ তিনি উঠে দেখতে পেলেন ডাক্তার তার ডান পা নয়, বাম পা অপারেশন করে রড জাতীয় (হাড় খুব বাজেভাবে ভাঙলে লাগানো হয়) কিছু লাগিয়ে দিয়েছেন।
চিন্তা করুন একবার। কি অবস্থা।
যাই হোক, ঘটনাটি একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ঘটেছিল। কোন সরকারি হাসপাতালে নয়।
দুঃখের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি, এ ঘটনাটি যিনিই শুনেছেন প্রথমে একচোট হেসেছেন। এমনকি আমিও। কি করব? বাঙালি রক্ত বইছে যে শরীরে। সবকিছুতেই তাই মজা খুঁজে পাই।
মজা কি শুধু পত্রিকার পাতায়? রাস্তায়, হাটে-ঘাটে সব জায়গায়।
ফুট ওভারব্রিজের নিচে পান্ডার মালিশ বিক্রি হচ্ছে। দেখবেন, বেশ ভীড় করে মানুষজন গোল করে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছেন। এদের হাতে সময় একটু বেশি। যাদের আবার একটু তাড়া আছে, তারা রাস্তা দিয়ে যাবার সময় গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের মধ্যে কাউকে জিজ্ঞেস করবেন, "ভাই কি হইছে?"
মানে, কেউই মজা নেয়া হতে বিরত থাকবেন না। কম আর বেশি। মজা আমাদের নিতেই হবে। নয়ত মানসিক শান্তি মিলবে না।
আপনি রাস্তা দিয়ে হাটার সময় বেখেয়ালি মনে কোথাও লেগে পরে গেছেন। কোথাও হয়ত হাত পা ছড়েও গিয়েছে আপনার। কই কেউ এগিয়ে এসে আপনাকে সাহায্য করবেন, তা না, বরং সবাই আপনার দিকে তাকিয়ে থেকে একটু তামাশা নিবে। কেউবা মুচকি হাসবেন। কেউ কেউ তো আবার বলেই উঠবেন, "ওই মিয়া!! এত বড় হইছেন। দেইখ্যা চলতে পারেন না?"
কেন রে ভাই? বড় হয়ে গেলে কি "উসঠা" খাওয়া যায় না?
এগুলো হচ্ছে বাঙালির মজা নেয়ার উদাহরণ।
আমরা যদি এই মজা নেয়াটা বন্ধ করে সিচ্যুয়েশন অনুযায়ী নিজেদেরকে অন্যের সহযোগীতায় উৎসর্গ করতাম তবে হয়ত সমাজের চেহারাটা বদলে যেত। লোকে কি ভাববে এই চিন্তা বাদ দিয়ে যদি নিজেদের অবস্থানে থেকে যতটুকু সম্ভব নিজেদের কর্তব্য ঠিকভাবে পালন করতাম তবে দেশটাকে আরো বহুদূর নিয়ে যেতে পারতাম।
এত কিছুর পরও আমি আশাবাদী। কারণ এই অলস, কথায় কথায় মজা নেয়া জাতিরই রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। আছে ৫২, আছে ৭১। আছেন প্রীতিলতা, আছেন সূর্যসেন, আছেন ভাষানী। আছেন শেরেবাংলা, আছেন সোহরাওয়ার্দী। আমরাই পারব।
.....
.....
.....
যাই হোক, আমি যে এতক্ষণ গ্যাঁজানো দিলাম, এটাও কিন্তু একটা উদাহরণ। এটা হল "বিদ্যে জাহির করা"র উদাহরণ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:৪২

রুবু রুবু বলেছেন: কেন রে ভাই? বড় হয়ে গেলে কি "উসঠা" খাওয়া যায় না?- জটিল বলছেন ভাই :P

২| ২৬ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:৪১

ক্লে ডল বলেছেন: বিদ্যা অর্জন করিলাম! :)

মন্তব্য করিয়া মজা নিলাম! =p~

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.