![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আপনি একটা মানুষকে জিজ্ঞেস করলেন “আপনি কে?”
প্রথমে মানুষটা আপনাকে তাঁর নিজের নাম জানাবেন। নাম থেকে আপনি অনেক ক্ষেত্রে মানুষটার জাত, ধর্ম, এবং অন্যান্য পারিবারিক তথ্য আন্দাজ করে নিতে পারবেন। অথচ একটা মানুষের নাম শুধু একটা মোড়ক আর সাধারণত সেই মোড়ক মনোনয়নে সেই মানুষের কোনো হাত থাকেনা কারণ, পৃথিবীতে খুব কম মানুষই বাবা-মাযের দেওয়া নাম পরিবর্তন করেন। ধর্মের ব্যাপারটাও পূর্বপুরুষ এবং পরিবেশের উপর নির্ভর করে। আমার পরিচিত কয়েকজন তাঁদের পূর্বপুরুষদের ধর্ম ত্যাগ করেছেন ঠিকই কিন্তু ত্যাগ করে অন্য ধর্ম অবলম্বন করেছেন খুব কম মানুষই। জন্মের ধর্ম এবং জন্মের নাগরিকত্বের সঙ্গে মানুষের বিশেষ টান থাকে।
আপনি আবার প্রশ্ন করলেন, “আপনি কে?”
মানুষটা এবার আপনাকে তাঁর পেশা জানাবেন। তিনি হয়ত গালভরা হাসি হেসে তাঁর সংস্থার নাম এবং সংস্থার দেওয়া পদ জানাবেন। শিক্ষিত মানুষ হলে তাঁর পঠন-পাঠনের বিষয় জানাতেও পারেন (বিশেষ করে যদি বিজ্ঞান, প্রকৌশল, ম্যানেজমেন্ট, বা স্বাস্থ্যবিদ্যা হয়)। ওয়ালেট থেকে বিজনেস কার্ড বের করে আপনাকেও দিতে পারেন। আপনি কিছুখন দেখে মানুষটার সম্পর্কে মনে একটা ধারণা সৃষ্টি করবেন।
মানুষটার কাছে বিশেষ গর্বের বিষয় হ’লে আপনাকে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও শোনাতে পারেন, যেখান থেকে তাঁর স্নাতক প্রাপ্তি। অ্যাসেম্ব্লি লাইন-এ তিনিও বেরিয়েছিলেন বলে ভাত টিপে সেদ্ধ হয়েছে কিনা দেখার মতন তিনি “ভাল ছাত্র” এবং মানুষটা “ভাল”, “বুদ্ধিমান”, এবং “চরিত্রবান” আপনি মেনে নেবেন, সেটা হয়ত একটা উদ্দেশ্য। আরো মোড়ক স্থাপন করা যেতে পারে।
নিজের ঢাক নিজেই পিটিয়ে হয়ত তিনি তাঁর অর্থনৈতিক সচ্ছলতার কথা জানাতে চাইবেন আপনাকে। আজকাল কত সম্ভাব্য পাত্রই পৃথিবীকে জানাতে চান তাঁদের নিজস্ব গৃহে কত বিএইচকে, তাঁদের বেতন কত ল্যাখস পার অ্যানাম উইথ পার্ক্স। আর যদি মানুষটার চিত্র থাকে আপনার সামনে তো আপনি গোয়েন্দা ফেলু মিত্তিরের মতন পোষাক দেখে মানুষটার সম্পর্কে নিখুঁত ধারণা করেও নিতে পারবেন। কুবেরের মতন ধনবান… ব্যাস ব্যাস! সহজ সূত্র। আর কী কোনো পরিচয়ের প্রয়োজন আছে এই উত্তর-মার্ক্স পুঁজিদেবতার যুগে?
আপনি হয়ত তাও হাল ছাড়বেন না। আবার জানতে চাইবেন, “আপনার পরিচয় কী?”
এবার মানুষটা কিন্তু একটু বিরক্ত হবেন। বলবেন, “নাম,ধাম, পিতৃপরিচয়, স্নাতকের বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, সংস্থার নাম, পদ, বেতন, বউ-বাচ্চার সংখ্যা, সবই তো দিলেন আপনাকে!”
আর মুখে না বললেও একটা স্পষ্ট ইঙ্গিত থাকবে –“এসবের বাইরে একটা মানুষের কোনো পরিচয় থাকতে পারে না।”
©somewhere in net ltd.