নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দকবিতা : শব্দেই দৃশ্য, শব্দেই অনুভূতি [email protected]

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই

দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের জন্য সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা কেমন হতে পারে? - পর্ব-৩

০৩ রা জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:৪০


প্রথম পর্বের লিংক। বাংলাদেশের জন্য সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা কেমন হতে পারে - পর্ব-১

দ্বিতীয় পর্বের লিংক। বাংলাদেশের জন্য সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা কেমন হতে পারে? - পর্ব-২


পিআর বা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কীভাবে নির্বাচিত হবেন?

পিআর পদ্ধতিতে সচরাচর দলকে ভোট দেয়া হয়, কোনো ব্যক্তি বা মনোনীত প্রার্থীকে নয়।

আচ্ছা, শুরুতেই একটা কথা বলে নিই। সংস্কার কমিশন দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইন সভার সুপারিশ করেছে। নিম্নকক্ষ, যা বিদ্যমান ৩০০ আসন বিশিষ্ট সংসদের মতো হবে, তার নির্বাচন পদ্ধতির ব্যাপারে কোনো সুপারিশ নেই, অর্থাৎ, নিম্নকক্ষের সাংসদগণ বর্তমানে প্রচলিত ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ পদ্ধতিতেই নির্বাচিত হবেন। তবে, উচ্চকক্ষের জন্য ১০০ জন সাংসদের সুপারিশ করা হয়েছে, যাদের নির্বাচনের জন্য পি-আর বা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। আজ দুপুরে (০২ জুলাই ২০২৫) গাড়ি চালানোর সময় এফএম ব্যান্ডে (যেখানে ক্রিকেটের কমেন্ট্রি হয়) সংস্কার কমিশনের লাইভ ডিসকাশন শুনছিলাম। সেখানে জনৈক বক্তা জনাব বদিউল আলমকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিলেন তার একটা ভুলের ব্যাপারে- তিনি নাকি মিডিয়ায় একটা বক্তব্য দিয়েছিলেন যে কয়েকটা রাজনৈতিক দল ব্যতীত সবগুলো দলই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের ব্যাপারে একমত হয়েছে, তিনি একটা কথা ক্লিয়ার করেন নি যে, এটা শুধুমাত্র উচ্চকক্ষের সাংসদ নির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য; বিপত্তি ঘটেছে এভাবে যে, মিডিয়ায় বিষয়টা এমনভাবে প্রচারিত হয়েছে যে, জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির ব্যাপারে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। বদিউল আলম সাহেব তার জবাবে বিষয়টা স্বীকার করেছেন, এবং এও বলেছেন, নিম্নকক্ষের নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয় নি এখনো।

যাই হোক, নিম্নকক্ষ বা উচ্চকক্ষ, যে-কক্ষই হোক না কেন, রাজনৈতিক দলগুলো তাতে অংশগ্রহণ করবে দলীয়ভাবে। আইন যেভাবে নির্ধারণ করে, সাংসদ হবার জন্য দলকে ন্যূনতম কত ভাগ ভোট পেতে হবে, সেভাবেই দলগুলো তাদের তাদের প্রায়োরিটি লিস্ট অনুযায়ী দলীয় সাংসদ নির্বাচন করবে। এ ব্যাপারে পর্ব-২-এ আলোচনা করেছি। এখন কথা হলো, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেলায় নিয়মটা কেমন হবে?

প্রথম উত্তর হলো, সচরাচর পিআর পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকে না।

কিন্তু দেশ যদি স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকেও অংশগ্রহণের বিধান রাখে, সেটা কেমন হবে?

এটা একটা অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া হবে। যারা পড়ছেন, তাদের মাথায় জট লেগে যেতে পারে, তাই প্লিজ একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

প্রথমেই আইন করতে হবে, দলকে ন্যূনতম কতভাগ ভোট পেতে হবে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী দলকে ন্যূনতম ১% ভোট পেতে হবে। যদি নিম্নকক্ষে ৩০০ আসন থাকে, কোনো দল ১% ভোট পেলে তাদের আসন সংখ্যা হবে ৩টি। এখান থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর ন্যূনতম প্রাপ্য ভোটের হার বের করতে হবে। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ১% ভোট পেলে (বাস্তবে যা হয়ত সম্ভব হবে না), তাহলে সংসদে তারও প্রাপ্য আসন হবে ৩। অথচ তিনি মাত্র একজন।। এজন্য ১%-কে ৩ দিয়ে ভাগ করুন। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে তাহলে ন্যূনতম ০.৩৪% ভোট পেতে হবে।

আরেকটা বিষয় লক্ষ করুন, যদি আসন প্রাপ্তির জন্য কোনো দলকে ন্যূনতম ১% ভোট পেতে হয়, তাহলে সংসদে কোনো দলের কমপক্ষে ৩ জন সাংসদ থাকবেন। অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে একজন ব্যক্তি ‘একজন’ সাংসদ হিসাবেই নির্বাচিত হচ্ছেন, এবং বর্তমান পদ্ধতিতে কোনো দল থেকে একজন মাত্র প্রার্থীও সাংসদ নির্বাচিত হতে পারেন। কোনো দল থেকে যাতে অন্তত একজন সাংসদও নির্বাচিত হতে পারেন, সেজন্য দলের জন্যও ন্যূনতম প্রাপ্য ভোটের সংখ্যা ০.৩৪% করা যেতে পারে।

কিন্তু যদি সিদ্ধন্ত এটাই হয় যে, স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্যও ১% প্রযোজ্য হবে, তখন আরেকটা জটিলতা দেখা যাবে। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভাগে বাকি দুটো আসনের বণ্টন কীভাবে হবে? এটাও আগেভাগেই আইন বা পলিসি করে নিতে হবে। ল’জ বা বাই ল’জ খেলা শুরুর আগে তৈরি করতে হয়, খেলা শুরু বা শেষ হবার পরে নয়। সম্ভাব্য একটা সমাধান হলো, সকল স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাড়তি আসনগুলো সংখ্যানুপাতিক হারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে। আরেকটা সমাধান আছে। সংস্কার কমিশন উচ্চকক্ষের জন্য সুপারিশ করেছে যে, ১০০ আসনের ৫০% হবে দেশের অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ যেমন, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, প্রমুখদের মধ্য হতে। নিম্নকক্ষের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাকি আসন গুলোতেও অনুরূপ অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাংসদ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। কিন্তু এটা কার পছন্দে হবে? নির্বাচিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর পছন্দে হতে পারে। আবার, এ আসনগুলো আনুপাতিক হারে রাজনৈতিক দলের মধ্যে ভাগ হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোও এটা করতে পারে। আর কোনো সমাধান? হ্যাঁ, প্লিজ স্ক্র্যাচ ইয়োর ব্রেইন, আমি আপাতত ক্ষান্ত দিলাম। হাহাহা।

উপরে তো আমরা ন্যূনতম ১% ভোট প্রাপ্তির কথা বললাম। যদি কমিশন এবং দলগুলো সিদ্ধান্ত নেয় যে, ন্যূনতম ৫% ভোট পেতে হবে, তখন স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য প্রাপ্য ভোটের সংখ্যা কত হতে হবে? এখানে অংক জটিল করে লাভ নেই। স্বতন্ত্র পার্টির জন্য সোজা-সাপটা ১% করে দিলেই হয় (যদিও ০.৩৪% হলেই সম্ভবত ক্রাইটেরিয়া পূর্ণ হয়। কারণ, ৫%-এ কোনো দল ন্যূনতম ১৫টা আসন পাবে। ৫%-কে ১৫ দিয়ে ভাগ করলে ০.৩৪% হয়)।

সকল জল্পনা-কল্পনা, টাগ-অফ-ওয়ারের পর যদি উভয় কক্ষের জন্যই পিআর পদ্ধতি চালু হয়, এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরও বিধান রাখা হয়, তাহলে নিম্নকক্ষ এবং উচ্চকক্ষ – উভয় কক্ষের জন্যই আলাদা আলাদা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। উভয় কক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিধান রাখা একটা জটিলতাও সৃষ্টি করতে পারে, সেটাও মাথায় রাখা জরুরি।

এবার আসা যাক, স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন এলাকা থেকে মনোনয়ন নিবেন সে ব্যাপারে। পৃথিবীতে বিভিন্ন পদ্ধতি চালু আছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী তার সংসদীয় এলাকা থেকে দাঁড়াতে পারেন, কিংবা সারা দেশ থেকেও কেন্দ্রীয়ভাবে দাঁড়াতে পারেন। তবে উভয় পদ্ধতিতেই ব্যালট পেপার তৈরিতে নির্বাচন কমিশনকে অনেক বেগ পেতে হবে। ২০০৮ সালে ৪৮৬ এবং ২০২৪ সালে ৪৩৭জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন (মাঝের নির্বাচনে কম ছিল)। ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ ৫১টা রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। পিআর পদ্ধতিতে একটা ব্যালটের মধ্যে সবগুলো দলের প্রতীক, প্লাস এত শত স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতীক একসাথে বসানো অবাস্তব চেষ্টা হবে।এজন্য প্রতি সংসদীয় এলাকার জন্য আলাদা ব্যালট থাকবে, সব ব্যালটে সব রাজনৈতিক দল, প্লাস ঐ সংসদীয় এলাকার স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতীক ছাপা থাকবে। অবশ্য এভাবে এলাকা ভিত্তিক স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে প্রাথীর লোকসান হবে। কারণ, নিজ এলাকা ছাড়া দেশের অন্য জায়গার ভোট পাবেন না তিনি। অথচ একই ব্যালট সারা বাংলাদেশে ব্যবহার করা হলে তিনি সারাদেশের ভোট পেতে পারতেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংখ্যা নিতান্ত কম হলে অবশ্য একই ব্যালট পেপারেই নির্বাচন করা যেতে পারে।

উপরে দলভিত্তিক পিআর পদ্ধতি আলোচনা করেছি। যদি ব্যক্তি-ভিত্তিক হয়, তাহলে সেটা হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মতো। অর্থাৎ, সারাদেশ বর্তমান নিয়মেই ব্যালট পেপার ছাপা হবে, নির্বাচনও হবে বর্তমান নিয়মে। কিন্তু সাংসদ নির্বাচিত হবেন কেন্দ্রীয়ভাবে সংখ্যানুপাতিক হারে এবং দলীয় প্রায়োরিটি লিস্ট অনুযায়ী।

কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

খলিল মাহ্‌মুদ
০২ জুলাই ২০২৫

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুলাই, ২০২৫ ভোর ৬:৫৭

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আপার হাউসে হতে পারে। লোয়ার হাউস নিয়ে কোনো আলোচনা নাই।

২| ০৩ রা জুলাই, ২০২৫ সকাল ৯:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: নির্বাচন নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই।
আমি ভোট দিতে যাব না।

৩| ০৩ রা জুলাই, ২০২৫ দুপুর ২:১১

আধুনিক চিন্তাবিদ বলেছেন: আমার মতে শিক্ষিত, সভ্য, উন্নত জাতির জন্য গণতন্ত্র ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের দেশ এই তিনটি ক্যাটেগরির কোনটির মধ্যেই পড়ে না। তাই আমাদের জন্য গনতন্ত্র ঠিক নেই। আমাদের জন্য দরকার একনায়কতন্ত্র। এর মাধ্যমেই আমরা আস্তে আস্তে যখন উপরের ৩ টি ক্যাটেগরি অর্জন করতে পারবো, তখন আমাদের জন্য গনতন্ত্র দরকার হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.