![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উঠোনে বসে দাঁত মাঁজছিল মিজান । বেলা অনেকটা হয়ে গেছে । পৌষ মাসে সকালে রোদ দেখলেই রোদে বসে থাকতে ইচ্ছে করে । বিড়ালটাও রোদ পোহাচ্ছে । সাথে দুইটা বাচ্চা । বাচ্চাগুলার বয়স তিনদিন হল আজ । কাল ছিল একেবারে নিস্তেজ । ওদের অবস্থা দেখে পাশের বাড়ির হালিমা ভাবির থেকে এক পোয়া দুধ নিয়ে এসেছিল । আর আজ দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিয়েছে ।
বাচ্চাগুলার কথা ভাবতে ভাবতে উঠে কল পাড়ের দিকে যেতে থাকল সে । আজ কোন কাজ নাই ।ওস্তাদের বাড়ির দিকে যেতে হবে । তার কাছে কিছু টাকা পাওয়া যাবে ।
মিজানের ওস্তাদের নাম হারূণ । তাকে সবাই হারু মিস্ত্রি বলে ডাকে । নামকরা মিস্ত্রি । মাঝে মধ্যে বাহির থেকেও লোক আসে । পনের বিশ দিনের জন্য বের হয়ে যায় । মিজানকেও সাথে নেয় । মিজান হল তার শিষ্য । লোকটাকে খুব পছন্দ করে সে । তার মনে হয় দশ গ্রামের মইধ্যে তার মত জ্ঞানি লোক আর নেই ।
কাজ করতে করতে হারুণ বলে ,'' বুঝলা মিজান, সুখ হইল গিয়া এক আজব জিনিস । সুখ থাকে দিলের মইধ্যে । সারা দুনিয়া ঘুরিবার পরেও সুখের দেখা পাইবা না যদি দিলের মইধ্যে না থাকে । ''
মিজান সায় দেয় । 'ঠিকি কইছেন অস্তাদ ।''
'' সুখ আরেক্কখান জায়গায় থাকে । কও তো দেখি কোনহানে?'' মিজানের দিকে তাকিয়ে বলে ।
মিজান মাথা নাড়ে । ''পারলা নাতো, এই যে ছাদখান বানাচ্ছি , এর নিচে । ঘরে শান্তি না থাকলে দুনিয়ায়ও অশান্তি ।'' হাত নেড়ে বলতে থাকে হারুন ।
ঘরে ঢুকে মাকে খাবার দিতে বলল মিজান ।
খাবার দিতে দিতে তার মা জিজ্ঞ্যেস করে ," বউকে আনতে যাবি না বাবা?"
"হু । দেখি সইন্ধার দিকে যামু নে একবার ।",ভাত খেতে খেতে বলে মিজান । তার মা এখন একের পএর এক প্রশ্ন করেই যাবেন । সব যে অদরকারি তাও নয় । কিন্তু খেতে বসে কথা বলতে ভালো লাগে না তার ।
''দুইদিন পর পর বউয়ের সাথে কাইজ্যা করস ক্যান? শরম করে না । সোনার মত মুখ দেইখ্যা বিয়া দিলাম , এরকম বউ কয়জনে পায়'',ছলেমন বলেই চলেন ।''দুই একদিনের মইধ্যে বউরে নিয়া আসিস ।''
''হু ''
''ঢাকা যাবি নাকি ?''
''হু''
'' বাড়িতেই কাম কাজ কর । ঢাকা যাওনের দরকারটা কি ।''
মিস্ত্রির কাম করতে আর ভালা লাগে না মা । ঢাকায় যায়া রিস্কা চালামু । অভাব আর ভাল লাগে না ।'' এই কথা বলে উঠে পড়ে সে । বিড়ালের বাচ্চাগুলোকে খেতে দিতে বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে ।
মিজানের স্ত্রীর নাম আশা । বছর দুয়েক আগে বিয়ে করেছে । তার মায়ের পছন্দ করা মেয়ে । ভাল মেয়ে । মাঝেমধ্যে ঝগড়াঝাটি হয় । বউ বাপের বাড়ি চলে যায় । দুইদিন পরে মিজান গিয়ে নিয়ে আসে । খুব মারাত্নক কিছু না । মাঝে মধ্যে অভাব মাথাচারা দেয় । তাই আর কি । এবারের ঝগড়া ঢাকা যাওয়া নিয়ে । মিজান ঢাকা যেতে চায় । বউ তা দিবে না । ঢাকা যাওয়ার কথা বলতেই ঝাঁজিয়ে উঠল ।
' যেয় দ্যাশে পারে না সেয় বিদেশ যা্য়য়াও পারে না। আলসে মানষের ভাত নাই '।
'আলসের কিছু নাই । আগে ঢাকা যায়া নেই তারপরে দেখবি ।'' মিজানের মেজাজ খারাপ হয়ে যায় । তারপর এক কথায় দুই কথায় ঘর মাথায় উঠে । বিকালে বউ বাপের বাড়ি চলে যায় ।
হাটতে হাটতে মজিদের দোকানের সামনে চলে আসে সে । মজিদ তার ছোটবেলার বন্ধু । একসাথে খেলাধুলা করেই সে বড় হয়েছে । ক্লাস ফোরে উঠে একদিন হাওয়া হয়ে গেল । ফিরল সাত বছর পর । কোথায় ছিল, কি করল কিছুই পরিস্কার করে বলে নাই কাউইকে ।
বাড়িতে এসেই দোকান শুরু করেছে । লোকে বলে , মজিদ নাকি অনেক টাকা পাইছে । মজিদকে জিজ্ঞেস কলে কিছুই বলে না ।
মজিদকে চা দিতে বলে মিজান । ''আজ কামে যাইস নাই?'' চা দিতে দিতে জিজ্ঞেস করে মজিদ ।
''না । শরীল্ডা ভালা ঠেক্তেছে না । তোর কি অবস্থা ?''
''আমাগোর আর কি অবস্থা । খবর শুঞ্ছস ?
''কি খবর ?''
'হারুন মিয়ার বউ নাকি পলাইছে ।'
'' কি!'' চোখ কপালে ওঠে মিজানের । ''কার সাথে?''
'' উত্তরপাড়ার বাসেদ । তগোর সাথেই তো কাজ করত । কি ভালা মানুষ্টার ঘরে কি নষ্টা মাগীটাই না আছিল।'', চা দিতে দিতে বলে মজিদ ।
মিজানের কান ভারী হয়ে ওঠে । তারাতারি চা শেষ করে উঠে দাঁড়ায় ।
হারূন মিয়া বারান্দায় বসে জাল বুনছে । মুখে কোন অস্বস্তি নাই ।
ওর দিকে তাকিয়ে বলে,'' শরীর ভালা? কয়েকদিন থেকে দেখা সাক্ষাৎই নাই ।''
'' জ্বর আর কি,অস্তাদ ।'' অস্বস্তি নিয়ে তাকিয়ে থাকে সে । বুঝতে পেরে হারুন মিয়াই বলে ওঠে,'' বুঝবার পাচ্ছি কি জানবার চাচ্ছ। মাইয়া মানুষ হইল গিয়া পক্ষীর মত । পোষ মানাইলে পোষ মানে । বাইন্দা থুইলে ফুড়ুৎ কইরা উইরা যায় ।''
মিজান কথাগুলো শুনতে চাচ্ছে না ।
সে বলে ওঠে ,'' ঢাকা যামু ওস্তাদ ।
'কোনদিন যাইবা?'
'কাইল ।'
'যাইবার মন চাইলে যাও। বাইন্ধা তো রাখি নাই । কাইল বিয়ানবেলা টাকা নিয়া যাইও'
হা্রূণ বলতেই থাকে '' তয় বুঝলা মিয়া, ঘরের ভিত্রে , দিলের ভিত্রে সব সুখ । এর মধ্যে ফাঁক- ফোকর চলে না । অভাব দূর কইরবার যায়া সুখপাখিরে খেদাইয়া দিয়ো না ।
মিজান বের হয়ে আসে । তার মাথা ঝিমঝিম করে । সে হাঁটতে থাকে । তার অভাব আছে । দুঃখ-কষ্ট আছে । দিন আনে দিন খায় । মাঝে মধ্যে বাড়িতে ঝগড়া লাগে,অশান্তি হয় । কিন্তু তার মধ্যেও একটা শান্তি আছে । এই শান্তি থাকে দিলের মধ্যে । অভাব নাই কার? যাদের টাকাপয়সার অভাব নাই ,তাদের অন্য অভাব আছে । আর টাকাপয়সার অভাবের চাইতে অন্য অভাবের অশান্তিটা অনেক বেশী । ওই অশান্তি থাকে মনের মাঝে । সুখ-শান্তি বড় জিনিসের মাঝে থাকে না । ছোট ছোট জিনিসেই সুখশান্তির প্রকাশ পায় ।
মিজান শ্বশুরবাড়ির দিকে হাটতে থাকে । বিড়ালের বাচ্চা হওয়ার খবরটা তার বউকে দেয়া দরকার ।
((( একটা ছোটগল্প লেখার চেষ্টা । জানি কিছুই হয় নাই । তবু যারা সময় নষ্ট করে পড়েছেন তারা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি)))
২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩৬
অচিনপুরের পথিক বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৭
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সূখ হইল মনে ভিত্রে!! কথাটা খাটি!
+++