![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ ঐতিহাসিক ২৯ আগস্ট। ৪২ বছর আগে ১৯৭৬ সালের এই দিনে ইন্তেকাল করেছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। মহান আল্লাহর কাছে তার জন্য সর্বোচ্চ পুরস্কার আশা করছি।
বাঙ্গালী বা বাংলাদেশীদের কাছে নজরুল ইসলামকে তার সাহিত্যের মাধ্যমে পরিচয় করিয়ে দিতে যাওয়া অনেকটা পুনরাবৃত্তি বলে মনে হলেও তা একঘেয়েমি বলে মনে হবে না হয়ত অনেকের কাছেই।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব বা কুরবানির ঈদ। (এ উপলক্ষে দেরিতে হলেও সবাইকে জানাচ্ছি ঈদ মুবাররক!) এই ঈদকে নিয়ে বাঙ্গালী কবিদের অনেকেই অনেক লেখালেখি করেছেন। ঈদের চাঁদ নিয়ে কবিতা লিখেছেন হরগোপাল বিশ্বাসের মত কবিও। কিন্তু নানা যুগের বাঙ্গালী কবিদের ঈদ সংক্রান্ত কবিতা পড়তে গিয়ে মনে হল ঈদ বিষয়ক কবিতা লেখার ক্ষেত্রেও সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা ও শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা কবি নজরুলেরই প্রাপ্য।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নজরুলের রচিত ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’ শীর্ষক গানটি যেন বাংলা ভাষায় এই ঈদের শ্রেষ্ঠ গান হয়েই থাকবে শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন্ আসমানি তাগিদ।।
তোর সোনা–দানা বালাখানা সব রাহেলিল্লাহ্।
দে জাকাত মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিদ্।।
আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদগাহে।
যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ।।
আজ ভুলে যা তোর দোস্ত ও দুশমন হাত মিলাও হাতে।
তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ।।
ঢাল হৃদয়ের তোর তশ্তরিতে শির্নি তৌহিদের।
তোর দাওয়াত কবুল করবে হজরত হয় মনে উম্মীদ।।
বিশ্বের সব মানুষ ও মানবতার সর্বাঙ্গীন উন্নতি আর শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তি ছিল কবি নজরুলের আরাধ্য। তার সেই চেতনা ফুটে উঠেছে ঈদ সংক্রান্ত কবিতাগুলোতে। ঈদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ত্যাগের মহিমা। আর এ বিষয়টি তুলে ধরেছেন নজরুল তার ঈদ মুবারক কবিতার শেষাংশে এভাবে:
‘বিলিয়ে দেওয়ার আজিকে ঈদ।
আমার দানের অনুরাগে-রাঙা ঈদগা’ রে!
সকলের হাতে দিয়ে দিয়ে আজ আপনারে—
দেহ নয়, দিল হবে শহীদ।
এখানে তার ওই কবিতাটির পুরো অংশ তুলে ধরছি:
ঈদ মুবারক
শত যোজনের কত মরুভূমি পারায়ে গো,
কত বালু চরে কত আঁখি-ধারা ঝরায়ে গো,
বরষের পরে আসিল ঈদ!
ভূখারীর দ্বারে সওগাত বয়ে রিজওয়ানের,
কন্টক-বনে আশ্বাস এনে গুল-বাগের,
সাকীরে ”জা’মের” দিলে তাগিদ!
খুশীর পাপিয়া পিউ পিউ গাহে দিগ্বিদিক,
বধু-জাগে আজ নিশীথ-বাসরে নির্নিমিখ্।
কোথা ফুলদানী, কাঁদিছে ফুল!
সুদূর প্রবাসে ঘুম নাহি আসে কার সখার,
মনে পড়ে শুধু সোঁদা সোঁদা বাস এলো খোঁপার,
আকুল কবরী উলঝলুল্!!
ওগো কা’ল সাঁঝে দ্বিতীয়া চাঁদের ইশারা কোন্
মুজদা এনেছে, সুখে ডগমগ মুকুলী মন!
আশাবরী-সুরে ঝুরে সানাই।
আতর সুবাসে কাতর হ’ল গো পাথর-দিল্,
দিলে দিলে আজ বন্ধকী দেনা—-নাই দলীল,
কবুলিয়াতের নাই বালাই।।
আজিকে এজিদে হাসেনে হোসেনে গলাগলি,
দোজখে বেহেশ্তে ফুলে ও আগুনে ঢলাঢলি,
শিরীঁ ফরহাদে জড়াজড়ি।
সাপিনীর মত বেঁধেছে লায়লি কায়েসে গো,
বাহুর বন্ধে চোখ বূঁজে বঁধু আয়েসে গো।
গালে গালে চুমু গড়াগড়ি।।
দাউ দাউ জ্বলে আজি স্ফুর্তির জাহান্নাম
শয়তান আজ বেহেশ্তে বিলায় শরাব-জাম,
দুশমন দোস্ত্ এক-জামাত!
আজি আরাফাত্-ময়দান পাতা গাঁয়ে গাঁয়ে,
কোলাকুলি করে বাদশা-ফকীরে ভায়ে ভায়ে,
কা’বা ধ’রে নাচে ”লাত্-মানাত”।।
আজি ইসলামী-ডঙ্কা গরজে ভরি’ জাহান,
নাই বড় ছোট–সকল মানুষ এক সমান,
রাজা প্রজা নয় কারো কেহ।
কে আমীর তুমি নওয়াব বাদশা বালাখানায়?
সকল কালের কলঙ্ক তুমি: জাগালে হায়
ইসলামে তুমি সন্দেহ।।
ইসলাম বলে, সকলের তরে মোরা সবাই,
সুখ-দুখ সম-ভাগ ক’রে নেব সকলে ভাই,
নাই অধিকার সঞ্চয়ের।
কারো অখিঁ-জলে কারো ঝাড়ে কিরে জ্বলিবেদীপ?
দু’জনার হবে বুলন্দ-নসিব, লাখে লাখে হবে বদনসিব?
এ নহে বিধান ইসলামের।।
ঈদ্-অল-ফিতর আনিয়াছে তাই নব বিধান,
ওগো সঞ্চয়ী, উদ্বৃত্ত যা করিবে দান,
ক্ষুধার অন্ন হোক তোমার!
ভোগের পিয়ালা উপচায়ে পড়ে তব হাতে,
তৃষ্ণাতুরের হিসসা আছে ও পিয়ালাতে,
দিয়া ভোগ কর, বীর, দেদারঅঅ
বুক খালি ক’রে আপনারে আজ দাও জাকাত,
ক’রো না হিসাবী, আজি হিসাবের অঙ্কপাত!
একদিন কর ভূল হিসাব
দিলে দিলে আজ খুনসুড়ি করে দিললগী,
আজিকে ছায়েলা-লায়েলা-চুমায় লাল যোগী!
জামশেদ-বেচে চায় শরাব।।
পথে পথে আজ হাঁকিব, বন্ধু,
ঈদ-মোবারক! আসসালাম!
ঠোঁটে ঠোঁটে আজ বিলাব শিরনী ফুল-কালাম!
বিলিয়ে দেওয়ার আজিকে ঈদ।
আমার দানের অনুরাগে-রাঙা ঈদগা’ রে!
সকলের হাতে দিয়ে দিয়ে আজ আপনারে—
দেহ নয়, দিল হবে শহীদ।।
কবি নজরুলের লেখা শহীদী ঈদ কবিতাটি তার অন্যতম সেরা কবিতা। এখানে তার ওই কবিতাটির পুরো অংশ তুলে ধরছি:
১
শহীদের ঈদ এসেছে আজ
শিরোপরি খুন-লোহিত তাজ,
আল্লাহর রাহে চাহে সে ভিখ্:
জিয়ারার চেয়ে পিয়ারা যে
আল্লার রাহে তাহারে দে,
চাহি না ফাঁকির মণিমানিক।
২
চাহি না ক’ গাভী দুম্বা উট,
কতটুকু দান? ও দান ঝুট।
চাই কোরবানী, চাই না দান।
রাখিতে ইজ্জত্ ইসলামের
শির চাই তোর, তোর ছেলের,
দেবে কি? কে আছ মুসলমান?
৩
ওরে ফাঁকিবাজ, ফেরেব-বাজ,
আপনারে আর দিস্নে লাজ,-
গরু ঘুষ দিয়ে চাস্ সওয়াব?
যদিই রে তুই গরুর সাথ
পার হয়ে যাস পুল্সেরাত,
কি দিবি মোহাম্মদে জওয়াব।
৪
শুধাবেন যবে-ওরে কাফের,
কি করেছ তুমি ইসলামের?
ইসলামে দিয়ে জাহান্নম
আপনি এসেছ বেহেশ্ত্ ’পর-
পুণ্য-পিশাচ! স্বার্থপর!
দেখাস্নে মুখ, লাগে শরম!
৫
গরুরে করিলে সেরাত পার,
সন্তানে দিলে নরক-নার!
মায়া-দোষে ছেলে গেল দোজখ।
কোরবানী দিলি গরু-ছাগল,
তাদেরই জীবন হ’ল সফল
পেয়েছে তাহারা বেহেশ্ত্-লোক!
৬
শুধু আপনারে বাঁচায় যে,
মুসলিম নহে, ভন্ড সে!
ইসলাম বলে-বাঁচ সবাই!
দাও কোরবানী জান্ ও মাল,
বেহেশ্ত্ তোমার কর হালাল।
স্বার্থপরের বেহেশ্ত্ নাই।
৭
ইসলামে তুমি দিয়ে কবর
মুসলিম ব’লে কর ফখর!
মোনাফেক তুমি সেরা বে-দীন!
ইসলামে যারা করে জবেহ্,
তুমি তাহাদেরি হও তাবে।
তুমি জুতো-বওয়া তারি অধীন।
৮
নামাজ-রোজার শুধু ভড়ং,
ইয়া উয়া প’রে সেজেছ সং,
ত্যাগ নাই তোর এক ছিদাম!
কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কর জড়,
ত্যাগের বেলাতে জড়সড়!
তোর নামাজের কি আছে দাম?
৯
খেয়ে খেয়ে গোশ্ত্ রুটি তো খুব
হয়েছ খোদার খাসী বেকুব,
নিজেদের দাও কোরবানী।
বেঁচে যাবে তুমি, বাঁচিবে দ্বীন,
দাস ইসলাম হবে স্বাধীন,
গাহিছে কামাল এই গানই!
১০
বাঁচায়ে আপনা ছেলে-মেয়ে
জান্নাত্ পানে আছ্ চেয়ে
ভাবিছ সেরাত হবেই পার।
কেননা, দিয়েছ সাত জনের
তরে এক গরু! আর কি, ঢের!
সাতটি টাকায় গোনাহ্ কাবার!
১১
জান না কি তুমি, রে বেঈমান!
আল্লা সর্বশক্তিমান
দেখিছেন তোর সব কিছু?
জাব্বা-জোব্বা দিয়ে ধোঁকা
দিবি আল্লারে, ওরে বোকা!
কেয়ামতে হবে মাথা নীচু!
১২
ডুবে ইসলাম, আসে আঁধার!
ব্রাহিমের মত আবার
কোরবানী দাও প্রেয় বিভব!
“জবীহুল্লাহ্” ছেলেরা হোক,
যাক সব কিছু-সত্য রোক!
মা হাজেরা হোক মায়েরা সব।
১৩
খা’বে দেখেছিলেন ইব্রাহিম-
“দাও কোরবানী মহামহিম!”
তোরা যে দেখিস্ দিবালোকে
কি যে দুর্গতি ইসলামের!
পরীক্ষা নেন খোদা তোদের
হাববের সাথে বাজি রেখে!
১৪
যত দিন তোরা নিজেরা মেষ,
ভীরু দুর্বল, অধীন দেশ,-
আল্লার রাহে ততটা দিন
দিও না ক’ পশু কোরবানী,
বিফল হবে রে সবখানী!
(তুই) পশু চেয়ে যে রে অধম হীন!
১৫
মনের পশুরে কর জবাই,
পশুরাও বাঁচে, বাঁচে সবাই।
কশাই-এর আবার কোর্বানী!-
আমাদের নয়, তাদের ঈদ,
বীর-সুত যারা হ’ল শহীদ,
অমর যাদের বীরবাণী।
১৬
পশু কোরবানী দিস্ তখন
আজাদ-মুক্ত হবি যখন
জুলম-মুক্ত হবে রে দীন।-
কোরবানীর আজ এই যে খুন
শিখা হয়ে যেন জালে আগুন,
জালিমের যেন রাখে না চিন্!!
আমিন্ রাব্বিল্ আলামিন!
আমিন রাব্বিল্ আলামিন!!
কুরবানির ঈদ বিষয়ে নজরুলের শ্রেষ্ঠ কবিতা ‘বকরীদ’। এটাকে বলা যায় বাংলা সাহিত্যে কুরবানির বিষয়ে অন্যতম সেরা কবিতা। নজরুল লিখেছেন:
‘শহিদান’দের ঈদ এলো বকরীদ!
অন্তরে চির-নওজোয়ান যে তারই তরে এই ঈদ।
আল্লার রাহে দিতে পারে যারা আপনারে কোরবান,
নির্লোভ নিরহংকার যারা, যাহারা নিরভিমান,
নজরুলের ঈদ বিষয়ক সঙ্গীতের মধ্যে নিচের এ দুটি গানটিও উল্লেখযোগ্য:
ওরে ও নতুন ঈদের চাঁদ
ওরে ও নতুন ঈদের চাঁদ
তোমার হেরে হৃদয় সাগর আনন্দে উন্মাদ।।
তোমার রাঙা তশতরিতে ফিরদৌসের পরী
খুশির শিরনি বিলায় রে ভাই নিখিল ভুবন ভরি
খোদার রহম পড়ছে তোমার চাঁদনি রূপে ঝরি।
দুখ ও শোক সব ভুলিয়ে দিতে তুমি মায়ার ফাঁদ।।
তুমি আসমানে কালাম
ইশারাতে লেখা যেন মোহাম্মাদের নাম।
খোদার আদেশ তুমি জান স্মরণ করাও এসে
যাকাত দিতে দৌলত সব দরিদ্রেরে হেসে
শত্রুরে আজি ধরিতে বুকে শেখাও ভালবেসে।
তোমায় দেখে টুটে গেছে অসীম প্রেমের বাঁধ।।
আল্লা রাসুল জপের গুণে
‘আল্লা রাসুল জপের গুণে
আল্লা রাসুল জপের গুণে কি হল দেখ চেয়ে
সদাই ঈদের দিনের খুশীতে তোর পরাণ আছে ছেয়ে।।
আল্লার রহমত ঝরে
ঘরে বাইরে তোর উপরে,
আল্লা রাসুল হয়েছেন তোর জীবন- তরীর নেয়ে।।
দুখে সুখে সমান খুশী, নাই ভাবনা ভয়,
(তুই) দুনিয়াদারী করিস, তবু আল্লাতে মন রয়।
মরণকে আর ভয় নাই তোর,
খোদার প্রেমে পরাণ বিভোর,
(এখন) তিনিই দেখেন তোর সংসার তোর ছেলেমেয়ে।।
বাংলা সাহিত্যে কুরবানি বিষয়ে শ্রেষ্ঠ কবিতা হচ্ছে কবি নজরুলের কবিতা ‘কোরবানী’। এ কবিতায় তিনি লিখেছেন:
ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ', শক্তির উদ্বোধন।
দুর্বল! ভীরু! চুপ রহো, ওহো খাম্খা ক্ষুব্ধ মন!
ধ্বনি ওঠে রণি দূর বাণীর,–
আজিকার এ খুন কোর্বানির!
দুম্বা-শির রুম্-বাসীর
শহীদের শির-সেরা আজি। –রহমান কি রুদ্র নন?
বাস্! চুপ খামোশ রোদন!
আজ শোর ওঠে জোর 'খুন দে, জান দে, শির দে বৎস' শোন!
ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ', শক্তির উদ্বোধন।
নজরুলের ‘কৃষকের চাঁদ’ কবিতাটিও বাংলা সাহিত্যের অন্যতম চির-স্মরণীয় কবিতা।
এখানে এ কবিতাটিও তুলে ধরছি:
কৃষকের ঈদ
বেলাল! বেলাল! হেলাল উঠেছে পশ্চিমে আশমানে,
লুকাইয়া আছ লজ্জায় কোন মরুর গোরস্তানে!
হেরো ঈদ্গাহে চলিছে কৃষক যেন প্রেত-কঙ্কাল
কশাইখানায় যাইতে দেখেছ শীর্ণ গোরুর পাল?
রোজা এফতার করেছে কৃষক অশ্রু-সলিলে হায়,
বেলাল! তোমার কন্ঠে বুঝি গো আজান থামিয়া যায়!
থালা ঘটি বাটি বাঁধা দিয়ে হেরো চলিয়াছে ঈদ্গাহে,
তির-খাওয়া বুক, ঋণে-বাঁধা-শির, লুটাতে খোদার রাহে।
জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নিদ
মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?
একটি বিন্দু দুধ নাহি পেয়ে যে খোকা মরিল তার
উঠেছে ঈদের চাঁদ হয়ে কি সে শিশু-পাঁজরের হাড়?
আশমান-জোড়া কাল কাফনের আবরণ যেন টুটে
এক ফালি চাঁদ ফুটে আছে, মৃত শিশুর অধর-পুটে।
কৃষকের ঈদ! ঈদ্গাহে চলে জানাজা পড়িতে তার,
যত তকবির শোনে, বুকে তার তত উঠে হাহাকার!
মরিয়াছে খোকা, কন্যা মরিছে, মৃত্যু-বন্যা আসে
এজিদের সেনা ঘুরিছে মক্কা-মসজিদে আশেপাশে।
কোথায় ইমাম? কোন সে খোৎবা পড়িবে আজিকে ঈদে?
চারিদিকে তব মুর্দার লাশ, তারই মাঝে চোখে বিঁধে
জরির পোশাকে শরীর ঢাকিয়া ধনীরা এসেছে সেথা,
এই ঈদ্গাহে তুমি কি ইমাম, তুমি কি এদেরই নেতা?
নিঙাড়ি কোরান হাদিস ও ফেকা, এই মৃতদের মুখে
অমৃত কখনও দিয়াছ কি তুমি? হাত দিয়ে বলো বুকে।
নামাজ পড়েছ, পড়েছ কোরান, রোজাও রেখেছ জানি,
হায় তোতাপাখি! শক্তি দিতে কি পেরেছ একটুখানি?
ফল বহিয়াছ, পাওনিকো রস, হায় রে ফলের ঝুড়ি,
লক্ষ বছর ঝরনায় ডুবে রস পায় নাকো নুড়ি!
আল্লা-তত্ত্ব জেনেছ কি, যিনি সর্বশক্তিমান?
শক্তি পেল না জীবনে যে জন, সে নহে মুসলমান!
ইমান! ইমান! বলো রাতদিন, ইমান কি এত সোজা?
ইমানদার হইয়া কি কেহ বহে শয়তানি বোঝা?
শোনো মিথ্যুক! এই দুনিয়ায় পূর্ণ যার ইমান,
শক্তিধর সে টলাইতে পারে ইঙ্গিতে আশমান!
আল্লার নাম লইয়াছ শুধু, বোঝোনিকো আল্লারে।
নিজ যে অন্ধ সে কি অন্যেরে আলোকে লইতে পারে?
নিজে যে স্বাধীন হইল না সে স্বাধীনতা দেবে কাকে?
মধু দেবে সে কি মানুষ, যাহার মধু নাই মৌচাকে?
কোথা সে শক্তি-সিদ্ধ ইমাম, প্রতি পদাঘাতে যার
আবে-জমজম শক্তি-উৎস বাহিরায় অনিবার?
আপনি শক্তি লভেনি যে জন, হায় সে শক্তিহীন
হয়েছে ইমাম, তাহারই খোৎবা শুনিতেছি নিশিদিন!
দীন কাঙালের ঘরে ঘরে আজ দেবে যে নব তাকিদ
কোথা সে মহান শক্তি-সাধক আনিবে যে পুন ঈদ?
ছিনিয়া আনিবে আশমান থেকে ঈদের চাঁদের হাসি
ফুরাবে না কভু যে হাসি জীবনে, কখনও হবে না বাসি!
সমাধির মাঝে গণিতেছি দিন, আসিবেন তিনি কবে?
রোজা এফতার করিব সকলে, সেই দিন ঈদ হবে।
ঈদকে নিয়ে আরও যারা সুন্দর কবিতা লিখেছেন তাদের মধ্যে ফররুখ আহমেদ ও সৈয়দ আলী আহসানসহ আরও অনেক আধুনিক কবির নামও উল্লেখ করা যায়। এখানে আমি কেবল হাতের কাছে পাওয়া কয়েকজন কবির ঈদ বিষয়ক কবিতার কিছু অংশ তুলে ধরছি।
ঈদের চাঁদ
........বেগম সুফিয়া কামাল
চাঁদ উঠিয়াছে, ঈদের চাঁদ কি উঠেছে? শুধায় সবে।
লাখো জনতার আঁখি থির আজি সুদূর সুনীল নভে।
এই ওঠে, ওই উদিল গগনে সুন্দর শিশু চাঁদ—
আমিন। আমিন। রাব্বুল আলামিন করে সবে মোনাজাত
ঈদের খুশিতে এশিয়া মত্ত/আফ্রিকা-আমেরিকা/ফিলিস্তিনের শিশুরা জানে না/কী আছে তাদের ভাগ্যে লিখা!
স্বজন হারিয়ে আফগান কাঁদে/বোমায় ঝাঁঝরা হয়ে/সেই ঈদ কবে, পৃথিবীতে হবে/নতুন বারতা লয়ে?/(সুকুমার বড়ুয়া)
বছর বছর ঈদ আসে/ওই আকাশে চাঁদ হাসে/হাসে খুকু হাসে খোকা/আমি কেবল হইযে বোকা।
বাবার সাথে ঈদ হয় না/ঈদের দিনে মা রয় না/আনন্দটা রয়না কোথাও মনে/তাদের ছবি ভাসে ক্ষণে ক্ষণে।/(আবু সালেহ)
খুশির দিনে ধোলায় লোটে
গরীব দুখী নিস্ব,
খোঁজ রাখে না সর্বহারার
ধূর্ত ধনিক বিশ্ব।/(খালেক বিন জয়েনউদদীন)
কবি নজরুল ইসলামের মৃত্যু বার্ষিকীতে আবারও তার আত্মার প্রতি জানাচ্ছি অশেষ শ্রদ্ধা। মহান আল্লাহ তাকে বেহেশতে অতি উচ্চ সম্মান দান করুন।
©somewhere in net ltd.