নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার কিছু কথা ....আমিও বলতে চাই

আমি

এ কে রায়

সমাজটাকে পাল্টাতে চাই.....

এ কে রায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

৩ দিনের কিছু মধুর তিক্ত অভিজ্ঞতা

১২ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:৫৪

শুক্রবার বিকাল ৫ টা, বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে মোহাম্মদপুর থেকে রওনা দিলাম। বাস না পেয়ে রিকশা নিয়ে চলে গেলাম গাবতলী। ভাড়া ঠিক করেছিলাম ৪০ টাকা, রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ ধরে চালকের কাছ থেকে আদায় করলো ১০ টাকা! কী আর করা, টিপিকাল Middle Class স্ট্যাটাস ধরে রাখতে ৫০ টাকা ভাড়া দিলাম।



গাবতলী থেকে তথাকথিত “Direct” বাস এ উঠলাম, সময় মত বাসও ছাড়ল কিন্তু ইঞ্জিন চালু হওয়ার পর বাস আর Direct থাকলো না, চালক আওয়াজ দিল-“ সব তোল”। কিছুদূর যাওয়ার পর ভাড়া দিলাম ৩৫ টাকা ( দূরত্ব ১৯ কিঃ মিঃ)। অবশেষে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর ১৯ কিলোমিটারের যাত্রা শেষ হল।



পথে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন চোখে পড়লো- প্রথম একটি হিমাগারের মুখ দেখল সিঙ্গাইর বাসী। যদিও সেটা জনস্বার্থের চেয়ে বেশি ব্যক্তিস্বার্থের ধারক ও বাহক। তবুও কিছু তো পেয়েছি। কিন্তু আর একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম- আমারদের এলাকার দুই জন সংসদ সদস্য যদিও পাল্লা দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন কিন্তু এলাকার ঐতিহ্য তারা নষ্ট হতে দেননি! ১ বছর আগে ভেঙেপড়া ব্রিজ এখনও ভাঙাই আছে, তাতে ২ সংসদ সদস্য মিলে একটু আচ পর্যন্ত লাগতে দেননি।



থাক সে সব কথা! এর পর বাসায় গিয়ে ৮ তার দিকে ঘুরতে বের হলাম, ওমা!! একি কাণ্ড!!! সন্ধ্যা ৮ টায় রাস্তা ঘাট পুরোই ফাঁকা, বেশিরভাগ দোকান বন্ধ, কিন্তু তখন ও বাজারে চায়ের দোকায়ে মোটরছাইকেল থামিয়ে চা খাচ্ছিল একঝাক উদীয়মান নেতা। দু-একজন বড় ভাইদের কল করে জানতে পারলাম সন্ধার পড়ে এই উদীয়মানদের দরুন Senior রা চায়ের দোকানে আসেন না।



বাসায় ফিরলাম। বাসায় ফিরে দেখি বিদ্যুৎ নেই, তবুত বাসায় আলো ঝলমল করছে!! জানতে পারলাম চাচীদের নতুন IPS এর আলো। মাকে প্রশ্ন করলাম –



তাহলে আমাদের IPS কই?

মা শোনালেন আর এক মজার তথ্য – “পর্যাপ্ত ভোল্টেজ না থাকায় কারো IPS ই চার্জ হত না, আমাদের টাও নষ্ট হয়ে গেছে?”



আমি প্রশ্ন করলাম তাহলে চাচীদের টা যে চলছে!!!

মা বললেন- ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রায় ২-৩ দিন বিদ্যুৎ ছিল না তাই এলাকার সবাই মিলে ৪০০ টাকা করে চাঁদা তুলে নতুন ট্রান্সফরমার লাগিয়েছে, তাই ভাল ভোল্টেজ পাচ্ছে। যা হোক এই ভাবেই কাটল ১ দিন।



দ্বিতীয় দিন বাজারে গেলাম, শাক সবজি আর মাছের দাম জানতে চেয়ে রীতিমত বোকা বনে গেলাম, সবাই ইচ্ছামত দাম হাকাচ্ছে আর ক্রেতারও অভাব নেই, নেই কোন দামা-দামি, যা চাইছে তাই দিয়েই নিচ্ছে। ঢাকায় নিয়মিত বাজার করার সুবাদে বুঝতে অসবিধা হল না প্রতিটি জিনিসের দাম ঢাকার চেয়ে বেশি সত্য কম নয়!!! বাসায় ফিরতে একটি রিক্সাকে ডাকলাম সে উত্তর দিলো যাবে না ( সে রিক্সায় পায়ের উপর পা তুলে B&H টানছে) নিরুপায় হয়ে হেটে হেটে বাড়িতে ফিরলাম। কোনমতে পার করলাম ৩ টি দিন।



এবার ঢাকায় ফেরার পালা। হ্যালো বাইকে চেপে বাসস্ট্যান্ডে আসলাম। একটা ট্যাক্সির কাছে এগিয়ে যেতেই একটি বখাটে টাইপের ছেলে (হাতে একটা লাঠি) আমার দিকে ছুটে এলো। আমাকে প্রশ্ন করলো- ভাই কথায় যাবেন? আমি বললাম হেমায়েতপুর। এইবার ছেলেটি ট্যাক্সি ড্রাইভারকে বলল- “৫০০ টাকা নিস, ভাইকে হেমায়েতপুর দিয়ে আয়”। আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। ১২ কিলোমিটার রাস্তা ভাড়া ৫০০!!! আমি বললাম যাবো না। অন্য কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। একটু পর একটি CNG Auto পেলাম। ঢাকার দিকে যাচ্ছিল তাই Regular ভাড়ায় সে রাজি হয়ে গেল(ভাড়া ১২০ টাকা)। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো সেখানেও। সাথে সাথে দৌরে চলে এলো সেই বখাটে ছেলেটা। ড্রাইভারকে শাসিয়ে বলল “আমি ৫০০ বলে দিছি, এর কমে যাইতে পারবি না, আর গেলে যা, আমারে ২০০ দিয়ে তার পর যা” ! আমি তো পুরাই “আবুল” হয়ে গেলাম, এই বার আর সহ্য হচ্ছে না, ছেলেটাকে বললাম “ ওই তুই কে? এক থাপ্পর দিয়ে দাত ফেলে দিমু “ এর উত্তরে ও আমাকে বলে-“ জানেন আমি লাইন ম্যান, আমি না বললে একটা গাড়ি ও যাইতে পারবো না”। আমি বললাম আমি এই গাড়ি নিয়ে যাবো, তোকে এক টাকা ও দেব না, দেখি তুই কি করিস। এই বলে আমি গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালাম। ততক্ষণে ওই ছেলেটা তার ৩-৪ জন সাঙ্গপাঙ্গ ডেকে ফেলেছে। যেহেতু আমি এলাকার ছেলে কম বেশি অনেকই আমায় ভাল ছেলে হিসেবেই চেনে, পরিবেশ খারাপ বুঝে লাইন ম্যানের সাঙ্গপাঙ্গরা বলল- কী হইছে ভাই? আমি ঘটনা বললাম, শেষে ওরা বলল ভাই আপনি যান, সমস্যা নাই। আমার মাথাটা তখনও গরম। চলে আসলাম হেমায়েতপুর। CNG Auto থেকে নেমে মাথা ঠাণ্ডা করতে চায়ের দোকানে বসলাম।



এক কাপ দুধ চা খেলাম। ভাবলাম হেমায়েতপুর কাঁচা বাজারটা একটু ঘুরে যাই, যদি ভাল সবজি পাই তাহলে নিয়ে যাবো। বাজারে ঢুকেই আমার মাথায় আবার আকাশ ভেঙে পড়লো। এক দোকানদার ডাকছে- পেঁপে ১০, গাজর ৫, বেগুন ১০, শসা ২০, বরবটি ৬০ !!! আমি তো পুরাই “আবুল” । গত বৃহস্পতিবার মোহাম্মাদপুর কৃষি বাজার থেকে বরবটি ১২০, শসা ৪০, বেগুন ৬০, গাজর ২০, পেঁপে ৩০ করে কিনেছি। পুরাই মাথা নষ্ট। সব কিছু কিনলাম ১ কেজি করে। এর পর বাসে উঠলাম। গাবতলী মাজার রোড পর্যন্ত ৮ টাকা। কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করলাম এটা আমাদের সিঙ্গাইর রোডেরই বাস ( শুকতারা সার্ভিস)। ভাড়ার অংক টা ঠিক বুঝতে পারলাম না, সিঙ্গাইর থেকে হেমায়েতপুর ১২ কিলোমিটার= ভাড়া ২০ টাকা হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী ৭ কিলোমিটার = ভাড়া ৮ টাকা, কিন্তু সিঙ্গাইর থেকে গাবতলী ১৯ কিলোমিটার ওই বাসেই ৩৫ টাকা। এইসব ভাবতে ভাবতেই পৌঁছে গেলাম গাবতলী মাজার রোড। সেখান থেকে একটা “ঈগল যাত্রী পরিবহণ” গাড়ি পেলাম, উঠে বসলাম। যাত্রী মাত্র ৫ জন। টেকনিক্যাল আসতেই একজন ট্রাফিক সার্জন গাড়িটিকে জোরপূর্বক মিরপুর ১ এর দিকে ঘুরাতে বাধ্য করলো। এর পর আমাদের নামতে বলে বলল, আপনারা অন্য গাড়িতে যান আগামীকাল হরতাল, এই গাড়িটি পুলিশের ডিউটি করবে। আমি আবার “আবুল” বনে গেলাম। আর ভাল লাগে না, অবশেষে একটা BRTC বাস পেলাম, উঠে পরলাম। কল্যাণপুর এসে বাস ডিপোতে ঢুকবে বলে সবাইকে নামিয়ে দিলো। আমার “আবুল” হলাম। বিরক্ত হয়ে একটা রিক্সা নিলাম। আদাবর থানা ৩০ টাকা।



ভালই লাগছিলো, কিন্তু আবার “আবুল” হলাম ভাড়া দিতে গিয়ে, রিক্সা চালকের হাস্যউজ্জ্বল আবদার- “ একটু বারায় দেন, হরতালের দিন” কী আর করা, টিপিকাল Middle Class স্ট্যাটাস ধরে রাখতে ১০ টাকা বারিয়ে দিতে হল। এভাবেই আমার মত সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত শেষ হয়ে যাচ্ছি, আমাদের কথা কেউ ভাবে না।



সবাইকে সবাই বারিয়ে দেয়, আর আমরা সাধারণ জনগণ আমাদের পুচ্ছদেশ বারিয়ে দেই রাজনীতিবিদদের কাছে পুনরায় পুচ্ছমারা খাওয়ার জন্য। আর সুন্দর একটা দেশের স্বপ্ন দেখার পর যখন ঘুম ভাঙে-সকাল সকাল গোছল করে প্যান্ট শার্ট পড়ে বাসা থেকে বের হই পুনরায় “আবুল” হওয়ার জন্য... এমনটাই হয় প্রতিদিন... তবু

“মাগো আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে,প্রতিবাদ করে কি লাভ, শান্ত থাকাই ভাল, পুচ্ছ মারা খাই তাতে কী!! বাচ্চা তো আর হবে না !!! ”

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:০৫

যদুমধু বলেছেন: সব মানুসের এক কাহিনি, বুজেনা খালি সরকার।

১২ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:১৩

এ কে রায় বলেছেন: ভাই অবস্থাটা এইরকম- চা খেতে গিয়ে সবাই দেখি দুধের উপর সুন্দর "সর", আমার কাপে দেয় না, আপনি ও আমার মতই দেখেন ভাবেন হয়তো আপনাকে একটু দেবে, আপনাকেও দেয় না। শেষ পর্যন্ত আমরা কেউই বুঝি না- "সর" টা আসলে কার ??? আসলে ওইটা লোক দেখানো, আমাদের দেখাবে কিন্তু দেবে না, বেচবে অন্য জনের কাছে

২| ১২ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:১৮

স্বপনীল জলরং বলেছেন: পুচ্ছ মারা খাই তাতে কী!! বাচ্চা তো আর হবে না !!! ”


শুধু কমেন্ট করার জন্যই লগ ইন করলাম। কিন্তু ভেবে পেলাম না কি কমেন্ট করব। তাই আপনার লিখাই কমেন্ট বলে ছালিয়ে দিলাম!!!!

৩| ১২ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:১৮

আশিকুর রহমান ১ বলেছেন: নির্মম বাস্তবতা। এভাবেই চলছে দেশ :(

৪| ১২ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:২৮

যদুমধু বলেছেন: দোষ আমাদের ই । আমাদের ই কোঠোর হোতে হবে। আমাদের ওধিকার আমাদের আদাই কোরে নিতে হবে। আমাদের = সাধারণ মানুষ ।

৫| ১২ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৩১

এন ইউ এমিল বলেছেন: পেঁপে ১০, গাজর ৫, বেগুন ১০, শসা ২০, বরবটি ৬০ !!!

ভেরিফাইড কারণ শুক্রবার ছারা সপ্তাহের প্রতিটি দিন আমি উল্লেখিত বাজারের উপরদিয়ে বাড়ি ফিরি এবং কিপ্রায়ই কিছু না কিছু কিনি, এই গত পরশু আমি শসা কিনেছি ২০ টাকা, বেগুন ১০ টাকায়,

একদম টাটকা সবজি এখানে পাওয়া যায় এটাও ভেরিফাইড কারণ আমি প্রতি নিয়তই দেখছি আমার বাড়ির আসেপাসের সবজিগুলোও সকালবেলা এই বাজারে আসে


আর সুন্দর একটা দেশের স্বপ্ন দেখার পর যখন ঘুম ভাঙে-সকাল সকাল গোছল করে প্যান্ট শার্ট পড়ে বাসা থেকে বের হই পুনরায় “আবুল” হওয়ার জন্য... এমনটাই হয় প্রতিদিন... তবু
“মাগো আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে,প্রতিবাদ করে কি লাভ, শান্ত থাকাই ভাল, পুচ্ছ মারা খাই তাতে কী!! বাচ্চা তো আর হবে না !!! ”

পুচ্ছ মারা খাওয়া ছাড়া কিইবা করার আছে আমাদের?

৬| ১২ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৬

লিন্‌কিন পার্ক বলেছেন: :| :| :|

৭| ১২ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:০৮

মো: রাজু রহমান বলেছেন: জনগন পুটুমারা খাবে, সরকার চেয়ে চেয়ে দেখবে, মজা পাবে হাতে তালি দিবে। নিজেদের ভাগে কম পরলে হরতাল ডাকবে!!!

৮| ১২ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:১০

আহসান২০২০ বলেছেন: মাগো আমিও এই পোষ্ট পড়ে আবুল হইলাম।

৯| ১২ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৮

পাখা বলেছেন: সেই বৃটিশ আমল থেকে আমরা (এই বাংগালী) আবুল হইয়া আছি...
আর বার বার পুই মারা খাইতাছি ...
এখন পারছে (বালে, বিএনপি, জামাত....)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.