![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিসফে শাবানের হকিকত
প্রসঙ্গঃ ‘নিসফে শা’বান’ বা ‘শবে বরাত’।
‘মহিমান্বিত ফজিলতপূর্ণ এক রাত’।
আ'মল, করণীয়-বর্জনীয়।
শবে বরাত-এর নামকরণ :- ‘শবে বরাত’ এটি ফার্সি শব্দ। ‘শব’ অর্থ রাত, আর ‘বরাত’ অর্থ মুক্তি। অর্থ্যাৎ ‘শবে বরাত’ অর্থ হলো মুক্তির রজনী। বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী রহ. বলেন, এরাতে দু'ধরণের মুক্তি হয়ে থাকে। ১. অপরাধীদের আল্লাহ তা'আলা জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দান করেন। ২. যাঁরা আল্লাহর প্রিয়বান্দা, তাঁদেরকে বিপদ-আপদ, বালা-মসিবত, অপমান-লাঞ্চনা হতে মুক্তি দান করেন।
আবার কারো কারো মতে এই রাতকে ‘ভাগ্য রজনী’ও বলা হয়। যেহেতু এই রাতেই এবৎসর যত আদম মারা যাবে, যতজন জন্মলাভ করবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। মানুষের আ'মলসমূহ উঠিয়ে নেওয়া হয়। তাদের রিজিক নাজেল করা হয়। সর্বোপরি পূর্ণ এক বৎসরের বাজেট ঘোষণা করা হয়। আর এসব বিষয়গুলো যেহেতু সম্পূর্ণ আল্লাহ প্রদত্ত সেখানে বান্দার কোনো প্রকার দখল থাকে না। সুতরাং তা কেববলই ভাগ্যের উপরই বর্তায়। সেহেতু এ রাতকে ‘ভাগ্য রজনী’ বলাও যথার্থ।
হাদীস শরীফে ‘নিসফে শা’বান’ বা ‘শবে বরাত’ বিভিন্ন হাদীসে বিভিন্ন শিরোনামে নিসফে শা'বান তথা শবে বরাতের তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য প্রকাশ পেয়েছে। তন্মধ্যে বায়হাকী শরীফে হযরত আয়েশা রা. থেকে রেয়ায়েতকৃত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে জিঙ্গেস করেন, তুমি কি জানো অদ্য রজনীতে অর্থ্যাৎ শবে বরাতে কি হয় ? অতঃপর রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ইরশাদ করেন, ‘এই বৎসর যত আদম সন্তান জন্মলাভ করবে। এবং এই বৎসর যারা মারা যাবে , এই রজনীতেই তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। এই রাতেই মানুষের এইবৎসরের আ'মল উঠিয়ে লওয়া হয়। এবং তাদের রিজিক নাজেল করা হয়। এমনিভাবে ইবনে মাজা শরীফে হযরত আলি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল কারীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, শা'বানের ১৫ তারিখ রাত্রি জাগরণ করিও এবং ঐদিন রোজা রাখিও। আল্লাহ তা'আলা এই রাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে প্রথম আসমানে তাশরীফ আনয়ন করেন। অতঃপর তিনি আহ্বান করতে থাকেন, কে আছো ক্ষমা প্রার্থনাকারী? আমি তাকে মাফ করে দেবো। কে আছো রিজিকেরপ্রার্থী? আমি তাকে রিজিক প্রদান করবো। কে আছো বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে বিপদমুক্ত করবো। এরূপ অন্যান্য বিষয়েও প্রার্থনার জন্য আহ্বান করতে থাকেন। এইভাবে ফজর পর্যন্ত বলতে থাকেন। অর্থ্যাৎ আল্লাহ তা'আলা বান্দার বিভিন্ন বিষয়কে উল্লেখ করে করে ডাকতে থাকেন। তবে যারা সৌভাগ্যবান তারা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে উন্নতির চরমে পৌঁছে বিভিন্ন আ'মলে সলেহ্ আদায়ের মাধ্যমে মাওলায়ে পাকের রেজামন্দীর দ্বারা ধণ্য ও গর্বিত হয়।
বর্জনীয় কিছু কাজঃ
আর কিছু বঞ্চিতদের বর্ণনা। শবে বরাত আল্লাহ তা'আলার ব্যাপক ক্ষমা আর মার্জনার রাতেও কিছু কিছু হতভাগা কপালপোড়া রহমতে ইলাহীর অনুগ্রহ-অনুকম্পা হতে বঞ্চিত থাকে। আহ ! কতই না বদনসীব তাদের জন্য। সেই সব অবহেলিত ও বঞ্চিতদের মধ্যে অন্যতম হলো...
১. মদ্যপায়ী, যারা রীতিমত মদ্যপানে অভ্যস্ত। তারা সেই রজনীতে আল্লাহর ক্ষমা হতে বঞ্চিত।
২. মুশরিক, যারা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করে। যেমন, মাজার পূজা, পীরের পায়ে সাজদাকারী, বাবার নামে মান্নত করা, খাজার নামে উট, মহিষ, গরু, ভেড়া ইত্যাদি প্রেরণ করা।
৩. মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান। যারা মাতা-পিতার সাথে খারাপ আচরণ করে। নিষ্ঠুর ও রুঢ় ভাষায় কথা বলে। ৪. গণক।
৫. এবং।জাদুকর তারাও আল্লাহ তা'আলার রহমত হতে মাহরূম থাকবে।
নিসফে শা’বান বা শবে বরাতে করণীয় কিছু আ'মল। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে আ’মল যেভাবে করেছেন বা করতে বলেছেন। সেটা সেভাবে করাই সঠিক এবং শরয়ী মানদন্ড। শবে বরাত একটি মহিমান্বিত রাত। আল্লাহ তা'আলা এরাতে বহু আহাম-গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি ফয়সাল করে থাকেন। তাই সকলেই চায়, এরাত এবাদ-বন্দেগীর মাধ্যমে অতিবাহিত করতে। যাতে কল্যাণকর বস্তু ভাগ্যে জোটে। তবে তা হতে হবে শরয়ী পরিধি ও সীমার ভেতরে থেকে। হাদীস শরীফে ও ফেকাহ’-র কিতাবসমূহ থেকে পাওয়া যায়। শবে বরাতে আমাদের করার মত ৬টি আ'মল রয়েছে। এর অতিরিক্ত কোনো আ'মলের কথা কোরাআন-হাদীসের মধ্যে উল্লেখ নাই। ফেকাহ'-র কিতাবেও আসে নাই। এর বাইরে যদি কিছু করা হয়, তবে তা হবে মনগড়া, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
আ'মল ৬টি হলো নিন্মরূপঃ
১. গোসল করে নেওয়া।
২.রাতে নফল এবাদত করা। ( নামাজ, কোরাআন তিলাওয়াত, জিকির, তাসবীহ্, দরুদপাঠ, ইত্যাদি )।
৩. পরের দিবসে রোজা রাখা।
৪. রাতে কবর জেয়ারত করা। ( তবে দলবদ্ব হয়ে, হৈ হৈল্লোল করা নিষেধ )।
৫. মৃতদের জন্য সওয়াব রেসানী করা। ( খতম পড়ে, দু'আ করে, দান-সদকা করে, কিংবা অন্য কোনো আমলের মাধ্যমে।
৬. বেশী বেশী দু'আ করা।
আল্লাহ্ তা'আলা লেখক-পাঠক সকলকে আমলের তাওফীক দান করুন। আমীন।
লেখকঃ হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মাসঊদুল হক।
(ইমাম-খতীব, লম্বরীবাড়ি জামে মসজিদ, ভূরুলিয়া, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন)।
গ্রন্থনা ও উপস্থাপনাঃ আবদুল্লাহ আল মামুন।
পরিবেশনাঃ A.MAMUN আর্কাইভ।
©somewhere in net ltd.