নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরিফুজ্জামান১৯৮৭

আরিফুজ্জামান১৯৮৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘোস্ট ফায়ার উপন্যাস অনুবাদের তৃতীয় পর্ব

১১ ই জুন, ২০২০ সকাল ১০:৪৪

ঘোস্ট ফায়ার উপন্যাস অনুবাদের প্রথম পর্বঃ Click This Link

ঘোস্ট ফায়ার উপন্যাস অনুবাদের দ্বিতীয় পর্বঃ Click This Link

ঘোস্ট ফায়ার উপন্যাস অনুবাদের তৃতীয় পর্বঃ
.
মিস্টার মেরিডিউ এর সাথে থিওর ঘটনার পরের দিন, মনসুর গভর্নরের কাছ থেকে একটি নিমন্ত্রণপত্র পেলেন। তাকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একটা মিটিং-এ হাজির থাকতে হবে। ওই মিটিং কী নিয়ে তার কোনো ব্যাখ্যা এই নিমন্ত্রণপত্রে নেই। এবং এমনকি একটা রৌপ্য মুদ্রা দেয়ার প্রস্তাব দেয়ার পরেও যেই ভৃত্য এই নিমন্ত্রণপত্রটি নিয়ে এসেছিল তার কাছ থেকে আর কোনো তথ্য পাওয়া গেল না।
আশা করছি এই মিটিংটা থিওর উচ্ছৃংখল আচরণ সম্পর্কিত কিছু না। মনসুর যখন সেন্ট জর্জ দুর্গের ভেতরে অবস্থিত গভর্নরের প্রাসাদের সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে ওপরতলায় উঠছিল তখন সে ঠিক এই কথাটাই ভাবছিল। কাগজে কলমে, সে এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হচ্ছে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। যদিও ওরা নিজেদের মাঝে একটা গোপন সমঝোতা করে নিয়েছে যা দুই পক্ষের জন্যই উপকারী। মনসুর কোম্পানির লোকদেরকে যতটা সম্ভব হাতের কাছে রাখতে পছন্দ করে। এবং এর বদলে, ওরাও মনসুরকে নিজেদের কাছে থাকা দুয়েকটা গুপ্ত খবর সরবরাহ করে।
কিন্তু এখন পুরো কাউন্সিলই অপেক্ষা করছিল ওর জন্য... মাদ্রাজের সকল সিনিয়র ব্যবসায়ী এবং সরকারি কর্মকর্তারা। ওরা সবাই বসে আছে মেহগনি কাঠ দিয়ে বানানো লম্বা একটা টেবিলের চারপাশে। এই রুমটি বাড়ির দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত। প্রচুর বাতাস বয় এখানে, উঁচু উঁচু জানালাও আছে।
মনসুরের পরনে সবসময়কার মতোই ভারতীয় স্টাইলের পোশাক। সে পরে আছে একটা সিল্কের পাজামা, উজ্বল সবুজ রঙের সুতি কাপড়-নির্মিত কোট, এবং স্বর্ণ দিয়ে কারুকাজ করা একটি পাগড়ি। মনসুরের পায়ে আছে একজোড়া চপ্পল। ওই চপ্পলের পায়ের আঙ্গুলের ডগার দিকটা আবার সামনের দিকে তীক্ষ্ম হয়ে বেরিয়ে আছে।
মনসুরের পরনে এমন স্টাইলের পোশাক। কিন্তু তারপরেও এই রুমে থাকা কেউই ওই পোশাকের দিকে দ্বিতীয়বার ফিরে তাকাল না। ওরা ওদের সঙ্গী ব্যবসায়ীদের পোশাক নিয়ে খামখেয়ালিপনা দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। কেউ কেউ তো গোপনে একই রকমের পোশাক পরে, যখন তারা তাদের ক্লায়েন্ট বা উপপত্নীদের সাথে সাক্ষাৎ করতে যায়।
ব্রিটিশদের কাছে ভারতবর্ষ ভীষণ উত্তপ্ত একটা জায়গা। খুবই বিশৃঙ্খল, দাঙ্গা-হাঙ্গামাপূর্ণ। এই পরিবেশে এসে, ব্রিটিশ পুরুষদের আচরণ এমন হয়ে যায় যা তারা লন্ডনে থাকতে নিজেরাই কখনও কল্পনাই করেনি। মনসুরের দেহে আবার ওমান-দেশীয় রক্ত বইছে। কোম্পানি ব্যবসায়ীরা তাই এমনিতেও ওকে অর্ধেক-প্রাচ্যদেশীয় লোক বলে মনে করে।
কাউন্সিল রুমে তখন উপস্থিত ছিল প্রায় এক ডজন পুরুষ। তাদের কারও বয়সই চল্লিশের ওপরে না, বেশির ভাগই বিশের কাছাকাছি। তাদের চেহারাগুলো পোড়া লাল রঙ ধারণ করেছে। প্রধানত দুটো কারণে ওদের চেহারার এমন অবস্থা। সূর্যের প্রখর উত্তাপ অথবা অতিরিক্ত মদ্যপান। ওদের বয়স যদিও কম, তারপরেও ওদের দেহ অকালেই বয়স্ক লোকদের মতো হয়ে গেছে। ওদের শরীরও রোগাটে, কারণ ওদের বেশির ভাগই ভারতবর্ষের ভিন্ন পরিবেশে এসেই বিভিন্ন বিদঘুটে রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। তবে ওদের শরীরের অবস্থা খারাপ হলে কী হবে, ওদের সবার চোখই একই রকম দ্যুতিতে জ্বলজ্বল করছিলঃ ধন-সম্পত্তির একটা প্রবল ক্ষুধা, যা কোনোভাবেই পুরোপুরি মিটবার না। আর ওদের ব্যবহার যতই অমায়িক হোক না কেন, এখানে একটা লোক-ও নেই (মনসুর তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানে) যে কিনা অতিরিক্ত বিশ শতাংশ লাভ করতে পারলে তার নিজের মেয়েকেও বিক্রি করতে দ্বিধা করবে না।
ওদের নিয়োগকর্তার প্রতি এদের কোনো আনুগত্য নেই। ওরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ওপরে প্রভাব বিস্তার করে নিয়মিতভাবে নিজেদের বেতন এবং আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা ক্রমাগত বাড়াতেই থাকে, বাড়াতেই থাকে। কিন্তু প্রতিটি লোক লন্ডনে বসে থাকা ডিরেক্টরদের ধাপ্পা দিয়ে তার বেতনের তুলনায় দশগুণ বেশি পরিমাণ অর্থ আয় করে। কোম্পানির পক্ষ হয়ে ওরা যতই ব্যবসা করে থাকুক না কেন, সবচেয়ে ভালো পণ্য এবং লাভের সবচেয়ে মোটা অংশটা কিভাবে যেন তাদের নিজেদের একাউন্টে গিয়েই জমা হয়ে যায়।
এবং মনসুর কোর্টনি হচ্ছে সেই লোক যে কিনা লিডেনহল স্ট্রিটের ঈর্ষান্বিত চোখ এড়িয়ে ওদের এই অবৈধ ব্যবসাকে আরও সহজতর উপায়ে করার পথ করে দিচ্ছে। মনসুরের আছে এক বহর জাহাজ, এবং এজেন্টদের একটি নেটওয়ার্ক, যা প্রসারিত হয়ে আছে ক্যান্টন থেকে কলকাতা হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন পর্যন্ত। ওরা মনসুরের ওপরে স্বচ্ছন্দে নির্ভর করতে পারে। কারণ, সে চূড়ান্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে ওদের মালামাল যেকোনো জায়গায় পৌঁছে দিতে পারে। এবং এটা সে করে খুবই যুক্তিসঙ্গত একটা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে।
টেবিলের শেষ মাথায় বসেছিলেন গভর্নর সন্ডার্স। তিনি নিজের চেয়ারের হাতলের ওপরে জোরালোভাবে একটা চাটি বসিয়ে দিলেন। উদ্দেশ্য, মিটিং-এ আসা সকল লোকের মনোযোগ নিজের ওপরে টেনে নিয়ে আসা। তবে মনসুর লক্ষ করল, তিনি তখন ঘামছিলেন।
"আজ লন্ডন থেকে আমার কাছে একটা জরুরী খবর এসেছে। আমেরিকায় যুদ্ধ লেগে গিয়েছে। আমরা ভার্জিনিয়া কলোনির ফ্রন্টে ফোর্ট নেসেসিটি নামক একটা জায়গায় ফরাসী সৈনিকদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলাম।"
এই খবর শুনে ওখানকার মানুষদের মধ্যে ভীত ভঙ্গিতে গুঞ্জন-ধ্বনি শুরু হয়ে গেল। মনসুর জানে, এরা মোটেও যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি বা মানুষের প্রাণহানি নিয়ে ভাবছে না। ওরা প্রত্যেকে মনে মনে গণনা করা শুরু করে দিয়েছে যে, এই যুদ্ধের ফলে তাদের হিসাবের খতিয়ানে কেমন প্রভাব পড়বে? কলোনিগুলোতে চা-এর চাহিদা কি পড়ে যাবে? সল্টপিটারের দাম, যা কিনা গানপাউডারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, সেটা কি বেড়ে যাবে? ব্যবসায়ীদের কয়েকজন দরজার কিছুটা কাছাকাছি গিয়ে অবস্থান নিল, প্রত্যেকে চাইছে সে-ই সবার আগে মার্কেটে যাবে এবং এই খবরটা ব্যবহার করে লাভবান হবে। ওরা চাচ্ছে, সব মানুষের কাছে এই খবর পৌঁছে যাওয়ার আগেই এর থেকে ফায়দা হাসিল করে নিতে।
"আমাদের অবশ্যই এটা চিন্তা করা উচিত হবে না যে আমরা এই যুদ্ধ থেকে নিরাপদ," গভর্নর বলে চললেন। রুমের পরিবেশটা চুপচাপ হয়ে গেল। আমেরিকা হয়তো এখান থেকে দশ হাজার মাইল দূরে, এবং ফোর্ট নেসেসিটিও নিঃসন্দেহে কোনো এক বিজন প্রান্তরে অবস্থিত অতিক্ষুদ্র একটি স্থাপনা। কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্য হচ্ছে পুরো দুনিয়াব্যাপী বিস্তৃত মাকড়সার জালের মতো। যতই দূরবর্তী হোক না কেন, এই জালের একটা কোণায় কম্পন সৃষ্টি হলে তা দুনিয়ার শেষ প্রান্তেও পৌঁছে যায়। এবং এখানে ফরাসি সৈন্যরা আছে যারা আমেরিকার থেকে অনেক কাছাকাছি।
"যখন পনডিচেরিতে থাকা ফরাসি সৈন্যরা এই খবর শুনতে পাবে, তারা নিঃসন্দেহে চাইবে আমাদের কাছ থেকে কিছু অন্যায় সুবিধা আদায় করে নিতে। ওরা হয়তো এরিমাঝে আমাদেরকে হামলা করার জন্য এগিয়ে আসা শুরু করে দিয়েছে।"
"তাহলে ওদেরকে এগিয়ে আসতে দিন," কলিন্স নামের একজন বলল। সে হচ্ছে এই রুমে থাকা সবচেয়ে কমবয়সি ছেলে, মাত্রই ভারতে এসেছে এবং এই কাউন্সিলে অভিষিক্ত হতে পেরেছে শুধু ওর বাবার তদবির এবং উঁচু পদের মানুষের সাথে তার সম্পর্কের জোরে। কলিন্সের গাল এখনও দুধের মতো সাদা, ভারতীয় সূর্য এখনও ওর ত্বক পুড়িয়ে দিতে পারেনি। মনসুর এই টাইপের লোক আগেও দেখেছে। সে আন্দাজ করল এই ছেলে ভারতে কাটানো ওর প্রথম বর্ষা মৌসুমটা পার করে বেঁচে থাকতে পারবে না।
কলিন্সের কথা শুনে রুমের সবাই চুপ মেরে গেল।
"ফরাসিদের কাছে আছে দুই হাজার সৈন্য," গভর্নর বলল।
"আমাদের আছে ছয়শ সৈন্য," কলিন্স জোর দিয়ে বলল, ব্রিটিশ অহংকারে ওর বুকটা ফুলে উঠেছে। "এবং একজন বলিষ্ঠদেহী ইংরেজ অন্ততপক্ষে পাঁচজন ফরাসির সমান।"
"অফিসিয়ালি আমাদের সৈন্য সংখ্যা ছয়শ," সন্ডার্স তাকে শুধরে দিল। "কিন্তু আমাদের কাছে থাকা সৈন্যের প্রকৃত সংখ্যা... তারচেয়ে আরও কম।"
সন্ডার্স তাকে বলতে চাইছিল না যে ঠিক কতজন লোক কম। কারণ এর সাথে হিসাবের বইয়ের একটা সম্পর্ক আছে। সে এখনও হিসাবের বইয়ে পুরো ছয়শ লোকের জন্যই বেতনের টাকা তুলছে।
"ইউরোপের ইতিহাস যেভাবে পড়েছ, ভারতের যুদ্ধগুলোতে কিন্তু সেভাবে লড়াই করা হয় না," মনসুর ওকে বুঝানোর চেষ্টা করল। "ওরা যুদ্ধের জাঁকজমক পছন্দ করে, কিন্তু এখানে যুদ্ধের নৃশংস দিকটা এড়িয়ে যাওয়া হয়। যুদ্ধ শুরু হলে ওরা আমাদের দিকে অল্প কয়েকটা গুলি ছুঁড়বে, অন্যদিকে আমরাও নায়কোচিত ভঙ্গিতে ওদের দিকে ফিরতি কয়েকটা গুলি ছুঁড়ব। এবং এরপরে ওরা প্রস্তাব দেবে যে, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিলে ওরা এই যুদ্ধ থেকে সরে আসবে। যেটা কিনা আমরা করব, তবে তার আগে আমরা কিছুটা দরকষাকষি করে নেব। এটা আমাদের পকেটের ওপরে সামান্য চাপ ফেলবে, কিন্তু এরবেশি খারাপ কিছু হবে না। ততক্ষণ পর্যন্ত, আমরা আমাদের দুর্গের দেয়ালের পেছনে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকব।"
টেবিলের চারপাশের থাকা মানুষেরা নড করল, মনসুর যে বিচক্ষণতার সাথে কথা বলছে তার জন্য ওরা ওকে ধন্যবাদ দিচ্ছে। শুধু রুমের পেছন দিকে দাঁড়ানো একজন লোক, অন্য আর সবার মতো মনসুরের কথার সাথে একমত হল না। তার পরনে একটা বৈশিষ্ট্যহীন কালচে কোট, অন্য ব্যবসায়ীদের পোশাক যেমন জরিফিতা এবং গয়না দিয়ে অলংকৃত করা হয়েছে, তার পোশাকে তেমন আড়ম্বরতা নেই, এবং তার মাথায় কোনো উইগ, মানে পরচুলা-ও নেই। তিনি সামনের দিকে পা বাড়ালেন।
"আপনার কি কিছু বলার আছে, মিস্টার স্কোয়ারস?" গভর্নর বললেন, তিনি ইতোমধ্যে তার চেয়ার থেকে অর্ধেক উঠে পড়েছেন, মার্কেটে পৌঁছানোর জন্য তাঁর আর তর সইছে না। এতক্ষণে, তাঁর কর্মচারিরা প্রায় এক ঘণ্টা সময় পেয়েছে এই গুপ্ত খবর থেকে যতটা পারা যায় ফায়দা তুলে নেয়ার জন্য।
"দুর্গের পশ্চিম দেয়ালটার অবস্থার খুব খারাপ, চটের কাপড়-ও এরচে ভালো নিরাপত্তা দিতে পারে।" স্কোয়ারস বলল। সে হচ্ছে দুর্গটির ইঞ্জিনিয়ার, ইয়র্কশায়ার থেকে আগত একজন স্পষ্টভাষী মানুষ, যে কিনা তাঁর কলিগদের ক্রমাগত বলেই যাচ্ছে দুর্গের চারপাশে পরিখা কাটা এবং দেয়ালের গায়ে পাথরের আবরণ দেয়া দরকার, কিন্তু কেউ তাঁর কথায় কোনো গুরুত্বই দেয় না। "এই দেয়াল শুধু একভাবেই আমাদেরকে সাহায্য করতে পারে। যদি এটা আমাদের শত্রুদের ঘাড়ের ওপরে গিয়ে পড়ে!"
এই কথায় গভর্নরের ভ্রু কুঁচকে গেল। টেবিলের চারপাশে বসে থাকা মানুষগুলো ভীত ভঙ্গিতে কিচিরমিচির করে কথা বলা শুরু করল। "আমি নিশ্চিত তুমি অনেক বাড়িয়ে বলছ।"
"আমার লেখা রিপোর্টগুলোর একটাও যদি পড়তেন, আপনি এতটা বিস্মিত হতেন না," স্কোয়ারস সুযোগ পেয়ে প্রতিশোধটা নিয়ে নিল। "এই দেয়াল যখন নির্মাণ করা হয়, এটা তখনও বলতে গেলে বাঁশের বেড়ার মতো হালকা-পাতলা ছিল, এবং এরপর থেকে ওই দেয়ালে আর কোনো রক্ষণাবেক্ষণ বা মেরামত-কার্য করা হয়নি। এটা এখনও দাড়িয়ে আছে শুধু কৃষ্ণাঙ্গরা এর বিপরীতে কয়েকটা খুপরিঘর আর বাড়ি বানিয়েছে বলে।"
"লন্ডনের ডাইরেক্টরেরা দুর্গের উন্নতিসাধনের জন্য দুই লাখ পাউন্ড অনুদান দিয়েছিলেন," কলিন্স বলল।
"আমি ওই অনুদানের এক পয়সাও চোখে দেখিনি," স্কোয়ারস বলল।
"তাহলে ওই টাকা গেল কোথায়?"
"এই মুহুর্তে ওই প্রশ্নের অবতারণা করা অবান্তর। আমাদের সামনে এরচেয়ে আরও জটিল সমস্যা পড়ে আছে।" গভর্নর তাড়াহুড়ো করে এই আলোচনায় বাধা দিলেন। তিনি চাইছেন না এই টাকা কোথায় গিয়েছে সেটা নিয়ে কোনো রকম তদন্তের সম্মুখীন হতে। "আমাদেরকে এখন যা করতে হবে, তা হচ্ছে জনসাধারণকে কোনোভাবেই আতংকিত করা যাবে না, বা আমাদের দুর্বলতা প্রকাশ করে দিয়ে শত্রুদের কাছ নিজেকে অরক্ষিত করা-ও যাবে না।"
"আমাদের শত্রুরা খুব শীঘ্রই এই দুর্বলতার খোঁজ পেয়ে যাবে," মনসুর অস্ফুট স্বরে বলল, তবে সন্ডার্স ওর কথা শুনতে পেল না।
"আমরা অবশ্যই মেয়েদের মতো করে দেয়ালের পেছনে ভয়ে গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকব না।" গভর্নর জোর দিয়ে বললেন। "ওদের দিকে যদি কয়েকটা গুলি ছুঁড়ি, বুক ফুলিয়ে দাঁড়াই, তাহলেই ওরা পড়িমরি করে ছুটে পালাবে। এবং এরপরে আমরা আবারও যার যার নিজেদের ব্যবসায়ে ফেরত যাব।" তিনি উঠে দাঁড়ালেন, মিটিং-এর পরিসমাপ্তি টানছেন। "ঠিক আছে তবে, জেন্টলম্যান। আপনাদের দিনটা ভালো কাটুক।"
অন্য ব্যবসায়ীরা তাঁর দিকে তাকিয়ে আন্তরিক ভঙ্গিতে নড করল। দুর্গের ইঞ্জিনিয়ার স্কোয়াসর তখন জানালার পাশে একলা দাড়িয়ে আছে, চিন্তিত চেহারায় চেয়ে আছে জানালার বাইরের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীর দিকে।
অন্যরা যখন তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, মনসুর তার দিকে এগিয়ে গেল কথা বলার জন্য। "দুর্গের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কি আসলেই এতটাই খারাপ?"
স্কোয়ারস সায় দিল। "এবং এই যুদ্ধটা তুমি এবং আমাদের সম্মানিত গভর্নর যা ভাবছে তার চেয়ে কঠিন হতে যাচ্ছে। ফরাসিরা পুরো দুনিয়ার ওপরে চোখ ফেলেছে। আমেরিকা, ভারত, প্রাচ্যের অন্যান্য দেশ। ওরা চাইছে আমাদের সকল ব্যবসা-বানিজ্য নিজেদের কাছে নিয়ে যেতে। তোমার জায়গায় আমি থাকলে আমি আমার পরিবারের সব সদস্যদেরকে দুর্গের ভেতরে নিয়ে আসতাম।"
"কিন্তু তুমিই না বললে ওই দেয়াল আমাদের কোনো কাজেই আসবে না।" মনসুর প্রতিবাদ করল।
"ফরাসিরা আমাদেরকে আমাদের নিজেদের বাসাতেই ধরে ফেলার চাইতে দুর্বল নিরাপত্তা-ব্যবস্থার দুর্গে থাকাটাই উত্তম।" স্কোয়ারস বলল। "আমাদের দিকে একটা ঝড় এগিয়ে আসছে। এই অবস্থায় আমাদের সবারই কোনও নিরাপদ আশ্রয়স্থলের দিকে সরে যাওয়া উচিত।"

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: গোষ্ট ফায়ার উপন্যাসের লেখককে নিয়ে একদিন লিখবেন।

১১ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:৫৯

আরিফুজ্জামান১৯৮৭ বলেছেন: চেষ্টা করব

২| ১১ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:৫১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: বেশ ।  ভালো থাকুন।

৩| ১১ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:০০

আরিফুজ্জামান১৯৮৭ বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনিও ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.