নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বসে আছি অন্ধকারে, \nআমাকে বুঝতে দাও \nমানুষ কেন আলোর \nপ্রত্যাশা করে!

আসোয়াদ লোদি

জীবন ও যন্ত্রণার মরুচরে আমি প্রপাতের ধারা ।

আসোয়াদ লোদি › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিলি আর্কেলিওজিক্যেল পার্ক প্রাচীন আরব সংস্কৃতির নিদর্শন

১১ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৫

আরবদের নৃতাত্ত্বিক ইতিহাস থেকে জানা যায় অতি প্রাচীন কালে আফ্রিকা থেকে আদনানও কাহতান নামে ইহুদীদের দুটি গোত্র সিরিয়ায় এসে বসবাস শুরু করে। পরবর্তীতে বংশবৃদ্ধি ও জীবিকার অন্বেষণে তারা মরু আরবের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। পশু পালন, কৃষিকাজ ও শিকার করে তারা জীবিকা নির্বাহ করত। তাদের মধ্যে অনেকে পশু চারণ-ভূমিতে পানি সঞ্চালন পদ্ধতি জানত। উভয় গোত্রের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল এবং তাদের কতক মরুভূমিতে বসবাস করত এবং কতক সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে। সেই গোত্রদ্বয় থেকেই আরব জাতিসত্ত্বার উদ্ভব। আরবরা হচ্ছে ইহুদীদেরই রক্তের উত্তরাধিকারী।

খৃষ্টপূর্ব ১০০০০ বছর আগে থেকে কৃষিজীবী মানুষের কথা জানা যায় এবং খৃষ্টপূর্ব ৪০০০ বছর পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে কৃষির বিকাশ হয়েছিল। ধারণা করা হয় এই সময়ের মধ্যে বর্তমান আরব জাতির পূর্বপুরুষগণ এই অঞ্চলে আগমন করে। আরব আমিরাতের স্থানীয় অধিবাসীরা তাদেরই উত্তরপুরুষ। সাতটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শেখ শাসিত (Shiekhdom) প্রদেশ নিয়ে আরব আমিরাত গঠিত। আবুধাবি দেশটির রাজধানী। আল আইন আবুধাবির একটি প্রাচীন জনপদ।

১৯৯৫ খৃষ্টাব্দে একদল ডেনিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ আল আইনের হিলি ও উম আল নার এলাকায় খনন কার্য চালিয়ে বেশ কিছু পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কার করেন। উদ্ধারকৃত সামগ্রী পরীক্ষা করে জানা গেছে এগুলো নবপোলিয় যুগের। আজ থেকে ৪৫০০ বছর পূর্বের নিদর্শন। এসব সামগ্রির মধ্যে ছিল হাতে তৈরি গলার হার, ঝোলানো দ্রব্য, কুঠার, ড্যাগার, তরবারি এবং আরও অন্যান্য সামগ্রী। কিছু মসৃণ পাথরের সামগ্রী, পাথর কাটার যন্ত্র ও ধনুকের তীর আজ থেকে ৮০০০ বছরের প্রাচীন বলে জানা যায়। ধারণা করা হচ্ছে ৮০০০ বছর পূর্বে এখানে জনবসতি গড়ে উঠে।

হিলি ও উম আল নার থেকে উদ্ধারকৃত মৃৎপাত্র, পাথরের কলসি, পিতলের দ্রব্য সামগ্রীর বৈশিষ্ট্য থেকে ধারণা করা হয়, ৫০০০ বছর আগেও মেসোপটমিয়ার সাথে তাদের বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। তামার তৈরি ব্রেসলেট, বালা ও নূপুরের নির্মাণ শৈলি এটাই প্রমাণ করে যে লৌহ যুগে এইসব প্রাচীন বস্তিতে উন্নতমানের অলংকার তৈরির কারখানা ছিল।

প্রাচীন ভারতের মহেঞ্জোদারো-হরপ্পার মত এখানে কোন নগর সভ্যতা আবিষ্কার হয়নি। খননের ফলে হিলিতে মানব বসতির যা আবিষ্কার হয়েছে তাকে নগর সভ্যতা বলা যায় না। এটা হচ্ছে গ্রামীণ সংস্কৃতি। তবে এটা উন্নতমানের খামার গ্রাম। এখানে বেশ কিছু সমাধি সৌধ আবিস্কৃত হয়েছে। এগুলো দেখতে এমু পাখির ডিমের মত। ওভাল আকৃতির চাল মাটির সাথে লাগানো। নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে রোঁদে শুকানো কাদা মাটির ইট ও পাথর ব্যবহার করেছে। বেশ কিছু সৌধের চাল ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। অনেকগুলো সমাধি সৌধের মধ্যে একটি পরিচয় পাওয়া যায়। এই সৌধটিকে জেবল হাফিতের সমাধি সৌধ বলে। সম্ভবত তিনি ঐ এলাকার কর্তা ব্যাক্তি ছিলেন। তার নামে ঐ এলাকায় একটি পাহাড়ও আছে। যেটাকে বলা হয় জেবল হাফিতের পাহাড়। সমুদ্র পৃষ্ট থেকে এর উচ্চতা ১১৬০ মিটার। এর অবস্থান হচ্ছে আল আইন শহরের দক্ষিণ পার্শ্বে।

এই পুরাকীর্তি আবিষ্কারের পর ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ লিস্টে আল আইনের নাম উঠে আসে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরব আমিরাতের একটি সাংস্কৃতিক পরিচিতি ঘটে। এই পুরাকীর্তি পর্যবেক্ষণ করে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ কমিটির মন্তব্য ছিল-‘ The cultural sites of Al Ain (Hafeet, Hili, Bidaa Bint Saud and the oasis) constitute a serial property that testifies to sedentary human occupation of a desert region since the Neolithic period with vestiges of many prehistoric cultures.’

আরবরা প্রাচীন কালেই সেচ পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত ছিল। হিলিতে আবিস্কৃত বাইত আল ফালাজ একটি কৃত্রিম সেচ পদ্ধতির নাম। কূপের ভেতর পানি জমিয়ে রেখে নর্দমা কেটে ফসলের ক্ষেতে পানি সরবরাহ করাকে তারা বলত বাইত আল ফালাজ। এই বসতির লোকজন প্রধানত কৃষির উপর নির্ভরশীল ছিল । কিন্তু সাথে সাথে তারা শিকারিও ছিল এবং কুঠারের ব্যবহার জানত। তবে তাদের জীবনযাত্রা ছিল সাধারণ মানের এবং তারা সীমিত সম্পদের উপর নির্ভরশীল ছিল। আবার দিনের অধিকাংশ সময় তারা সমবেত ভাবে উপবেশনে কাটিয়ে দিত। এটা হতে পারে ধর্ম পালনের কোন অংশ। সম্ভবত তারা একেশ্বরবাদী ছিল এমন ধারণা করাটা যুক্তিযুক্ত বেশি। কারণ খনন কার্যে কোন প্রকার মূর্তি পাওয়া যায়নি।

হাফিতের সমাধি সৌধের পাশে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত দুর্গ আবিস্কৃত হয়েছে। এই অঞ্চলটি ছিল প্রস্তরস্তরে ঢাকা। এটি লৌহযুগের বলে জানা গেছে। এখান থেকে মৃৎপাত্রের টুকরাও উদ্ধার করা হয়। ইসলাম আবির্ভাবের পূর্ব যুগে এই ধরনের দুর্গ শহরের নিরাপত্তার জন্য তৈরি করা হত। এটিকে বলা হয় আল নাকফা দুর্গ। হিলি উত্তর সমাধি সৌধ ও হিলি ওয়েসিসের মধ্যবর্তী অঞ্চলে হিলি আর্কিয়লজিক্যাল পার্কের অবস্থান। এই পার্ককে প্রত্নতত্ত্বের ঘর বলে অভিহিত করা হয়। এই পার্কের দক্ষিণ অর্ধাংশ জুড়ে বেশ কিছু ব্রোঞ্জযুগের সমাধি আছে। উত্তর অংশে এখনও খনন কার্য চালানো হয়নি। এই পার্কের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো ব্রোঞ্জ ও লৌহযুগের বলে জানা গেছে। এখানে একটি মাত্র বিল্ডিং স্থাপনার অস্থিত্ব পাওয়া গেছে যেটির মূল মেঝে ও উপরের দেয়াল ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে গেছে। এখান থেকে যে ধরনের মৃৎপাত্র উদ্ধার হয়েছে তা থেকে এই ধারনায় উপনীত হওয়া যায় যে, ব্রোঞ্জযুগের এক স্তরে এটির অস্থিত্ব ছিল এবং লৌহযুগেও এটি অস্থিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল। পার্কের পশ্চিমদিকে লৌহযুগের আরও একটি গ্রামের পুরাকীর্তি আবিস্কৃত হয়েছে। এখান থেকে উদ্ধার হয়েছে বড় আকৃতির পাত্র যা তাদের উন্নত সমাজ ব্যবস্থার ইংঙ্গিত দেয়। সম্ভবত এ ধরনের পাত্রে তারা উদ্বৃত্ত ফসল মওজুদ করে রাখত।

পার্কের উত্তর দিকে উম আল নার এলাকায় একটি দুই ভাগে বিভক্ত সমাধি সৌধ আবিস্কৃত হয়েছে। এটির চাল দুই ভাগে বিভক্ত ও দেখতে অনেকটা গোলাকৃতির। দক্ষিণপূর্ব আরবের ওম আল নার সংস্কৃতিতে এটি ছিল ব্যতিক্রমধর্মী কাজ। পার্কের তিন কিলোমিটার পশ্চিমে রুমাইল্লাহ নামক স্থানে একটি আয়তকার সুরক্ষিত খামার আবিস্কৃত হয়েছে। এর উপরের দিকেও সমাধি সৌধ পাওয়া গেছে। এখানে দুই স্তরের সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়। এগুলো ছিল ব্রোঞ্জ ও লৌহ যুগের নিদর্শন। প্রথমটি শুরু হয়েছিল খৃষ্টপূর্ব ২০০০ সালের শেষের দিকে এবং দ্বিতিয়টি খৃষ্টপূর্ব ১০০০ সালের দিকে। ফালাজ সেচ পদ্ধতির সহায়তায় সম্ভবত তারা এই বৃহৎ খামার গ্রাম গড়ে তুলেছিল।

স্তরে স্তরে পাথর সাজিয়ে ভূমি চতুর্পাশে প্রায় চল্লিশ মিটার উঁচু বিদা বিন সৌদ এর প্রস্তর স্তরের উচ্চতা। খামার গ্রামের পূর্ব ও উপরের দিকে স্মৃতি সমাধিগুলোর অবস্থান। পূর্ব দিকের ব্রোঞ্জযুগের এই সমাধিগুলো হাফিতের সময়কার সমাধি সৌধের সাথে মিল আছে। এখানে লৌহযুগে স্থায়ী কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজ গড়ে উঠে। এই বসতিটি উত্তর দিকে যুক্ত হয়েছে আল আইন ওয়েসিস এর সাথে এবং উত্তর দিকে একটি স্থায়ী পথের নির্দেশ করে যা দুবাই, শারজাহ, উম আল কৌয়াইন ও রাসেল খায়েমাহ’র সাথে যোগাযোগ গড়ে তুলেছে। এখান থেকে উদ্ধারপ্রাপ্ত লৌহযুগের সামগ্রির মধ্যে মৃৎপাত্র, পাথরের পাত্র, ছুরি, ধনুকের তীর ও জপমালা। এসব উদ্ধারপ্রাপ্ত সামগ্রী আল আইন ন্যাশনাল মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।

শহরের সবচে উত্তর দিকে হচ্ছে হিলি মরূদ্যান। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে জানা যায় আজ থেকে ১০০০ বছর আগে এটি গঠন হয়েছিল এবং হিলি প্রশাসনিক এলাকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। মরূদ্যান ও ফালাজ সেচ ব্যবস্থার কারণে এই অঞ্চল ছিল পরিবার বসবাসের খুবই উপযোগী। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য তারা দুইটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ারও নির্মাণ করেছিল। ১৯৫০ সালে বৃটিশদের হিলি আক্রমণের সময় এই টাওয়ার এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:১২

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: প্রাগৈতিহাসিক মানব ইতিহাস জানতে পুরাকীর্তির বিকল্প নেই । বিভিন্ন দেশে আবিস্কৃত ঐতিহাসিক পুরাকীর্তির প্রতি আমার আকর্ষণ প্রবল । সেই ঝোঁক থেকেই এ লেখাটির জন্ম । পাঠক মন্তব্য আশা করছি ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.