নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বসে আছি অন্ধকারে, \nআমাকে বুঝতে দাও \nমানুষ কেন আলোর \nপ্রত্যাশা করে!

আসোয়াদ লোদি

জীবন ও যন্ত্রণার মরুচরে আমি প্রপাতের ধারা ।

আসোয়াদ লোদি › বিস্তারিত পোস্টঃ

এমন দেশ কি আমরা চেয়েছিলাম

১৪ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:২১

ভারতে ভিক্টোরীয় শাসনের ক্রান্তি লগ্নে বৃটিশ রাজের নীতি ছিল ‘Divided and rules’ . এরই সুত্র ধরে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আইন প্রনীত হয়। ভারতের সুবিধাবাদী রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠলেন । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর প্রতিবাদে লিখলেন, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’। যে গানটি বর্তমানে বাংলাদেশের জাতিয় সঙ্গীত । এটির জন্ম ইতিহাস পূর্ববঙ্গের স্বায়াত্বশাসনের বিরোধিতা ছাড়া আর কিছু নয় । ফলত বৃটিশ রাজ ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ আইন রদ করলেন । তারপরও বাংলাকে নিয়ে থেমে যায়নি রাজনীতির কূটখেলা ।



১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবে জিন্নাহ উত্থাপন করলেন দ্বিজাতি তত্ত্ব । তিনি বললেন, হিন্দু মুসলমান দুটি পৃথক জাতি। মুসলমানের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমির দাবি জানালেন তিনি। তাঁর দ্বিজাতি তত্ত্ব সারা ভারতজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করল । ভারতের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা । অবশেষে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারতকে বিভক্ত করে সৃষ্টি হল পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র । পূর্ববঙ্গ মুসলিম সংখ্যাধিক্যের কারনে পাকিস্তানের অংশে পড়ল । কোন জাতিগত ঐক্যের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি । কেবল ধর্মীয় ঐক্য ছিল এর একমাত্র পুঁজি । ভাষা ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতির অধিকারী বাঙালিরা ছিল পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিস্তত্বা । তবুও তাঁরা ছিল চরম বৈষম্যের শিকার।



প্রথম আঘাতটা আসল ১৯৪৮ সালে জিন্নাহ কর্তৃক উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার মধ্য দিয়ে । ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালিরা রক্ত দিয়ে প্রমান করে দিল মায়ের ভাষা কেড়ে নেয়া যায় না । তারপরের ইতিহাস আরও দীর্ঘ । আমি সেদিকে হাঁটতে চাই না । পাকিস্তানে এল ক্ষমতার পালাবদল । আইয়ুব খানের এক দশক ব্যাপী স্বৈরশাসনে বাঙালিদের মৌলিক অধিকার ভুলুন্টিত হল । এমন কি মৌলিক গণতন্ত্রের নামে ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হল । তখনই বাঙালিরা বুঝে গিয়েছিল পাকিস্তানিদের বলয়বৃত্ত আবস্থান করে কখনই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেনা । বাঙালিদের ত্রাণকর্তা হিসেবে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত আবির্ভূত হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । তাঁর ঐতিহাসিক ৬ দফা, ঊনসত্তরের গণ অভুত্থানের পথ বেয়ে এল একাত্তরের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ । ৩০ লাখ শহিদ ও ২ লাখ বীরাঙ্গনার আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন হল বাংলাদেশ । আমরা একটা নতুন দেশ পেলাম বটে কিন্তু উত্তরণ ঘটল না আমাদের রাজনীতির । ৭৩ এর নির্বাচনে তার ধাক্কা এসে লাগে। কারচুপি, ব্যালট বাক্স ছিনতাই এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হল ভোটাধিকার থেকে । তারপর ৭৫ এর ১৫ আগস্ট সংঘটিত হল ইতিহাসের ন্যাকারজনক হত্যাকান্ড । দেশের এক চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে ৭৭ সালে জারি হল সামরিক আইন । ক্ষমতায় এলেন জিয়াউর রহমান । তিনি নির্বাচন দিলেন । হল ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি । জনগণ পেল একটি ভোট জালিয়াতি ও কারচুপির নির্বাচন । তাঁর মৃত্যুর পর আবারও সামরিক শাসন । ক্ষমতায় এলেন হো. মো এরশাদ । তাঁর ৯ বছর স্বৈরশাসনে নির্বাচন এক তামাশায় পরিণত হল । অনেক আন্দোলন সংগ্রামের বিনিময়ে আমরা পেলাম তত্ত্বাবধায়ক সরকার । বিচারপতি সাহাবউদ্দিন সাহেব হলেন এর প্রধান । তিনি ৯১ সালে নির্বাচন দিলেন । আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব-এমন স্লোগানে উদ্দীপ্ত হয়ে জনগণ স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করল । সম্ভবত স্বাধীনতার পর এই নির্বাচনটি ছিল একটি দৃষ্টান্ত স্বরূপ । এটাকে কিছুটা হলেও আমাদের রাজনৈতিক উত্তরণ এভাবে আখ্যায়িত করা যায় । কিন্তু ৯৬ সালে এসে আমরা দেখলাম আরও একটি কূটকৌশলের নির্বাচন । আমাদের যা কিছু অর্জন ছিল তা আবার মাটিতে মিশে গেল । ২০১৪ সালের নির্বাচনটি হলো আরও জঘন্য পন্থায় । আমাদের রাজনৈতিক অধপতন সর্বনিম্নে পৌঁছে গেল । বর্তমানে আমরা নতুন একটা কালচার দেখতে পাচ্ছি । সেটা হচ্ছে গুম কালচার । আপনি বিরোধী রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলে গুম হওয়ার ভয় আপনাকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়াবে । নারায়ণগঞ্জে ৭ জন গুমের ঘটনা খুন পরবর্তী ফাঁস হয়ে গেছে । জনগণ বুঝতে পেরেছে কারা এর সাথে জড়িত । রক্ষক যদি ভক্ষক হয় এবং গুপ্ত অপরাধে জড়িয়ে পড়ে সত্যিকার অর্থে সেই দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি কিংবা অপরাধ নির্মূল কোন ভাবেই সম্ভব নয় ।



বাংলাদেশ উন্নতি করেছে কিংবা বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে-দুটোই বিজ্ঞাপন । সমর্থন যোগ্য নয় । উন্নয়নের প্রথম শর্ত হচ্ছে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাবস্থা । যে দেশ ৮-১০ ঘণ্টা লোড শেডিং নামক আগ্রাসনের শিকার হয়, তাকে কী করে উন্নয়ন বলি ? কুইক রেন্টালের সুফল জনগণ পেয়েছে বলে মনে হয় না । বরং কুইক রেন্টালের দায় জনগণের উপর চাপানো হয়েছে দফায় দফায় বিদ্যুতের মুল্য বৃদ্ধি করে । যে দেশে এখনো ১ কোটি শিক্ষিত বেকার হতাশার অথৈ সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে, যাদের সামনে নেই কোন আশার সূর্যোদয় ; বাংলাদেশ এগিয়েছে বলাটা তাদের কাছে প্রহসনের নামান্তর । এটা হতে পারে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ কৌতুক ।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.