নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বসে আছি অন্ধকারে, \nআমাকে বুঝতে দাও \nমানুষ কেন আলোর \nপ্রত্যাশা করে!

আসোয়াদ লোদি

জীবন ও যন্ত্রণার মরুচরে আমি প্রপাতের ধারা ।

আসোয়াদ লোদি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃতদের বাণী

২০ শে মে, ২০১৪ রাত ১:৪৬

কফিন লিখন (Cofin text) ছাড়াও মৃতদের বাণী (Book of the dead) ছিল প্রাচীন মিশরীয়দের একটি পবিত্র ধর্মীয় বিধি-বিধান । মৃতদের বাণী নামটি প্রাচীন মিশরীয়দের দেয়া । এসব বাণীগুলো লেখা হত নলখাগড়া (প্যাপিরাস) দিয়ে তৈরি গোটানো কাগজে এবং তা মৃত ব্যাক্তির কফিনে কিংবা কবর কক্ষে রাখা হত । মধ্য রাজ্যের কফিন টেক্সট লেখার মধ্য দিয়ে প্রাচীন রাজ্যের পিরামিড লেখার সঙ্গে বিবর্তন আরম্ভ করার একটি দীর্ঘ পদ্ধতি সৃষ্টি করেছিল এই বইটি । বইটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অনুচ্ছেদ কফিন টেক্সট লিখার পূর্বে রচিত হয় । প্রাচীন মিসরীয়রা বিশ্বাস করত মৃত্যু পরবর্তী আরও একটি জগত আছে । অর্থাৎ পরকাল ।

মৃত্যুর পর প্রত্যেক মিসরবাসীকে শেষ বিচারের মুখোমুখি হতে হবে । সেখানে তাদের হৃদয়কে একটি নিক্তির উপর রাখা হবে এবং দেবী মাতের একটি পালক দিয়ে ওজন করা হবে । যে পালকটি সত্য, ভারসাম্য ও শৃঙ্খলা নীতির প্রতীক । কারো আত্মার ওজন যদি পালকের চেয়ে হাল্কা হয়, তাকে পাপের সাথে যুক্ত করা হবে এবং পরকালে নিক্ষিপ্ত হবে । কেউ যদি এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, সে সত্যের কন্ঠস্বর বলে বিবেচিত হবে এবং সুখি ও শ্বাশত জীবনে গমন করবে । এমন কি তাদের বিশ্বাস ছিল প্রতিটি আত্মাকে পরকালে যাওয়ার পূর্বে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর দরজাগুলো পাড়ি দিতে হবে । প্রত্যেকটি দরজা একজন ভিন্ন ভিন্ন দেবীর সাথে যুক্ত আছে। আত্মাকে সেই বিশেষ বিশেষ দেবিকে চিনতে হবে । কিছু আত্মা দেবীদের চিনতে সক্ষম হবে আর যেসব আত্মা ব্যর্থ হবে তাদের একটা অগ্নির হ্রদে (দোজখ) নিক্ষেপ করা হবে । সেখানে তারা তীব্র দৈহিক যন্ত্রনায় ভুগবে ।

আত্মা তার পরকাল যাত্রায় অনেক বিপদের সম্মুখীন হবে বলে মনে করা হয় । এক পশ্চিম পরবর্তী জগতে প্রবেশ কিংবা অধোভুবনের মধ্যে দিগন্তের নিচে দেবতা ‘রা’(সূর্য) এর সঙ্গে ভ্রমণ করবে একবার । যেখানে আছে আদিম বিশৃঙ্খলার বাহিনী । প্রতিটি আত্মাকে তাদের সম্মুখীন হতে হবে । এখানে মৃত ব্যক্তিকে রক্ষার জন্য মৃতদের বাণী বইটি গাইডের ভূমিকা পালন করবে । এই বইয়ে অনেক গোপন ন্যাভিগেশনাল ধর্মীয় অনুষ্ঠান দেয়া আছে যা মৃত আত্মার যাত্রা পথে সব ধরনের বিপদ মোকাবেলার জন্য পরিকল্পিত ছিলনা । এখানে মৃতরা বই হাজির করবে বিভিন্ন বিপদের সুরাহা ও সুপারিশের জন্য ।

মৃতদের বাণী বইটিতে জাদু সম্মোহন ও প্রচলিত বিধিবদ্ধ উপাসনার নির্দেশাবলীর উল্লেখ আছে যা মৃত ব্যাক্তির পরকাল যাপনের জন্য প্রয়োজন । এই গ্রন্থের সাধারণ সূত্র হচ্ছে সূর্য দেবতার রাত্রি গমন এবং অপশক্তি সমূহের সঙ্গে ( আপোফিস অর্থাৎ সর্প ) তাঁর লড়াই, যারা তাকে রাত্রিতে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে যাতে প্রভাতে উদয় হতে না পারে।

বইটি হচ্ছে মৃত ব্যাক্তির জীবনযাপনের নৈতিক আচরণের সাক্ষী (আমলনামা), যেটি মৃত ব্যক্তি পরকালের বিচারক ওসিরিস এর সামনে পেশ করবে । মৃত ব্যক্তির কফিনে কিংবা কবর কক্ষে বইটির সাথে তার ধন-সম্পদ এবং সাজসজ্জার উপকরণও রাখা হত যাতে তার আত্মা ভ্রমণ করতে পারে । অর্থাৎ পরকালের ভিন্ন ভিন্ন দরজা সে পার হতে পারে । বুক অফ গেটস অর্থাৎ দরজাগুলোর বইতে ও এ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় । এটিও ছিল প্রাচীন মিসরীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বই । সেখানে উল্লেখ আছে একটি মৃত আত্মার পরবর্তী জীবনযাত্রার কথা, কিছু নিয়ম, রাতে সূর্য দেবতার পাতাল অতিক্রম, এবং সেখানে অপশক্তিসমূহ তাকে সকালে উদয় হতে বাধা দেয়া ও এদের বিরুদ্ধে তার লড়াইয়ের বর্ণনা ।

এছাড়া ডে ফোরথ একটি উল্লেখযোগ্য মৃত মিসরীয় বই । এটি মৃত্যুর পরবর্তী জীবন সম্পর্কে প্রাচীন মিসরীয় বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় বই । মৃতদের বইটি ক্যানোনিকাল মিসরীয় কিতাব সমতুল্য ছিল, যেটির পরকাল সম্পর্কিত ধারণা হিব্রু বাইবেলেও দেখা যায়। এটির প্রকৃত মিসরীয় শিরোনাম এবং চতুর্থ দিবসে গমন অধ্যায়ের বাণীগুলো প্রকৃত উদ্দেশ্য হিসেবে সম্ভবত আরও সঠিক দৃষ্টিকোণ প্রদান করে ।



মৃতদের বাণী বইটি আমাদের এই ধারনা দেয় যে, এটি প্রার্থনা করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহ এবং পরকালের বিপদ মোকাবেলার জন্য মৃত ব্যক্তির আত্মা কবর থেকে নিরাপদ ভাবে উত্থিত হবে। আর কোন প্রাচীন মিসরীয় লেখা বই পাওয়া যায়না যা পরকাল বিশ্বাসের সম্পূর্ণ সীমা ধারন করে । তাই গবেষকরা এটিকে প্রাচীন মিসরীয় বাইবেল বলে গণ্য করেন । এটি ছিল প্রাচীন মিশরীয়দের হিসেব রাখার (আমলনামা) প্রধান অবলম্বন ।

দরজাগুলোর বইতে দেখা যায় অষ্টাদশ রাজবংশের দিকে এটি সাধারনভাবে লেখা হয়েছে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ঘরে অথবা অনেক কবরের প্রথম ঘরের স্তম্ভগুলোতে । বিশতম রাজবংশ থেকে চব্বিশতম রাজবংশ পর্যন্ত এটি কাঠের শবাধারে লিপিখচিত করে রাখা হত । গোড়ারদিকে মৃতদের বাণী কবর কক্ষের দেয়ালে অংকিত হত । মিসরের মধ্য রাজ্যতে এসব বাণীগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল সারকোফাগুসের উপরে হাইআরাগ্লিফ রং করার জন্য । ফারাওদের অষ্টাদশ রাজবংশ থেকে এটি প্যাপিরাসে লিখা শুরু হয় । মিসরীয় প্রত্নতত্ত্ববিদরা অনেক রাজবংশের সাধারণ মৃত্যু ও মমি করণের অনেক অজানা তথ্য এই বই থেকে উদ্ধার করেছে । প্যাপিরাসে লিখিত সম্ভবত এটিই বহুল পরিচিত ও বিখ্যাত স্ক্রোল যা একজন অনি ও তার স্ত্রী তুতু এর নামে সব দেবতার প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছিল । অবিশ্বাস্য সুন্দর চিত্র সম্বলিত এই স্ক্রোলটি পূর্বের রেমিসিড পিরিয়ডে (খৃঃপূ ১৩০০) দক্ষিণ ধর্মীয় রাজধানী থিবেস (আধুনিক লাক্সোর) এ তৈরি করা হয়েছিল । আর থিবেস শহরে অনির বাড়ি ছিল এরও স্পষ্ট উল্লেখ আছে । ১৮৮৮ সালে বৃটিশ জাদুঘর এটি ক্রয় করেন ।ই ওয়ালিস বাডজ এই স্ক্রোলটি দৈর্ঘ্যে ৭৫ ফুটের ও অধিক প্রসারিত করে ছিলেন । নতুন রাজ্য ও রেমিসিড পিরিয়ডে এটি ছিল প্যাপিরি বইয়ের সর্বোত্তম উদাহরণ ।

পরবর্তীকালে পন্ডিতদের আবিষ্কৃত অসাধারণ এই স্ক্রলটি আসলে একটি প্রাক তৈরি টেমপ্লেট প্যাপিরাস । অনি নাম এবং শিরোনামগুলো কেবল সময় উপযুক্ত এবং এখানে ফাঁকা স্পেস রাখা হয় হিসাব তৈরি বা কাজের প্রস্তুতির জন্য । আজ প্রস্তুতি ছিল মৃত্যু । প্রাসঙ্গিক spells এবং প্রার্থনার সঙ্গে পরকালে নিরাপদ যাত্রার জন্য অনি এখন প্রস্তুত বলে গণ্য ।

মৃতদের বই প্রাচীন মিসরীয় সময়ের সচিত্র বইয়ের সংক্ষিপ্তসার প্রতিনিধিত্ব করে । এটি ওল্ড কিংডমে রাজকীয় পিরামিড গ্রন্থের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং মিডল কিংডমে ধনী ব্যক্তিদের জন্য শবাধার গ্রন্থ হিসেবে পরকালের সহায়িকা স্বরূপ একটি প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারাবাহিক প্রতিনিধিত্ব করে । এই পুরানো মৃতদের বইয়ের অনেক অধ্যায়গুলোর ভিত্তি ছিল উপাদান সরবরাহ করা । ইহুদীরা তাদের কিতাব ওল্ড টেস্টামেন্টে তাদের নতুন বিশ্বাসের অনেক উপাদান এখান থেকে দত্তক নিয়েছে । প্রাচীন মিসরীয় ধর্ম নব্য বহু ঈশ্বরবাদী পরিবেশের সাথে নতুন একেশ্বরবাদী বিশ্বাসের মৌলিক অভিন্নতা সমাধান করার আদৌ প্রয়োজন ছিল বলে মনে হয়না । তাই পরকাল সম্পর্কে মৌলিক ধারণা মিসরজুড়ে আজও স্থিতিশিল রয়েছে ।

মৃতদের বই প্রথমে লিখা হত পাথর কফিনে, পরবর্তীতে লিখা হয় প্যাপিরাসে । সে থেকে এটি মমি করা কফিনের অভ্যন্তরে স্থাপিত হত । ফারাওদের ওল্ড কিংডম (২৬০০-২৩০০ খৃঃপূঃ), মিডল কিংডম ( ২০০০ খৃঃ পূঃ) ও অষ্টাদশ রাজবংশের (১৫৮০-১৩৫০ খৃঃ পূঃ) সমাধি থেকে এই বইগুলো উদ্ধার করা হয় । বেশকিছু উল্লেখযোগ্য প্যাপিরাস গ্রন্থ থেকে অনি ও হানিফার এর বই দুটির সবচেয়ে সুপ্রসিদ্ধ ইংরেজি অনুবাদ করেছেন যথাক্রমে স্যার পিটার শো (১৮৯২-১৯৯৭) এবং স্যার ই ওয়ালিস বাডজ ( ১৮৯২-১৯৬৭) ।

যে সব রাজার কবরগুলোতে মৃতদের বাণী পাওয়া গেছে তাঁরা হচ্ছেন-

মেরনেপতাহ ( XIX dynasty, grave kv 8) , টিওসরেট এবং সেটনেখট (XIX – XX dynasty, grave kv 14) , রামসেস III (XX dynasry,grave kv 11) , রামসেস IV ( XX Dynasty grave kv 2), রামসেস VI ( XX Dynasty grave kv 9) ।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.