নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বসে আছি অন্ধকারে, \nআমাকে বুঝতে দাও \nমানুষ কেন আলোর \nপ্রত্যাশা করে!

আসোয়াদ লোদি

জীবন ও যন্ত্রণার মরুচরে আমি প্রপাতের ধারা ।

আসোয়াদ লোদি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মদন যখন শহরে

২২ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:৩৮


আজ দুইদিন হল মদন কক্সবাজার শহরে এসেছে ডাইল আক্কাছের খোঁজে । আক্কাছ মদনের ছেলেবেলার বন্ধু । সে যখন পুলিশের তাড়া খেয়ে গ্রামে পালিয়ে গিয়েছিল, তখন মদনকে কথা প্রসঙ্গে বলেছিল- ডাইল খেলে মাথায় চক্কর আসবে । আর চক্কর আসলে যেকোন কাজ করে ফেলতে পারবে মদন ।
হে রে মদন তুই সিনেমায় দেখস নাই । ভিলনের মাথায় যখন চক্কর আসে নায়িকাকে কাঁধে তুলিয়া লইয়া যায় । নায়িকা খালি হাত পা ছুড়ে, বাঁচাও বাঁচাও চিল্লায় । আর কিছু করতে পারে না । আক্কাছের বলার স্টাইল ও বাংলা ফ্লিমের রেফারেন্স মদনের ভগ্ন হৃদয়ে কোন রেখাপাত করতে পারল না । তাই মদন সোজাসাপ্টা প্রতি উত্তরে বলেছিল-
কিন্তু উমাতিন তো বেশ মোটা । তারে আমি আল্গাইতে পারি না ।
যখন তর মাথায় চক্কর আসব এইরকম দুইটা উমাতিন রে আল্গাইতে পারবি । আক্কাছের অভয়বাণী ছিল এরকম । কথাটা মদনেরও বেশ মনে ধরেছে ।
কিন্তু আক্কাছকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না । তার দেয়া ঠিকানা মোতাবেক দুইবার গিয়েছে চরপাড়ায় । দুইবারই মদনের মিশন ব্যর্থ ।

কে এই আক্কাছ ? উল্টো মদনকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হলে বলে, সে নিজেরে ডাইল আক্কাছ বলে পরিচয় দেয় ।

চরপাড়ার ফাজিল টাইপের এক ছোকরা বলল, ডাইল আক্কাছ রে চিনি না । তয় নুরপাড়ায় ফেন্সি আক্কাছের কথা হুনছি । আপনে নুরপাড়ায় খুঁজ লইতে পারেন ।

ছোকরাটা হন হন করে চলে যায় । মদন হা হয়ে তাকিয়ে থাকে সেদিকে । না, এভাবে আক্কাছ রে খুঁজে পাওয়া যাবে না । স্বগতোক্তি করে সে ।

হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত মদন ঝাউগাছের ছায়ায় কাপড়ের পুটলিতে হেলান দিয়ে বিশ্রাম নেয় । আক্কাছের বলা কথাগুলো বারবার তার ভাবনায় চলে আসে । মাথায় চক্কর আসলে সে জোর করে উমাতিন কে উঠিয়ে আনতে পারবে ।

উমাতিন তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে । আজ সে উমাতিনের আঙিনা থেকে বিতাড়িত । তাকে এই অপমানের প্রতিশোধ নিতেই হবে । কিন্তু আক্কাছ কে না পেলে সে ডাইলের সন্ধান পাবে কী করে ? সে হতাশ হয়ে ডাইলের কথা ভাবতে লাগল । জীবনে সে বহু ডাইল খেয়েছে । খেসারী, মসুরি, অড়হর, মাষকলাই, মুগ সহ আরও কত পদের ডাইল । কই কখনো তো চক্কর আসেনি তার মাথায় । তবে আক্কাছ বিশেষ কোন ধরনের ডাইল খায়, যা খেলে মাথায় চক্কর আসে । এসব ভাবতে ভাবতে সে খুব অসহায় বোধ করে ।

শহরে এবারই মদনের প্রথম আগমন । জীবনে সে গাড়ি ঘোড়ায় চড়েনি । অনভিজ্ঞতার কারণে পথে অনেক ঝাক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। যদি আক্কাছের দেখা না পায় তাহলে কী উপায় হবে ভেবে অস্থির হয়ে পড়ে সে । শহরে এসে উমাতিনের কথাই বেশি বেশি মনে পড়ছে ।

গোলগাল ফুটবলের মত উমাতিনের চেহারা । ডাগর কালো পটলচেরা চোখ । ফোকলা দাঁতের খিল খিল হাসি মদন কিছুতেই ভুলতে পারে না । সে আর কিছু ভাবতে পরে না । মনে হচ্ছে পাগল হয়ে যাবে । দু’হাতে মাথার চুল ছিড়ে মদন ।

উমাতিনরা উপজাতি । তার বাবা জুমচাষী । মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে তাদের গ্রাম । মদন ছিল উমাতিনের ছোটবেলার খেলার সাথি । খেলতে খেলতে মদন স্বপ্ন দেখেছিল একদিন উমাতিন তার হবে । কিন্তু মদন বুঝতে পারে না উমাতিন হঠাৎ বিগড়ে গেল কেন । অথচ এমন একটা সময় ছিল উমাতিন মদনকে পাগলের মত ভালোবাসত । মদন ছাড়া অন্যকিছু বুঝত না । খুব কষ্ট করে উমাতিন নিজের আবেগের কথা প্রকাশ করত ।

একদিন তারা ভরা আকাশে ফকফকা জোছনা এসেছে । মদন আর উমাতিন বসেছিল জুম পাহাড়ের চূড়ায় একটি জলপাই গাছের গুড়ির উপর । সেদিন কত কথা কত আবেগ জমেছিল দু’জনের মনে । যেন ভালোবাসার বিশাল সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে। হঠাৎ উমাতিন আবেগ কন্ট্রোল করতে পারল না । মদনকে জড়িয়ে ধরে বলে, মদন্যা অ্যাঁই তর লগে প্যাঁ (প্রেম) করিয়ে।

স্বাস্থ্যবতী উমাতিনের বাহু ছিল বেশ ভারী । অনেকটা হাতির শুঁড়ের মত । উমাতিনের বাহুডোরে চিকনা মদন বিচলিত হয়ে উঠল । মনে হল তার দম আটকে গেছে । উমাতিনের আলিঙ্গন থেকে মুক্ত হয়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেলছিল সে । আর ভাবছিল উমাতিনের শরীরে এত শক্তি, সাক্ষাৎ বাঘিনীও হার মানবে ।

আবার মদন কিছু বুঝে উঠার আগেই উমাতিন তাকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে ঘুরতে লাগল । তার চোখের সামনে পাহাড় চক্কর দিচ্ছে, গাছ চক্কর দিচ্ছে, আকাশ চক্কর দিচ্ছে ; এমন কি গোটা পৃথিবী ঘূর্ণির মত চক্কর দিচ্ছে । মাথার ভেতর ঝিমঝিম যন্ত্রণা অনুভব করলে মদন চোখ বন্ধ করে রাখল । কিন্তু মদন শুনতে পাচ্ছে উমাতিনের খিলখিল হাসি । আর উমাতিন একটানা বলে যাচ্ছে, মদন্যা অ্যাঁই তর লগে প্যাঁ করিয়ে ।

উমাতিন মদনকে যখন ছেড়ে দিল সে মাটিতে শুয়ে পড়ে । উঠে বসার মত কোন শক্তি তার শরীরে অবশিষ্ট ছিল না । এভাবে সময়গুলো কেটে যেত তার । মাঝে মাঝে মদন উমাতিনকে কিছু ভাষাজ্ঞান দানের চেষ্টা করত । বলত, আইচ্ছা উমা বলতো প্যাঁ নয়, প্রেম । উমাতিন আবারও বলত প্যাঁ । মদন একটু বুদ্ধি খাটিয়ে বলত, ঠিক আছে এবার বলতো পিয়ার । উমাতিন বলত পিয়াল ।

সেসব মধুময় স্মৃতিগুলো আজ মদনকে খুব বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে । এসব হিজিবিজি ভাবতে ভাবতে মদন কিঞ্চিত তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল । যখন ঘুম ভাঙ্গে দেখে কাপড়ের পুটলিটা নেই । মদন হায় হায় করে কপাল চাপড়ায় । বিলাপ করে, আমার সব গেল, সব গেল । আমি এখন সর্বহারা ।

পুটলির শোকে মদন উদ্ভ্রান্তের মত ছুটে চলে । ডাইল আক্কাছ রে খুঁজতে এই গলি সেই গলি, কানাগলি , চিপাগলি, কোন গলিই বাদ রাখে না। ইতিউতি চায়, উঁকিঝুঁকি মারে । কোথায় ডাইল, কোথায় আক্কাছ ? মদন বলে বহুদূর ...বহুদূর ।

তবে কী মদনের মিশন ব্যর্থ হবে ? সাধারণত পাহাড়ি যুবকরা জেদি হয় । গোঁয়ার ষাঁড়ের মত তার ভেতর জেদ চেপে বসে । মদন দাঁতে দাঁত পিষে প্রতিজ্ঞা করে, যেভাবে হোক আক্কাছ কে খুঁজে বের করতে হবে ।

হাঁটতে হাঁটতে মদন লালদিঘির পারে চলে আসে । সন্দেহজনক গতিবিধির কারণে দু’জন টহল পুলিশের নজরে পরে যায় সে । পুলিশ দ্বয় তাকে ফলো করে । এক পুলিশ ফিসফিস করে বলল, মনে হচ্ছে একশ পারসেন্ট সন্দেহজনক । অপর পুলিশ বলে, আমার ধারণা অরিজিনাল রোহিঙ্গা ।

দুই পুলিশ একমত হয়ে বলে, তাহলে এবার অপারেশন শুরু করি । হঠাৎ পুলিশ মদনকে ঘিরে ধরে বলল, ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট !

মদন যারপরনাই অবাক হল । তার হাতে কোন আন্ডা (ডিম) নেই। তারপরও পুলিশ বলছে আন্ডা বেচস । হতবিহবল মদন উত্তর দিল, আমি আন্ডা বেচি না ।

পুলিশ দ্বয় একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে ইশারা করল । একজন পুলিশ মদনের পুরো বডি চার্চ শুরু করে দিল । তেমন কিছুই মিলেনি। এমন কি একটি কানাকড়িও না ।

পুলিশ ধমক দিল । এই তোর টাকা পয়সা কোথায় ?

মদন আধো আধো কেঁদো স্বরে বলে, আমি সর্বহারা ।

কী সর্বহারা ! আৎকে উঠে পুলিশ ।

পুলিশের মধ্যে একজন বলে, চরমপন্থী ?

আমার নাম মদন । আমারে গরমখন্থি ডাকেন ক্যান ?

পুলিশের মধ্যে একজন বলে, জীবনে বহুত পাগল দেখছি । এইডা আবার কোন কিচিমের পাগল । একবার কয় আন্ডা বেচি না, আরেকবার কয় সর্বহারা, আবার কয় গরমখন্থি । পুলিশ আবার ধমকায় । এই বেটা তোর মতলব কিরে ?

খবরদার ! গর্জে উঠে মদন । আমার বাপের নাম ধরবা না । তোমাগরে মতলবে কী করছে ? মতলব মতলব করতাছ ক্যান ?

পুলিশ দ্বয় কিঞ্চিত ঘাবড়ে গেল । ফিসফিস করে বলল, বেটার তো তেজও আছে দেখছি । সত্যি সত্যি চরমপন্থী নয় তো ? বোমা টোমা পুঁতে রাখেনি তো ?

এবার পুলিশ কিছুটা কোমল সুরে বলল, আচ্ছা মদন তুমি কী কর ?

ডাইল খুঁজি । সে ঝটপট উত্তর দিল ।

তা মুগ না খেসারী ?

ধ্যাৎ ! ওসব ডাইল না ।

তয় কোন সে ডাইল ?

আক্কাছ যেটা খায় সেই ডাইল ।

আক্কাছ কোন ডাইল খায় ?

হে কইছে এইডা এমুন মারফতি ডাইল খাইলে মাথায় চক্কর আসে।

তাহলে আমাদের সাথে চল । আমরা তোমাকে ডাইল খাওয়ার ব্যবস্থা কইরা দিব ।

পরদিন মদন নিজেকে জেলখানার চার দেয়ালের ভিতর আবিষ্কার করল এবং সেখানেই আক্কাছের সাথে তার সাক্ষাৎ হল । আক্কাছকে দেখে মদন আহ্লাদে আটখানা ।

আরে আক্কাছ ! তুই এইখানে কী করস ? তরে আমি পুরা শহর খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হইয়া গেছি ।

আক্কাছ নির্লিপ্ত ভাবে জবাব দিল, ডাইল খাই ।

মদন খুব উচ্ছ্বাস নিয়ে বলে, আমারে খাওয়া দোস্ত ।

অপেক্ষা কর । তিন বেলা ডাইল খাইতে দিব ।

মদন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগল ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:০৭

আমি তুমি আমরা বলেছেন: আপনার নীল নদ নিয়ে লেখা পোস্টে মন্তব্য অপশন কি অফ করা?

২| ২৫ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:৪৬

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: অপশন তো ওপেন আছে ।

৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট পড়ে হাসলাম।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৫২

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: হাসিটুকু পরম পাওয়া। এই লেখাটা অনেক পুরানো। কলেজে পড়াকালীন সময়ে রচিত। অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.