নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বসে আছি অন্ধকারে, \nআমাকে বুঝতে দাও \nমানুষ কেন আলোর \nপ্রত্যাশা করে!

আসোয়াদ লোদি

জীবন ও যন্ত্রণার মরুচরে আমি প্রপাতের ধারা ।

আসোয়াদ লোদি › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিপীড়নের হাতিয়ার

২৬ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:৫১

প্রথমে বলে রাখি আমার এ লেখাটা ধর্মের বিরুদ্ধে নয় । ধর্মের অপপ্রয়োগের বিরুদ্ধে দু-চার কথা বলার চেষ্টা মাত্র । মানুষ মাত্রই বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসী প্রাণী । এই দুটি গুন পৃথিবীর সব মানুষের মধ্যে বর্তমান । একজন মানুষের নিয়ন্ত্রনের মুলে রয়েছে তার মস্তিষ্ক । অর্থাৎ মানুষ সহজাত ভাবে তার চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন ঘটাতে পারে তার কর্মের মাধ্যমে । শিক্ষিত-অশিক্ষিত, মূর্খ জ্ঞানী যা হোক না কেন সবার স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করার অধিকার রয়েছে । যদি রাষ্ট্র কিংবা ধর্ম সেই অধিকার কেড়ে নেয়, তবে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বলে আর কিছু থাকে না এবং ব্যক্তির স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে ।



মুক্তবুদ্ধির চর্চা ছাড়া কোন সমাজই এগিয়ে যেতে পারে না । সত্যিকার অর্থে সমাজকে এগোতে হলে চিন্তার স্বাধীনতা অপরিহার্য । বুদ্ধিমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ছিলেন আবুল হুসেন । তিনি ‘বাঙালি মুসলমানের শিক্ষা সমস্যা’ প্রবন্ধে লিখেছিলেন-“অতীতের কোনো যুগবিশেষের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে যারা বর্তমানকে অস্বীকার করে তাদের বুদ্ধি মুক্ত নয়”। আমরা ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখি, প্রাচীনকাল থেকেই কিছু মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অযৌক্তিক বিশ্বাস বা মতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন । কারন প্রতীক ও আচারসর্বস্ব বিশ্বাসের অসারতা তাদের বিবেককে করেছে প্রবলভাবে পীড়িত । ফলে সত্য অনুসন্ধানের জন্য তারা যুক্তিকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন । দেখা যায় প্রাচীন ভারতবর্ষে একদল মানুষ বৈদিক বিশ্বাস ও আচরণের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করার প্রয়াস চালাতেন । চার্বাক দর্শনে উল্লেখ আছে, “যুক্তির মাধ্যমে বৈদিক সব ধারণাকে যাচাই করে দেখার প্রচেষ্টার সূচনা হয় । এর অবশ্যম্ভাবী ফল হেতুবাদই হল এই প্রচেষ্টার মাধ্যম”।



খৃষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দী থেকে শুরু হয় চিন্তার স্বাধীনতার সাথে ধর্ম ও অন্ধবিশ্বাসের বিরোধ । এই বিরোধ বিভিন্ন শতাব্দীতে আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে । চিন্তা ও গবেষণার মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষা করতে গিয়ে অনেক নির্ভীক মনিষীকে সীমাহীন নির্যাতন ও লাঞ্ছনা ভোগ করতে হয়েছে ; এমন কি অনেকের ভাগ্যে মৃত্যুও জুটেছে ।



আইওনিয় দার্শনিক এনাক্সাগোরাস (৫০০-৪২৮ খৃঃ পূঃ) বলেছিলেন- “সূর্য দেবতা নয়, একটি আগ্নেয় প্রস্তরখন্ড মাত্র । চন্দ্রকেও দেবী বলা চলে না, কেননা চন্দ্রের দেহ মাটি দ্বারা তৈরি”। এ কথা বলার কারনে তাকে বিচারের সম্মুখীন করা হল এবং ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করার কারনে তাকে কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল । দার্শনিক প্রোটাগোরাস (৪৮০-৪১০ খৃঃ পূঃ) তার বইয়ে ,মন্তব্য করেছিলেন-“দেব দেবীরা আছে কী নেই তা আমি জানি না”। তাঁর এই মন্তব্য পুরো এথেন্স জুড়ে ঝড় তুলেছিল । তাঁর বই পুড়ে ফেলা হয়েছিল । তিনি এথেন্স থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন । মহামতি দার্শনিক সক্রেটিসের ঘটনাটা তো আমরা সবাই জানি । প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাসের বিরুদ্ধে তাঁর একেশ্বরবাদের ধারণা, শেষ পর্যন্ত তাকে বিষাক্ত হেমলক পানে মৃত্যুর শাস্তিই বেছে নিতে হয়েছিল ।



কোপার্নিকাসের De Revolutionibus ও ভেসালিয়াসের অ্যানাটমির বই De Fabrica প্রকাশিত হয়েছিল ১৫৪৩ খৃষ্টাব্দে । ভেসালিয়াস তাঁর বইতে মানব শরীরস্থান সম্পর্কে পূর্বতন ভ্রান্ত ধারণা এবং প্রধান অসঙ্গতিগুলো প্রকাশ করেছিলেন । এ বই দুটি ছিল সে সময়ে এক যুগান্তকারী আবিস্কার । কারন বই দুটি প্রাচীন ভ্রান্ত ধারনার অটল বিশ্বাসের মূলে কঠিন আঘাত করেছিল । চার্চ কোপার্নিকাসের বইটি নিষিদ্ধ করেছিল । জিওদার্নো ব্রুনো (১৫৪৮-১৬০০) লুকিয়ে বইটি পড়েছিলেন এবং কোপার্নিকাসের মতবাদের একজন কট্টর সমর্থক হয়ে উঠলেন । ব্রনো নিজের গবেষণা দ্বারা কোপার্নিকাসের মতবাদকে আরও সমৃদ্ধ করে তুললেন এবং তা প্রচার করতে থাকলেন । তাঁর প্রাচারিত মতবাদ ছিল-“ মহাশূন্য অনন্ত এবং এতে একাধিক ব্রক্ষ্মান্ড বিরাজ করছে”। তখনকার দিনে মহাবিশ্বের একমাত্র ব্যাখ্যা ছিল ধর্মগ্রন্থ । এর বাইরে ভাবা কিংবা বিশ্বাস করার নিয়ম ছিল না। কিন্তু ব্রুনোর বিশ্বাস ও ব্যাখ্যা ছিল শাস্ত্রবিরোধী । সুতরাং শাস্ত্র মতে এটা বিপদজনক । এই বিশ্বাস মানুষ গ্রহণ করতে থাকলে শাস্ত্রের অসারতা উম্মোচিত হয়ে পড়বে এবং গির্জার কর্তৃত্ব টলে উঠতে পারে । তবে আর দেরী কেন ? ব্রুনোকে গ্রেপ্তার করা হল । বিচারে তাকে নিজ বিশ্বাস প্রত্যাহার করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলা হল । ব্রুনো ঘৃণাভরে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন । তাঁকে নৃসংশভাবে পুড়িয়ে মারা হল ।



এক সময় মনে করা হত পৃথিবী পৃষ্টের বিপরীত দিকে অর্থাৎ প্রতিপাদস্থানে মানুষের বসবাস নেই । ধর্মপ্রচারকগণও ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে সেই স্থানে গমন করেননি । নতুন গোলার্ধের দেশ আবিস্কার হলে ধর্মের পবিত্র বিশ্বাসের ভিত ও এতদিনের ভুল ধারণা দুই ভেঙ্গে পড়ে । এ প্রসঙ্গে সমরেন্দ্রনাথ সেন ‘বিজ্ঞানের ইতিহাস’ (২য় খন্ড) বইতে উল্লেখ করেছেন- “বাইবেলে আছে, যীশুর দ্বিতীয় আবির্ভাবের সময় পৃথিবীর সমস্ত জাতি তাহাকে দর্শন করিয়াছিল ; অপর পৃষ্টে মানুষ থাকিলে কেমন করিয়া তাহারা যীশুকে দেখিল ? এইসব কারনে প্রতিপাদ স্থানে মানুষের অস্থিত্বে বিশ্বাস এক সময় চরম অধার্মিকতা বলিয়া পরিগণিত হইত । এরূপ বিশ্বাসের জন্য ১৩২৭ খৃষ্টাব্দে সেকো দা’ স্কোলিকে পোড়াইয়া মারা হইয়াছিল ; আবানোর পিটারও একই অপরাধে ইনকুইজিশন কর্তৃক অভিযুক্ত হইয়াছিলেন ১৩৬১ খৃষ্টাব্দে ।”



এতক্ষন যা বললাম সবি ইতিহাস । এবার বর্তমান বাস্তবতার দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক । সম্প্রতি সুদানের একটি আদালত আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের রায় দিয়েছে । সন্তান জন্মদানের পর রায় কার্যকর করা হবে । এই হতভাগী নারীর অপরাধ, সে খৃষ্টধর্মে বিশ্বাস স্থাপন করে একজন খৃষ্টান পুরুষকে বিয়ে করেছে । মেয়েটির নাম মিরিয়াম ইয়েহইয়া ইব্রাহীম । গত তিন মাস ধরে মিরিয়াম সুদানের জেলখানায় বন্দী রয়েছে । সন্তান জন্মদানের পর তাকে একশত চাবুক মারা রায়ও প্রদান করা হয় । মিরিয়ামের মা ইথিওপিয়ান খৃষ্টান । ছয় বছর বয়সে তার মুসলিম বাবা তাদের ছেড়ে চলে যান । সেই থেকে মিরিয়াম মায়ের কাছে প্রতিপালিত হয় এবং খৃষ্টধর্মে বিশ্বাসী হয়ে উঠে । এখন ধর্ম ত্যাগের কারনে যদি মৃত্যুদন্ডের শাস্তি পেতে হয় ; তাহলে আল্লাহর এই বাণীর সার্থকতা কোথায় ? আল্লাহ তাঁর রাসুল হযরত মুহাম্মদ (সঃ)কে বলছেন-



বলুন, হে কাফেরগণ,

আমি এবাদত করিনা, তোমরা যার এবাদত কর।

এবং তোমরাও এবাদতকারী নও, যার এবাদত আমি করি

এবং আমি এবাদতকারী নই, যার এবাদত তোমরা কর।

তোমরা এবাদতকারী নও, যার এবাদত আমি করি।

তোমাদের দ্বীন তোমাদের, আমার দ্বীন আমার ।

(সুরা-কাফিরূন )







মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মে, ২০১৪ রাত ১:৪০

মাইরালা বলেছেন: ধর্মের বিরুদ্ধে লেখার কারণেই সামুতে মোডারেটর প্যানেল আমাকে জেনারেল থেকে নজরদারিতে এনেছে। আস্তিকদের সহনশীলতা বা সহিষ্ণুতা খুবই কম। X(( X(( X(( X(( X((

২| ২৬ শে মে, ২০১৪ রাত ৩:০৯

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: মাইরালা আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ । লেখাটা ধর্মের বিরুদ্ধে নয় । আমি অপপ্রয়োগের দিকে দৃষ্টিপাত করেছি ।

৩| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: দুনিয়াতে ধর্ম না থাকলে ধর্ম নিয়ে হানাহানিও থাকতে না।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৪০

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: পৃথিবীতে ধর্মের কারণেই সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টা ফেরেস্তারা মানুষ সৃষ্টির পূর্বেই উপলব্ধি করতে পেরেছিল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.