নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বসে আছি অন্ধকারে, \nআমাকে বুঝতে দাও \nমানুষ কেন আলোর \nপ্রত্যাশা করে!

আসোয়াদ লোদি

জীবন ও যন্ত্রণার মরুচরে আমি প্রপাতের ধারা ।

আসোয়াদ লোদি › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবরুদ্ধ আকাশ (পর্ব ৬)

০৪ ঠা জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৩৬


৫ পর্বের লিঙ্ক- Click This Link
(পর্ব ৫ এর পরের অংশ)

সকালের নাস্তার পর ইয়াহিয়া বারান্দায় বসে সেতুকে গল্প শুনাচ্ছিলেন। হ্যামিলনের বাশিওয়ালা গল্পটি সেতু মুগ্ধ হয়ে শুনছিল আর মাঝে মাঝে প্রশ্ন করছিল। আমান ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছে। সুমি রান্নাঘরে পায়েস রাঁধছে। বিলকিস বললেন, এখন পায়েস করছিস যে, সবাই তো নাস্তা করে ফেলল।

সুমি দ্রুত কড়াই নাড়তে থাকল। হাতের কম্পনে তার চুড়ি রিনরিন আওয়াজ করছে। বাসার জন্য না মা। মণিকা আপুর জন্য নিয়ে যাব।
ওঅ তাই বল। চুলার আঁচ আর একটু কমা, নাহয় তলার দিকে লেগে যাবে।

সুমি গ্যাস বার্নারের নব ঘুরিয়ে আগুনের আঁচ কমিয়ে দিল। মিষ্টি হল কিনা দেখ তো মা , চিনি আর লাগবে কিনা।
বিলকিস চামশ দিয়ে অল্পখানি পায়েস তুলে নিয়ে ঠোঁটে ছোঁয়ালেন। মিষ্টি ঠিক আছে। আর অল্প দুধ ঢাল, আরও কয়েকটা পেস্তাবাদাম দে।
সুমি আরও কিছু দুধ আর বাদাম দিয়ে বলল, হয়ে গেলে একটা বক্সে ঢেলে নিও মা। আমি রেডি হয়ে নিই। সেতুকে সঙ্গে নিয়ে যাব।
আচ্ছ, তুই তৈরি হয়ে নে, আমি দেখছি।

সকাল থেকে মণিকা ফুরফুরে মেজাজে আছে। সজলের সানিধ্যে সে আবার উজ্জ্বিবিত হয়ে উঠেছে। টবের বাসিফুল ফেলে দিয়ে বাগান থেকে তাজা ফুল এনে টব সাজাল। মণিকা পরেছে সুতি শাড়ি। শাড়ির সাদা জমিনে লাল লাল জবা ফুলের হাতের কাজ, শাড়িটিকে একটি ছোট বাগানের মত মনে হচ্ছিল। মণিকা এম্নিতে যথেষ্ট সুন্দরী, তার উপর হাল্কা প্রসাদন তাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তার বুকের উপর আড়াআড়ি শুয়ে থাকা লালপারের দিকে তাকিয়ে সজল বলল, আজ তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি যেন বিপ্লবের প্রতীক। তোমার শাড়ির সাদা রঙ শান্তির কথাই বলছে। আর লাল হচ্ছে বিপ্লবের রঙ।

মণিকা হাসল। চোখ ঘুরিয়ে বলল, সবখানে বিপ্লব দেখ, ভালোবাসা দেখ না ? ভালোবাসার রঙও কিন্তু লাল, আর ভালোবাসা শান্তির কথাও বলে।
সজলের ঠোটের ফাঁকে একঠুকরো হাসি। তুমি তো বিপ্লবের বাইরে কেউ নও। বিপ্লব ভালোবাসি বলে তোমাকে ভালোবাসি। তোমার মধ্যে আমি আমার রাজনৈতিক শক্তি খোঁজে পাই।
আমি খুব সাধারণ। মনে হয় না তোমাকে কিছু দিতে পারব। মণিকা দুই হাতে সজলের বাহু ধরে শোয়া থেকে তুলে বলল, পিছে বালিশ দিয়েছি। বালিশে হেলান দিয়ে বস। ড্রেসিং বদলাতে হবে।
সজল বালিশে হেলান দিয়ে মাথা তুলে বসল। মণিকা ড্রেসিং খুলতে খুলতে বলল, তোমার সাথে আমার বিয়ে হোক বা না হোক, সেটা নিয়ে ভাবছি না। ভাবছি তোমার রাজনীতি নিয়ে। এগিয়ে যাও, তোমার আর পিছনে আসার সুযোগ নেই।

সজলের দৃষ্টি মণিকার মসৃণ মেদহীন তলপেটের উপর নিবদ্ধ হল। ঘাসফুলের মত মণিকার নাভির দিকে তাকিয়ে রইল সে। মণিকার শরীর থেকে একটা মিষ্টি গন্ধ বেরুচ্ছে। সজলের গন্ধটা ভাল লাগল। বলল,
পারফিউম তুমি কোন ব্র্যান্ড ইউজ কর ?
মণিকা এন্ড কোং। মণিকা হাসল।

এমন সময় সেতুকে নিয়ে সুমি প্রবেশ করল। আয় সুমি বস, আমি হাতের কাজটা শেষ করে নিই। সেতু সজলকে দেখে মামা বলে দৌড়ে গেল। সজল দুই হাতে সেতুকে জড়িয়ে ধরে বুকের কাছে টেনে আনল। মণিকার ড্রেসিং করা শেষ। সে সেতুকে কোলে নিয়ে বলল, খালামণির কথা মনে আছে ? সেতু মাথা নাড়ল। মণিকা সেতুর তুলতুলে গালে চুমা দিয়ে বলর, তোমাকে কী দেয়া যায় ? সে টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটা মিমি চকোলেটের প্যাকেট বের করে এনে সেতুর হাতে দিল। সেতু হাতে চকোলেট নিয়ে কোল থেকে নেমে খুশিতে লাফাতে লাগল।

সুমি পায়েসের বক্স মণিকার হাতে দিয়ে বলল, আপু তোমার আর ভাইয়ার জন্য পায়েস এনেছি। আমি নিজে রান্না করেছি।
মণিকা আদর করে সুমির গাল টেনে দিল। আমি যে পায়েস পছন্দ করি তোকে কে বলেছে ?
কেউ বলেনি। তবে সেটা আমি অনেক আগে থেকে জানি।
কীভাবে ? মণিকা মাথা ঝাকাল।

ভাইয়া যখন ভার্সিটিতে পড়ত, তখন ভাইয়ার বইয়ের ভেতর তোমার একটা ছবি দেখেছিলাম। ছবির উল্টো পিঠে ছিল ছোট্ট প্রোফাইল। যতদুর মনে পড়ে, প্রোফাইলটি ছিল এরকম। নাম-মণিকা চৌধুরী, পেশা-ছাত্রী, সাবজেক্ট-সোসিওলজি, প্রতিষ্ঠান-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বয়স-মেয়েদের বয়স বলতে নেই। উচ্চতা-পাচ ফুট সাড়ে তিন, পছন্দের রঙ-সাদা, লাল, পছন্দের খাবার-পায়েস, বেগুন বর্ত্তা, শখ-গান শুনা, বই পড়া , অপছন্দ- কথা দিয়ে কথা না রাখা।
বাহ্‌, তোর স্মরণশক্তি যথেষ্ট ভাল। আমার নিজেরই এতকিছু মনে নেই। তবে হাঁ, 'কথা দিয়ে কথা না রাখ' লিখেছিলাম তোর ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে। মণিকা আড়চোখে তাকাল সজলের দিকে। সজল হেঁসে বলল,
যাক, আজকের দিন তাহলে মণির। পরেছে পছন্দের রঙের শাড়ি, পেয়েছে পছন্দের খাবার।

মণিকা সজলের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে সুমির দিকে তাকাল। ‘আমার আবার দিন, দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না’।
সজল সুমির দিকে তাকাল। সুমি মা কিছু বলেছে ?
সুমি মাথা নাড়ল। না ভাইয়া। শুধু জানতে চেয়েছিল কেমন আছো, কোথায় আছো ?
তুই কী বললি ?
বলেছি ভাইয়ার জন্য চিন্তা করতে হবে না মা। যেখানে থাকলে ভাল থাকবে, ওখানেই আছে।
মা কিছু বুঝতে পারেনি তো ?
না ভাইয়া। তবে একটু চিন্তা করে জানতে চেয়েছিল, তুমি ফোন-টোন করনি কেন। আমি বললাম, হয়ত সময় সুযোগ পাই নি।
বুয়া এসে বলল, আপামণি ডাক্তার সাব আইচে।
উপরে নিয়ে আয়।

বুয়া চলে গেল। ফিরল ইশতিয়াককে নিয়ে। মণিকা বুয়াকে বলল, কয়েকটা খালি বাটি আর চামশ দিয়ে যা।
ইশতিয়াক বিছানায় সজলের পাশে বসল। তুমি সুমি না ? সুমির দিকে তাকিয়ে আঙুল তুলল ইশতিয়াক।
সুমি সালাম দিয়ে হেসে মাথা নাড়ল। কতদিন পর দেখলাম তোমাকে। সেতুর দিকে তাকিয়ে বলে, বাবুটা
কী তোমার ?
হে ইশতিয়াক ভাই। সেতুর দিকে তাকিয়ে সুমি বলে, এই ডাক্তার মামাকে সালাম দাও। সেতু কপালে হাত তুলল। মুখে কিছু বলল না। ইশতিয়াক বলল, বাবু তোমার নাম কী ?
সেতু।
বাহ্‌, খুব সুন্দর নাম ! সজলের দিকে ফিরল ইশতিয়াক। তোর নাম সজল, তোমার নাম সুমি আর ওর নাম সেতু। মনে হচ্ছে তোমরা দন্ত্য-স পরিবার। ইশতিয়াকের কথা শুনে সবাই হেসে উঠল। মণিকার দিকে তাকাল ইশতিয়াক। এবার বল মণিকা তোমার প্যাশেন্টের খবর কী ? ড্রেসিং বদলিয়েছ ?


(চলবে.....................)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.