নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বসে আছি অন্ধকারে, \nআমাকে বুঝতে দাও \nমানুষ কেন আলোর \nপ্রত্যাশা করে!

আসোয়াদ লোদি

জীবন ও যন্ত্রণার মরুচরে আমি প্রপাতের ধারা ।

আসোয়াদ লোদি › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবরুদ্ধ আকাশ ।। পর্ব-৭

১০ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:১৪



৬ পর্বের লিঙ্ক- Click This Link

(পর্ব ৬ এর পরের অংশ)

মণিকা বক্স থেকে বাটির মধ্যে পায়েস বেড়ে নিতে নিতে বলল, বদলিয়েছি।
গুড। এসছি যখন এবার একটু ডাক্তারি করি। সজলের দিকে ফিরে বলল, তোর হাতটা দে, প্রেসারটা দেখি। লিডারদের প্রেসার নাকি সবসময় হাই থাকে। ইশতিয়াক প্রেসার মাপার যন্ত্রটা সজলের বাহুতে বেঁধে দিল। তারপর পাম্প করতে লাগল। মাথা নেড়ে বলল, হাত মুঠি করে রাখ।

সজল হাত মুঠি করল। ইশতিয়াক আবার ফুল পাম্প করে পাম্প ছাড়তে ছাড়েতে মিটারের কাটার দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকাল। সজলের বাহু থেকে প্রেসারের যন্ত্রটা খুলতে খুলতে বলল, প্রেসার একদম নর্মাল। মনে হচ্ছে খুব শান্তিতে আছিস। ব্যথা কমেছে ?
আগের চেয়ে একটু কমেছে। সে বালিশে হেলান দিয়ে বসে পা সোজা করে টেনে রাখল। মণিকা সবার হাতে একটা করে পায়েসের বাটি ধরিয়ে দিল। নিজেও একটা নিল। ইশতিয়াক এক চামশ মুখে দিয়ে বলল, ওয়ান্ডারফুল ! এরকম মজাদার পায়েশ বহুদিন খাইনি। মণিকা তুমি বানিয়েছ ?

না ইশতিয়াক ভাই। বানিয়েছে আমার আদরের ননদিনী। অতি প্রাচীনকালে সে জেনেছিল, আমার পায়েস পছন্দ। কথাটা সে আজো মনে রেখে আমার জন্য পায়েস বানিয়ে এনেছে। একেই বলে ভালোবাসা। সত্যি ইশতিয়াক ভাই আজ আমার আনন্দের দিন।
তাহলে তো আমাকে বলতেই হবে, সামনে আসছে শুভদিন, হাতুড়ি মার্কায় ভোট দিন। ইশতিয়াক সজলের দিকে ফিরে বলল, পৃথিবীতে এতকিছু থাকতে তোরা মার্কা পেলি হাতুড়ি ?
হাতুড়ি হচ্ছে শক্তি এবং মেহনতি মানুষের প্রতীক। সজল বলল।
ওঅ হাঁ, আজকের ইত্তেফাক দেখেছিস ?
সজল মাথা নেড়ে বলে, দেখিনি।

কালকের ঘটনা ওরা ফ্রন্ট পেজে নিউজ করেছে। হেডলাইন দিয়েছে, “মেহনতি জনতা পার্টির মিছিলে পুলিশের বর্বরোচিত হামলা, নেতা আহত ”। হাতে কপাল চেপে ধরে দৌড়াচ্ছিস তোর এরকম একটা ছবি ছাপিয়েছে। লিখেছে, মেহনতি জনতা পার্টির নেতা সজল আহমেদ পুলিশের হামলায় মারাত্বক আহত অবস্থায় অজ্ঞাত স্থানে চিকিৎসা নিচ্ছে।

সজল মণিকার দিকে তাকাল। মণি তোমাদের বাসায় কী ইত্তেফাক রাখে ?

মণিকা মাথা দোলাল। ইত্তেফাক রাখে না। আচ্ছা আমি ম্যানেজ করছি। মণিকা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
ইশতিয়াক সুমির দিকে ফিরল। সুমি চমৎকার পায়েসের জন্য তোমাকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। বাসায় বেড়াতে আসবে। তখন তোমার ভাবিকে পায়েসের রেসিপিটা দিতে ভুলে যেওনা কিন্তু।
সুমি হেসে বলে, ঠিক আছে।

মণিকা ফিরে এলো। সঙ্গে আনল চায়ের সরঞ্জাম ভর্তি ট্রলি ও ট্রলির উপর ভাঁজ করা ইত্তেফাক। মণিকা সজলের হতে পত্রিকাটি দিয়ে চা বানাতে মনোযোগ দিল। সজল দ্রুত পত্রিকার উপর চোখ বুলাতে লাগল। নিজের আহত ছবিটা দেখে হেসে মন্তব্য করল, সাংবাদিকরা বেশ করিৎকর্মা, টাইমিং বুঝে।
হাঁ, ছবিটা আগামিদিনগুলোতে তোকে আরও বেশি নির্মাণ করবে। বলল ইশতিয়াক।
হুম, ঠিক বলেছিস। আমারও তাই ধারণা।

আমি এখন উঠি সজল। চেম্বারে অনেক রোগী অপেক্ষা করছে। কেন যে এই কবিরাজি পেশায় এসেছিলাম। এখন হাঁপিয়ে উঠছি। প্রতিদিন এত অসুস্থ লোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ আর ভাল লাগে না। মাঝে মাঝে মনে হয় দেশের সবমানুষই বুঝি অসুস্থ। সবারি কমন ডিজিস-মাথাব্যথা, কোমরব্যথা, হাঁটুব্যথা, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, ডায়বেটিক। আজো কোন রোগী এসে বলল না, ডাক্তার সাব, আমার মনটা একটু ভাল করে দিন না । তখন না হয় নতুন বিষয় নিয়ে ভাবা যেত।
মণিকা চায়ে চুমুক দিয়ে হাসল। ইশতিয়াক ভাই দেখি এখনও খুব রোম্যান্টিক। ইশতিয়াক শব্দ করে হেসে উঠল। সজল বলল, তুই যে অসুস্থতার কথা বললি, জনগণ তো অসুস্থ হবেই। কারণ অসুস্থ আমাদের সমাজব্যবস্থা, অসুস্থ আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। এসবের ও চিকিৎসার দরকার আছে।

ইশতিয়াক ঘাড় কাত করে তাকাল সজলের দিকে। দোস্ত, এসব কথা পল্টনের মাঠে গিয়ে বলিস। আমি আসি। খোদা হাফেজ।
হঠাৎ টেলিফোনে রিং বেজে ওঠল। মণিকা রিসিভ করতেই অপরপ্রান্তে বিলকিসের কান্নাজড়িত কণ্ঠ শুনা গেল। তিনি বললেন, তোমরা কি কিছু গোপন করতেছ মণিকা, পেপারে দেখলাম সজলের ছবি ছাপা হয়েছে, লিখেছে মারাত্মক আহত হয়েছে সে। সজল কোথায় ?

বিলকিসের কথা শুনে মণিকা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। আসলে কী বলবে বোঝে ওঠতে পারছিলা না। তবে এতটুকু বোঝতে অসুবিধা হল না যে, মা যখন জেনে গেছে আর লুকোচুরি খেলার অর্থ হয় না। সে বলল, সজল সুস্থ এবং ভাল আছে। আপনি কথা বলেন তার সাথে।

মণিকা রিসিভার সজলের হাতে ধরিয়ে দিল। সজল বলল, না মা সিরিয়াস কিছু নয়। কান্নাকাটি করার মত কোন বিষয় না। কপালে সামান্য একটু কেটে গেছে। ওখান থেকেই ব্লিডিং হয়েছে। সুযোগ পেলেই বাসায় আসব। দুইদিন আগেও তো বাসার কাছাকছি গিয়ে ফিরে আসলাম। দেখি দুইজন গোয়েন্দা পুলিশ গেটের দিকে নজর রাখতেছে। বাবা আবার কী বলবে ? সারাজীবন তো ঐ একটি শব্দই বলেছে, হোপলেস। তুমি অযথা দুশ্চিন্তা করো না। এখন রাখছি।

মণিকা বলল, যাক ভালই হল মা জেনে গেছে। কিন্তু মা দোষটা দেবে আমাকে। বলবে তুমি জেনেও গোপন করলা কেন। কিন্তু আমি তো ওনাদের দিকটা ভেবে বিষয়টা গোপন করেছি।

সুমি বলে উঠল, না আপু মা ব্যাপারটা এখন বুঝতে পেরেছে। আর কোন সমস্যা নেই।
সুমি ঠিকই বলেছে। Drop the idea . সজল পত্রিকা থেকে চোখ না তুলে বলল।
মণিকা বলল, আমার কিছু কেনাকাটা করা দরকার। আমি সুমিকে নিয়ে একটু শপিংয়ে যাচ্ছি। খুব তাড়তাড়ি ফিরব। তোমার কিছু দরকার হলে বুয়াকে বলবে। এই বেলটা টিপলে বুয়া আসবে।

মণিকা ও সুমি বসুন্ধরা সিটিতে এলো। সেতুকে একটা ফুটবল কিনে দিল মণিকা। সুমিকে দিল চকোলেট কালারের ভ্যানিটি ব্যাগ। একটি শার্ট সুমির হাতে দিয়ে বলল, এটি তোর হিরুর জন্য। সুমি আপত্তি করেছিল, কিন্তু মণিকা কোন কথা শুনল না। বরং চোখ উল্টিয়ে তাকাল সুমির দিকে। দেখ, তোকে তো কখনো কিছু দেয়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। আজ সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাই না। তোরা ভাইবোন দুইজনই এক রকম। কেবল দূরে দূরে থাকিস। এই যে তোর ভাই সুস্থ হয়ে যে আবার কোথায় উদাও হয়ে যাবে, না জানি কবে আবার তার দেখা পাব। এবারো আল্লাহ্ আমার প্রতি সদয় ছিলেন বলে দৈবাৎ তার দেখা পেয়েছি। মনে হয় আমার জন্মই হয়েছে পথ চেয়ে থাকার জন্য। পথের পানে চেয়ে চেয়ে রবীন্দ্রনাথের দিন কাটত না। কিন্তু পথের পানে চেয়ে চেয়ে আমার দিন বেশ কেটে যাচ্ছে।

সুমি অনেক কষ্টে চোখের জল সামলে নিল। বুঝতে পারল মণিকা অন্তরদ্বন্দ্বে জর্জরিত। তার প্রতিটি নিঃশ্বাস হতাশায় পূর্ণ। ধূসর কুয়াশার ভেতর সে সূর্যের ক্ষীণ আভার দিকেই তাকিয়ে থাকে, কবে আলো ফুটবে সেই আশায়। সুমি গ্রীকদের দেবী আফ্রোদিতির কথা শুনেছে। মানুষ যার কাছে ভালোবাসার জন্য প্রার্থনা জানাত। মণিকাকে দেখে সুমির মনে হয় আফ্রোদিতিরই প্রতিরূপ। যে শুধু ভালোবাসাই বিলাতে জানে। সুমি ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাস আবার গিলে ফেলল। তবুও তার চোখের কোণ ভিজে এলো। সে পার্স থেকে টিস্যুপেপার বের করে চোখের কোণ মুছে নিল। মাঝে মাঝে মনে হয় আপু তুমি আমাকে মায়ের মত ভালোবাস। এত ভালোবাসা কোথায় পাও তুমি ?

মণিকা সুমির পিঠ চাপড়িয়ে বলে, Don`t be emotional . চল সামনের দোকানটাই ঢুকি। এই দোকান থেকে মণিকা পাঞ্জাবি ও পাজামা নিল এক সেট। তারপর তারা ঢুকল শাড়ির দোকানে। মণিকা বলল, একটা শাড়ি কিনে বাসায় ফিরে যাব। তবে শাড়িটা তুই পছন্দ করে দিবি। তোর পছন্দ মত নেব আমি কিছু বলব না।
সুমি মাথা দোলিয়ে সম্মতি দিল। মণিকা দোকানিকে বলল, ভাল কোয়ালিটির বিয়ের শাড়ি দেখান তো।
দোকানি দ্রুত একগাদা শাড়ি নামিয়ে তাদের সামনে রাখে। সুমি বিস্ময় নিয়ে মণিকার চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে। মণিকা ফিক করে হেসে ফেলল। আমার দিকে কী দেখছিস ? শাড়ি দেখ। সুমি একটি লাল বেনারস শাড়ি পছন্দ করে দিল।

সুমির মস্তিষ্কে বারবার ঐ একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল যে, মণিকা আপু বিয়ের শাড়ি কিনল কেন ? তবে কী তারা বিয়ে করতে যাচ্ছে ? কৌতূহল সুমির মুখ ঠেলে বেরিয়ে এলো। ফেরার পথে সে গাড়িতে প্রশ্নটি করল। তুমি বিয়ের শাড়ি কিনলে কেন ?

মণিকা ঘাড় ফেরাল সুমির দিকে। তার মুখে লজ্জ্বার হাসি লেগে আছে। শাড়িটা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। যদি নাও লাগে স্মৃতি হিসাবে রেখে দেব। দোষের তো কিছু নেই ?
তুমি এই অবস্থায় আর কিছুদিন থাকলে পাগল হয়ে যাবে।
আমি তো পাগল হতে চাই। কিন্তু পাগল হতে পারছি না। অই কষ্ট তুই বোঝবি না।
সুমি চুপ করে থাকল কিছুক্ষণ। আসলে কিছু কিছু পরিস্থিতি আছে বদলানো যায় না, মেনে নিতে হয়। তুমি ওরকম পরিস্থিতির শিকার।
মণিকা মাথা ঝাকাল। আমার জন্য চিন্তা করে মন খারাপ করিস না। আমি বেশ আছি।
আপু আমাকে শান্তিনগর নামিয়ে দিও।
কেন ? তুই আমার সঙ্গে যাবি না ?
সেতুকে গোসল দিতে হবে আর আমান বলেছে বিকেলে আশুলিয়া নিয়ে যাবে।
বাহ্‌, বেশ ভাল ! হিরু তাহলে লোকেশনও চিনে ?

সুমি হেসে ফেলল। মণিকা ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বলল, শান্তিনগর চল। শান্তিনগর পৌঁছলে সুমি গাড়ি থেকে নামার সময় মণিকার গালে চুমু দিয়ে বলল, I love you .
মণিকা প্রতি উত্তরে বলল, love you too.


(চলবে..................)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: চলুক।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:২৩

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই। চেষ্টা করে যাচ্ছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.