নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বসে আছি অন্ধকারে, \nআমাকে বুঝতে দাও \nমানুষ কেন আলোর \nপ্রত্যাশা করে!

আসোয়াদ লোদি

জীবন ও যন্ত্রণার মরুচরে আমি প্রপাতের ধারা ।

আসোয়াদ লোদি › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবরুদ্ধ আকাশ ।। পর্ব-৮

১৮ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৩


পর্ব ৭ এর লিঙ্ক- Click This Link
(পর্ব ৭ এর পরের অংশ)

আজ আটচল্লিশ ঘণ্টা হরতালের দ্বিতীয় দিন। বেশির ভাগ জাতিয় দৈনিকের শিরোনাম ছিল এরকম। “আটচল্লিশ ঘণ্টা হরতালের প্রথম দিন দেশের প্রেসিডেন্ট গলফ মাঠে”। সংবাদটি দ্রুত টপ অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত হল। ইয়াহিয়া সংবাদটির দিকে বিলকিসের মনোযোগ আকর্ষণ করে বললেন, বিলকিস এও কী সম্ভব ? মনে হয় প্রেসিডেন্টের দেশ নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই।
বিলকিস কোলের উপর দুই হাত ভাঁজ করে বিড়বিড় করলেন। ইয়াহিয়া বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করলেন- কী যেন বললে তুমি ?
রোম যখন জ্বলছিল নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল। মনে হয় প্রেসিডেন্ট সাহেব ঐ নীতিতে বিশ্বাসী। বিলকিস ঠোঁট কামড়ালেন।
ঠিক বলেছ। আসলে দেশপ্রেমিক হওয়া কঠিন কাজ। সবাই পারে না। আমাদের দেশে তো কোরবানির গরুর মত নেতাও বিক্রি হয়। যারা ঘন ঘন নিজের আদর্শ বদলায় তারাতো রাজনীতিবিদ নয়, তারা হচ্ছে ধান্দাবিদ। বিলকিস এই দেশ শেষ। হোপলেস। আমার ছেলেটা খামাকা নিজের জীবনটা নষ্ট করে ফেলল। তার ভবিষ্যৎ বড় অন্ধকার। হোপলেস ! হোপলেস !
মাঝে মাঝে আমারো খুব কষ্ট হয়। সে তো নিজের জীবন নষ্ট করছে, সাথে সাথে একটা মেয়ের জীবনও ধবংস করে দিচ্ছে। মণিকা চেহারার দিকে আমি তাকাতে পারি না। আমার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে। আমার জন্মে এত ভাল মেয়ে আমি দেখেছি বলে মনে হয় না। এত বড় লোকের মেয়ে তার মধ্যে কোন অহংকার পর্যন্ত নেই। সুমি তো মণিকা বলতে পাগল।
বিলকিস ফ্লোরে লুঠিয়ে পড়া আঁচল টেনে কোলের উপর তুলে নিলেন। ইয়াহিয়া পত্রিকা থেকে মুখ তুলে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। তার দৃষ্টি উঠানে লাগানো অর্কিডের দিকে। তিনি আঙুল তুলে সেদিকে দেখিয়ে বললেন, দেখো বিলকিস তোমার অর্কিডে ফুল এসেছে।

ফুলের মত করে যদি আমার ঘরে একটা বউ আসত তাহলে আমার ঘরটা আলোয় আলোয় ভরে যেত। বিলকিস অর্কিডের দিকে তাকিয়ে একটা হতাশার নিঃশ্বাস ছাড়লেন ।

হবে না, তাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা। তার বন্ধুরা বিয়ে-শাদি করে ছেলেমেয়ের বাপ বনে গেছে। আর সে দেখে বিপ্লবের স্বপ্ন। আরে স্বপ্ন দেখা তো খুব সোজা। স্বপ্ন দেখতে পয়সা লাগে নাকি ? ইয়াহিয়া পত্রিকার পাতা উল্টালেন।
সুমি মা-বাবার জন্য চা নিয়ে এলো। একটা পিরিচে করে আনল ঝালমুড়ি। সুমি বলল, চায়ের সঙ্গে ঝালমুড়ি, তোমাদের গল্প আরও জমিয়ে দেবে। সুমি মায়ের হাঁটুর কাছে ফ্লোরে বসে গেল।

এতো গল্প নয় সুমি, এক হতভাগ্য পিতার আর্তনাদ। সারাজীবন কী চাইলাম আর কী পেলাম। ছেলেটাকে ও মানুষ করতে পারলাম না। ইয়াহিয়া এক চামচ ঝালমুড়ি মুখে দিলেন। দুয়েকটা মুড়ি পত্রিকার উপর পড়ে গেল। তিনি সেগুলো তুলে মুখে দিলেন।

বিলকিস মুড়ি চাবাতে চাবাতে বললেন, আমানকে দিয়েছিস ?
সুমি মাথা ঝাকাল। দিয়েছি।
সেতু কী করছে ?
ও কার্টুন ফ্লিম দেখতেছে। জান মা, মণিকা আপু এই অবস্থায় থাকতে থাকতে পাগল হয়ে যাবে। মাঝে মাঝে তার কথাবার্তা আমার অস্বাভাবিক মনে হয়। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, আকাশ নাকি মেঘে ঢাকা। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম আকাশে তো মেঘ নেই। আপু তখন দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বিয়ের দিন পরার জন্য বেনারস শাড়ি কিনে রেখেছে। আমি বললাম বিয়ের শাড়ি কেন কিনেছে ? বলল, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। যদি নাও লাগে তাহলে স্মৃতি হিসেবে নাকি রেখে দিবে। আরও বলে পথের পানে চেয়ে চেয়ে ওর নাকি খুব ভাল দিন কাটে যাচ্ছে। আমার মনে হয় ভাইয়া যদি মণিকা আপুকে বিয়ে না করে, তাহলে আপু সারাজীবন বিয়ে করবে না। এভাবে জীবন কাটিয়ে দেবে।

বিলকিস দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। তার ভরাট বুক একবার নড়ে উঠল। সেও তো সজলকে কিছু বলে না। সে যদি চাপ দেয়, আমার মনে হয় সজল বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলত।
মণিকা আপু চাপ দেবে ভাইয়াকে ! পাগল হয়েছ ? ভাইয়া মনে কষ্ট পাবে এরকম কথাই তো বলে না। ভাইয়ার সব কথাই হাসিমুখে মেনে নেয়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছে ।
ইয়াহিয়া পত্রিকা থেকে চোখ তুললেন। ও আর কী সিদ্ধান্ত নিবে ? দেশের যে পরিস্থিতি ও নিজেই তো পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এখন দর্শকের মত দেখে যাওয়া ছাড়া আমরাই বা কী করতে পারি ?

বিলকিসও ভাবে এখন সময়ের কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আর কিবা করার আছে।

এদিকে মণিকাদের বাসায় সজল এখন পুরাপুরি সুস্থ। মণিকা আজ নতুন ড্রেসিং লাগায় নি। ক্ষতস্থানের চামড়া জোড়া নিয়েছে। তবে একটি রেখার উপর রেললাইনের স্লিপারের মত আড়াআড়ি চারটি দাগ দেখা যাচ্ছে। মণিকা বলল, হঠাৎ করে তাকালে মনে হবে তুমি কপালে উল্কি এঁকেছ।

সজল মুচকি হাসল। সে ড্রেসিং টেবিলের আয়নাতে ক্ষতস্থানটি দেখছিল। হাতের আঙুল দিয়ে স্পর্শ করে বলল, শেষ পর্যন্ত কপালটাই ফেটে গেল !
মণিকা মাথা নাড়ল। No, no . এভাবে বলছ কেন ? This is the point . Now you can start from there .

সজল ঘুরে দাঁড়াল। দুই হাত রাখল মণিকার কাঁধের উপর। এবার বিদায় দাও। স্বৈর সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আর ঘরে ফিরব না।
মণিকা সজলের চেহারার দিকে তাকিয়েছিল। এখনও দৃষ্টি ফিরাই নি। তার চোখ কেঁপে উঠল। বুকের গভীর থেকে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। তোমাকে ধরে রাখব না। তেমন শক্তি আজো আমার হলো না। তবে মনটা বড় চঞ্চল হয়ে উঠছে। মনে হচ্ছে তুমি আরও বেশি ঝুঁকির দিকে যাচ্ছ। হয়ত সামনে ওঁৎ পেতে আছে অন্ধকার মৃত্যুগুহা।

সজল মণিকার কাঁধ ধরে ঝাঁকি দিল। Oh, Moni come on . সজল মৃত্যু ভয়ে মোটেও ভীত নয়। তুমি তো দেখেছ, ঢাকা ভার্সিটিতে দুই গ্রুপের গোলাগুলির মাঝখানে আমি সন্ত্রাস বিরোধী মিছিল নিয়ে গেছি। তুমি তো শেক্সপীয়ারের ঐ কথাটা নিশ্চয় জান-“ Cowards die many times before their death ; the valiant never taste of death but once .”

মণিকা দুইহাতে আঁচলখানা তুলে ধরল সজলের মুখের কাছে। যেতে চাও আর বাঁধা দেব না। জানিনা আবার কবে তোমার সাথে দেখা হবে। তোমার কাছে তো কখনও কিছু চাই নি। আজ চাইব। আজ রাতটুকু তুমি আমায় দিয়ে যাও।
সজল সিদ্ধান্ত বদলাল। দুইহাতে মণিকাকে জড়িয়ে নিল বুকে। মণিকা দুইবাহু দিয়ে সজলকে এমনভাবে চেপে ধরল যেন ছেড়ে দিলে সজল পালিয়ে যাবে। ধীরে ধীরে মণিকার শরীর উষ্ণ হয়ে উঠল। সজল বুকে মণিকার স্তনের উষ্ণতা অনুভব করল। মণিকা চেহারা তুলল সজলের মুখের দিকে। তার ঠোঁট কেঁপে উঠল।

মণিকা মুচকি হাসল। বোঝল চুমুর ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য আছে। যখন যে উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, তার স্বাদও হয় সেরকম।
আমি একটু নিচ থেকে আসছি বলে সে বেরিয়ে গেল। সজল শেলফ থেকে কার্ল মার্কসের দ্যা ক্যাপিটাল বইটি হাতে তুলে নিল। সে বইটি মণিকাকে জন্মদিনে উপহার দিয়েছিল। বিছানায় শুয়ে সে বইটির পাতা উল্টাচ্ছে। যদিও সে বইটি আগে পড়েছে, এখন সময় কাটানো ছাড়া আর কিছু নয়।

মণিকা ফিরে এলো একঝুড়ি ফুল নিয়ে। সে কার্পেটের উপর বসে পড়ল। অনেকটা পদ্মাসনের মত ভঙ্গি। সজল বই থেকে মুখ ফিরিয়ে প্রশ্ন করল, এত ফুল দিয়ে কী করবে ?
মণিকা সুঁইয়ের ছিদ্রে সুতো পরাতে পরাতে বলল, মালা গাঁথব।

সজল আবার বইয়ের পাতা উল্টাল। মণিকা মালা গাথায় মনোযোগ দিয়েছে। আর গুণ গুণ করে গানের কলি ভাঁজছে। তার কাঁধের উপর থেকে আঁচল পড়ে গিয়ে বাহুর উপর ঝুলে আছে। দুই হাত ব্যস্ত থাকায় হয়ত সে আঁচল নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। কিংবা এমনও হতে পারে সজল তো বাইরের কেউ নয়। সুতরাং সজলের সামনে সে অস্বস্থিবোধ করছে না।

সজল একবার বই থেকে মুখ তুলে তাকাল। মণিকা পরেছে ব্রাউন কালারের ব্লাউজ। ব্লাউজের গলাকে মনে হল কৃষকের ধান কাটার কাস্তের মত। সেদিকে তাকিয়ে সজল মণিকার স্তনের অংশ বিশেষ দেখতে পেল। ব্লাউজটা শরীরের সাথে বেশ মানিয়ে গেছে। শাড়িটা ব্রাউন জমিনে সাদাকালো স্ট্রাইপ। শাড়ি হাঁটুর দিকে ভাঁজ হয়ে টান পড়ায় সরু পা অনেকখানি অনাবৃত হয়ে আছে। এতে সাদা পেটিকোটের অংশ বিশেষ দেখা যাচ্ছে। মণিকা বুঝতে পারল সজল তার দিকে তাকিয়ে আছে। তবুও সে নিজের অবস্থান পরিবর্তন না করে মালা গেথে যেতে লাগল।

সজল বলল, মণি মার্কসের ধারণা, ‘গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যগুলোয় শিক্ষিত কোন প্রতিষ্ঠিত প্রলেতারিয়েত সম্বলিত একটি অগ্রসর দেশে বিপ্লব ফেটে পড়তে পারে। আবার সে বিপ্লব ছড়িয়ে পড়তে পারে সমগ্র উন্নত বিশ্বজুড়ে এবং পুজিবাদ আর সমগ্রতাবাদী শাসনের সমাপ্তি চিহ্নিত করতে পারে’। তুমি কী মনে কর আমাদের দেশে ঐ জাতিয় বিপ্লব ঘটতে পারে ?

মণিকা সজলের দিকে না তাকিয়ে বলে, মোটেও না। মার্কস সাহেব যে সমস্ত উপাদানের কথা বলেছেন তার একটিও বর্তমানে আমাদের দেশে নেই। তিনি গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের কথা বলেছেন। কিন্তু আমাদের দেশে গণতন্ত্রই তো ডেভেলপ করে নি। রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছে। অত্যন্ত চমৎকার বিষয় হল দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা নেই। আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক অশিক্ষিত এবং আমারা অনগ্রসর একটি দেশ। তাছাড়া আমাদের দেশে রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করে মধ্যবিত্ত শ্রেণী। আর মধ্যবিত্ত শ্রেণী হচ্ছে সুবিধাবাদী চরিত্র। তারা যে কোন মুহূর্তে বিট্রে করতে পারে। ক্রিকেট প্লেয়ারদের মত নেতাদের দলবদল এটার অন্যতম সিন্ড্রম। তুমি আমায় ক্ষমা করবে। আমি আমার ব্যাক্তিগত অনুভূতির কথাই বললাম।
তবে তুমি বলতে চাচ্ছ আমাদের দেশে কখনো বিপ্লব সম্ভব নয় ?

মণিকা হেসে সজলের দিকে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। তুমি কী বিপ্লব করে বাংলাদেশে রাজতন্ত্র কায়েম করতে চাও নাকি ?
সজলের পুরো শরীর নড়ে উঠল। বুঝলাম না তোমার কথা।

(চলবে.................)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.