নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বসে আছি অন্ধকারে, \nআমাকে বুঝতে দাও \nমানুষ কেন আলোর \nপ্রত্যাশা করে!

আসোয়াদ লোদি

জীবন ও যন্ত্রণার মরুচরে আমি প্রপাতের ধারা ।

আসোয়াদ লোদি › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবরুদ্ধ আকাশ ।। পর্ব-৯

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ রাত ২:০৭


পর্ব ৮ এর লিঙ্ক- Click This Link
( পর্ব ৮ এর পরের অংশ )

মণিকা বলল, রাগ করো না। আমি তোমাকে জ্ঞান দেবার জন্য কিছু বলছি না। জাস্ট আমার মনের কথাটা বলতেছি। বর্তমানে আমাদের দেশে স্বৈরতন্ত্র চালু আছে। সংবিধানের মূলনীতি হচ্ছে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। এখন তোমার জন্য রাজতন্ত্র ছাড়া আমি তো আর তন্ত্র দেখছি না।

সজল হেসে ফেলল। এবার বুঝতে পেরেছি।

বুঝতে পেরেছ বেশ ভাল কথা। কিন্তু আমি বুঝতে পারি না একটি দেশের সংবিধানে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মত দুইটি পরস্পর বিরোধী সিস্টেম একই সঙ্গে থাকে কীভাবে ? সম্ভবত আমদের সংবিধান প্রণেতারা দ্বিধাগ্রস্থ ছিলেন। গণতন্ত্র খাবে না সমাজতন্ত্র খাবে বুঝতে না পেরে দুটোয় খেয়েছেন। দীর্ঘ সময় পা ভাঁজ করে রাখাতে মণিকার পায়ে খিল ধরে গেছে। সে পা দুইটি সামনের দিকে প্রসারিত করে দিয়ে নড়েচড়ে বসল।
সজল মাথা দোলাল। ঠিক তা নয়। উনারা সমাজতন্ত্রের একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, সামাজিক ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার।
তার অর্থ গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থায় ন্যায় বিচার সম্ভব না এটাই কী বলছেন ? নাকি শুধু বিচার ব্যাবস্থা সমাজতান্ত্রিক সিস্টেমে চলবে, আর রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থায় চলবে ?

আমি জানি না ম্যাডাম। সজল মাথা চুলকাল।

মণিকা আড়চোখে তাকাল সজলের দিকে। দাঁত বের করে হেসে বলল, দেখ ভাল হবে না বলছি। ম্যাডাম-ফ্যাডাম ডাকবে না।
আসলে আমাদের অনেক সমস্যা আছে। আমাদেরকেই উত্তরণের পথ খুঁজে নিতে হবে।

কীভাবে উত্তরণ হবে শুনি ? যেখানে রাষ্ট্রই প্রতিদিন সংবিধান লঙ্ঘন করছে। ধর্মনিরপেক্ষতা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মূলনীতিগুলোর অন্যতম একটি। ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্র কোন ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখাবে না, প্রত্যেকের নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের অধিকার থাকবে, এই তো ? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান কিংবা ইস্কুলের এসেম্বেলি ক্লাসে কোরআন পাঠ, গীতা পাঠ, ত্রিপিটক পাঠ বিশেষ বিশেষ ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব নয় কী ? তুমি কী এটাকে সংবিধান লঙ্ঘন মনে কর না ? মণিকা একটি মালা শেষ করে দ্বিতীয় মালা গাঁথা শুরু করল।
কিন্তু আমাদের একটা ধর্মীয় পরিচয়ও আছে। আমরা তো ওটার বাইরে নয়। সজল কার্ল মার্কস রেখে দিল পাশের টি-টেবিলের উপর।
তুমি ঠিক বলেছ। কিন্তু ধর্ম তো আমাদের রেডিক্যাল আইডেন্টিটি নয়। একজন ব্যাক্তি ইচ্ছে করলে যেকোন ধর্ম গ্রহণ বিংবা বর্জন করতে পারে। কিন্তু তুমি ইচ্ছে করলেও বাঙালিত্ব বিসর্জন দিতে পারবে না। বিশেষ করে ভারতবর্ষে ছিল এই সমস্যাটা প্রকট। আমার মনে হয় সম্রাট আকবর এই সমস্যা ফেস করেই একটি নতুন ধর্ম দ্বীন-ই-ইলাহী প্রবর্তন করেছিলেন। উলেমাদের বিরোধীতার কারণে তিনি সফল হতে পারেন নি। আসলে রাষ্ট্রের ধর্ম হবে কমন। আকবর সেটা বুঝতে পেরেছিলেন। আমি স্বীয় ধর্ম বর্জনের কথা বলছি না। ব্যাক্তিগত ভাবে প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। তবে রাষ্ট্রীয় ভাবে নয়।

তার মানে আমাদের ধর্ম হবে দুইটি ? সজল শোয়া থেকে উঠে পা ভাঁজ করে বসল।
সমস্যা কোথায় ? মণিকা সজলের দিকে তাকিয়ে হাসল। তার মালা গাঁথা শেষ।

মেহনতি জনতা পার্টি যদি কখনও ক্ষমতায় যায় আমরা ঐ বিষয় নিয়ে ভাববো। তোমাকে কথা দিলাম।
তোমরা শুধু কথাই দাও, কথা রাখ না। মণিকা মালা দুইটি হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখল। সজলের দিকে ফিরে বলল, আমি গোসল করতে যাচ্ছি। ততক্ষণ তুমি টিভি দেখ।

সজল রিমোটের সাহায্যে টিভি অন করল। মণিকা পরনের শাড়ি টেনেটেনে খুলে কার্পেটের উপর ফেলে রাখল। সে লকার খুলে একটা বড় টাওয়েল বের করে কাঁধের উপর রাখল। তারপর সজলের ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ফেসমাক্স লাগাল মুখে। পেটিকোট হাঁটুর উপরে তুলে এনে পায়ের সূক্ষ লোমের উপর হাত বুলাল একবার। হেয়ার রিমুভার পেস্ট লাগিয়ে পায়ের লোম পরিষ্কার করে নিল। তার চিকন পা দুইটি আরও বেশি মসৃণ হয়ে উঠল। সে এবার হাতের কচিকচি লোমও পরিষ্কার করে নিল । হ্যাড এন্ড সোল্ডার স্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিল। তারপর ফুলস্পীডে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে ঠান্ডা জলধারার নিচে দাঁড়িয়ে রইল। ধীরে ধীরে সে প্রতিটি অন্তর্বাস শরীর থেকে আলগা করে দিল।

এক ঘণ্টা পয়ত্রিশ মিনিট পর মণিকা বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো। সে টাওয়েলটা শরীরে পেঁচিয়ে রেখেছে। টাওয়েল স্তনের অর্ধাংশ থেকে হাঁটুর উপরের অংশ পর্যন্ত ঢাকতে পেরেছে। বুঝাই যাচ্ছে টাওয়েলের এর বাইরে আর ক্ষমতা নেই। ভেজা চুল পিঠে লেগে আছে। সামনের দিকের কিছু চুল মুখের উপর এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে আছে।
সজল মণিকার দিকে ফিরে তাকাল। এতক্ষণ গোসল কর ? আমি তো ভেবেছিলাম বাথরুমে ঘুমিয়ে গেছ।

মণিকা ড্রেসিং টেবিলের টুলের উপর বসে হাসল। তার হাতে হেয়ার ড্রাইয়ার মেসিন। মাঝে মাঝে সময় একটু বেশি নিই। সে যন্ত্রটা চালু করে দিল। যন্ত্রটার মুখ থকে শো শো শব্দ করে গরম বাতাস বেরিয়ে এলো। কিছুক্ষণের মধ্যে তার চুল শুকিয়ে ঝরঝরে হয়ে গেল। মণিকা সারা শরীরে বডিলোশান মাখার পর সজলের নাকে একটা মিষ্টি গন্ধ এসে ধাক্কা মারলে সে উল্টা দিকে দুইবার নিঃশ্বাস টানল। মণিকা লকারের ভেতর ঝুঁকে অন্তর্বাস খুঁজছিল। সে একটা ব্রা বের করে এনে আবার ঢুকিয়ে রেখে অন্য একটা বের করে আনল। সে সজলের দিকে পিঠ দিয়ে বুকের উপর থেকে টাওয়েল খানিকটা নামিয়ে ব্রা পরে নিল। ব্রার লক লাগানোর জন্য সজলের সাহায্য চাইলে সজল বিনা বাক্য ব্যয়ে তা পালন করল। মণিকা পেটিকোটের গিট লাগাতে লাগাতে বুঝতে পারল, ধীরে ধীরে সজলের উপর তার একটা নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। এতে মনে মনে আনন্দ অনুভব করল। সে এখন শাড়ি পড়ল না। গায়ে একটা ম্যাক্সি চাপিয়ে দিয়ে সজলের পাশে বসে চুল ব্রাশ করতে করতে টিভির দিকে তাকিয়ে রইল।

সজল মহসিন ভাইকে ফোন করল। মহসিন বলল, কাল দেখা করো, গুরুত্বপূর্ণ আলাপ আছে।
সজল প্রশ্ন করল, পার্টি অফিসে ?
না।
আপনার বাসায় ?
না না। তুমি মনিরের মেসে এসো। ওখানেই আলাপ সেরে নেব। সকালের দিকে এসো।

ঠিক আছে বলে সজল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল। সে ভাবে কাল কোন এক ফাঁকে মা-বাবার সাথে দেখা করে আসতে হবে। সুমি বলেছিল ও চিটাগাং ফিরে যাবে। সে সুযোগে তার সাথে ও একটা বিদায় সাক্ষাৎ হয়ে যাবে। বাদলের সাথে দেখা করার সময়টাও বের করে নিতে হবে। সুজানগর যাওয়ার ব্যাপারটা মণিকার সাথে আলাপ করতে হবে। ধীরে ধীরে তাকে এগোতে হবে। এর জন্য চাই ধৈর্য, নিষ্ঠা, সাহস, অনুপ্রেরণা। সে আজ উপলব্ধি করছে মণিকাই হতে পারে তার এগিয়ে যাওয়ার মূল অনুপ্রেরণা।

আকাশে চাঁদ এলো। চমৎকার জোছনা ছড়িয়ে পড়েছে মনিকাদের বেলকুনিতে। সজল দাঁড়িয়ে জোছনা দেখছে। মণিকার দেয়া নতুন পাঞ্জাবি-পাজামা পরেছে সে। মণিকাদের বড়িটা বেশ সাজানো-গোছানো। ছবির মত। মণিকা নববধূর মত করে সাজছে। তার মনে আজ অনেক আনন্দ। কাল সকাল হলেই সজলকে বিদায় দেবে। সে মনে প্রাণে কামনা করছে আজ রাত যেন তার জীবনের শ্রেষ্ঠ রাত হয়। লাল বেনারস শাড়িতে তাকে নববধূর মতই দেখাচ্ছে। আয়নাতে নিজেকে দেখে সে মুগ্ধ হয়ে গেল। ভাবছে, এ যেন সে নয়, অন্য কেউ। সে বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখে আর হাসে। হ্যাঙ্গার থেকে মণিকা ফুলের মালা দুইটি হাতে নিয়ে বেলকুনিতে সজলের মুখোমুখি দাঁড়াল।

সজল অভিভূত। তার ঘোর যেন কাটে না। তার মনে হল মণিকার সারা অঙ্গ যেন রূপের আগুনে জ্বলছে। সজলের মুখে কোন স্বর ফুটলনা। সে বোবাদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মণিকার দিকে। মণিকা একটি মালা সজলের হাতে দিয়ে বলল, হে নিস্তব্ধ আকাশের পূর্ণচাঁদ, আমরা দুইজন আজ তোমার জোছনার ভেতর এসে দাঁড়িয়েছি। হে আকাশ-বাতাস, প্রকৃতির অপার মহিমা, আমি তোমাদের সাক্ষী মানছি, সজলই আমার স্বামী। মণিকা সজলকে মালা পরিয়ে দিল। সজল মালা পরাল মণিকাকে। তারপর গভীর আলিঙ্গনে সজলের বুকে মিশে যাচ্ছিল মণিকা।

মণিকার শরীর ক্রমশ চঞ্চল হয়ে উঠছে। সে বুঝতে পারল স্তন থেকে উৎপত্তি হয়ে একটা শিহরণ ছড়িয়ে পড়ছে তার শিরা-উপশিরাতে। সে প্রেক্ষিতে সজল অনেক ধীরস্থির। মণিকার হাত চলে গেল সজলের পাঞ্জাবির বোতামের উপর। অন্ধের মত হাতড়িয়ে সে পাজামার ফিতাটিও খুঁজে পেল। সজলের হাতে লাল বেনারসির আঁচল। জলতরঙ্গে ঢেউ উঠার মত মণিকা ঘুরছে। সজল জালের মত করে টানছে বেনারসির আঁচল। পরতের পর পরত খুলে যাচ্ছে শাড়ি। মণিকা ও সজল একে অপরের নগ্ন শরীরের দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকাল।
তাদের উভয়ের মধ্যে একটি নতুন পৃথিবী আবিষ্কারের উত্তেজনা। কতক্ষণ তারা উভয়ে এভাবে সম্মোহিত ছিল জানে না। যখন মণিকার নিঃশ্বাসে রাতের নিস্তব্ধতা ভাঙ্গছিল, তখন সে আগ্নেয়গিরির লাভা নির্গমনের প্রাকপ্রস্তুতির মত উত্তপ্ত হচ্ছিল।
সজলের মনে হল মণিকার শরীরের প্রতিটি গ্রন্থিতে লুকিয়ে আছে আদি পৃথিবীর রহস্য। সজল একটি আদি পৃথিবী হাতে নিয়ে বিছানার দিকে হেঁটে গেল।

(চলবে...................)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:৪৭

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: গল্পে ভাললাগাটুকু জানিয়ে গেলাম।

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:২১

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.