নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বসে আছি অন্ধকারে, \nআমাকে বুঝতে দাও \nমানুষ কেন আলোর \nপ্রত্যাশা করে!

আসোয়াদ লোদি

জীবন ও যন্ত্রণার মরুচরে আমি প্রপাতের ধারা ।

আসোয়াদ লোদি › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবরুদ্ধ আকাশ ।। পর্ব-১০

১৯ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:১৭


৯ পর্বের লিঙ্ক- Click This Link
(পর্ব ৯ এর পরের অংশ)

সকাল থেকে মণিকার মনটা ফুরফুরে হয়ে আছে। সজল যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মণিকা বলল, কাল রাত ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ রাত। তোমাকে আমি ধারণ করে নিয়েছি। আমার আর কোন কষ্ট নেই, আর কোন চাওয়া নেই, শুধু বলব তুমি ভালো থেকো।

সজল প্যান্টে বেল্ট লাগাতে লাগতে বলল, তুমি এক রাতেই এক নতুন সজলকে নির্মাণ করেছ। আমি নিজের ভেতর পূর্ণ উদ্যম ফিরে পেয়েছি। এবার মনে হচ্ছে কিছু একটা হবে। আর সুজানগরের প্ল্যান নিয়ে যদি তোমার আর কোন আইডিয়া থাকে তুমি সেসবের নোট নিও এবং মানসিক ভাবে প্রস্তুত থেকে, আমি যখনই ডাকব যাতে তোমাকে পাই।

আমি তোমার ভ্যানগার্ড। সবসময় প্রস্তুত।
তাহলে এবার বিদায় দাও।
দাঁড়াও তোমার ওয়ালেট আমার কাছে। ওটা নিয়ে যাও। মণিকা সজলের ব্যাক পকেটে ওয়ালেট ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, ওখানে কিছু টাকা দিয়েছি। তোমার কাজে লাগবে।
টাকা দিলে কেন ? আমার যা ছিল তাতে চলে যেত।

মণিকা হাসল। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো তো ডোনেশন নিয়ে চলে। এটাও ডোনেশন মনে করবে। তোমাদের রাজনীতির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করলাম আর কি। মণিকা সজলের শার্টের উপর পারফিউম স্প্রে করে দিয়ে বলল, এটা মণিকা ব্র্যান্ড।
সজল হাসে। এবার আসি।

মনির ঝিলপার থাকে। কমলাপুর রেলক্রসিং পার হয়ে যেতে হয়। সজল ধানমণ্ডি থেকে মতিঝিলের বাসে চাপল। মতিঝিল থেকে সে রিক্সা নিল। রিক্সা রেলক্রসিং সিগন্যালে আটকা পড়েছে। রেল আসছে। রেল দেখলে সজলের বৃটিশদের কথা মনে পড়ে। সে ভাবে, বৃটিশরা আমাদের দুইটি জিনিস দিয়ে গেছে। এক গণতন্ত্র, এটাকে আমরা আজো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারি নি। দুই রেল, যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। গান্ধী প্রথমটা গ্রহণ করলেও দ্বিতীয়টা মনেপ্রাণে ঘৃণা করতেন। বেসিক্যালি গান্ধী ছিলেন পশ্চিমা সভ্যতার শত্রু। তিনি টেলিগ্রাফ আবিষ্কার ও রেলরোড কে বিপর্যয়কারী হিসেবে দেখেছিলেন।
সজলও মনে করে বৃটিশরা ক্ষতিই করেছে বেশি। ধ্বংস করে দিয়েছে বাংলার ঐতিহ্য মসলিন শিল্প। ষোড়শ সতের শতকের সমৃদ্ধ বাংলাকে তারা ভিক্ষুকের দেশ বানিয়ে দিয়েছে। পূর্ববঙ্গ থেকেই তো বৃটিশরা সবচেয়ে বেশি রেভেনিউ কালেকশান করত। আসলে তারা তো এসেছিল বাণিজ্য এবং লুঠ করতে। আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রে এখনও তো উপনিবেশিক ভূত রয়ে গেছে। এর আমূল সংস্কার খুব জরুরী।

রেলগাড়ি ঝনঝন শব্দ তুলে সজলের সামনে দিয়ে চলে গেলে সবুজ বাতি জ্বলে উঠল। রিক্সা ক্রসিং পার হয়ে আরও কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে থামল। সজল যে বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে আছ, এর চার তলার একটি ফ্ল্যাটে মনির থাকে। মনির ও তার কয়েক বন্ধু মিলে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছে। তাদের খাওয়া-দাওয়া মেস সিস্টেমে চলে। সজলের মনে হল এই বাড়িটা চুনকাম করা হচ্ছেনা অনেক বছর হবে। বৃষ্টির পানি বাড়ির দেয়ালে ছোপ ছোপ সবুজ ও কালো রঙের চিহ্ন রেখে গেছে। সজল সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে দেখল, দেয়ালের গায়ে পানের পিকের লাল লাল দাগ। দাগের দিকে তাকিয়ে বাঙালিদের যে শেখার অনেককিছু বাকি রয়ে গেছে, সে কথাই তার চিন্তায় উঠে আসে।

সজলকে দেখে মনির বিছানা থেকে উঠে এলো। আসেন আসেন সজল ভাই। আমরা দীর্ঘদিন আপনার অভাব অনুভব করছি।
মনির তোমাদের খবর কী ? পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে ? সজল একটা কাঠের চেয়ার টেনে বসে পড়ল।

খবর তেমন ভাল না। পরিস্থিতি দিনদিন ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। বিএনপি বলছে, আওয়ামিলীগ এরশাদের দালালী করছে। আর আওয়ামিলীগ বলছে, বিএনপিই আসল দালাল। গতপরশু রুবেল এরেস্ট হয়েছে।
রুবেল মানে, মিরপুরের ছেলেটা ?
হাঁ সজল ভাই।
এভাবে নেতা-কর্মী এরেস্ট হতে থাকলে আন্দোলন ভেঙ্গে পড়বে। বড় দুশ্চিন্তার বিষয়। মহসিন ভাই আসার কথা এখানে।
হাঁ, তিনি কাল রাতে আমাদের জানিয়েছেন, আপনি এখানে আসবেন।

সজল মনিরের সাথে আড্ডা দিতে দিতে অপেক্ষা করতে লাগল মহসিন ভাইয়ের জন্য।

আজ রাতের ট্রেনে সুমিরা চট্টগ্রাম ফিরে যাবে। খবর পেয়ে মণিকা সকাল থেকে চলে এলো শান্তিনগরের বাসায়। বিলকিস রান্নাবান্নার মেলা আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত। মণিকা কোমরে আঁচল পেঁচিয়ে বলল, মা এত কাজ আপনি একা সামলাতে পারবেন না। মোরগ পোলাও আমি রান্না করে দিচ্ছি।
বিলকিস হেসে মাথা নাড়ল। না না তুমি পারবে না। আমি সামলে নেব।
কী যে বলেন মা। মেয়ে হয়ে রান্না পারব না তা কী হয় ? মণিকা কাজে হাত লাগাল।

ভাইয়া তো এলো না আপু। তুমি কী ভাইয়ার কোন খবর জান ? সুমি বলল।
মণিকা শ্রাগ করল। স্ট্রেঞ্জ ! কয়েকদিন আগে সে বলেছিল মা-বাবার সঙ্গে দেখে করতে আসবে। তবে আমার মন বলছে আজকে আসবে।

কীভাবে বুঝলে ? সুমি পোলাওয়ের জন্য পিঁয়াজ কাটতে কাটতে প্রশ্ন করল। মণিকা মুরগির মাংস ধুতে ধুতে সুমির দিকে তাকাল। তোর পিঁয়াজ কাঁটা তো খুব সুন্দর। নতুন চাঁদের মত চিকন।
মণিকার কথা শুনে বিলকিস হেসে ফেলেন। আর একটু বড় করে কাটব ? সুমি মণিকার সম্মতির জন্য অপেক্ষা করে।
না, ঠিক আছে চালিয়ে যা।
বললে না তো আপু, ভাইয়া যে আসবে কীভাবে বুঝলে ? আমার মনে হয় আসবে না।
মণিকা নিঃশব্দে হাসল। বাজী ধরবি ?
বাজী।
মণিকা মাংসে মসলাপাতি মাখাতে মাখাতে বলে, tarn of condition বল।
সুমি চোখ ঘুরাল। বাজীর শর্ত নিয়ে ভাবছিল। আচ্ছা তুমি যদি হেরে যাও তুমি চাইনিজ খাওয়াবে আর আমি হারলে আমি খাওয়াব।

মণিকার মাংসে মসলা মাখা শেষ। মেরিনেট হওয়ার জন্য রেখে দিয়ে বাসমতী চাল ধুতে লাগল সে। বিলকিস ফ্রাইপেনে গলদা চিংড়ি ফ্রাই করছেন। বাতাসে তেল ও মসল্লার ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে।

আমি বাজীতে গেলাম না। তুই হেরে যাবি। মণিকা টেপের নিচে চালের পাত্রটি ধরে রেখে হাত দিয়ে নাড়তে নাড়তে বলল ।
এত কনফিডেন্ট তোমার ! এজন্য তো বলি তুমি বদলে গেছ।
মণিকা হাসল। মণিকা ঘাড় ফিরিয়ে বলল, তোর কী এরকম মনে হচ্ছে ?
সুমি মাথা দোলাল, মুখে কিছু বলল না। বিলকিস কথা বলে ওঠলেন। মণিকা তোমাকে আরও শক্ত হতে হবে। পুরুষদের এতো বেশি ছাড় দিতে নেই।

কিন্তু মা আমি তো কঠোর হতে পারি না। জানিস সুমি, সজলের যখন কপাল ফাটে, ওটাই ছিল আমার টারনিং পয়েন্ট। আমি নিজেকে বদলে নিলাম। ভালোবাসার চেয়ে বড় অস্ত্র আমেরিকাও আবিষ্কার করতে পারে নি। আমার জানা মতে, আমি কখনো আমার শত্রু সৃষ্টি করি নি। একটা কবিতা শুনবি...

I was angry with my friend ;
I told my wrath, my wrath did end .
I was angry with my foe ;
I told it not, my wrath did grow .

কবিতার এই কয়টি লাইন আমি নিজের মধ্যে ধারন করে নিয়েছি। তুই যদি তোর ক্রোধ কনট্রোল করতে পারিস তোর কোন শত্রু থাকবে না। সবাই তোকে ভালোবাসবে।

মণিকার চাল ধোয়া শেষ। সে চালের পানি ঝরে যাওয়ার জন্য ছিদ্রযুক্ত পাত্রটি সিঙ্কের এক পাশে রেখে দিল। সুমির দিকে ফিরে বলল, আমি পিঁয়াজের জন্য অপেক্ষা করছি। আগে মাংসটা বসাতে চাই।
এই তো হয়ে গেল আপু। আর কয়েকটা মাত্র বাকি। সুমি আরও দ্রুত হাত চালাল। বললে না তো আপু কবিতাটা কার লিখা ?

মণিকা পোলাও রান্নার জন্য বড় ডেক্সিটা পরিষ্কার করে নিচ্ছে। টেপের পানি সিঙ্কের উপর ছিটিয়ে পড়ছিল। কিছু পানির ছিটা তার শাড়িতে এসে পড়ল। সে টেপ ঘুরিয়ে পানির গতি কমিয়ে দিল। দাঁড়া কবির নাম মনে করতে হবে। আমি আবার ইংলিশ কবিদের নাম গুলিয়ে ফেলি। একজনের জায়গায় আরেকজনের নাম চলে আসে।

বিলকিস ফ্রাইপেন থেকে দৃষ্টি না সরিয়ে বলেন, William blake .সম্ভবত কবিতা A Poison Tree .
মণিকা বিলকিসের দিকে তাকিয়ে হাসল। মা মনে হয় কবিতা ভালোবাসে।

ছাত্রীজীবনে হুজুগ থাকেনা, ওরকম হুজুগে চর্চা করতাম আর কি। আমার কিছুটা লেখালেখির হাত ছিল। বিয়ের পর ওসব নিয়ে আর ভাবি নি।
এটা কিন্তু ঠিক করেন নি মা। আপনার চর্চাটা চালিয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল।

সুমি বলল, আপু পিঁয়াজ কাঁটা শেষ।

আচ্ছা আমাকে দিয়ে দে। আমি আগে বেরেস্তা করে নিই। মণিকা গরম তেলে পিঁয়াজ ছেড়ে দিল। পিঁয়াজ ব্রাউন না হওয়া পর্যন্ত ভাজতে লাগল।
সুমি তুই ডিমের খোসা ছাড়িয়ে নে। ডিম হয়ে গেলে সালাদের জন্য টমাটো, গাজর, শসা কেটে নিস। বিলকিস বললেন ।
মণিকার পিঁয়াজের বেরেস্তা করা শেষ। সে বড় ডেক্সিটা চুলার উপর বসিয়ে দিয়ে বাটার অয়েল ঢালল। বিলকিসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল, মা দেখেন তো বাটার অয়েল আর লাগবে কিনা ?

বিলকিস মাথা বাঁকালেন। আরও আধা কাপ দাও। আর আগুনের আঁচ আরও কমিয়ে দাও। তিনি চুলা থেকে ফ্রাইপেন নামিয়ে রাখলেন। আমার তো চিংড়ি ভাজা হয়ে গেল। মণিকা গরুর মাংস ভুনা করব, না দোপেয়াজা করব ?
মণিকা মুরগির বড় বড় টুকরা তেলের মধ্যে কষাতে কষাতে বলল, মা দোপেয়াজাই করেন। তবে একটু ঝাল হলে ভাল হবে।
তুমি ঝাল খাও ?
খায়। তবে খুব বেশি না।
আমান ড্রয়িংরুম থকে উঠে এসে রান্নাঘরে উঁকি দিল। সুমি গাজর স্লাইস করতে করতে বলল, কী চাও ?
আমান মাথা নাড়ল। ড্রয়িংরুমে গন্ধ পাচ্ছিলাম। তাই দেখতে আসলাম কী রান্না হচ্ছে।
মণিকা একবার আমানের দিকে ফিরে তাকিয়ে আবার মাংস কষায় মনোযোগ দিল। বলল, আপুর হাতের রান্না তো কখনও খাওনি। আজ প্রথম। হয়ত তোমার ভাল লাগবে না।

না আপু,গন্ধই বলে দিচ্ছে খুব ভাল হবে।

সুমি আমানের দিকে চোখ ঘুরিয়ে বলল, যাও তো রান্নাঘরে ঘুর ঘুর কইরো না। বসে বসে টিভি দেখ গিয়ে। আমান চলে গেল। মণিকা মাংস নাড়তে নাড়তে বলল, মনে হয় আমানের একা ভাল লাগছে না। সুমি তুই যা তো। বাকিটা আমি আর মা সামলে নেব।

সুমি হাসল। যেতে হবে না আপু। ও ওখানেও এরকম করে। আমি রান্নাঘরে থাকলে কতক্ষণ পর পর এসে কাপবোডে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। আমি ছাদে গেলে কিছুক্ষণ পর ও ছাদে চলে যাবে। আমি উঠানে হাঁটলে ও উঠানে বেরিয়ে আসবে। মাঝে মাঝে ধমক দিয়ে বলি, আমি কোথাও পালিয়ে যচ্ছি মনে হয় নাকি তোমার। তখন দাঁত বের করে হাসে। আমার আরও রাগ উঠে।

মণিকা বিলকিসের দিকে তাকাল। মা জাফরান আছে ? একটু জাফরান দিতে পারলে ভাল হত।
বিলকিস সুমির দিকে দৃষ্টি ঘুরাল। সুমি কাবাডে দেখ তো। কৌটায় অল্প একটু থাকতে পারে।

সুমি কাবাড থেকে জাফরানের কৌটা বের করে মণিকার হাতে দিল। মণিকা কৌটার ঢাকনা খুলে দুই আঙুলের চিমটি দিয়ে অল্প জাফরান তুলে নিয়ে পোলাওতে ছিটিয়ে দিল। কৌটা সুমির হাতে ফিরিয়ে দিয়ে বলল, রেখে দে।
রান্নার কাজ শেষ করে মণিকা ও সুমি সজলের ঘরে এলো। সজলের ঘরটা এতদিন বন্ধ ছিল। আজ মণিকাই দরজা খুলল। জানালা খুলে দিয়ে পর্দা টেনে দিতে দিতে সে বলে, ঘর বদ্ধ থাকলে একটা গুমট গন্ধ হয়ে যায়। বিছানার চাদরে কত ধুলো দেখ। দাঁড়া আগে চাদরটা পাল্টে দিই। বালিশের কভার বদলে দিল। চেয়ারের উপর থেকে টাওয়েল উঠিয়ে নিয়ে ওয়ারড্রোবে রেখে দিল। ফ্লোরে উল্টে থাকা স্যান্ডেল তুলে রাখল সু-স্ট্যানের উপর। টেবিলের বইপত্র গুছিয়ে রাখে সে। কলমটা রাখল ড্রয়ারের ভেতর।

চলবে - - -

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.