নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বসে আছি অন্ধকারে, \nআমাকে বুঝতে দাও \nমানুষ কেন আলোর \nপ্রত্যাশা করে!

আসোয়াদ লোদি

জীবন ও যন্ত্রণার মরুচরে আমি প্রপাতের ধারা ।

আসোয়াদ লোদি › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিন্ডারেল্যা

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৫১


সিন্ডারেল্যা হচ্ছে আর্ন থম্পসন এর ক্ল্যাসিকধর্মী এক নির্যাতিত নায়িকা চরিত্র । এই কাহিনীটি শুরু হয়েছিল রোডোপিস নামে এক গ্রীক ক্রীতদাসীকে উপজীব্য করে । মিসরের রাজার সাথে তার বিয়ে হয়েছিল । পৃথিবীতে প্রচলিত অনেকগুলো সিন্ডারেল্যা গল্পের মধ্যে এটি সর্বাপেক্ষা প্রাচীন বলে পরিচিত । এই গল্পটি প্রথম প্রকাশ হয়েছিল খৃষ্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে ।

খৃষ্টপূর্ব ১ম শতাব্দীতে গ্রীক ভূতত্ত্ববিদ স্ট্র্যাবো-র জিওগ্রাফিকা (বুক ১৭, ৩৩) গ্রন্থে গ্রীক ক্রীতদাসীর গল্প ‘রোডোপিস’ ( Rosey Eyes ) এর কাহিনীটি পাওয়া যায়, যে প্রাচীন মিসরের নৌকরেটিস শহরে বাস করত । রোডোপিস এর কাহিনীটি ছিল খুবই আকর্ষণীয় । একদিন সে যখন স্নান করছিল হঠাৎ একটি ঈগল ছোঁ মেরে তার একখানি চপ্পল নিয়ে ফারাও রাজা মেম্ফিসের দিকে উড়ে গেল । মেম্ফিস তখন উম্মুক্ত স্থানে বিচার কার্য নিয়ে বসেছিলেন । ঈগলটি এসে তাঁর মাথার উপর বসল এবং চপ্পলটি রাজার কোলে ফেলে দিল । রাজা এই অদ্ভুত ঘটনা ও সুন্দর চপ্পলটি দেখে উপস্থিত সবার দিকে বিরক্ত হয়ে তাকালেন । তিনি তৎক্ষনাৎ রাজ্যের সর্বত্র লোক পাঠালেন এই চপ্পলটি কোন নারীর তা অনুসন্ধানের জন্যে । অনেক খুঁজাখুঁজির পর নৌকরেটিশ শহরে রোডোপিসকে খুঁজে পাওয়া গেল এবং চপ্পলটি যে তার সে ব্যাপারে নিশ্চিত হল । রোডোপিসকে রাজা মেম্পিসের কাছে নিয়ে আসা হলে এবং রাজা তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলেন ।

খৃষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে স্ট্র্যাবোর পূর্বে হেরোডোটাস তার গল্পে রোডোপিস এর বাস্তব জীবন সম্পর্কে অনেক তথ্য জানিয়েছিলেন । তিনি লিখেছিলেন, রোডোপিস থ্রাস থেকে এসেছিল এবং সামোসে ল্যাডমন এর দাসী ছিল । এটি ছিল প্রখ্যাত গল্প কথক ঈশপের গল্পের সমতুল্য । ফারাও রাজা আমেসিস এর সময়ে তাকে দাসী হিসেবে মিসরে আনা হয়েছিল । গীতিকবি স্যাপ্পো এর ভাই চ্যারাক্সাস কর্তৃক মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে রোডোপিস মুক্ত হয়েছিল ।

প্রাচীন সময়ে সিন্ডারেল্যা থিম নিয়ে রচিত গল্পগুলোর মধ্যে রোমান লেখক এলিয়ানের (১৭৫ খৃঃ – ২৩৫ খৃঃ) গল্পটি ছিল বেশ জনপ্রিয় । তাঁর গল্পটি ছিল কর্ডেলিয়া গল্পের অনুরূপ । কর্ডেলিয়া গল্পের রচয়িতা ছিলেন মোনমাউথ । ল্যাটিন ভাষায় রচিত তাঁর দ্যা হিষ্ট্রি অফ দ্যা কিং অফ ব্রিটানিকা (Historia Regum Britanniae) গ্রন্থে এর উল্লেখ আছে । বৃটেনের সম্মানিত রাজা লেয়ার এর তিন কন্যার মধ্যে কর্ডেলিয়া ছিল সবচেয়ে ছোট । সে তার অপরাপর বোনের মত মিথ্যা ও চাটুকারিতা দ্বারা পিতাকে প্রভাবিত করত না । রাজা বড় দুই মেয়ের মধ্যে রাজ্য ভাগ করে দিয়েছিলেন এবং কর্ডেলিয়াকে বঞ্চিত করে ত্যাগ করেছিলেন । ফ্রাঙ্কের রাজা আগানিপ্পাসকে কর্ডেলিয়া ভালোবাসত এবং তাঁর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় । তারা উভয়ে পালিয়ে গিয়ে একটি সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিল । কর্ডেলিয়া তার বোনদের ভুলে গিয়েছিল যারা পিতার সাথে প্রতারণা করত । শেষ পর্যন্ত কর্ডেলিয়া বৃটেনের মহামান্য রানীর আসন অলংকৃত করেছিল । কিন্তু তার রাজত্বকাল মাত্র পাঁচ বছর স্থায়ী হয়েছিল । শেক্সপীয়ারের কিং লেয়ার কাহিনীতে এই গল্পটির উল্লেখ পাওয়া যায় । তবে হ্যাপি এন্ডিং নয়, বিয়োগান্তক সমাপ্তি টেনেছেন তিনি ।

আরও একটি সিন্ডারেল্যা গল্পের কথা জানা যায় । ৮৬০ খৃষ্টাব্দ নাগাদ দুয়াং চেংশী এই গল্পটি রচনা করেন । তিনি ইউয়াং শহর থেকে মানব ফসিলের বিভিন্ন টুকরো থেকে গল্পের ই যিয়াং কে রূপ দান করেন । সে ছিল কঠোর পরিশ্রমী এবং চমৎকার এক বালিকা যে একটি মাছকে সাহায্য করেছিল যাতে তার মায়ের পুনর্জন্ম হয় । তার সৎমা ও বোনেরা মিলে তার মাকে হত্যা করেছিল । যিয়ান তার মায়ের হাড় সংরক্ষণ করেছিল, আসলে এটা ছিল একটা কৌশল । সে একটি উৎসবের জন্য উপযুক্ত পোষাকের ব্যাপারে এই হাড় থেকে সাহায্য পেয়েছিল । যখন সে তার একটি চপ্পল হারিয়েছিল, এরপর তার সৎমাতা ও বোনেরা তাকে চিনতে পেরেছিল । রাজা তার চপ্পলটি খুঁজে পেয়েছিল এবং তাকে প্রথম স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে । আসলে রাজা তাকে তার নিষ্ঠুর সৎমাতা থেকে রক্ষা করেছিল ।

ইন্দোনেশিয়া ও মালয়শিয়ার গল্পটি দুইজন বালিকাকে নিয়ে । তাদের নাম ছিল বাওয়াং মেরাহ ( Red Onion ) এবং বাওয়াং পুটিহ ( White Onion ) অর্থাৎ পিঁয়াজ ও রসূন । এই দুই দেশের মধ্যে একই গল্প প্রচলিত থাকলেও বালিকাদ্বয়ের মধ্যে সত্যিকার সম্পর্ক ও মূল চারিত্রিক পার্থক্য ছিল । তবে গল্পের পটভূমিতে ছিল চমৎকার সাদৃশ্য । উভয় গল্পে ছিল ঐন্দ্রজালিক মাছ, পরীরানী ও তার কন্যা যে শত্রুদের আগুনে সিদ্ধ করত । নায়িকা তাদের হাড়গুলো খুঁজে পায় এবং তা কবরস্থ করলে কবরের উপর দিয়ে ঐন্দ্রজালিক বাতাস প্রবাহিত হতে থাকে । নায়িকা ঐন্দ্রজালিক বাতাসের উপর দোল খেতে খেতে গান গাইতে থাকলে তার গান সেই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় যুবরাজ শুনতে পায় । ঐন্দ্রজালিক বাতাস ছিল চপ্পলের একটি পরীক্ষা, যা নায়িকাকে তার শয়তান বোন থেকে বিমুক্ত করেছিল । পরিশেষে যুবরাজ নায়িকার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় ।

ভিয়েতনামের গল্পটি ট্যাম ক্যাম কে উপজীব্য করে রচিত হয়েছিল । ট্যাম তার পিতা ও পিতার রক্ষিতা এবং তার মেয়ে দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিল । তার বৈমাত্রেয় মাতা দ্বারা অন্যায় ভাবে প্ররোচিত হয়ে তারা একটি মৎস শিকারের বাজীতে জিতে ট্যামের জন্মাধিকার চুরি করেছিল । তার বৈমাত্রেয় পরিবার মাছটি হত্যা করে খেয়ে ফেলেছিল এবং এর কাঁটাগুলো পরিবেশন করা হয়েছিল তার অভিবাবক ও নিরাপত্তার জন্যে । পরিশেষে একটি উৎসবে ট্যাম রাজার মর্যাদা সম্পন্ন স্ত্রীতে পরিণত হয় । যাহোক কাহিনীর দ্বিতীয় অংশে এই মহান চরিত্রটি প্রতিশোধ পরায়ণের দিকে মোড় নেয় । তার বৈমাত্রেয় বোনকে জীবন্ত সিদ্ধ করে সেই মাংস তার কুটিনী বৈমাত্রেয় মাতাকে ভক্ষণ করানো হয় ।

কোরিয়ান গল্পটির নাম ছিল কোংজি ও পাতজ্জি । এই গল্পটির মূল চরিত্র হচ্ছে রাজকন্যা কোংজি । সে তার বৈমাত্রেয় মাতা ও বৈমাত্রেয় বোন পাতজ্জি দ্বারা সর্বদা নির্যাতিত হত । রাজার বলনৃত্যের সময় বৈমাত্রেয় পরিবার তাকে বাধ্য করত ঘরে আবদ্ধ থাকতে । সে সময়ে একটি পরীর আগমন ঘটে । পরী কোংজিকে একটি চমৎকার পোষাক দিয়েছিল যা অন্য সবার চেয়ে ছিল আলাদা । এর ফলে তার প্রতি রাজার স্নেহ জাগ্রত হয়েছিল । গল্পটি আরও এগিয়েছে কোংজি কর্তৃক পাতজ্জিকে নদীতে ডুবিয়ে মারার মধ্য দিয়ে । এভাবে কোংজি রাজার সাথে বসবাস করার জন্য পাতজ্জি থেকে মুক্ত হয়েছিল । পরে রাজা পাতজ্জিকে মৃত অবস্থায় খুঁজে পান ।

এ জাতিয় আরও ভিন্ন ভিন্ন গল্পের রূপ পাওয়া যায় মধ্যযুগের ‘এক হাজার এবং এক রাত্রি’ গ্রন্থে । ‘আরব্য রজনি’, ‘দ্বিতীয় শায়খের গল্প’, ‘বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলার গল্প’ ও ‘আবদুল্লাহ ইবনে ফাদী এবং তার ভাইগণ’ প্রভৃতি গল্পের থিম ঈর্ষাপরায়ণ বড় দুই বোন কর্তৃক ছোট বোনের নির্যাতিত হওয়ার কাহিনী । এসব গল্প কিছু ছিল বোন কেন্দ্রিক এবং কিছু ভাই কেন্দ্রিক । এরকম একটি গল্প হচ্ছে ‘জুদার ও তার ভাইগণ’ । পূর্বের গল্পের মত এই গল্পটি হ্যাপি এন্ডিং এর অংশ হতে পারত । কিন্তু বড় ভাইদের দ্বারা বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে ছোট ভাইকে হত্যা করে এক ট্র্যাজেডির মধ্য দিয়ে এই গল্পটির সমাপ্তি হয়েছে ।

সিন্ডারেল্যা বা একটি ছোট কাঁচের চপ্পল গল্পটি ইউরোপিয়ান লোক-কাহিনীতে এক নির্যাতিত নারীর প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে । এই গল্পটির ভিন্ন ভিন্ন নামে আরও কয়েকটি ইউরোপিয়ান সংস্করণ দেখা যায় । ফরাসি ভাষায় গল্পটির নাম Cendrillon ou La Petite Pantoufle de verre, জার্মান নাম Aschenputtel, ইতালিয়ান নাম Cenerentola , রাশিয়ান নাম Zolushka, প্রভৃতি । ১৬৩৪ খৃষ্টাব্দে রচিত Giambattista Basile এর Pentamerone , ১৬৯৭ খৃষ্টাব্দে রচিত Charles Perrault এর Historis ou contes du temps passe এবং ১৮১২ খৃষ্টাব্দে রচিত ব্রাদার্স গ্রিম এর লোকগল্পের সংকলন ‘গ্রিমের পরীর গল্প’-তে সিন্ডারেল্যা গল্পের উল্লেখ পাওয়া যায় ।

যদিও সিন্ডারেল্যা গল্পটির নাম ও চরিত্র বিভিন্ন ভাষায় পরিবর্তিত হয়েছে কিন্তু ইংরেজি ভাষার লোক-কাহিনীতে সিন্ডারেল্যা আজও একটি ধ্রপদী নাম হিসেবে পরিচিত । সিন্ডারেল্যা নামের সাথে সমান্তরাল ভাবে উঠে আসে কিছু অবমুল্যায়িত অবদান, অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তির স্বীকৃতি বা সাফল্য এবং নির্যাতিত ও অবহেলিত সময়ের চিত্র । জনপ্রিয় সিন্ডারেল্যা গল্পটি আজও আন্তর্জাতিক ভাবে জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক ধারা বজায় রেখেছে বিভিন্ন মিডিয়াতে । হলিওডে সিন্ডারেল্যা গল্প নিয়ে ছবিও নির্মিত হয়েছে।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০৩

জাহিদ হাসান বলেছেন: ওযাও ।

২| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:১০

জাহিদ হাসান বলেছেন: ভালো লাগল।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৩৪

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: ধন্যবাদ জাহিদ হাসান ভাই

৩| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:১০

রাজীব নুর বলেছেন: রূপকথা সিন্ডারেলা ছোটবেলা আমার ভীষন প্রিয় ছিল।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৩৮

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: আসলে ছোটবেলার রূপকথার গল্প খুব মজার।

৪| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:২৫

জুল ভার্ন বলেছেন: চমৎকার!

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৩৯

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাল লাগল মন্তব্যে

৫| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:১৩

টারজান০০০০৭ বলেছেন: ভালো লিখেছেন! সিন্ডারেলার কাহিনী আগের জমানাতেই মানানসই ছিল ! তখন বুঝি গরিবের রাজা-রানী হইবার উপায়ও ছিল ! এখনকার সময়ে কোন রাজপুত্র আর নিচুতলার কাহাকেও বিবাহ করিবে না ! বড়জোর জিং জিং খেলিয়া ছুড়িয়া ফেলিতে পারে !

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৪০

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: হা হা--- সময়ে সবকিছু বদলে যায়।

৬| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৩

শের শায়রী বলেছেন: দারুন। এই টাইপের লেখা এখন সামুতে অনেক কম আসে, অথচ এই সব লেখা একটা সময় বেশ কিছু লেখক লিখত, ইমন ভাইতো মাষ্টার ছিলেন এই ধারার। অনেক দিন পর একটা লেখা পড়ে মন ভরে গেল।

ভালো থাকুন।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৪১

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: ধন্যবাদ। ভীষণ অনুপ্রাণিত হলাম।

৭| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৫৩

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
রূপকথাগুলো কিছুটা ধরণ/ধারণ পরিবর্তন করে প্রায় সব দেশেই শোনা যায়।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৪৪

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.