নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বসে আছি অন্ধকারে, \nআমাকে বুঝতে দাও \nমানুষ কেন আলোর \nপ্রত্যাশা করে!

আসোয়াদ লোদি

জীবন ও যন্ত্রণার মরুচরে আমি প্রপাতের ধারা ।

আসোয়াদ লোদি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘৃতকুমারী ও আমার মেয়ে

০৯ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:২৭



গেল মার্চে বৃষ্টি হয়েছিল আড়াই দিন। বৃষ্টির জল ও নর্দমার কাদার মৈত্রীতে জনজীবনে নেমেছিল দুর্ভোগ। তেমন দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে আমার মেয়ে এশা বন্ধুর কাছ থেকে এনেছিল একটি ঘৃতকুমারীর চারা। সে শিশু ঘৃতকুমারীকে অতি মমতায় একটি টবে লাগিয়েছে। অতি জলের উৎপাত থেকে রক্ষার জন্য সে আঙিনা থেকে টবটি নিয়ে আসে ঘরের ভিতর। মার্চের বৃষ্টির আয়ু দীর্ঘস্থায়ী হলো না। আড়াই দিন পর পৃথিবীর বুকে নেমে এলো তরতাজা রোদ। আঙিনায় ফুল ও ফলজ বৃক্ষের মাঝে এশা রেখে এলো শিশু ঘৃতকুমারীকে।

উদ্ভিদের প্রতি আমারও আছে সীমাহীন দুর্বলতা। আমি যখন ছাত্র ছিলাম নিজ হাতে ফুলের বাগান করতাম। তখন কক্সবাজারে ফুলের ব্যবসা চালু হয়নি। নার্সারিও ছিল না। ফুলও যে বাণিজ্যিক পণ্য হতে পারে, সেই ধারণা এই অঞ্চলের মানুষের ছিল না। আমার মনে আছে বড় আপার বিয়ের সময় যথেষ্ট ফুলের দরকার হলো। এতো ফুল যোগাড় করা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি পাড়ার কয়েকজন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বড় বন কর্মকর্তার বাংলোয় চলে গেলাম। দারোয়ানকে ফুল দেয়ার জন্য রিকোয়েস্ট করলাম। সে একটি ফুলও দিতে রাজী হল না। অগত্যা আমরা দারোয়ানকে বেঁধে রেখে গাছের সব ফুল ছিনতাই করলাম এবং কয়েকটি ডালিয়া ফুলের চারাও নিলাম। ফুল তোলা হয়ে গেলে চলে আসার সময় দারোয়ানের বাঁধন খুলে দিতে গেলে তার করুণ কন্ঠ এখনও কানে বাজে। দারোয়ান বলল-ভাই বন্ধন খুলবেন না। বন্ধন খুলে দিলে চাকরি থাকবে না।
এরকম সঙ্কটে আরও একবার পড়েছিলাম। আমার ভাগ্নির বিয়ে। ওরা আব্দার করল চায়নাবেলি আর রজনীগন্ধা যোগাড় করে দিতে হবে। তখন এসব ফুল কক্সবাজারে দুষ্প্রাপ্য। তন্ন তন্ন করে খুঁজেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলাম। অবশেষে গাঁদা আর গোলাপের উপর ভরসা করতে হলো। পরে আমি চট্টগ্রাম থেকে রজনীগন্ধার চারা এনে লাগিয়েছিলাম ছাদে। বেশিদিন বাঁচে নাই। মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। একটি চারাও বাঁচাতে না পেরে আমি খুব হতাশ হলাম। ব্যর্থতার গ্লানি সহজে মুছে না। সেই দাগ এখনো রয়ে গেছে মনে। এখনো কোথাও রজনীগন্ধা ফুটে আছে দেখলে পরাজিতের মতো তাকিয়ে থাকি।

প্রতিদিন এশা তীক্ষ্ণ নজর রাখে শিশু ঘৃতকুমারীর উপর। কয়েক দিনের মধ্যেই চারাটি নিজের অস্থিত্ব জানান দিল। এর পাতার সামান্য বৃদ্ধি ঘটল। মনে হলো শিশুটি ঘোষণা করছে আমিও এই পৃথিবীর অংশীদার। উৎফুল্ল হয়ে উঠল এশা। বলল, বাবা চারাটি বড় হচ্ছে। যেন এক আনন্দ হিল্লোল উঠলো তার হৃদয়ে। ছোট্ট একটি ঘৃতকুমারীর চারা তাকে এতো আনন্দ দেবে আমি ভাবতেও পারিনি। কখনো কখনো মানুষ অল্পতেও আনন্দিত হয়। তাদের জীবনে থাকে না লোভ-লালসা-কপটতা। এসবের ঊর্ধ্বে উঠতে পারলে আনন্দ-মার্গে বিচরণ করা সম্ভব। আমি আঙিনায় গিয়ে চারাটি পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম। এশাও এলো আমার সঙ্গে। বলল, বাবা এলো ভেরা খুব বেশি পানি সহ্য করতে পারে না। তাই মাটি ভেজা থাকলে পানি দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। আমি বললাম-হ্যাঁ, অতিরিক্ত জল পেলে এসব গাছ বাঁচে না। আমি খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে গাছের গোড়ার মাটি ঝরঝরে করে দিলাম। এতে গাছের শিকড় আলো-বাতাস টানতে পারবে।

যত দিন গড়াতে লাগল, চারাটি আমাকে মোহিত করে রাখল। যেন এক মায়ার বন্ধনে আমরা বাঁধা পড়লাম। মনে হতে লাগল চারাটি আমার তৃতীয় সন্তান। আসা-যাওয়ার সময় একবার হলেও আমার দৃষ্টি ওর দিকে চলে যায়। এশার ছোট ভাই আয়ান বৃক্ষ বিষয়ে তত মনযোগী নয়। গেম ওয়ার্ল্ড নিয়ে সে মেতে থাকে সারাক্ষণ। বলে, জগদীশ হওয়ার ইচ্ছা আমার নাই। তবে একবার জানালার ধারে একটি মাছরাঙ্গা বসে থাকতে দেখে, সে সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরা বন্দী করে পাখিটিকে। এতেই তার আনন্দের সীমা ছিল না। একদিন সকালে লক্ষ্য করি ঘৃতকুমারীর চারাটি আরও বড় হয়েছে। এর দুইপাশে আরও দুটি চারা গজিয়েছে। বুঝলাম সে পৃথিবীর স্বভাব বুঝে গেছে। পৃথিবী যে বংশ বিস্তারের উপযুক্ত জায়গা, তা আর বলে দিতে হলো না। এশা দারুণ খুশি। ইচ্ছার সফল বাস্তবায়ন দেখতে পেলে কে না খুশি হয়। এশা বলল, বাবা চারা দুটি বড় হলে আলাদা টবে লাগাতে হবে। আমি বললাম ঠিক আছে, আরও দুটি টব যোগাড় করে রাখব।
কিন্তু টব জোগাড় করার আগেই একদিন দেখি, প্রতিবেশীর এক দুষ্ট ছেলে ঘৃতকুমারীকে ক্ষত-বিক্ষত করে উপড়ে ফেলেছে। ঘৃতকুমারীর শরীরে একটি পাতাও নেই, শুধু আছে শেকড়টুকু। ঘৃতকুমারীর এই অবস্থা দেখে এশা জলভরা চোখে নির্বাক হয়ে রইল। আমার মনটাও বিষাদে ভরে গেল। তারপর আশা নিরাশার দোলাচালে আমি আবার ঘৃতকুমারীর শেকড় টবে রোপণ করে দিলাম। কেন জানি মনে হচ্ছিল তার আয়ু শেষ। বাঁচার আর আশা নেই। কিছুদিন পর দেখি আমার সমস্ত ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে ঘৃতকুমারীর কচি সবুজপাতা মাটি ফুঁড়ে উঁকি দিয়েছে পৃথিবীর আলো-বাতাসে। আমার বিস্ময়ের সীমা রইল না উদ্ভিদের এরকম প্রাণশক্তি দেখে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৪০

জুন বলেছেন: মন কেমন করা লেখাটিতে মন্তব্য করার জন্য আবার লগ হোলাম আসোয়াদ লোদি। গাছের প্রতি আপনি ও আপনার মেয়ের ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমার বারান্দার ঘৃতকুমারীটাকে বাসার লোকজন অবহেলা করতে চায়। আমি প্রবল বাধা হয়ে দাড়াই। আপনার মেয়ের মানসিক অবস্থা অনুধাবন করতে পারছি বৈকি।
লেখাটিতে অনেক ভালোলাগা রইলো।
+

০৯ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:০৩

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: আসলে আপনার আবেগও আমি অনুধাবন করতে পেরেছি। উদ্ভিদের প্রতি সকলের ভালোবাসা থাকা উচিৎ। কারণ উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে।

২| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৭:২৬

ইসিয়াক বলেছেন: চমৎকার পোষ্ট । অনেক ভালো লাগা । ছোট্ট আম্মুর জন্য শুভেচ্ছা ,শুভকামনা ও দোয়া রইলো ।
ভালো থাকুন সবসময়।

১০ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৮:৩৯

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা।

৩| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: ঘৃতকুমারী অনেক উপকারী। অনেক।

১১ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৩৮

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: হাঁ রাজীব ভাই, এটির বহু প্রকার ভেষজ গুণ রয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.