![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর পর আমার সবচেয়ে প্রিয় পুস্তক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানটি পড়তেই ভালো লাগে না । যে অনুচ্ছেদের নীচে Fifteen amendment Footnote দেখি প্রায় প্রতিটায় পারষ্পারিক inconsistent & conflicted বলে আমার মনে হয় । এই সংশোধনীর ভালো দিকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মুক্তিযুদ্ধের অসামান্য তিনটি দলিল নতুন তফশীল হিসাবে সন্নিবেশিত হয়েছে অথচ এই বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ, ২৬শে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষনা, ১০ই এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষনাপত্র যার ভিত্তিতে পুরো সংবিধাটি প্রণীত হওয়ার কথা ও ব্যাখ্যা দেয়ার কথা Fifteen amendment এর পর এই সংবিধানটি পড়লে এই তিনটি দলিলের মূল স্পিরিট এর সাথেই মনে হচ্ছে এখন সংবিধানটি সাংঘর্ষিক ও অসংগতিপূর্ণ। কিভাবে যে সংবিধান বিশেষজ্ঞ্ররা এই অসামঞ্জস্যপূর্ণ সংবিধানের ব্যাখ্যা দিয়ে চলেছেন তা সত্যিই বোধগম্য নয় । সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিতের পরিবর্তে মনে হয় যেন এই জগাখেচুড়িপূর্ণ সংবিধানের বদৌলতে এ সমাজে এখন অসাম্য, অমানবিকতা ও বিচারহীনতায় ভরে গেছে । দেখেন, অনুচ্ছেদ-৬(২) এ বলা হয়েছে - 'বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন' । আবার অনুচ্ছেদ ২৩(ক) তে এসে বলা হচ্ছে - 'রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন' । উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও নৃগোষ্ঠীগুলোর নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ উন্নয়ন ও বিকাশের প্রধান শর্তই হলো তাদের স্বজাতি পরিচয়বোধ কে স্বীকৃতি দেয়া । ৬ এর (২) অনুচ্ছেদে বলেই দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাঙালী হবেন ! তাহলে এই উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও নৃগোষ্ঠীগুলোর মানুষেরা কি বাংলাদেশের নাগরিক নন নাকি তারাও বাঙালী ? যদি তাদেরকে ৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাঙালী বলেই ধরা হয় তাহলে তো তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকেই অস্বীকার করা হলো । তাহলে আর তার সংরক্ষণ, উন্নয়ন, বিকাশের জন্য আলাদা অনুচ্ছেদের দরকার কি ছিল ? আবার যদি তাদের নিজস্ব জাতিসত্তা স্বীকারই করা হয় তাহলে ৬(২)এ সকল নাগরিকদের বাঙালী বলে অভিহিত করা হলো কেন ?
আবার অনুচ্ছেদ ৭খ তে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর স্থায়ীরুপ দিতে গিয়ে দেশের জনগনের সাথে চরমতম প্রতারণা করা হয়েছে । এখানে সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগ, দ্বিতীয় ভাগ, তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদকেই মৌলিক কাঠামোর মধ্যে ফেলে সবগুলো অনুচ্ছেদেরই সংযোজন পরিবর্তন এমন কি প্রতিস্থাপন ও রহিতকরণেরও অযোগ্য করে ফেলা হয়েছে । অথচ ২য়ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিগুলোর মূল উদ্দেশ্যই হলো এগুলো একে একে বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে রাষ্ট্র একসময় এগুলোকে মৌলিক অধিকারে পরিণত করা । ৭খ অনুচ্ছেদে সংবিধানের ২য় ভাগটি যুক্ত করার কারনে Fundamental Principles Of State Policy কে Fundamental rights এ পরিণত করার সব পথ বন্ধ হয়ে গেল , অর্থাৎ Universal Declaration Of Human Rights এর যে ৭টি বিধান রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছিল তা আর কখনই মৌলিক অধিকারে পরিণত হবে না । ভবিষ্যতে আর কখনই অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার জনগনের মৌলিক অধিকার হবে না ; বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধীভাতা, বেকারভাতা সহ অনগ্রসর অংশসমূহের ভাতা পাওয়ার অধিকার মৌলিক অধিকার হওয়ার সম্ভবনাকে চিরতরে কবর দেয়া হয়েছে এই সংশোধনীর মধ্যদিয়ে । গোলকনাথ কেস, কেসাভানান্দা ভারতী কেস এমন কি আমাদের দেশের আনোয়ার হোসেন বনাম বাংলাদেশ মামলার রায়ের বেসিক স্ট্রাকচার নীতির সাথে সংবিধানের ২য় ভাগ যায় না । কারণ সবকিছু সঠিকভাবে চললেও সমাজ পরিবর্তনশীল । এই শতকে রাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্য নীতিগুলো সামনের শতকে গিয়ে অদরকারী হয়ে যেতে পারে কিংবা পৃথিবী এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে নতুন নীতি রাষ্ট্র পরিচালনায় সন্নিবেশিত করা যেকোন সময় আশু প্রয়োজন হয়ে পড়তে পারে, তখন কি হবে ?
২ক অনুচ্ছেদে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকার যেখানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বসিয়েছিল সেই অনুচ্ছেদই পুরোপুরি বাতিল করা দরকার ছিল । কেননা (১)রাষ্ট্র কোন ধর্ম পালন করে না তাই রাষ্ট্র ধর্ম থাকারও কোন দরকার নেই, (২) অনুচ্ছেদ- ৪১ এ রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকারকে মৌলিক অধিকার করার মধ্যদিয়ে রাষ্ট্র সকল ধর্ম ও সকলের ধর্ম পালনে সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করেছে । তাই এই অনুচ্ছেদের কোন প্রয়োজন নেই । উপোরন্ত, এমন কি এই ২ক অনুচ্ছেদটি স্পষ্টভাবে অনুচ্ছেদ ৮ ও ১২ এর সাথে সাংঘর্ষিক , অনুচ্ছেদ ১২ তে যেখানে সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে ২(ক) তে সেখানে একটি ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম করে রাষ্ট্রকেই একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করে ফেলা হয়েছে । জনগন যে কোন একটি দেখতে চায় ।
আবার গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে গিয়ে সময়ের সবচেয়ে সমালোচিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ৫৮(খ), (গ), (ঘ) অনুচ্ছেদগুলো বাতিল করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারের গঠন কিরুপ হবে কিংবা সরকারের কার্যপ্রণালী কিরুপ হবে সে বিষয়ে পুরো সংবিধানের কোথাও কিছু বলা নেই । অনুচ্ছেদ-১২৩(খ) তে শুধু সংসদ সদস্যদের নির্বাচন কখন অনুষ্ঠিত হবে তা বলা হয়েছে । এই অস্পষ্টতার কারণে যে সরকার বিদ্যমান থাকছে তার অধীনেই নির্বাচন হবে বলে ধেরে নেয়া হচ্ছে । কিন্তু সংবিধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানকালীন সময়ে সরকারের অবস্থান, গঠন, কার্যপ্রণালী কি হবে সে বিষয়ে একটি স্পষ্ট অনুচ্ছেদ থাকলে আজ আর এই জটিলতায় পুরো জাতিকে নিমজ্জিত হতে হতো না ।।
©somewhere in net ltd.