নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

সূতীর খালের হাওয়া ২৩ঃ শিরোনামহীন ডায়রির পাতা

০৬ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৯:০৪

১।
.
সাতসকালে জগিং শেষ করে ফ্রোজেন পরোটা কিনে বাসায় ফিরছি। রাস্তায় মসজিদের ইমাম সাহেবের সঙ্গে দেখা। কুশল বিনিময় হল। জিজ্ঞেস করলেন ফজরের নামাজে মসজিদে আসি কি না। আমি বললাম দারোয়ান রাখা হয় নাই এখনও, ফজরে বাসা থেকে বের হওয়া মুশকিল। দোয়া চাইলাম, যাতে ফজরও মসজিদে গিয়ে পড়ার সুযোগ হয়।
.
এমন সময় সকাল সকাল এলাকায় কন্সট্রাকশনের কাজে আসা এক শ্রমিক (আগের এক লেখায় এদের কথা উল্লেখ করেছিলাম বোধয়) আমার ফজরে মসজিদে উপস্থিত না হওয়ার কারণ শুনে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাঙ্গ করে বলল - 'ফজরে আইতে পারি না, কারণ বাড়িতে দারোয়ান নাইক্কা।'
.
আমি বেকুব হয়ে গেলাম। দারোয়ান না থাকার সঙ্গে ফজরের সময়ে বাইরে না বের হওয়ার সাথে দালানের সিকিউরিটি কন্সারন সংযুক্ত। এটা বুঝতে একটু মুশকিলই হওয়ার কথা, তাই বলে এভাবে সামনা সামনি ব্যাঙ্গ করবে?
.
সেই শ্রমিক আর আমি বেশ খানিকটা রাস্তা পাশাপাশি হেঁটে গেলাম। পুরোটা সময় এই দোলাচলের মধ্যে ছিলাম যে - ওকে কি আমার ডেকে জিজ্ঞেস করা উচিৎ হবে যে ও এভাবে করে আমাকে বিদ্রূপ করবার সাহস পেলো কোথায়? বা, এটা যদি সমাজের অবস্থাসম্পন্ন তলার বাসিন্দার আওয়াজ মনে হয়, অন্তত এটা কি প্রশ্ন করা অসমীচীন হবে যে - তুমি নিজে ফজরে মসজিদে যাও কিনা, বা আদৌ নামাজ পড়ো কি না?
.
কিন্তু পরে মনে হল - ওর সঙ্গে আলাপে যাওয়াটা সমীচীন হবে না। কি বলতে কি বলে ফেলে। চুপ করে হেঁটে চলে এলাম বাসায়।
.
২।
.
আমার সামাজিক যোগাযোগ এখন বাসা, বাজার আর মসজিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। চাকরী যেহেতু বাসায় বসে করি। ওয়ার্ক ফ্রম হোম যাকে বলে। তাই ঘুরেফিরে এসমস্ত জায়গার ঘটনাগুলোই বারবার আমার ডায়রির পাতায় উঠে আসে।
.
আসরের নামাজ পড়ছি। পাশের লোক পারলে প্রায় আমার জায়নামাজের ওপর উঠে পড়ে। মুখে সুন্নতি দাঁড়ি। কিন্তু মাস্ক নেই। এদিকে আমার দাঁড়ি নেই কিন্তু মাস্ক আছে। কাজেই সে বড় মুসুল্লি। তাকে ঘাঁটানো ঠিক হবে কি না বুঝতে পারছিলাম না। নিজে যতটুকু পারি দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ পড়লাম। তবে নামাজের মধ্যে ইমামসাহেবের মাইক্রোফোন নষ্ট হয়ে এমন ঘ্যারঘ্যার আওয়াজ শুরু করে দিলো যে নামাজের মধ্যেই মেজাজটা খিঁচরে গেলো। নামাজ শেষ হওয়া মাত্রই জায়নামাজ গুটিয়ে নিয়ে পাশে গায়ের ওপরে এসে পড়া লোকটাকে বললাম সরে বসতে। সে সরে বসার বদলে উঠেই গেলো। গিয়ে একদম পেছনে বসলো।
.
নামাজ শেষে যখন বেরুচ্ছি মসজিদ থেকে, নামছি সিঁড়ি দিয়ে, লোকটা ঠিক আমার পেছনে এসে দাঁড়িয়ে ঘাড় বরাবর কাশি দিলো বেশ কয়েকটা। মুখে তখনও মাস্ক নেই। হাত দিয়ে মুখ ঢাকার কোন চেষ্টাও নেই। আমি নিশ্চিত হতে পারছিলাম না যে সে ইচ্ছে করেই পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া বাঁধানোর চেষ্টা করছে কি না। আবারো, কিছু না বলে চুপচাপ বেরিয়ে এলাম।
.
নীচে নেমে দেখলাম মহল্লার মুরুব্বীরা জটলা পাকিয়ে আলাপ করছে। কোম্পানি মসজিদ করে দিয়েছে। এতে বাড়িওয়ালাদের নাকি অনেক লাভ।
.
আমি অবাক হলাম। মসজিদ হলে গণহারে সমস্ত বাসিন্দাদের লাভ। বাড়িওয়ালাদের আলাদাভাবে লাভ কি?
.
বাড়িওয়ালারা সভাপতি - সেক্রেটারি হবে মসজিদের, উত্তর এলো।
আমি পরম বিস্ময়ের সঙ্গে যতদ্রুত সম্ভব হয় হেঁটে বাসায় চলে এলাম।
এলাকার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, থানা আওয়ামীলীগ, এই দল সেই দল এতো এতো দলের সভাপতি - সেক্রেটারি হয়ে পোষাচ্ছে না। এখন খোদার ঘরেও রাজনীতি করা লাগবে, সেক্রেটারি - সভাপতি হওয়া লাগবে এদের? কি লাভ? সবার আগে চ্যালচ্যালায়ে বেহেশতে যাবে?
.
৩।
.
এসে আমি আমার লেখা আর মিউজিক কম্পোজ করবার স্টুডিওতে প্রবেশ করি। রুমটায় জানালা আছে, কিন্তু বাড়িতে বাউন্ডারির সঙ্গে ফলস ছাদ ঢালাই করে দেয়ার ফলে গ্রাউন্ডফ্লোরের এই ফ্ল্যাটে কোনো বাইরের আলো বাতাস ঢোকে না। মোটের উপর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এসি লাগানো দরকার। নইলে বদ্ধ ঘরে দমবন্ধ করা পরিবেশে অসুস্থ হয়ে পড়বো হয়তো। এই অবস্থাতেই এই ফ্ল্যাটটাকে আমার স্টুডিও হিসেবে ব্যবহার করছি গতবছরের নভেম্বর মাস থেকে।
.
আমার এই স্টুডিওতে এখন আছে একটা চৌকি, একটা টেবল, আমার গিটার আর কিবোর্ড। ল্যাপটপ উপরের রুম থেকে নীচে নিয়ে আসি প্রতিদিন। আসরের পর থেকে নিয়ে এশার আগ পর্যন্ত, বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত এখানে বসে লিখি। মিউজিক কম্পোজ করি।
.
ছোটবেলা থেকে সাধারণ মানুষের যে দৈনন্দিন জীবনের কন্সারন, তার সঙ্গে আমার কন্সারন মিলত না। এখনও মেলে না। অপেক্ষাকৃত তরুণতম বয়সে এই অমিলের জন্যে প্রায়ই মানুষের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি লাগতো। হাতাহাতি মারামারি পর্যন্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনে। দলবেঁধে আমাকে মারতে আসলে পালিয়ে বেঁচেছি। ইভেন মাস্টার্সের শেষ ক্লাস যেদিন হল, সেদিনও আমার ধারণা ছিল, হলের একদল ছেলেপেলে সুযোগ পেলে আমাকে মেরে শেষ শোধটা নেবে। ওদের মেধা নিয়ে অপমানসূচক মন্তব্য করেছিলাম কিছু। মনে নেই এখন।
.
তবে এই অবনকশাস, বা বিরক্তিকর চরিত্র হিসেবে বেড়ে ওঠার পেছনে আমার কারণ ছিল। আমি ছোটবেলা থেকেই আলট্রা সেনসিটিভ। মানুষের হক তাকে বুঝিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে। নিয়ম পালন করার ক্ষেত্রে। প্রতিবেশী, বা পাশের মানুষটির কাছ থেকে তার ন্যুনতম সেনসিটিভিটি না পেলে প্রচণ্ড বিরক্ত হতাম।
.
এখনও হই। তবে রিঅ্যাক্ট করা কমানোর চেষ্টা করছি ক্রমাগত।
.
আমি ঈশ্বরের ছোঁয়া পাওয়া মানুষ। আমার সংবেদনশীলতা প্রখর, একই সঙ্গে আছে ভেতরের আনন্দ বেদনাকে সৃজনশীল উপায়ে প্রকাশ করার ক্ষমতা।
.
আমি নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ক্রমাগত সে জায়গাটুকুতেই নিজের পুরো এনার্জি ড্রাইভ করবার চেষ্টা করছি। আর চেষ্টা করছি নিজের পরিবার, নিজের কাছের আর পছন্দের মানুষগুলোর সম্পর্কের হক আদায় করবার। সোশ্যালাইজেশনের স্কিলস কমছে দিন দিন।
.
যা হোক, একত্রিশ বছরে পা দেয়ার একমাস আগে এটাই আমার জীবনের চালচিত্র।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.