নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুতির খালের হাওয়া - ২৬ঃ সাহিত্যিক ও সাহিত্য সমালোচকের মতভিন্নতা

১৪ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১১:৩৭

১।
২০১১ সালে বিশ্বজিৎ ঘোষ স্যার (বর্তমানে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য), কলাভবনের ২০১৭ নম্বর রুমে দাঁড়িয়ে আমাদের সাবসিডারি বাংলা কোর্সে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাগৈতিহাসিক গল্প পড়াতে গিয়ে, মন্তব্য করেছিলেন - এই গল্পের সবশেষ প্যারাগ্রাফটি পুরো গল্পের সবচে দুর্বল অংশ। অথচ, এই প্যারাটি ছিল আমার পুরো গল্পটির মধ্যে সবচে পছন্দের জায়গা। এখনও, দশ বছর পরেও। শেষ লাইনটা যদি তুলে দিই -
.
"...কিন্তু যে ধারাবাহিক অন্ধকার মাতৃগর্ভ হইতে সংগ্রহ করিয়া দেহের অভ্যন্তরে লুকাইয়া ভিখু ও পাঁচী পৃথিবীতে আসিয়াছিল এবং যে অন্ধকার তাহারা সন্তানের মাংসল আবেষ্টনীর মধ্যে গোপন রাখিয়া যাইবে তাহা প্রাগৈতিহাসিক, পৃথিবীর আলো আজ পর্যন্ত তাহার নাগাল পায় নাই, কোনোদিন পাইবেও না।"
.
২।
স্যার এই অংশ পছন্দ করেন নি, কারণ, একজন সমালোচক হিসেবে তিনি এটা চান নি যে মানিক তাকে মুখে তুলে খাইয়ে দেবেন। বুঝিয়ে দেবেন, গল্পের মাঝে, গল্পকার নিজেই যে - প্রাগৈতিহাসিক বলতে লেখক আসলে কোন জিনিসটাকে মিন করছেন। স্যারের শ্লাঘায় আঘাত করেছিল ব্যাপারটা হয়তো।
.
৩।
স্যারের ঐ রিঅ্যাকশন এখনও আমায় ভাবায়। সাহিত্যিক আর সাহিত্য সমালোচকদের চিন্তার প্যাটার্নের তফাৎটা হয়তো এজায়গাতেই। সমালোচক ভাবেন, কিছু কথা উহ্য থেকে গেলে ভালো। সব এক্সপ্লিসিটলি বয়ান করে দেয়াটা তাঁরা তাদের মেধার প্রতি লেখকের ভ্রুকুটি হিসেবে বিবেচনা করেন। আর লেখকদের একটা বড় অংশের টেনশন থাকে - পাঠক পর্যন্ত তার লেখা পৌঁছলো কিনা। পাঠক বুঝল কিনা। গ্রহণ করলো কি না।
.
সমালোচকের মন্তব্য বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে জায়গা করে দেবে - অন্তত এই বাংলাদেশে সে সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। সমালোচকরা বেশীরভাগ সময়েই এই ব্যাপারটা বুঝতে পারেন না। বুঝলেও তাদের সহানুভূতি থাকে না। না খেতে পেয়ে মারা না গেলে কবি সাহিত্যিক কিসের - এটাই, মোটাদাগে তাদের হিসেব। জীবনানন্দ সাধে লেখেন নি-
.
"...পাণ্ডুলিপি, ভাষ্য, টীকা, কালি আর কলমের ’পর
ব’সে আছে সিংহাসনে— কবি নয়— অজর, অক্ষর
অধ্যাপক; দাঁত নেই— চোখে তার অক্ষম পিঁচুটি;
বেতন হাজার টাকা মাসে— আর হাজার দেড়েক
পাওয়া যায় মৃত সব কবিদের মাংস কৃমি খুঁটি..."

.
৪।
সমালোচকের খুঁটে খাওয়ার মতো মৃত কবি সাহিত্যিক পাওয়া যাবে। স্বদেশে না হলে পাশের দেশে, নইলে পাশের মহাদেশে। লেখকের সম্বল কেবল তার নিজের কাগজ কলম, আর নিজ দেশের গুটিকতক পাঠক, এই হচ্ছে বাংলাদেশের অবস্থা। জানিনা মানিকের সময় বিষয়টা কেমন ছিল। সাহিত্যের সমালোচকদের খুশী করবার জন্যে লেখার বদলে আমি বরং আজ হতে ত্রিশ বছর পরের সেই কিশোরের জন্যে লিখতে আগ্রহী, যে নতুন নতুন লেখা শিখতে চাইছে, তাইজন্যে তার আগের জেনারেশনের সমস্ত লেখকদের লেখা খুঁটিয়ে পড়বে বলে কোন লাইব্রেরীর কর্নার থেকে খুঁজে বের করেছে আমার একটি উপন্যাস, অতলান্তিক মহাসাগরের বুকে ভেসে ওঠা নতুন একটি দ্বীপ আবিষ্কারের আনন্দে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.