![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯) ৭।শহরনামা (উপন্যাস, মাওলা ব্রাদার্স, ২০২২), ৮। মুরাকামির শেহেরজাদ ও অন্যান্য গল্প (অনুবাদ, ২০২৩), ৯। নির্বাচিত দেবদূত(গল্পগ্রন্থ, ২০২৪), ১০। দেওয়ানেগির চল্লিশ কানুন/ফরটি রুলস অফ লাভ (অনুবাদ, ঐতিহ্য, ২০২৪)
(এটা আমার নতুন উপন্যাসের একটি চ্যাপ্টার। হাতে সময় থাকলে পড়ে মন্তব্য করলে খুশি হব। মূলত তথ্যের ফ্লো, বা কহিয়ারেন্স কোথাও বাধাগ্রস্ত হলে ধরিয়ে দিলে উপকার হয়।)
।।২২।।
'ওয়াত তীন, ওয়াজ জৈতুন, ওয়াতুরি সিনিন, ওয়া হাজাল বালাদিল আমীন, লাকদ খলাকনাল ইংসানা ফি আহসানি তাকভিম, সুম্মা রদাদনা হু আসফালা সাফিলিন ...'
সদাকল্লাহুল মাওলানাল আজিম … আম্মা বাদ
কোরআনুল কারিমের সূরা তীন আমার কাছে নানা কারনে প্রিয়। তার মধ্যে সবচে শানদার কারন এই যে - খোদা এখানে মানবজীবনের জরুরী দুটো সুরত অল্প কিছু আয়াতে মুখতাসার বয়ান করে দিয়েছেন। হকতা'লা তীন ফল, জৈতুন ফল, এবং তূর ও সিনাই পর্বতমালার কসম খেয়ে বলছেন যে তিনি মানুষকে সবচে সুন্দর সুরতে তৈয়ার করেছেন। আর তারপরেই তিনি বলছেন, নিজের বদখাসলত, বদ আখলাকের কারনে এই মানুষই নামতে নামতে এমন তলে গিয়ে ঠেকেছে যে অতো নীচে এক ইনসান ছাড়া আর কোন হায়ওয়ান পৌঁছাতে পারে না। মানুষ হল আশরাফুল মাখলুকাত, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব - এ কথা তো সবাই বলে। কিন্তু খোদার সুরতে তৈরি আদম সন্তান যে প্রায়ই এমন আচরণ করে, যা তাকে হায়ওয়ানের চেয়েও ঘৃণ্য করে তোলে - এই কথাটা কিন্তু সবার আলাপে আপনি পাবেন না। খোদ আল্লাহতা’লা সূরা তীনে এ কথাটা সাফ সাফ বলে দিয়েছেন।
এই সূরা আমার দিলের খুব করিব হওয়ার আরেকটি কারন আছে। এই সূরায় হক রব আলাদা করে যে ফলের উপর কসম খেয়েছেন, তার তালিকায় তীনের পাশাপাশি জৈতুনের নামও আছে। জৈতুন ফলকে আমরা খাস বাংলায় জলপাই নামেই চিনি। কাজেই নিজেকে যখন এক কামেল, কামিয়াব জলপাই চাষি হিসেবে মানুষের সামনে পরিচয় দিই, যখন জলপাইয়ের গুণগাথা মানুষকে বয়ান করে শোনাই, ফখরে তখন আমার সিনা টান টান হয়ে ওঠে। দিনশেষে, আমি তো এক প্রবীণ জলপাই চাষি-ই।
এ বাড়ির নিয়ন্ত্রণ আমার হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির লাগোয়া ছোট্ট এই উঠোন জুড়ে আমি জলপাই চাষ করে এসেছি। আপনাদের তো ঈমান আখলাক দুর্বল, তাই আমার কথা শোনা মাত্র ভ্রূ কুচকাচ্ছেন, বিশ্বাস করছেন না আমার কথা। বিশ্বাস হবেই বা কেন? নানাজনের মুখে নানারকম কিসসা কাহিনী শুনে তো ইতোমধ্যে কানভারী করেই ফেলেছেন। শুনেছেন যে, এই বাড়ির উঠোনে নাকি একসময় দারুণ সব ফুলের খুশবু ম' ম' করতো, ওষধি বৃক্ষ ফলে নুয়ে থাকতো। আমি জোর করে বাড়ি দখলে নেবার পর থেকেই এখন সব ফুল ফলের গাছ উজাড় করে স্রেফ জলপাইয়ের চাষ হচ্ছে। আপনাদের শোনা এ গপ্প হচ্ছে শত্রুপক্ষের বয়ান। ওদের ধান্দা আলাদা। আমার বয়ান হোল - এই টুকরো জমিনে জলপাই ভিন্ন আর অন্য কোন ফলের চাষ হয়-ই নি কখনো। আমাদের গোটা জিন্দেগী ভিন্ন ভিন্ন কিসসার যোগফল, ভিন্ন ভিন্ন কাহিনীতে আমাদের সাবস্ক্রাইব করার গল্প। এখন কোন কিসসায় আপনি সাবস্ক্রাইব করবেন, কোন কিসসায় ঈমান আনবেন, সে কিসসা আমার না আমার শত্রুপক্ষের, সেটা আপনার বিবেচনা। শত্রু - মিত্র বাছাই করার মধ্য দিয়েও মানুষ চেনা যায়।
আপাতত আমাদের আলাপ সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্য একটা কমন পাটাতন খুঁজে বার করা লাগবে। এমন একটা কমন সত্য লাগবে, যা আপনারাও মানবেন, আমিও মানব। আচ্ছা, আলাপের খাতিরে না হয় ধরেই নিলাম যে একসময় আমার এই বাড়ির উঠোনে আসলেই ফুল ফল ওষধি গাছের উপস্থিতি ছিল। এখন আপনারা এটা মেনে নিন যে - এই বাড়ির উঠোনে ফুল ফলের চাষ শুরু হবার বহু আগে থেকেই আমি এখানে জলপাইয়ের চাষ করছি। সরাসরি নয়, মনে মনে। জলপাই চাষের সঙ্গে অন্য যেকোনো বৃক্ষ রোপণ - বপন - চাষবাসের মৌলিক তফাৎটাই এই জায়গায় যে, জমিতে জলপাইয়ের চাষ শুরু করবার আগে আপনাকে আপনার মনের জমিনে জলপাই গাছের চারা রোপণ করতে হবে। নিরঙ্কুশ ঈমান আনতে হবে জলপাইয়ের শ্রেষ্ঠত্বের ওপর। একদম ভেতর থেকে আপনাকে হয়ে উঠতে হবে এক প্রকৃত জলপাই চাষি। তারপর, কেবলমাত্র তারপরেই আপনি শুরু করতে পারবেন সত্যিকারের চাষাবাদ।
আমার জন্য জলপাইয়ের চাষ, নিজের রং ছুপানোর তরিকাও বটে। ক্যামোফ্লাজ বলে যাকে। জলপাই চাষিদের কাছে মানুষের তেমন কোন আকাঙ্ক্ষা থাকে না। সবাই জানেই যে আমরা বর্ণচোরা। নিজের স্বার্থকেই বড় করে দেখি। সে যাক, অন্তত গণতন্ত্রপন্থী নেতাদের মতো পলিটিকাল ডেমাগগ তো নই। ঐ শালাদের দিল আর জবান কখনো এক লাইনে চলে না। আমার হিসাবে অতো জটিলতা নেই। বাড়ির উঠানে জলপাই গাছ লাগাও। জলপাই চাষ করো। জলপাইয়ের গুণগান গাও। জলপাইয়ের নামে স্লোগান দেও। জলপাই চাষের আড়ালে নিজের আখের গুছিয়ে চলো। যখনই জলপাইয়ের মৌসুম শেষ হয়ে আসবে, তখন জলপাই চাষ থামিয়ে হুলিয়ে বদলে অন্য যে কোন ফল বা ফসলের চাষে মগ্ন হয়ে যাও। লোকে হয়তো কিছুদিন গাল দেবে, তারপর একসময় আপনাতেই থেমে যাবে। সবাই জানে, জলপাইওয়ালাদের নিজস্ব কোন মতাদর্শ হয় না।
এ বঙ্গাল মুলুকে জলপাই চাষের ইতিহাস কিন্তু অনেক পুরনো। অনেক বলতে অনেক। হাজার বছর আগে সেন - বর্মণ রাজাদের হাত ধরে দক্ষিণ ভারত থেকে প্রথমবারের মতো জলপাইয়ের আমদানি ও চাষ হয়েছে গৌড় - বঙ্গের জমিনে। তারপর ইখতিয়ার উদ্দিন বিন বখতিয়ার খিলজির হাত ধরে সূত্রপাত ঘটেছে ইরানি তুরানি আফগানি জলপাই চাষাবাদের। তুর্ক - মুঘলদের পর কুইন ভিক্টোরিয়ার চ্যালারা সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে সুদূর ইউরোপ থেকে আমদানি করলো ব্রিটিশ জলপাইয়ের বীজ এবং চারা। লর্ড ক্লাইভ ছিল তার প্রধান চাষিদের একজন। তারপর, দেশভাগ হলে আইয়ুব, ইয়াহিয়া খাঁ'র মতো জেনারেলদের হাত ধরে এ মুলুকে পশ্চিম পাকিস্তানী জলপাইয়ের চাষ ও সওদা হয়েছে দেদারসে। তারপর, দীর্ঘদিনের আমদানি নির্ভর বিদেশি জলপাই চাষের দিন শেষে, মূলত '৭৫ এর পর থেকে বঙ্গাল মুলুকে দেশী জলপাইয়ের চাষাবাদ চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের আমি। জলপাইয়ের যে জাত এখন আমার বাগানের শোভা বাড়াচ্ছে - এর বেড়ে ওঠা পাকিস্তানে। ৭১ এও জলপাইয়ের এ জাত পাকিস্তানেই ছিল। জেনারেল জিয়ার ছত্রছায়ায় জলপাইয়ের এ জাতটা এদেশে জনপ্রিয়তা লাভ করে। মুখ্য জলপাইয়ের ভুমিকায় চলে আসে। অনেকে বলে, জেনারেল জিয়া শহীদ হয় যে রাতে, সে রাতেও এ জলপাই তার মেন্যুতে ছিল।
জেনারেল এরশাদ …
***
এই বাড়ি যখন আমার ওয়ালেদ সাহেব, অর্থাৎ আব্বা কিনে নেন, তখন বাড়ির ভেতর জায়গায় জায়গায় পোঁতা ছিল কেবল তুলসি, বেলি, আর জবাফুলের গাছ। তার একেকটা দেখতে কি যে বদসুরত! তবে আব্বার এসব গাছের প্রতি সত্যিকারের হামদর্দি ছিল। তিনি হায়াতে থাকা অবস্থায় আমি ওসব গাছের সামনে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে হেঁটে চলে বেড়িয়েছি। পাক্কা মুসলিম লীগার ছিলাম, সইত না সে গন্ধ আমার তেহজিব তামাদ্দুনে। তক্কে তক্কে ছিলাম। আমার ওয়ালেদ সাহেবকে কবরে শুইয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ফিরে আমি ওসব নাপাক গাছপালা থেকে মকান আজাদ করার চিন্তা ফিকির শুরু করে দিই।
আমার এ হকপন্থি কাজে বাধার দেয়াল তুলে দাঁড়ায় আমার সৎভাই, মোকামের আব্বা। ঠিক আমাদের ওয়ালেদ সাহেবের মতোই তারও ছিল তুলসি, বেলি, আর জবাফুলের প্রতি অসীম মায়া। শুধু তাই না, সে আরও হরেক রকমের ফুল আর ওষধি গাছ এনে পোঁতা আরম্ভ করেছিল আমাদের বাড়ির উঠানে। আমি প্রথমেই ওকে নিষেধ করি নি, বা বাধা দিই নি। সময় নিয়েছি। বুঝবার চেষ্টা করেছি ওর এইসব গাছ লাগানো আর চাষ করার পিছে মতলবটা কি। অনেক পর্যবেক্ষণের পর, আমি মোটামুটি অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম যে, ডান্ডিখোরটার ইন্সপিরেশনের জায়গা ভিন্ন। ফুলগাছের প্রতি ওর যে আকর্ষণ, তা খুবসুরতি ও নান্দনিকতার কারণে। আমি পড়লাম মহাবিপদে। কেউ যদি কোন স্পেসিফিক মতাদর্শে বিশ্বাস করে, তবে আলাপ - আলোচনার মাধ্যমে তাকে তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করানো যায়। কিন্তু যে মাদারচোৎ নান্দনিকতা আর খুবসুরতির খপ্পরে পড়েছে - সে তো ডান্ডিখোরের মতো নেশাগ্রস্ত। যুক্তি দিয়ে তাকে কিছু বোঝানো সম্ভব নয়। সে নেশাগ্রস্তের মতো হাওয়াই কারবারে মেতে থাকে। ফলে আমার যা করার তাই করতে হয়েছে। শুধু ফুলগাছ না, ফুলগাছের সঙ্গে মহব্বত রাখনেওয়ালাদেরও ঘাপিস করে দেয়া লেগেছে। মোকামের আব্বার আগে আমার মোকাবিলা লেগেছে রমিজের সঙ্গেও। আমার আব্বার ঔরসে জন্ম নেয়া সবচে ছোট ছেলে। আমার সৎভাই। নিজেকে খাঁটি বঙ্গালি মনে করা বদবখতটা ছিল আরেক নান্দনিকতার পূজারী। জলপাই চাষ নিয়ে ওর সঙ্গেও আমার ছিল নীরব দ্বন্দ্ব। তবে শেষমেশ রমিজও আমার সঙ্গে পেরে ওঠে নি। অনেক সময় নিয়ে, মাটির দশ - বিশ - পাচাস হাত গভীরে গিয়ে, একটু একটু করে একদম শেকড় থেকে ওপড়ানো লেগেছে উঠোন জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ওসব নান্দনিক, কিন্তু লুথা, হিজড়ে ফুলগাছের জড়, মূল, বীজ। তবে আহিস্তা আহিস্তা। খুব, খুব ধীরে। যাতে কোন ঝড় না ওঠে, কোন আলোড়ন না সৃষ্টি হয়। লক্ষ্য অনেক বড় আমার। তাড়াহুড়ো করে বড় মঞ্জিল হাসিল করা যায় না।
***
এখন, ঐ চুতমারানি মোকাম আমার এতো শ্রমে ঘামে চাষ করা জলপাই গাছের গোড়ায় কুড়াল মারছে। এর ফল ওর ভুগতে হবে। ওর বাপ চাচাদের মতো ওরও সময় ঘনিয়ে এসেছে। আমি একটু গলা চড়িয়ে কথা বললে পায়জামায় হিশু করে দিত যে বাচ্চা, শুনলাম সেই মদনা নাকি আজকাল পাড়ার রেস্তোরা আর মুদি দোকানে গিয়েও হুমকি ধামকি দেয়া শুরু করেছে। ওর এই বিষদাঁত গজালো কবে? নিজের কব্বর যে ও নিজেই খুদাই করছে, তা ও এখনো বুঝে উঠতে পারে নি। যখন বুঝতে পারবে, তখন আর কিছু করার থাকবে না। বাইরের হাওয়া বড় ঠাণ্ডা। আমি জানালা দিয়ে আর একবার উঁকি মেরে বাগানে ওর চলতে থাকা তাফালিং এ চোখ বুলাই। তারপর জানালার পাশ থেকে সরে আসি। হাতে আমার একমুঠো জলপাই গাছের বীজ। এগুলো রুয়ে দিতে হবে আমার উঠোনে আবার, পারলে কাল সকালেই।
কেন ও আমার জলপাইয়ের বাগান দফারফা করছে? ও কি গণতন্ত্র চায়? ইয়োরোপ অ্যামেরিকার মতো গণতন্ত্র? ও কি জানে না যে শ্বেতাঙ্গদের এই সভ্যতার ভেক বেশীদিনের নয়? কিছুদিন আগেই তো ইয়োরোপিয়ান কলোনাইজেশনের নামে ওরা দূরের জমিন দখল করে তাতে এমন চুটিয়ে জলপাই চাষ করেছে যে , তারই লাভের গুড় থেকে পশ্চিমা দেশগুলি এখন আরামসে বারোয়ারি ফসলের চাষাবাদ করতে পারে।
মোকাম কি বোঝে না যে গণতন্ত্র হচ্ছে আমির আদমিদের হাতের খেলনা? গণতন্ত্রের নাড়া লাগানো এই দেশের ভুখা নাঙ্গাগুলি এটা মেহসুসই করে না যে মূলকের সব মত শ্রেণী পেশার লোক একই অধিকার নিয়ে বাঁচবে - এই কারণে এ দেশের জন্ম হয় নাই আসলে। আমাদের ঘরে অভাব, বাইরে অভাব। টানাটানি, কাড়াকাড়ি, মারামারি, হুজ্জত। দেশের সীমানার বাইরে যে কারো কম্বল ধরে টান দেবো, জমির ওপর দখল নেব - সে সুযোগ আমাদের নেই। কাজেই ব্রিটিশরাজের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে এক বড় রাজত্ব বানিয়ে বাইরে লুটতরাজ করে ঘরের ভেতর ভাইয়ে ভাইয়ে মিলে যে গণতন্ত্রের চর্চা করবো, সে সুযোগ আমাদের হবে না কখনো। গণতন্ত্রের মতো মখমলি চীজ, নাম জপা মাত্র যা মাখনের মতো গলে যায় জিহ্বার ডগায় - তা আমাদের জন্য নয়। আর এই সত্যটা যত দ্রুত সম্ভব আমাদের সকলের আকলে ঢুকিয়ে নেয়া জরুরী। এদেশে হয় বন্দুকওয়ালারাই রাজ করবে, অথবা সরাসরি বন্দুকওয়ালাদের রাজ না হলেও বন্দুকের ছায়া হরবখত থাকবে আমাদের ওপর। বন্দুকওয়ালারা লকলকিয়ে বেড়ে উঠবে মহীরুহের মতো, আমরা তাদের গুঁড়ি পেঁচিয়ে থাকবো, হিসহিস করবো। ওটাই আমাদের গণতন্ত্র। আমরা সব রেঙ্গনেওয়ালা জানোয়ার, বুকে হাঁটি, পেছন থেকে ছোবল মারি, সরীসৃপতন্ত্রই আমাদের গণতন্ত্র।
গাছের মধ্যে যেমন আমার সবচে পছন্দ জলপাই, ঠিক তেমনি পৃথিবীর তামাম হায়ওয়ানের মধ্যে আমার সবচে পছন্দের জানোয়ার অজগর। আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, খোদার মুলুকে হাথি আছে, ঘোড়া আছে, বাঘ আছে, ভল্লুক আছে, সিংহ আছে - এতো এতো জবরদস্ত জানোয়ার থাকতে অজগরই কেন? আমার কথা হোল, বাকি হায়ওয়ানদের রক্ত গরম। বিপদের মুহূর্তে ঠাণ্ডা মাথায় কাম করতে পারে না। ওদিকে অজগরকে দেখুন। শরীর জুড়ে বরফ ঠাণ্ডা লহু। মুহূর্তেই ‘নুম তাওয়াজাহ’ করে ফেলে শিকারকে। মানে, আগে সম্মোহন করে নেয়, তারপর বেহুঁশ শিকারকে পাকিয়ে ধরে লেজ দিয়ে। আর সে জমখপ্পর থেকে বেঁচে ফেরা মুশকিল। ধীরে ধীরে চাপ বাড়িয়ে শিকারের প্রাণবায়ু বের করে নেয়া, একটু একটু করে আস্ত গিলে খাওয়া - উহ! কি দারুণ ব্যাপার! উর্দুতে বলে রেঙ্গনেওয়ালে হায়ওয়ান, আর বাংলায় উহাকে বলে সরীসৃপ। আম আদমি হয়ে বঙ্গাল মুলুকের রুখু জমিনে জলপাই চাষ করতে হলে আপনাকে সরীসৃপের মতোই ঠাণ্ডা খুনওয়ালা হতে হবে। মাথা গরম করা যাবে না। ঈমান আনতে হবে সরীসৃপতন্ত্রের ওপর। আমি জলপাই চাষি। আমার জলপাই বাগানের সবচে বড় রেঙ্গনেওয়ালে জানোয়ার, সবচে বড় সরীসৃপ আমি নিজে। আমি আমার বাগানের সবচে বড় অজগর।
মোকাম এখনো উঠোনের জলপাই কেটেই চলেছে। ও কি জানে না যে এভাবে জলপাইয়ের নিকেশ করা যায় না? জলপাই রক্তবীজের মতো, মানুষের শিরায় শিরায় খওফ হয়ে জন্মাতে থাকে যুগের পর যুগ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম। অল্প সময়ের জন্য তা চিকের আড়ালে যেতে পারে, কিন্তু তা পুরোপুরি মুছে ফেলা সম্ভব না কখনো।
মোকাম কি টের পাচ্ছে, বাগানের সবচে ঠাণ্ডা খুনওয়ালা হায়ওয়ান, সবচে বড় অজগর ওর দিকে তাকিয়ে আছে চোখের পাতি না ফেলে?
২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৩
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
১ শব্দের কমেন্টে লেখকের আসল রূপ বেরিয়ে এসেছে।
ছড়া সুন্দর হয়েছে
০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩১
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: বটের বাচ্চা বট, এই যে আমার আগের কমেন্ট ডিলিট করলাম, আর আমার 'আসল রূপ' নাই হয়ে গেলো।
তোর এই সমস্ত কমেন্ট আগে গায়ে লাগতো, এখন লাগে না। আমি জানি আমি কে।
তুই বদলাস না কেন?
নিজের নামের সাথে একাত্তর যোগ করে একাত্তরকে কলঙ্কিত করছিস কেন?
৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫০
খাঁজা বাবা বলেছেন: আওয়ামীলিগকে কি ধর্মের নামেই ফিরাইয়া আনতে হবে? আর রাস্তা নাই?
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪০
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
গার্বেজ