নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের সম্পর্কে লেখার মত এমন স্পেশাল কিছু এখনও অর্জন করতে পারি নি। ভালো থাকুন সবাই,আর ভালো রাখুন চারপাশের সবাইকে।

আদিল ইবনে সোলায়মান

আদিল ইবনে সোলায়মান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারীর "উন্নতি" কোন্ পথে?

৩০ শে মে, ২০১৬ ভোর ৬:৪৪



মানবসমাজে নারীর যখন কোন মর্যাদাই ছিলো না, ইসলাম তখন নারীকে পূর্ণ মর্যাদা দান করেছে।
কিন্তু,অত্যন্ত দুঃখের বিষয় কিছু জ্ঞানপাপী নারীর প্রতি অতিদরদের খোলসে ইসলামের উপর আঘাত হানার পাঁয়তারা করে। তারা বলে, নারীকে তারা উত্তরাধিকার সম্পদে পুরুষের সমান অংশ দিতে চায়; অথচ তারা ভেবে দেখে না যে, ইসলাম উত্তরাধিকারী সম্পদ বণ্টন করেছে ‘পুরুষের জন্য দুই নারীর অংশের সমপরিমাণ’ এই নীতিতে; সেই সঙ্গে জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে নারীকে সকল প্রকার অর্থনৈতিক দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত রেখেছে, পক্ষান্তরে সর্বপ্রকার দায়দায়িত্ব চাপিয়েছে পুরুষের কাঁধে।
কেউ কেউ বলতে চান, ‘নারী-উন্নয়ন নীতিমালায় উত্তরাধিকারে সমানাধিকারের কথা নেই।’ আমাদের কথা হলো, প্রথমে তো উত্তরাধিকার শব্দটি ছিলো, পরে প্রতিবাদের কারণে শব্দ পরিবর্তন করা হয়েছে, কিন্তু এমনভাবে যে, যে কোন সময় সমানাধিকার কার্যকর করা যায়। সুতরাং অস্পষ্টতা পরিহার করে কেন লেখা হচ্ছে না যে, কোরআনের উত্তরাধিকার বিধানে কোন হস্তক্ষেপ করা হবে না? তাতেই তো বোঝা যায়, ‘ডাল মে কুছ কালা হায়’!
অনেকে বলেন, নারী-উন্নয়ন নীতিমালায় কোন কিছু কোরআনের বিরোধী নয়। এটি মিথ্যাচার। কারণ তাতে আছে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কর্মক্ষেত্রে নারীর সমান উপস্থিতি ও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার কথা। এ চিন্তাধারা কি কোরআনের সঙ্গে সাঙ্ঘর্ষিক নয়? কোরআনের তো সুস্পষ্ট ঘোষণা হচ্ছে-
وقرن في بيوتكن
আর অবস্থান করো তোমরা তোমাদের গৃহে
অর্থাৎ নারীদের কর্মস্থল হলো গৃহের অঙ্গনে, স্ত্রী ও মা হিসাবে। কারণ প্রকৃতিগত কারণেই নারী ও পুরুষের কর্মক্ষেত্র অভিন্ন হওয়ার সুযোগ নেই। সেটা হবে নারীর প্রতি অনেক বড় অবিচার ও যুলুম। কারণ নারীকে মাতৃত্বের মহান দায়িত্ব তো পালন করতেই হবে, তার উপর তাকে বহন করতে হবে বাইরের কাজকর্মের বোঝা, কিছু অর্থ উপার্জনের তাগিদে। তাহলে কী দাঁড়ালো? একটি সংসারে নারীর নিজস্ব যে মৌলিক দায়িত্ব তা বহাল থাকবে, সঙ্গে যুক্ত হবে, অর্থনৈতিক দায়িত্ব যা সর্বাংশে ছিলো পুরুষের দায়িত্ব। অন্যদিকে পুরুষের দায়িত্ব কোন দিক থেকে বাড়বে না, বরং কমবে।
স্বীকার করা হোক, কিংবা অস্বীকার, নারী তার যাবতীয় সৌন্দর্যের কারণে পুরুষের পক্ষে বড় লোভনীয় সৃষ্টি, আবার বড় দুর্বল সৃষ্টি। সুতরাং নারী যদি ঘরের বাইরে অরক্ষণীয়া হয়ে পড়ে,তাহলে পুরুষের লোভের হাত তার দিকে প্রসারিত হবেই। এ বাস্তবতা তো সবচে’ সভ্য সমাজেও অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই ইসলাম চায় নারীকে ঘরের নিরাপদ পরিবেশে আস্থাভাজন পুরুষের ছত্রচ্ছায়ায় রাখতে, সে স্বামী হোক, বা ভাই, বা পিতা, বা সন্তান। এটাকে যারা বলে বৈষম্য তাদের যুক্তি শুনে হাসবো, না কাঁদবো, বুঝতে পারি না।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মে, ২০১৬ সকাল ৭:০৪

এ আর ১৫ বলেছেন: ইসলামে নারী-অধিকার ও “সুস্পষ্ট নির্দেশ”

নারী-অধিকার ইসলামে কেন্দ্রীয় বিষয়। সে-অধিকার কমবেশি লঙ্ঘিত হয়েছে এটা শারিয়াপন্থীরাও স্বীকার করেন। তাঁরা বলেন শারিয়া আইনগুলো ঠিকই আছে, শুধু প্রয়োগটা ঠিকমতো হচ্ছে না বলেই যত সমস্যা। আমরা বলি শারিয়া আইনের মধ্যে এত বেশি সমস্যা আছে যে এটাকে সংশোধন করা সম্ভব নয়। তাঁদের ও আমাদের মধ্যে তফাৎ শুধু এটুকুই কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়। শেষ কথা হলো ইসলামের ভেতরে থেকেই নারী-অধিকার লঙ্ঘন থেকে বেরিয়ে আসার যে ইসলামি পদ্ধতি বিশেষজ্ঞরা দেখিয়েছেন তা জানা, জানানো ও সমাজে প্রতিষ্ঠা করা।

ইসলামে নারী-অধিকারের প্রধান বিষয়গুলো হলো ঃ

(১) দাসী-প্রথা, (২) অনিয়ন্ত্রিত বহুবিবাহ, (৩) স্বামীর তাৎক্ষণিক তালাকের অধিকার, (৪) নারী-নেত্রীত্ব, (৫) বিয়ে- তালাকে সাক্ষ্যে উত্তরাধিকারে পুরুষের চেয়ে কম অধিকার, (৬) তালাকের পর ভরণপোষণ, (৭) তালাকের পর বাচ্চা পাবার অধিকার, (৮) নারীর বাধ্যতামূলক হিজাব, (৯) স্বামীর স্ত্রী-প্রহারের অধিকার ইত্যাদি। এগুলো নিয়ে মুসলিম-অমুসলিমে তো বটেই, মুসলিম-মুসলিমেও তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই। তাঁরা একই বিষয়ে বিভিন্ন আলেমের বিভিন্ন মতামত যুগে যুগে দেশে দেশে বিভিন্ন আইনের রূপে প্রয়োগ করেছেন বলে ইসলামের হরেকরকম চেহারা ফুটে উঠেছে। এর মধ্যে আসল ইসলাম কোন্টা তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই দুনিয়ার মুসলিম-অমুসলিম সবাই বেজায় গোলকধাঁধায় পড়ে গেছে।

হিজাবের কথাই ধরুন, এতেও মওলানাদের কতই না ভিন্নমত ঃ (১) দু’চোখে দু’টো জালের মতো ঘুলঘুলি রেখে আপাদমস্তক ঢাকা, (২) চেহারা খোলা রেখে আপাদমস্তক ঢাকা, (৩) শুধু মাথায় স্কার্ফ দিয়ে চুল ঢাকা, (৪) হিজাব মোটেই বাধ্যতামূলক নয়, ওটা সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রথা (আল্ আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলার ডঃ তানতাওয়ি), (৫) হিজাব এসেছে ইরাণ-বিজয়ের পরে ইরাণের অভিজাত নারীদের সংস্কৃতি থেকে, ইত্যাদি। সবাই নিজের পক্ষে কোরাণ-হাদিস দেখান এবং সবাই অন্যকে ইসলাম-বিরোধী বলেন।

অনেক শারিয়া আইনে নারীরা নির্যাতিতা, অপমানিতা ও অসহায় বোধ করলেও কিছু বলেন না কারণ তাঁরা মনে করেন তাহলে ইসলামের বিরুদ্ধে যেতে হয়। কাজেই বিভিন্ন বাহানা বা যুক্তিতে নিজেদেরকে বুঝ দিয়ে তাঁরা এ-সব আইন মেনে নেবার চেষ্টা করেন। এটাই দেখা গেছে ২১ মে ২০০৮ (মুক্তিসন ৩৮) তারিখে দৈনিক ইনকিলাবে সুলতানা পারভীনের নিবন্ধে ঃ “সৃষ্টিকর্তা নারীকে পুরুষের উপর নির্ভরশীল করে সৃষ্টি করে তাকে দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছেন। এ-নির্ভরশীলতাকে মেনে নিতে কষ্ট হলেও এ-থেকে মুক্তির কোন উপায় নেই। যেমন মানুষ মরতে না চাইলেও মৃত্যুর হাত থেকে মুক্তির কোন উপায় নেই। স্রষ্টার উপর সৃষ্টির যখন কোন হাত নেই তখন স্রষ্টার ইচ্ছা ও কাজকে খুশি মনে মেনে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। তাছাড়া সৃষ্টিজগতে প্রত্যেকে প্রত্যেকের উপর নির্ভরশীল। শিশু তার পিতামাতার উপর, পিতামাতা সন্তানের উপর, রোগী তার ডাক্তার-নার্স এবং ওষুধের উপর, ক্রেতা বিক্রেতার উপর, বিক্রেতা ক্রেতার উপর, যাত্রী চালকের উপর, চালক যাত্রীর উপর, কৃষক জনগণের উপর, জনগণ কৃষকের উপর নির্ভরশীল। তাই পুরুষের স্বাধীনতা আর নারীর অধীনতাকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে না দেখে কার কি দায়িত্ব সেদিকে নজর দেয়া জরুরি।”

ভেবে দেখুন “এ-নির্ভরশীলতাকে মেনে নিতে কষ্ট হলেও এ-থেকে মুক্তির কোন উপায় নেই…পুরুষের স্বাধীনতা নারীর অধীনতা … স্রষ্টার উপর সৃষ্টির কোন হাত নেই তখন স্রষ্টার ইচ্ছাকে খুশি মনে মেনে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ”− এ-বিশ্বাস নিয়ে কিন্তু সুলতানা পারভীনরা জন্ময়নি। এ-ধরনের মিষ্টি অপব্যাখ্যা দিয়ে নারীর কাছেই নারী-নির্যাতন বৈধ করা হয়েছিল হিন্দু ও ইহুদি ধর্মেও। তাঁরা জানেনও না এই বিশ্বাসে তাঁদেরকে বিশ্বাসী করে তোলার জন্য ছোটবেলা থেকেই ইসলামের এই বিশেষ ব্যাখ্যাকে দেখানো-পড়ানো হয়েছে, অন্য ব্যাখ্যাগুলোকে পড়ানো হয়নি। ফলে বন্দি নিজেই কারাগারকে পাহারা দিয়েছে, মনস্তত্ত্বে একে বলে স্টকহোম সিণ্ড্রোম। এক আলাহ ছাড়া আর কারো অধীনতাই ইসলামে বৈধ নয় এটা উপলব্ধি করার ক্ষমতা তাঁদের কেড়ে নেয়া হয়। নাহলে তাঁরা দেখতে পেতেন পেশাগত নির্ভরশীলতা ও মানবাধিকারের নির্ভরশীলতা এক নয়। তাঁরা এ’ও দেখতে পেতেন তাঁর অসংখ্য সৃষ্টির কোন নারীকেই আলাহ পুরুষের ওপর নির্ভরশীল করে পয়দা করেননি, মানুষের তো নয়ই। বরং উল্টোটা আছে। কোন কোন প্রজাতির নারী অনেক বেশি ক্ষমতা ও মর্যাদাসম্পনড়ব যেমন রাণী-মৌমাছি কিংবা রাণী-পিঁপড়ে। বহু প্রাচীন ও বর্তমান গোত্র নারী-প্রধান এবং তাতে তাদের কোনই সর্বনাশ হয়ে যায়নি। যেহেতু সুলতানা পারভীনের নিবন্ধটা নারীর অর্ধেক উত্তরাধিকার নিয়ে তাই উত্তরাধিকারের পটভূমিতেই আমরা ইসলামে নারীর সার্বিক অধিকার আলোচনা করব।

জাতীয় নারী-উন্নয়ন নীতিমালা ২০০৮-এর অধীনে ‘সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমান অধিকার’ প্রস্তাব বাংলাদশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনুমোদন করেছেন ২৪শে ফেব্র“য়ারী ২০০৮। এই সুযোগে হঠাৎ আবার নরনারীর সমান উত্তরাধিকারের আইন পাশ হয়ে যায় কিনা সেই দুশ্চিন্তায় মহা-উদ্বিগড়ব শারিয়াপন্থী দলগুলো প্রবল প্রতিবাদে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, কেউ কেউ এমনও বলেছেন সরকার নাকি ইসলাম থেকেই খারিজ হয়ে গেছে। শারিয়াপন্থীদের যুক্তি হল নারীর অর্ধেক উত্তরাধিকার কোরাণের সুস্পষ্ট নির্দেশ − “একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর সমান”− নিসা ১১ ও ১৭৬।

কোরাণ-হাদিসের সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে অসংখ্য। এবারে চলুন আমরা তার কয়েকটা দেখি। এর কোন্টা তাঁরা চাইলেও মানতে পারবেন না এবং কোন্টা মানতে পারলেও ইচ্ছে করেই মানবেন না সেটা আমি তাঁদের ওপরেই ছেড়ে দিচ্ছি। বলা বাহুল্য, নিচের কিছু হাদিস আমরা সত্যি বলে মানি না, শুধু আপনাদের অবগতির জন্য দেখাচ্ছি।

উটের মূত্র পান করা − সহি বোখারী ৮ম খণ্ড হাদিস নং ৭৯৭।
“শনিবারে সীমা লঙ্ঘন করো না” − নাহল ১২৪, আল্ আরাফ ১৬৩, নিসা ১৫৪।
কাফেরদের সাথে সন্ধি না করে ক্রমাগত সামরিক যুদ্ধে তাদের আঘাত করা − সুরা মুহাম্মদ ৪, ৩৫ ; আনফাল ১২ ; সুরা তওবা ২৯, ৭৩, ইত্যাদি।
কাফেরদের জোড়ায় জোড়ায় কাটা − আনফাল ১২।
গণিমতের মাল হিসেবে পরাজিত শত্রুদের সম্পত্তি ও নারী-শিশুরা বিজয়ী সৈন্যদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হবে − বহু হাদিস ও সুরা আনফাল ১, ৬৯, ইত্যাদি।
নিষিদ্ধ মাস পার হলে যেখানেই পাওয়া যায় মুশরিকদের খুন করা যতক্ষণ তারা মুসলমান না হচ্ছে − তওবা ৫, ২৯, ইত্যাদি।
সম্মানিত মাসে যুদ্ধ করা − বাকারা ২১৭।
দাসপ্রা চালু করা ও বহু-দাসীর সাথে শোয়া (সর্বোচ্চ সৌদি শিক্ষাবিদ ডঃ ফওজান এ-প্রথাকে ইসলামি প্রথা বলেছেন) − মুমিনূন ৫, ৬ ; আহযাব ৫০, ইত্যাদি।
প্রমাণ ছাড়াই স্ত্রীর ওপরে চরিত্রহীনতার অভিযোগ এনে তাৎক্ষণিক তালাক দেয়া − নূর ৬, ৭।
যুদ্ধবন্দীদের ধর্ষণ করা − বোখারি ৩য় খণ্ড হাদিস ৭১৮ ও ৫ম খণ্ড হাদিস ৬৩৭ ও ৪৫৯ ; আবু দাউদ ২১৫০ ; মুসলিম ৩৪৩২।
কাউকে ইসলামের শত্রুমনে হলে তাকে খুন করা ও খুন করার জন্য মিথ্যা কথা বলা − বোখারি ৫ম খণ্ড হাদিস ৩৬৯।
হিন্দুদের সব মন্দির ধ্বংস করে জ্বালিয়ে দেয়া − বাংলা বোখারি − আবদুল জলিল, হাদিস ২৭০।
চাকরি-ব্যবসা-ক্ষেতখামার সব বাদ দিয়ে “তলোয়ার দিয়ে জীবিকা নির্বাহ” করা − বোখারি ৪র্থ খণ্ড, অধ্যায় ৮৮, পৃঃ ১০৪।
জুম্মার নামাজে না গেলে তার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিতে চাই − বোখারি ১ম খণ্ড হাদিস ৬১৭।
নবীজীর সাথে উঁচু গলায় কথা বলবে না − সুরা হুজরাত ২।
তাহলে আমরা দেখছি, কোরাণ-হাদিসের বহু ‘সুনির্দিষ্ট বিধান’ আমরা ইচ্ছে করলেও মানতে পারছি না। নবীজীর সাথে সামনাসামনি কথা বলা সম্ভব নয়। ক্রীতদাসপ্রাকে কেউ আর ফিরিয়ে আনবে না। কোরাণে সুরা তওবা বা সুরা মুহম্মদ-এ অমুসলিম-হত্যার কথা স্পষ্ট লেখা থাকার পরও মওলানারা কথাটা বলেন ওগুলোর সুনির্দিষ্ট পটভূমি আছে যা এখন প্রযোজ্য নয়। কথাটা আসলেই সত্যি যেমন −“মুসলমানরা চিরকাল অমুসলমানকে ধরে মারবে-কাটবে” এ-কথা বলা পাগলামি ছাড়া কিছুই নয় − (বিশ্ববিখ্যাত শারিয়া-সমর্থক পণ্ডিত ডঃ জামাল বাদাওয়ি − টরণ্টো শহরে বক্তৃতা)। কোরাণের “শনিবারের সীমা লঙ্ঘন করা” বা সম্মানিত মাস ও নিষিদ্ধ মাসও শুধুমাত্র যুদ্ধের ব্যাপারে আরবদের প্রাচীন সংস্কৃতি, এখন ওগুলো আর ইচ্ছে করলেও পালন করা সম্ভব নয়।

সুস্পষ্ট নির্দেশেরও স্থান-কাল-পাত্রের সীমাবদ্ধতা থাকে তাই নির্দেশ সুস্পষ্ট হলেও সেটা চিরকালের না’ও হতে পারে। ইমাম শাফি’ই তাঁর বিখ্যাত কেতাব রিসালা-তেও চমৎকারভাবে দেখিয়েছেন কোরাণের বহু আয়াত বিভিন্ন মানুষের জন্য − পৃঃ ৩৫, ৯৭, ২০০, ইত্যাদি। বাংলাদেশ জামাত-এর তত্ত্বগুরু শাহ আবদুল হান্নানও লিখেছেন ঃ “জিজিয়ার বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট। ইহা কেবল বিশেষ পরিস্থিতিতেই প্রযোজ্য। যদি সেই পরিস্থিতি না থাকে তবে ইহা প্রয়োগের প্রয়োজন নাই। ইহা দাসপ্রথার মতোই। যেহেতু দাসপ্রথা নাই, তাই কোরাণ-সুন্নাহ-এ ইহার আইনগুলিও এখন প্রযোজ্য নহে” (খবর ইয়াহুগ্র“প, ১লা মে, ২০০৮)। সামাজিক বিধানের নির্দিষ্ট পটভূমি অস্বীকার করে সেটাকে চিরকালের জন্য প্রয়োগ করলে আমরা কঠিন চোরাবালিতে ডুবে যাব। যদি কোন ইসলামবিদ্বেষী আপনাকে বলে বাকারা ২২৩ অত্যন্ত কুৎসিৎ আয়াত, তবে তার সামনে আপনি তুলে ধরবেন সহি আবু দাউদ হাদিস ২১৫৯। ওখানে আয়াতটার পটভূমিতে দেখানো আছে ওটা কুৎসিৎ তো নয়ই বরং প্রয়োজনীয়।

কোরাণে সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে অমুসলিমদের কাছ থেকে জিজিয়া কর নেবার, চোরের হাত কেটে দেবার, আর আছে ইহুদি-খ্রীষ্টান নারীকে বিয়ে করার অনুমতি (সুরা মায়েদা, আয়াত ৫ ও ৩৮)। কিন্তু হজরত ওমর (রাঃ) বিভিন্ন কারণে কিছু বিশেষ ব্যক্তি এবং আল্ জুরাজিমাহ গোত্র ও ইরাণের এক গোত্রের কাছ থেকে জিজিয়া কর নেননি। আরো দেখুন মুহিউদ্দিন খানের অনুদিত বাংলা-কোরাণ পৃষ্ঠা ৫৬৭। অন্যান্য সূত্রে আমরা দেখি এমনকি এক মুসলিম গোত্রের কাছ থেকেও তিনি জিজিয়া কর নিয়েছেন। সুরা তওবা আয়াত ৬০-এর ভিত্তিতে মুয়ালাফা গোত্র নবীজী (দঃ)-এর সময় থেকে যে জাকাত পেত সেটা, দুর্ভিক্ষের সময়ে চোরের হাত কাটা এবং বিশেষ ক্ষেত্রে ইহুদি-খ্রীষ্টান নারীকে বিয়ে করা তিনি বন্ধ করেছেন (প্রিন্সিপল্স্ অব্ ইসলামিক জুরি¯প্র“ডেন্স − ডঃ হাশিম কামালী, পৃঃ ৩২৫)। অথচ এর প্রতিটিই কোরাণের সুস্পষ্ট নির্দেশ। শুধু কোরাণেই নয়, হাদিসেরও উদ্ধৃতি দিচ্ছি ঃ − “আলী ইবনে আবু তালিব বলিয়াছেন ঃ মদ্যপানের জন্য আলাহ’র রসুল (সাঃ) এবং আবু বকর চলিশ বেত্রাঘাত দিয়াছেন এবং ওমর তাহা আশি করেন” − সহি আবু দাউদ হাদিস নং ৪৪৬৬ − Click This Link

খেয়াল করুন – “হজরত ওমর (রাঃ) বাকী সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করে হাদিস ২০৩ বলবৎ করেন ও হাদিস ২০৪, ২০৫ ও ২০৬-কে রহিত করেন।” নবীজীর সময়ের তামাত্তু হজ্বের পদ্ধতিও তিনি বদল করেছেন। একটু খুঁটিয়ে দেখলে দেখা যাবে আপাতদৃষ্টিতে কোরাণের অক্ষর লঙ্ঘন করলেও তিনি অনুসরণ করেছেন কোরাণের মূল্যবোধ যা কোরাণ নিজেই এবং স্বয়ং নবীজী তাঁর সুন্নাতে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। এই সুন্নাত মেনে খলীফা মামুনও এক গীর্জা থেকে জিজিয়া কর নেননি (সূত্র সহি বুখারি ২য় খণ্ড হাদিস ৬৩৪ ও ৬৪২, প্রিন্সিপল্স্ অব্ ইসলামি জুরি¯প্র“ডেন্স − ডঃ হাশিম কামালি, আজিজুল হক সাহেবের অনুদিত সহি বুখারীতেও থাকার কথা − ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা ১৯৭, ইত্যাদি)।

আরো দেখুন ঃ “সামরিক চাকরি হইতে রেহাই দিবার জন্য সক্ষম মুসলিম পুরুষদের উপর জিজিয়া ধার্য করা হইয়াছিল…খ্রীষ্টান গোত্র আল্ জুরাজিমাহ-কে এই চুক্তিতে জিজিয়া হইতে অব্যাহতি দেওয়া হইয়াছিল যে তাহারা মুসলিমদিগের সহিত যোগ দিয়া (শত্র“র বিরুদ্ধে − লেখক) যুদ্ধ করিবে ও গণিমতের মালের অংশীদার হইবে” − “ইসলামে দ্য মিস্আণ্ডারস্টুড রিলিজিয়ান” − বিশ্ববিখ্যাত শারিয়া-নেতা সৈয়দ কুতুব Click This Link

আমরা জানি নবীজী পরের নেতা ঠিক করে যাননি, জনগণের ইচ্ছের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। অথচ হজরত আবু বকর রসুলের অনুকরণ না করে নেতৃত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন হজরত ওমরকে। এবং হজরত ওমরও রসুলের অনুকরণ না করে ছয় জনের এক কমিটি বানিয়ে তার ওপর ভার দিয়ে গিয়েছিলেন ঐ কমিটির ভেতর থেকেই পরের খলিফা ঠিক করতে। এ থেকে কি প্রমাণ হয় ? প্রমাণ হয় যা তাঁরা ঠিকই জানতেন, নবীজীর হাজার হাজার সুন্নাতের সবগুলোই ইসলামি ধর্মবিশ্বাসের অংশ নয়। আমাদের আলেমদেরও তা জানতে হবে ও জাতিকে জানাতে হবে। সামাজিক পটভূমির ওপরে নবীজীর সুন্নাত পরিবর্তনের কঠিন সুন্নাত আছে।

কি সেই সুন্নাত, কোরাণের কি সেই পদ্ধতি যা সর্বকালের মওলানাদের জন্য অবশ্য পালনীয় ?

খেয়াল করুন। নবীজী (দঃ) অনেক কিছু বদলেছেন যেমন ঃ (১) বহু বছর চালু রাখার পরে মু’তা বিবাহ (সাময়িক অস্থায়ী বিয়ে) নিষিদ্ধ করেছেন ; (২) প্রথমদিকের দু’ওয়াক্ত নামাজ মেরাজের পর পাঁচ ওয়াক্ত করেছেন ; (৩) সিদ্ধান্ত বদলেছেন কবর-জিয়ারত বা কোরবাণির মাংস সংরক্ষণের ব্যাপারে, এবং (৪) অন্যান্য বহু বিষয়ে। এ-থেকে আমরা কি পাচ্ছি ? চিন্তা করে দেখুন। স্বয়ং নবীজীর সামনেই কোরাণে-সুন্নতে পরিবর্তন করা হয়েছে। কেন করা হয়েছে ? ডঃ কামালি বলছেন ঃ “নবী (দঃ)-এর সময়েই কোরাণ ও সুন্নাহ-তে কিছু সম্পূর্ণ ও কিছু আংশিক পরিবর্তন করা হয়। পরিস্থিতির পরিবর্তনই ইহার মূল কারণ।”

স্বয়ং কোরাণ বলছে ঃ “আমি কোন আয়াত রহিত করিলে বা ভুলাইয়া দিলে তাহা অপেক্ষা উত্তম বা সমপর্যায়ের আয়াত আনি” (বাকারা ১০৬) এবং “যখন আমি এক আয়াতের স্থলে অন্য আয়াত আনি এবং আলাহ যা নাজিল করেন তা তিনিই ভালো জানেন” (নাহ্ ল আয়াত ১০১)। একে বলে নস্ খ্ । কোরাণও বিভিন্ন বিধান বহু বছর চালু রাখার পরে বদলেছে, যেমন ঃ

(১) আলাহ’র কাছে সুপারিশ করার পদ্ধতি বদল করেছে আন্ নাবা ৩৮ ; বাকারা ৪৮, ১২৩, ২৫৪ ; নিসা ১২৩ ; আনাম ৫১, ৭০ ; আল্ যুমার ১৯, ইত্যাদিতে।

(২) জেরুজালেমের দিকে মুখ করে নামাজ পড়ার নির্দেশ ১৪ বছর চালু রাখার পরে বদলিয়ে কাবা’র দিকে করেছে (বাকারা ১৪২ − ১৪৪ ; সহি বুখারী হাদিস নং ৪১৯ ও ৪২০, হাফেজ আবদুল জলিল)।

(৩) বিধবার এক বছরের ইদ্দত বহু বছর চালু রাখার পরে বাতিল করে চার মাস দশ দিন করেছে (বাকারা ২৪০ ও ২৩৪)।

(৪) একসাথে দু’বোনকে বিয়ের প্রথা বহু বছর চালু রাখার পরে নিষিদ্ধ করেছে (নিসা ২৩)।

(৫) অনিয়ন্ত্রিত বহুবিবাহকে বহু বছর চালু রাখার পরে সর্বোচ্চ চার স্ত্রী করেছে (নিসা ৪)।

(৬) পিতামাতা ও আত্মীয়দের উত্তরাধিকার বহু বছর চালু রাখার পর পরিবর্তন করেছে (বাকারা ১৮০, নিসা ১১)।

(৭) বহু বছর চালু রাখার পরে যিহার বাতিল করেছে (সুরা সেজদাহ ৪)।

(৮) আরও উদাহরণ দেখুন মওলানা মুহিউদ্দীনের অনুদিত কোরাণ পৃষ্ঠা ৫৩, ১২৫৫ ও ১৩৪৭।

(৯) বুখারীতে আছে ঃ “ইবনে উমর এই আয়াত পড়িত − ‘তাহাদের সুযোগ ছিল রোজা রাখা অথবা কোন দরিদ্রকে প্রতিদিন খাওয়ানো’ এবং বলিয়াছে এই আয়াতের আদেশ রহিত করা হয় (৩য় খণ্ড হাদিস ১৭০) এবং “বা র্ মাউনাতে যাহারা নিহত হইয়াছিল তাহাদের উপর নাজেলকৃত আয়াতটি আমরা পড়িতাম কিন্তু পরে তাহা বাতিল করা হয়” (৪র্থ খণ্ড হাদিস ৬৯)। নবীজীর সাথে একান্তে কথা বলতে হলে কিছু সদকা দিতে হবে এ-আয়াতও আলাহ নাজিল করে পরে নিজেই রহিত করেন (মুহিউদ্দিন খানের অনুদিত বাংলা-কোরাণ পৃষ্ঠা ১৩৪৭)। আলাহ নিজেরই সুস্পষ্ট নির্দেশ বাতিল ও রহিত করেছিলেন তার নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে এটা “সুস্পষ্ট নির্দেশ’-এর প্রবক্তারা কি করে অস্বীকার করবেন ?

একদিকে আমরা স্পষ্ট দেখছি আলাহ ও নবীজী একের পর এক নূতন সামাজিক বিধান চালু করছেন, অনেক পরে তার কোনোটা বদলাচ্ছেন কিংবা বাতিল করছেন। আবার অন্যদিকে দেখছি আলাহ বলছেন ঃ “আপনি কখনো পরিবর্তন পাবেন না আলাহ’র সুন্নাহ-এ” (সুন্নাহ − অর্থা ৎ রীতিনীতি, প্রতিষ্ঠিত নিয়ম, চালু বিধান ইত্যাদি − সুরা আহযাব ৬২) একটু খুঁটিয়ে দেখলেই দেখা যাবে যেটাতে “কখনো পরিবতর্ন পাবেন না” তা হল মূল্যবোধ ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, আর যেটাতে পরিবর্তন পাবেন তা হল সামাজিক বিধানের প্রণয়ন, পরিবর্তন ও বাতিল। মনে আছে ছোটবেলায় মা আপনাকে বলেছিলেন “যাও গোসল কর ?” আবার একদিন এ’ও বলেছিলেন “গোসল করো না।” দু’টোই দলিলে ধরা আছে বলে আমি কি বলতে পারি আপনার মা হয় নির্বোধ কিংবা থুক্কু করে আগের ভুলটা শুধরেছেন ? মোটেই তা নয়। “যাও গোসল কর” তিনি বলেছিলেন যেদিন আপনি খেলা শেষে ধুলোমাখা দেহে ঘরে ফিরেছিলেন, এবং “গোসল করো না” বলেছিলেন যেদিন আপনার জ্বর হয়েছিল। আপনার কল্যাণ হল তাঁর মূল্যবোধ, ওটা ঠিক রাখার জন্যই নির্দেশ বদল। চিন্তা করুন, যদি তিনি ‘সুস্পষ্ট নির্দেশ” না বদলিয়ে জ্বরের দিনেও বলতেন “যাও গোসল কর” তবে আপনার কি অবস্থা দাঁড়াতো ?

ইসলামেও তাই। কোরাণে দেয়া মানবকল্যাণের মূল্যবোধ বজায় রেখে সামাজিক বিধান বদলানো ইসলামের অপরিহার্য শর্ত। এজন্যই কোরাণ-রসুলের নস্ খ্।
ডঃ কামালি বলছেন ঃ
“মানুষের উপকারের জন্য সমাজের বিদ্যমান পটভূমি ও আইনের সমন্বয় করার প্রয়োজনে নস্ খ্ আসিয়াছে…কোরাণ ও হাদিসে নস্ খ্-এর সর্বপ্রধান কারণ হইল স্থান-কালের বিষয়টি।” এই সমন্বয় কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা ইসলামের এক সমালোচনার জবাবে বলেছেন মওলানা মওদুদি’ও ঃ
“তৎকালীন (অতীতের) বিদ্যমান পরিস্থিতি উপেক্ষা করিয়া ওই সময়ের ঘটনাকে বর্তমানের আলোকে দেখিবার জন্যই এই ভুল হইয়াছে”− ইসলামিক ল’ অ্যাণ্ড কন্সটিটিউশন পৃষ্ঠা ২৩৬। ইউরোপের বিখ্যাত শারিয়া-সমর্থক বিলাল ফিলিপ বলেছেন ঃ
“আলাহ কখনো কোনো তাৎক্ষণিক কারণে মানুষের উপযোগী আইন দেন। কিন্তু পরে ইহার উদ্দেশ্যে হাসিল হইয়া ইহার উপকারিতা লোপ পায়। এই পরিস্থিতিতে আর ইহার অস্তিত্ব থাকে না”− দি এভোল্যুশন অব্ ফিক্হ্ পৃষ্ঠা ২০। মওলানা মুহিউদ্দিনের কোরাণেও এই একই কথা আছে ৩৩৪ পৃষ্ঠায় ঃ
“নাসিখ ও মনসুখের অবস্থা একজন বিজ্ঞ হাকিম ও ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রের মত…ডাক্তার যখন পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপত্র রহিত করে নূতন ব্যবস্থাপত্র দেন তখন এরূপ বলা ঠিক নয় যে পূর্বের ব্যবস্থাপত্রটি ভুল ছিল … বরং আসল সত্য হচ্ছে এই যে, বিগত দিনগুলোতে সে ব্যবস্থাপত্রই নির্ভুল ও জরুরি ছিল এবং পরবর্তী পরিবর্তিত এ-ব্যবস্থাপত্রই নির্ভুল ও জরুরী।” তিনি ৫৩ পৃষ্ঠাতেও ওই একই কথা বলেছেন। এমনকি মওদুদী যে মওদুদী. সেই তিনিও স্বীকার করেছেন ঃ “কোরাণ-সুন্নাহ’র সুস্পষ্ট নির্দেশ বদলাইবার অধিকার কাহারো নাই। অন্যদিকে আমি ইহাও বলিয়াছি, ভিনড়ব পরিস্থিতিতে ইজতিহাদ প্রয়োগ করিয়া সময়ের দাবীর ভিত্তিতে ঐগুলি পরিবর্তনকে বৈধ করা যাইতে পারে” (ইসলামিক ল’ অ্যাণ্ড কন্সটিটিউশন, পৃঃ ৯৩)।

কি আশ্চর্য − আমরাও তো হুবহু এই একই কথা বলছি ! চোদ্দশ’ বছরে সামাজিকপারিবারিক পরিবর্তনের বাস্তবতাকে স্বীকার করাটাই তো ইসলাম। বিভিন্ন দেশে শারিয়াপন্থীরা এটা তো স্বাীকার করে নিচ্ছেনও, বিধান তো বদলাচ্ছেনও যেমন বাতিল করছেন তাৎক্ষণিক তালাক, মুরতাদ-হত্যা, জিজিয়া কর এবং অনুমোদন করছেন নারী নেত্রীত্ব, নারীর বিচারক হওয়া, ইত্যাদি। এটা ভালো লক্ষণ। এভাবেই তাঁরা একদিন পারিবারিক আইনগুলোও বদলাবেন তাতে কোনই সন্দেহ নেই।

এবারে আমি আবারো মওলানা মওদুদি’র প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করব, বিশেষ করে শারিয়াপন্থীদের। তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন ঃ “বিভিন্ন পয়গম্বরের প্রচারিত ধর্মীয় আইনগুলিতে ভিন্নতা আছে কেন ? (differ in matters of detail)…বিভিন্ন পয়গম্বরের প্রচারিত বেহেশতি কেতাবে নির্দেশিত ইবাদতের পদ্ধতিতে, হালাল-হারামের বিধানগুলিতে ও সামাজিক আইনগুলির বিস্তারিত কাঠামোতে (etailed legal
regulations) ভিন্নতা আছে কেন ?…(কারণ) স্বয়ং আলাহ বিভিন্ন সময়ের, বিভিন্ন জাতির ও বিভিন্ন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াইবার জন্য আইনের ধারা (legal prescriptions) বদলাইয়াছেন”− তাঁর তাফহিমুল কুরাণে মায়েদা ৪৮-এর ব্যাখ্যা − http;//www.tafheem.net/main.html

কি আশ্চর্য − আমরাও তো হুবহু এই একই কথা বলছি ! কোরাণের এই বাস্তব বিধানটা মেনে নিলেই তো হল ! এই মূল্যবোধ মেনেই তো রসুল, খলিফা এবং মওলানারা অনেক বিধান বদলেছেন। যেমন হজ্বের সময় পাথর মারার পদ্ধতি, মহাশূন্যে এবং উত্তর গোলার্ধে নামাজ-রোজার সময়, বেশকিছু মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে সমান উত্তরাধিকার ইত্যাদি, যেমন মরক্কো, সিনেগাল ও তিউনিসিয়া (তিউনিসিয়ায় মুসলমান শতকরা ৯৯%)। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কিরগিজস্তানে দ্বিতীয় বিয়ে করলে সটান দু’বছরের কারাদণ্ড − কোনো খাতির নেই। এমনকি গত ফেব্র“য়ারীতে ইরাণের গ্র্যাণ্ড আয়াতুলাহ সানে’ই বিধবার উত্তরাধিকার পরিবর্তনের ফতোয়া দিয়েছেন। এঁদের কাউকেই তো কেউ মুরতাদ বলেনি ! উনারা যদি পারেন, আমাদের মওলানারাও পারেন। উনারা যেভাবে পারেন, আমাদের মওলানারও সেভাবে পারেন। দরকার শুধু উপলব্ধির ও নিয়তের। কিন্তু ইসলামের এই গতিময়তা না বুঝার ফলে আমাদের আলেম সমাজের ভাবমূর্তি নারী-বিরোধী হয়ে পড়েছে যা সমাজের জন্য মোটেই ভালো নয়।

এ বিষয়ে দৈনিকগুলোত অসংখ্য নিবন্ধে কোরাণে নারীর উত্তরাধিকারের সব আয়াতের সমষ্টি দেখিয়ে দাবি করা হচ্ছে যে উত্তরাধিকার অর্ধেক হলেও নারীর উপার্জন, দেনমোহর-ভরণপোষণ সব মিলিয়ে নারী পুরুষের বেশিই পায়। তত্ত্ব হিসেবে কথাটা সত্যি কিন্তু বাস্তবে কথাটা সত্যি নয়। দৈনিক ইনকিলাব ২৫ মে ২০০৮ তারিখে জনাব মোহাম্মদ আবদুল অদুদ ‘ইনসাফ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা’ নিবন্ধে চমৎকার বাক্যে লিখেছেন − “আলাহ প্রদত্ত মুসলিম পারিবারিক আইন একটি অঙ্কের শিকল। এর কোথাও বিচ্যুতি ঘটলে, পুরোটাতেই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে।” আমরা নিরীক্ষা করে দেখেছি আসলেই তাই, অঙ্কটা মেলে চমৎকার। কিন্তু শারিয়াপন্থীরা যা খেয়াল করেন না তা হলো অঙ্কটা মেলে চোদ্দশ’ বছর আগের সমাজের আর্থ-পারিবারিক-সামাজিক কাঠামোর সাথেই। চোদ্দশ’ বছরের বিবর্তনে শিকলটার কিছু অংশ খসে পড়ে পৃথিবী থেকে উধাও হয়ে নূতন অংশ ঢুকেছে বলে বর্তমানে ওই শিকল প্রয়োগ করা অসম্ভব। তা করতে গেলে বিশ্বকে সেই চোদ্দশ’ বছর আগের আর্থ-পারিবারিক-সামাজিক অবস্থায় নিয়ে যেতে হবে যা অবাস্তব ও অসম্ভব। তাই বুঝি ‘বাস্তববাদী’ বলে বিখ্যাত ইমাম তাইমিয়া বলেছেন “মুসলিম বিশ্বে কোন চিরন্তন শাসনব্যবস্থা বাস্তবভিত্তিকও নহে, সম্ভবও নহে”− পলিটিক্যাল থট্ অব্ ইবনে তাইমিয়া, পৃঃ ১০৬। সেই সমাজে গোত্র তার প্রতিটি সদস্য ও নারীকে প্রাণপণে সবদিক দিয়ে রক্ষা করত। এতে গোত্রের সম্মান ও শক্তি বজায় থাকত। কিন্তু নারীর সে রক্ষাকবচটা আজ নেই, জনসংখ্যা ও সম্পদের সেই ভারসাম্যও নেই। এখন ছোট্ট একক পরিবারে বাবা-মা, ভাইবোন বা রাষ্ট্র কেউই কাউকে সবদিক দিয়ে রক্ষা করতে পারে না। তাই বহু পরিত্যক্ত নারীর শেষ উপায় দাঁড়ায় ভিক্ষাবৃত্তি বা পতিতাবৃত্তি। পতিতালয়ের অনেক রিপোর্টে এর বাস্তব প্রমাণ আছে।

আমাদের বুঝতে হবে কোরাণ হঠাৎ একদিন এ-সব সামাজিক বিধান দিয়ে শূন্য থেকে নূতন সমাজ সৃষ্টি করেনি। কোরাণ সেই প্রাচীন সমাজের নারী-বিরোধীতায় কিছুটা ভারসাম্য এসে ভবিষ্যতের সমান অধিকারের পথ দেখিয়ে গেছে। এ দু’য়ে যে আকাশ-পাতাল তফাৎ সেটা না বুঝলে আমরা কোনদিনই ইসলামে মানবকল্যাণের মর্মবাণী বুঝব না। সেই সমাজে নারীকে পুরুষের চেয়ে কম অধিকার দেয়ার কারণ হল নারীর দায়িত্ব নেবার অক্ষমতা। কিন্তু তার জন্য নারী দায়ী নয়, দায়ী সেই সমাজব্যবস্থা। তাছাড়া এখন যে বাংলাদেশে প্রায়ই নীরব দুর্ভিক্ষ, মারাত্মক কর্মহীনতা, ভয়াবহ সিডর আর মঙ্গায় মরে যায় কোটি মানুষ আর রাস্তায় পড়ে থাকে হাড্ডিসার লাশ, লেগে থাকে বন্যা-খরা-ঝড়ের ধ্বংস, কোটি মানুষ অর্ধাহারে সে দেশে দেনমোহর বা স্বামীর ভরণপোষণের দায়িত্বের যুক্তি নিষ্ঠুর পরিহাস মাত্র। যাঁরা বলেন দেনমোহর হল নারীর রক্ষাবকচ তাঁদের জানা উচিত নারীর সারাজীবনের খরচ হবার মত দেনমোহর কখনোই ধার্য করা হয় না। তাছাড়া দেনমোহর হতে পারে একজোড়া জুতো বা কোরাণ থেকে কিছু তেলাওয়াত (শারিয়া দি ইসলামিক ল’ পৃষ্ঠা ১৬৩, ১৬৪ ও বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ৩য় খণ্ড পৃষ্ঠা ৯৭৬ সহি বুখারী ৭ম খণ্ড ২৪ ও সহি তিরমিজি ৯৫১)। স্বামীর ভরণেপোষণের দায়িত্বের যুক্তি যাঁরা দেখান তাঁদের জানা উচিত সেই দায়িত্ব হল ঃ “স্বামী খাবার, বাসা ও পোশাক দিবে বাধ্য স্ত্রীকে, অবাধ্য স্ত্রীকে নহে। বাচ্চা হইবার সময় ব্যতীত অন্য সময়ে ডাক্তার-ওষুধের খরচ বা সাবান-প্রসাধন দিতে স্বামী বাধ্য নহে” (হানাফি আইন হেদায়া পৃষ্ঠা ১৪০ ও শাফি’ আইন এম-১১-৪)। বলাই বাহুল্য, কে বাধ্য আর কে অবাধ্য স্ত্রী তা কিন্তু ঠিক করবে ঐ স্বামীই। হানাফি-শাফি’ কেতাব হাতের কাছে না থাকলে দেখে নিন মুহিউদ্দিন খান অনুদিত বাংলা কোরাণ পৃষ্ঠা ৮৫৭ ঃ “স্ত্রীর যে প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার বহন করা স্বামীর যিম্মায় ওয়াজিব তা চারটি বস্তুর মধ্যে সীমাবদ্ধ − আহার, পানীয়, বস্ত্র ও বাসস্থান। স্বামী এর বেশি কিছু স্ত্রীকে দিলে অথবা ব্যয় করলে তা হবে অনুগ্রহ, অপরিহার্য নয়।” এসব অত্যন্ত নির্লজ্জ আইন। স্বামী তালাক দিলে স্ত্রী খোরপোষ পাবে মাত্র তিন মাস। আর তাৎক্ষণিক তালাকে তো খোরপোষের কোনো বালাই-ই নেই। তারপর সে স্ত্রী কি খাবে কি পরবে তার কোনো হদিস নেই। কাজেই নারীকে আর্থিক দিক দিয়ে শক্তিশালী করার দরকার আছে।

শারিয়াপন্থীরা সর্বদাই বলেন আয়াতের পটভূমি থেকে নির্দেশ নিতে। কথাটা ঠিক, কারণ কোরাণের কি কি নির্দেশ তখনকার জন্য আর কি কি নির্দেশ শাশ্বত তা পটভূমি থেকে পাওয়া যায়। কিন্তু তাঁরা নারীর ওপরে অত্যাচার করার জন্য ঐ পটভূমিই লঙ্ঘন করেন। উত্তরাধিকারের বেলায়ও কথাটা সত্যি। সুরা নিসা আয়াত ১১ ও ১৭৬-তে নারীর অর্ধেক উত্তরাধিকারের প্রত্যক্ষ নির্দেশ আছে। আয়াত ১৭৬- এর পটভূমি পাওয়া যায়নি, কেউ জানালে বাধিত হব। আয়াত ১১ নাজিল হয়েছিল এক বিশেষ পটভূমিতে। আউস বিন্ সাবেত নামে এক ধনী আনসারের মৃত্যু হলে তখনকার আর্থ-সামাজিক ঐতিহ্য অনুযায়ী আউসের চাচাতো ভাই এসে তার স্ত্রী, দুই বালেগ মেয়ে ও এক নাবালেগ ছেলেকে বঞ্চিত ক’রে সব সম্পত্তি গ্রাস ক’রে ফেলে (কোরাণের বাংলা অনুবাদ − মুহিউদ্দিন খান, পৃষ্ঠা ২৩৪, এবং ডঃ মুহাম্মদ হামিদুলাহ, − দ্য মুসলিম উইমেন)। কোরাণ সেই নাবালেগ পুত্রের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য বালেগ বোনের দ্বিগুণ সম্পত্তি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। অর্থাৎ এই আয়াত শাশ্বত নয় বরং তাৎক্ষণিক বিশেষ পরিস্থিতির সমাধান। আজ যদি কোরাণ মেনে ঐ আয়াত প্রয়োগ করতে হয় তবে শুধুমাত্র নাবালেগ পুত্র এবং বালেগ বোনদের ক্ষেত্রেই সেটা প্রয়োগ করা যেতে পারে। সেই বিশেষ পরিস্থিতি না হলে ঐ সুরা নিসা আয়াত ১২ মোতাবেকই নর-নারীর সমান উত্তরাধিকার হতেই হবে। সেখানে মৃতের ভাই-বোনের সমান উত্তরাধিকারের যে নির্দেশ দেয়া আছে সেটা কোথায় গেল ? মৃতের ভাই-বোন সমান পেলে তার ছেলেমেয়েরা অবশ্যই সমান পাবে।

আসল কথা হলো, নিয়ত ও বাস্তবের উপলব্ধি। আমাদের ইসলামী নেতৃত্ব যদি কোরাণ-রসুলের দেয়া পদ্ধতি অনুসারে মূল্যবোধ বজায় রেখে বাস্তব বদলের সাথে নারী-অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চান তবে তার সমর্থন কোরাণ-রসুল থেকেই পাবেন।

বাংলাদেশ জামাতে ইসলামি বলেন তাঁরা তাঁদের হারাম নারী-নেত্রীত্ব হালাল করেছেন পরিস্থিতির কারণে। তাঁদের বুঝা উচিত নারীর সমান-উত্তরাধিকারও হওয়া প্রয়োজন ওই পরিস্থিতির কারণেই। আমার সাথে ভয়েস্ অব্ আমেরিকা রেডিওবিতে র্ক এক উঁচুস্তরের শারিয়া-নেতা আমাকে বলেছেন নারী ত্রিশ কেজি ওজন তুলতে পারে না কিন্তু পুরুষ পারে। রেডিওতে দুনিয়ার সামনে আমি তাঁকে অসম্মান করতে চাইনি কিন্তু এ-যুক্তি সত্যি হলে মানুষ নয় বরং হাতি বা গণ্ডার হওয়া উচিত আশরাফুল মাখলুকাত। “কলসি কাঁখে ঘাটে যায় কোন্ রূপসী” গানটা শুনতে ভালো কিন্তু দু’কলসি পানি মাথায় নিয়ে আধ-মাইল হাঁটলে তালপাতার সেপাই অনেক পুরুষেরই ঘাড়ের হাড় নড়ে যাবে। অথচ বহু জায়গায়, বিশেষত ভারতের মধ্যপ্রদেশে নারীরা মাথায় ক’রে দু’কলসী পানি বয় মাইল ধরে, প্রতিদিন। ক’জন পুরুষ পারবে তা ? একটানা তিন ঘণ্টা কুলো ঝাড়লে কিংবা ঢেঁকি পাড় দিলে বহু পুরুষই বুঝবে নারীর শক্তি ও ধৈর্য কত অসাধারণ, তা’ও আবার হাসিমুখে। সেজন্যই বলি, নারীকে কোনই সাহায্য করতে হবে না − শুধু ওদের বাধা না দিলেই ওরা অসাধ্য সাধন করে দেখাবে। নারীকে অক্ষম ও দুর্বল ইসলাম করেনি, করেছি আমরা।

অসীম কোরাণ দু’হাত ভরে দিতে চায় কিন্তু সসীম মানুষ দু’হাতের ওপরে দু’মুঠোর বেশি নিতে পারে না। আমাদের বুঝতে হবে মদ্যপানের মতো অভিশাপ কোরাণ হুকুম দিয়ে একদিনে দূর করতে পারত কিন্তু কেন ধীরে ধীরে তিনটে পদক্ষেপ নিল। দাসপ্রার মতো অভিশাপ কোরাণ এক হুকুমে দূর করতে পারত কিন্তু কেন একটু একটু করে এগিয়ে বহু বছর পর উচ্ছেদ করল (সুরা মুহম্মদ ৪)। পুরুষের ইচ্ছেমতো বহুবিবাহ আর তালাক, স্ত্রী-প্রহার, প্রতিটি নারী সম্পত্তিহীন, তার চাক্ষুষ সাক্ষ্য আদালতে অচল ইত্যাদি শুধু আরবেই নয় বরং মানুষের সামগ্রিক ইতিহাসের চিরন্তন কুপ্রা। সেগুলোকেও কোরাণ এক হুকুমে দূর করতে পারত। কিন্তু কোরাণ জানে, কোনো ভাল বিধানও মানুষ যদি না উপলব্ধি করে তবে জোর করে চাপিয়ে দিলে আখেরে সমাজের সর্বনাশ হতে বাধ্য। তাই আমরা দেখি কোরাণ অতি সতর্কভাবে একটু একটু করে ততটুকুই প্রতিষ্ঠিত করেছে যতটুকু মানুষ নিতে পারত, যতটুকু সেই সমাজে সম্ভব ছিল। সে-জন্যই কোরাণ প্রাথমিকভাবে প্রতিটি নারী-অত্যাচারের ওপরে বিভিন্ন শর্ত দিয়ে প্রচণ্ড বাধা সৃষ্টি করেছে, অর্ধেক হলেও নারীসাক্ষ্য ও নারী-উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু সেটাই মঞ্জিলে-মকসুদ নয়। এসমস্যা রও শেকড় এত গভীরে ছিল যে দাসপ্রথার মতো এটাও পুরো করা নবীজীর সময়ে সম্ভব হয়নি। তাই কোরাণ দিয়ে রেখেছে গন্তব্যের নির্দেশ − দাসপ্রথা উচ্ছেদ কর এবং নরনারী পরস্পরের পোশাক, পরস্পরের ওলী। পোশাক বা ওলী পরস্পরের অর্ধেক হয় না, তাদের মধ্যে মারপিটও হয় না।

আর, কোরাণ লঙ্ঘন ? তার বহু উদাহরণ তো আমাদের চোখের সামনেই আছে। দেখুন বি-বি-সি’র খবর ঃ “১৯৯৭ সালে গৃহীত ‘নারী উনড়বয়ন নীতি-৯৭’-এ নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার বিষয়ে ৭.১ ধারায় বর্ণিত ‘সমান অধিকার’ শব্দ দু’টি বাদ দিয়ে করা হয়েছে ‘সংবিধান-সম্মত অধিকার’। ৭.২ ধারার ‘সম্পদ, বাসস্থান, অংশীদারিত্ব, উত্তরাধিকার-সম্পদ, ভূমির ওপর অধিকার আইন’ ইত্যাদি লাইন ও শব্দ বাদ দেয়া হয়েছে। ৭.৩ ধারায় ‘নারীর সর্বাত্মক কর্মসংস্থান’ বদলে করা হয়েছে ‘যথোপযুক্ত’। ধারা ৮ থেকে রাজনীতিতে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণের পুরোটাই এবং মন্ত্রীপরিষদ, সংসদ ও বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কিত কয়েকটি অংশ সম্পূর্ণভাবেই বাদ দেয়া হয়েছে।”

বলাই বাহুল্য ওই ‘যথোপযুক্ত’ ও ‘সংবিধান-সম্মত’ অধিকারগুলো কি তা কিন্তু তাঁরাই ঠিক করবেন। এগুলো চালাকি ছাড়া আর কিছু নয় এবং চালাকি দিয়ে সম

৩০ শে মে, ২০১৬ সকাল ৭:৪২

আদিল ইবনে সোলায়মান বলেছেন: Copy/paste করেছেন তো! তাই শেষ দিকে বাকী রয়ে গেছে আপনার কিছু কথা। অনুগ্রহপূর্বক সবটুকু paste করুন আমার বুঝার জন্য। তাহলে আপনার জবাবটা আমি পরিষ্কারভাবে দিতে পারবো। ধন্যবাদ আপনার গঠনমূলক অসম্পন্ন তাত্ত্বিক কমেন্টের জন্য।

২| ৩০ শে মে, ২০১৬ সকাল ৭:৩৯

কবি হাফেজ আহমেদ বলেছেন: প্রশংসনীয় পোষ্ট।

৩০ শে মে, ২০১৬ সকাল ৭:৪৩

আদিল ইবনে সোলায়মান বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ৩০ শে মে, ২০১৬ সকাল ৮:০১

চাঁদগাজী বলেছেন:



আরবদের জীবন দেখলে বুঝা যায় কি হচ্ছে; এবং আপনি নিশ্চয় আরবের মুসলমানদের থেকে বড় পন্ডিত নন।

৪| ৩০ শে মে, ২০১৬ সকাল ৮:১৭

এ আর ১৫ বলেছেন: বলাই বাহুল্য ওই ‘যথোপযুক্ত’ ও ‘সংবিধান-সম্মত’ অধিকারগুলো কি তা কিন্তু তাঁরাই ঠিক করবেন। এগুলো চালাকি ছাড়া আর কিছু নয় এবং চালাকি দিয়ে সমাজের মঙ্গল করা যায় না। দেখুন ইসলামি ফাউণ্ডেশনের প্রকাশিত বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ১ম খণ্ড আইন নং ৩৪৪ − “(স্বামীর জন্য) তালাক সঙ্ঘটিত হওয়ার জন্য সাক্ষী শর্ত নহে।” এবারে দেখুন সুরা ত্বালাক ২, স্ত্রী-তালাকের সময় − ‘তোমাদের মধ্য হইতে দুইজন নির্ভরযোগ্য লোককে সাক্ষী রাখিবে।’ এই হলো কোরাণ লঙ্ঘন। হদ্দ বা হুদুদ হলো জ্বেনা, জ্বেনার অপবাদ, চুরি, ডাকাতি, মদ্যপান, রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও ইসলাম ত্যাগ। দেখুন বিধিবন্ধ ইসলামি আইন ৩য় খণ্ড ৯১৪ গ − “হদ্দ-এর আওতাভুক্ত কোন অপরাধ করিলে ইসলামি রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করা যাইবে না।” হানাফি আইন হেদায়া-তেও এ-আইন আছে ১৮৮ পৃষ্ঠায়। এই হলো কোরাণ-লঙ্ঘন, এরকম বহু শারিয়া আইন আছে।

সরকার সহ সবাইকে বুঝতে হবে সাম্য ও সমান অধিকার এক নয়। কিন্তু সেই বাহানায় নারী-অত্যাচারও ইসলাম-সম্মত নয়। নারীর সমান উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ধর্ম ছাড়াও আর্থ-পারিবারিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক বহু জটিল সুতোয় টান পড়বে। কারণ নর ও নারীর জীবন, আশা-আকাক্সক্ষা, শরীর-মন, মানসিকতা, স্বপড়ব, চাহিদা, সমস্যা ও সমাধান শুধু আলাদাই নয় বরং কখনো কখনো পরস্পর-বিরোধীও হয়ে ওঠে। তাই সমান উত্তরাধিকার কেন ইসলাম-বিরোধী নয় সেটা জনগণকে পরিষ্কারভাবে বুঝানোর কোনই বিকল্প নেই। রেডিও-টেলিভিশনে খবরের কাগজে ক্রমাগত নিবন্ধ, বই ও বিশ্ববিখ্যাত প্রগতিশীল ইসলামি বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকার দিয়ে জনগণকে জানাতে হবে। যাঁরা সমান উত্তরাধিকারের বিরুদ্ধে তাঁদের সাথেও দলিলভিত্তিক উন্মুক্ত আলোচনা হওয়া দরকার।

কেউ যদি কারো কথা না মানেন তবুও লা আকরাহা ফিদ্বীন–ধর্মে জবরদস্তি নেই–এটা মানতে হবে। ইসলামে মানুষ ও আলাহ’র মধ্যে কোনো দালাল নেই এটা মানতে হবে, নারীরা কারো চেয়ে কম মুসলিম নন এটাও মানতে হবে। এজন্য ই এ-বিষয়ে নারীদের মতামতের জরিপ জরুরি। এবং সবচেয়ে জরুরি হল অন্যান্য দেশের নারীদের মতো নিজেদের ইসলামি নারী-সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে অধিকারের সংগ্রাম করা। এর কোনই বিকল্প নেই।

ইসলাম নিয়ে এ কালখেলার শেষ হোক। বিশ্ব-মুসলিম আল্ কোরাণের শান্তিবাণী বুকে নিয়ে অমিতগর্বে উঠে দাঁড়াক অতীতের সামরিক শক্তিতে নয়, ক্ষমতার লড়াইয়ের ষড়যন্ত্রে নয়, মেধা এবং প্রেম-ভালবাসা-ক্ষমার শক্তিতে, ন্যায়বিচার ও নর-নারীর সমান অধিকারের শক্তিতে। আবারো বলছি, ইসলামের বহু ব্যাখ্যা সম্ভব কিন্তু যে ব্যাখ্যায় মানবাধিকার রক্ষা হয় সেটাই প্রকৃত ইসলাম। আমরা সবাই একসাথে চেষ্টা করলে আলাহ্তা য়ালা’র ওয়াদা আছে আমাদের সাহায্য করার এবং নেয়ামত ফিরিয়ে নেয়ার যদি আমরা চেষ্টা না করি − সুরা রা’দ ১১ , আনফাল ৫৩।

এর চেয়ে কথা স্পষ্ট হয় না। আমরা শুধু মনে মনে চাইব কিন্তু কাজে কিছুই করবনা অথচ আলাহ্ আমাদের উনড়বতি করে দেবেন তা হয় না ॥

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.