নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ্‌!

আবদুল বারিক

আমি এক আল্লাহর গোলামের ঘরের গোলাম। আলহামদুলিল্লাহ্‌!

আবদুল বারিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আরণ্যকের ৫০ বছরে ঐতিহাসিক রাজনেত্র! এমএবি সুজন

২১ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ২:০৭

আরণ্যকের ৫০ বছরে ঐতিহাসিক রাজনেত্র!

এমএবি সুজন

উজ্জী‌বিত বাংলাদেশের মঞ্চ নাটক। প্রযোজনায় মুখ‌রিত আ‌য়োজক, দর্শক ও কুশীলব। জ‌মে উ‌ঠে‌ছে মঞ্চ মাধ‌্যম। অ‌ভিনয় শিল্পী‌দের পদচারণায় প্রাণচঞ্চল বাংলা‌দেশ শিল্পকলা একা‌ডে‌মির জাতীয় নাট‌্যশালাসহ অন‌্যান‌্য প্রদর্শণী মঞ্চ।‌নিয়‌মিত নাট‌্যচর্চায় প্রায় প্রতিদিনই ম‌ঞ্চে নাটকের প্রদর্শনী হচ্ছে। নতুন নাটক নিয়ে আসছে নতুন দলগুলো। আবার পুরোনো প্রতিষ্ঠিত দলগুলোও নিয়ে আসছে নতুন নাটক। চলছে মহড়া। সব মিলিয়ে সরগরম নাটকপাড়া। গত মাসের প্রথম সপ্তাহে নাটকের দল থিয়েটার নিয়ে এসেছিল তা‌দের নতুন প্রযোজনা ‘পোহালে শর্বরী’। গত মাসের শেষ সপ্তাহে, অর্থাৎ গত ২৯ জুলাই শুক্রবার থিয়েটারের সমবয়সী দে‌শে বি‌দে‌শে বাংলা‌দে‌শের অন‌্যতম জন‌প্রিয় নাটকের দল আরণ্যক আন‌লো নতুন নাটক ‘রাজনেত্র’। সব মিলিয়ে যেন শ্রাবণসন্ধ্যায় সমকালীন বাংলা নাটকের মহা আয়োজন দর্শক সমাদৃত।
স্বাধীনতার পরপরই ১ ফেব্রুয়ারিতেই আরণ্যক নাট্যদল গঠন করেন সে সময়ের কয়েকজন নিবেদিত তরুণ নাট্যকর্মী। নামটি দিয়েছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবদুল্লাহ আল-মামুন। সে সময়ের স্মৃতিচারণা করে ওস্তাদ মামুনুর রশীদ বলেন, ‘টেলিভিশন সেন্টারে আমি, আলী যাকের আর আবদুল্লাহ আল-মামুন গল্প করছিলাম। বলেছিলাম, “একটা নাটকের দল করব, কী নাম দেওয়া যায়?”আবদুল্লাহ আল–মামুন বললেন, “নাগরিক তো আছেই, তোমরা আরণ্যক হয়ে যাও।” তারপরই নাম দিলাম “আরণ্যক”।’সেই থেকে নিরবচ্ছিন্ন নাট্যচর্চা চালিয়ে যাচ্ছে আরণ্যক নাট্যদল। মঞ্চে, পথে, মিছিলে কিংবা স্লোগানে আরণ্যক নাট্যদল সব সময় শ্রমজীবী মানুষের কথা বলে আসছে। নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্যপরিচালক মামুনুর রশীদ আরণ্যক নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা। আজ থেকে ৫০ বছর আগে সদ্য যুদ্ধ ফেরত তরুণ এই শিল্পী গড়ে তুলেছিলেন নাটকের দলটি। বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে আরণ্যকের নাটক নিয়ে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন রাজ্যবহুল ভারতসহ বহু দেশে। বাংলাদেশের নাটককার ওস্তাদ মামুনুর রশীদ নানা ঐতিহাসিক স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, অনেক সংকট পার করেছি। অনেক সংগ্রাম পার করেছি। অনেক কিছুর বিনিময়ে আজ ১ ফেব্রুয়ারি আমার এবং সবার ভালোবাসার নাটকের দল আরণ্যক ৫০ বছর পার করছে। এটা আমার জীবনের বড় ঘটনা। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের ঘটনা। কখনো ভাবিনি আরণ্যক নাট্যদলের ৫০ বছর দেখে যেতে পারব। সেই বিরল সুযোগ আমার জীবনে ঘটেছে। আমি সত্যি আনন্দিত। সবার ভালোবাসায় আরণ্যক ৫০ বছর পার করছে। সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। সারাবছর আমরা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আমরা আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসব করতে চাই। সেখানে নাট্য উৎসব ছাড়াও অনেক কিছু হবে। আমরা ৫০ বছর পূর্তির জন্য স্মরণীয় করে রাখতে চাই নাটকের ইতিহাসে, সেজন্য কিছু কাজ অবশ্যই করব। সবার ভালোবাসা নিয়েই করব। অনেক স্মৃতি, অনেক ঘটনা, অনেক কিছুই মনে পড়ে। আরণ্যক নাট্যদলের প্রথম নাটক ছিল শহীদ মুনীর চৌধুরীর 'কবর'। সেই নাটকটির প্রথম মঞ্চায়নে অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত সুভাষ দও, আলী যাকের, ইনামুল হক। এই তিন জনকে আজকের দিনে খুব করে মনে পড়ছে। আবদুল্লাহ আল মামুনের কথা মনে পড়ছে। তিনিই আরণ্যক নামটি রেখেছিলেন। মুজিব বিন হকের কথা মনে পড়ছে। তিনি এখন আমেরিকায় আছেন। নাজমুল হাসানের কথা মনে পড়ছে। অনেকের নাম মনে পড়ছে না। সব মিলিয়ে একটি বড় পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। সবার কথা স্মরণ করছি হৃদয় থেকে। তখন সদ্য দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমি কর্মহীন। কী করব ভাবছি। দেশ স্বাধীনের আগে ভেবেছিলাম; যদি স্বাধীনতা পাই দেশে ফিরে গিয়ে নাটক করব। সেই কথা মনে করে নাটকের দল প্রতিষ্ঠা করি। আমার কাছে নাটক শুধু বিনোদন নয়। নাটক হচ্ছে শ্রেণি সংগ্রামের সুতীক্ষ্ণ হাতিয়ার। মঞ্চ নাটক নিয়ে তুলনা করতে বললে বলব- আমরা মঞ্চ নাটক দিয়ে অনেক অর্জন করেছি। অনেক ভালো অবস্থানে আছি। স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের বহু অর্জন মঞ্চ নাটকে। মঞ্চ নাটক দিয়ে ভারতের কলকাতাসহ অনেক রাজ্যে শো করেছি। পৃথিবীর অনেক দেশে শো করেছি মঞ্চ নাটক দিয়ে।
এ বছর আরণ্যক নাট্যদল তাদের গৌরবময় ৫০ বছর পার করছে। এ উপলক্ষে বছরব্যাপী নানা আয়োজন হাতে নিয়েছে ইতিহাস সৃষ্টিকারী নাট্যদলটি। তারই ধারাবাহিকতায় আরণ্যক মঞ্চে এ‌নেছে নতুন প্রযোজনা ‘রাজনেত্র’। হারুন রশীদের রচনা ও নির্দেশনায় নাটকটির দ্বিতীয় মঞ্চায়ন দেখলাম আজ ১৯ আগষ্ট সন্ধ্যা সাতটায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এ নাটকের মহড়া শুরু হয়েছিল। প্রায় পাঁচ মাস মহড়া শেষে গত জুলাই মাসে পরপর দুটি কারিগরি প্রদর্শনী হয়েছে।
নাটক শে‌ষে আবার আরণ্যকের প্রধান নাট্যব্যক্তিত্ব ওস্তাদ মামুনুর রশীদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘রাজনেত্র’ তাঁদের ৬৪তম প্রযোজনা, যার গল্প সমকালীন নয়; বরং ইতিহাসের কোনো এক পর্যায়ের। অনেক বছর আগের এক রাজার গল্প। বিত্তবৈভব, ভোগবিলাস আর শাসনের ঘেরাটোপে বন্দী এক রাজা। যেখানে তিনি রাজ্যকে এক চোখে দেখেন আবার তাঁর রাজ্য ও রাজ্যের মানুষকে দেখেন অন্য চোখে। এই দুই দেখায় আকাশ-পাতাল তফাত। তবে তিনি দেখেন না বলে বলা যায়, তাঁকে দেখানো হয়। একসময় রাজা বোঝেন বটে, কিন্তু রাজ উপনেত্র তাঁকে প্রজাদের আসল অবস্থা দেখতে দেয় না। রাজা এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চান। খালি চোখে দেখতে চান রাজ্যকে, রাজ্যের মানুষকে। সভার অন্যরা রাজাকে সাবধান করে দেন, খালি চোখে প্রজাদের দেখলে রাজ্যহারা হবেন রাজা। নিরাপত্তার অজুহাতে তাঁকে রাজপ্রাসাদের বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। কার্যত বন্দী করে রাখা হয়। নাটকের একপর্যায়ে রাজাকে প্রাসাদপ্রাচীরে ব্যস্ত রাখতে চক্রান্ত করে বিশাখা নামের একজন প্রান্তিক নারীর সঙ্গে রাজার বিয়ের আয়োজন করা হয়। বিশাখা রাজাকে বুঝতে চেষ্টা করেন। রাজা যখন তাঁর কাছে জীবনের স্বাভাবিকতা দেখার আর নিজের চোখ দিয়ে প্রজাদের দেখার আকুতি জানান, রাজার প্রতি মমতার হাত বাড়িয়ে দেন বিশাখা। তাঁর হাতে হাত রেখে রাজা চলে যান প্রকৃতির কাছে, মানুষের কাছে। কিন্তু যথারীতি রাজ উপনেত্র ছাড়া রাজার জনপদে যাওয়া এবং খালি চোখে মানুষকে দেখা মেনে নেন না রাজার আমত্য ও পারিষদরা। ক্ষমতাচ্যুত করে রাজার স্থলাভিষিক্ত হন নতুন রাজা। সব মিলে নাটকের বক্তব্যটা এমন, ক্ষমতাসীনরা রাজ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কখনো স্বাভাবিক চোখে দেখে না, দেখে শাসনের উপনেত্র দিয়ে। ক্ষমতার পালাবদল হয়, কিন্তু সবার চোখে থাকে একই রাজনেত্র।
নাটকটির নির্দেশক হারুন রশীদ বলেন, আমার নাট্যচর্চার বয়স ৪৫ পেরোলেও নির্দেশক হিসেবে আমাকে শিক্ষানবিশ বলা যায়। একজন শিক্ষানবিশ পরিচালক রাজনেত্রর মতো একটি বৃহৎ আঙ্গিকের নাটক নির্দেশনা দিতে পেরেছে; কারণ, মামুনুর রশীদের মতো একজন নাট্যকার, শিল্পী ও শিক্ষক হলেন আরণ্যকের প্রাণপুরুষ।’ নির্দেশকের ভাষায়, ‘মানুষকে মানবিক বোধে উদ্দীপ্ত করতে, সাম্য ও সমতার নিশ্চয়তার জন্য স্বপ্ন দেখাতে নাটক যে কী দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে, আরণ্যক নাট্যদলে কাজ না করলে আমি তা বুঝতেই পারতাম না।

এদিকে সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে নতুন নাটকটি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে আরণ্যকের কাছে। যেখানে নবীন–প্রবীণ কর্মীদের উপস্থিতি আছে। ঐ‌তিহ‌্যবাহী আরণ্যকের সদস্যগণ রীতিমতো কোমর বেঁধে প্রস্তুতি নিচ্ছেন আরও বেশি দর্শক জনপ্রিয়তা পাওয়ার আশায় রাজনেত্র একটি বড় প্রযোজনা বটে। ঐতিহ্যবাহী আরণ্যক নাট্যদলের ৬৪তম মঞ্চনাটক রাজনেত্র এটি একটি সফল প্রযোজনা বলা যায়। তবে তারুণ্যের ভারে কিছুটা ভারাক্রান্ত টিম রাজনেত্র। রাজা ও সেনাপতির চরিত্রে দেহের ভাষার প্রতি আরও বেশি যত্নবান হওয়া জরুরি মনে করেন দর্শক সারি। আলো ও শব্দ প্রক্ষেপণে সতর্কতার অভাব লক্ষ্য করা গেছে। আরণ্যক নাট্যদল ৫০ বছর যাবৎ স্বগৌরবে আছে, থাকবে শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাসে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.