![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্লাটফর্মে রক্তমাখা কার্ড
..
এক বুক স্বপ্ন নিয়ে ট্রেনে চড়েছিলেন। সামনে নতুন জীবন। নতুন মানুষের হাতে হাত রেখে বাঁচার শুরু। ১ ডিসেম্বর বিয়ে ঠিক ছিল রুবি গুপ্তর। বাবা আর ভাইবোনেদের সঙ্গে ফিরছিলেন গ্রামের বাড়িতে। বিয়ে হওয়ার কথা ছিল ওই বাড়ি থেকেই।
রবিবার সকালে ভাঙাচোরা কামরার ফাঁকে বাবাকে খুঁজে যাচ্ছিলেন বছর কুড়ির রুবি। সঙ্গে থাকা দুই ভাই ও দুই বোনকে ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু রুবির বাবা রামপ্রসাদ গুপ্তর হদিস মেলেনি।
..
গুটিয়ে যাওয়া রেললাইনের পাশে পড়ে ছিল কয়েকটা বিয়ের কার্ড। রক্তমাখা। কার্ডে লেখা— ‘রাকেশ ওয়েডস লক্ষ্মী’। পরে জানা যায়, রাকেশ ওই ট্রেনেই ছিলেন। তিনি, তাঁর বাবা-মা— কেউ আর বেঁচে নেই।
..
১৪টা কামরার মধ্যে ১২টার থেকেই বের করে আনা হয়েছে মৃত ও আহতদের। বাকি দু’টোর মধ্যে একটা কামরা চেপে রয়েছে আর একটার ওপরে। নীচের কামরাটা প্রায় মিশে গিয়েছে মাটিতে।প্রায় ৭০০ মিটার রেললাইন যেন ইরেজার দিয়ে মুছে দিয়েছে কেউ। নীচে লাইন না পেয়ে কামরাগুলো ঘষটে ঘষটে এগিয়ে এসে একে অন্যের ঘাড়ে পড়ে তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে। তারই মধ্যে উঁকি দিচ্ছে কারও চুল। কারও হাতের নিষ্প্রাণ আঙুল।পানির বোতল। কামরার মাথায় পতপত করে উড়ছে ছেঁড়া শাড়ি।
..
বিকেল সাড়ে পাঁচটা। শীতের সন্ধেয় ধীরে ধীরে ঝাপসা হতে শুরু করেছে দৃশ্যপট। জ্বলে উঠছে হ্যালোজেন, পেট্রোম্যাক্স। আচমকা ভিড়ের মধ্যে আওয়াজ— ‘অ্যাম্বুল্যান্স কোথায়? জলদি লে আও।’ মুহূর্তের মধ্যে গোঁ-গোঁ করে ঢুকে পড়ল অ্যাম্বুল্যান্স। জানা গেল, মাটিতে মিশে যাওয়া ওই কামরা থেকে তিন জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। দু’জন বৃদ্ধ পুরুষ। এক জন মহিলা। দুই বৃদ্ধের দেহে এখনও প্রাণ রয়েছে। ধরণী দ্বিধা হওয়ার মতো নিমেষে ভাগ হয়ে গেল ভিড়। সাইরেন বাজিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ছুটে গেল কানপুরের দিকে।
সূর্য অস্ত গেল রুবির জন্য ক্ষীণ আশাটুকু জিইয়ে রেখে।
©somewhere in net ltd.