জঙ্গিবাদের স্বরূপ এবং বিস্তারঃ বাংলাদেশ পর্ব

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:১১

বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষই আজ গভীরভাবে মর্মাহত। আমাদের এই সম্প্রীতির দেশে এটা কিসের আলামত? এই প্রশ্ন সবার। দলীয় সংকীর্ণতা থেকে উঠে এসে এর স্বরূপ ও বিস্তার নিয়ে ব্যাপক গবেষণা এখন সময়ের দাবি। আপনি যদি মনে করেন ২/৩ জঙ্গি মেরে এর সমাধান হয়ে যাবে, তাহলে সেটা বোকার রাজ্যে বসবাস ছাড়া আর কিছু নয়। সমস্যাটা পূর্বের রাজনৈতিক শাসনামলেও ছিল, তাই নেহাত বর্তমানের উপর দোষারোপ কোন সুফল বয়ে আনবে না। সাম্রাজ্যবাদ বিকাশের একটা নতুন অস্ত্র হিসাবেও কিন্তু এই জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটানো হয়েছে বিভিন্ন দেশে। তাই সমস্যাটা আন্তর্জাতিক কারণেও হতে পারে। আবার হতে পারে রাজনৈতিক প্রান্তিকিকরনের কারণেও। কারণ যাই হোক, কারণ নির্ণয়ে যদি না আমরা সত্যিকার অর্থে সদিচ্ছা দেখাই তাহলে এর মাশুল দিতে হবে একটি সম্ভাবনাময় দেশ এবং দেশের মানুষদের।

ক। জঙ্গিবাদের স্বরূপ বিশ্লেষণ
রোগের ধরণ বুঝতে না পারলে সত্যিই বিপদ। এবং এই সমস্যাটা আমাদের সবার মধ্যেই কম বেশি বিরাজমান। রোগ হয়েছে, সামান্যতম দেরি সইছে না, ডাক্তারের কাছে দৌড়ে যাচ্ছেন। ডাক্তার ওষুধ না দিয়ে বললেন যান এটি ভাইরাস আপনার শরীরই যথেষ্ট এর মোকাবেলায়-দাওয়াই লাগবে না। আপনি বেরিয়ে এসে ডাক্তারের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করলেন। আরেক ডাক্তারের কাছে গিয়ে প্রেসক্রিপশন ভরে ওষুধ নিয়ে এসে খেলেন আর বললেন ডাক্তারই একটা- রোগ দৌড়ে পালাইছে। জঙ্গিবাদ যদি ভাইরাস হয় তবে এন্টিবায়োটিক দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। অথবা অন্য জীবাণুবাহিতও হতে পারে। সেক্ষেত্রে দাওয়াইয়ের ধরণ ভিন্ন হবে। ভালো ডাক্তারের মতন জঙ্গিবাদের স্বরূপ নির্ণয়ে কিছু প্রশ্ন করা খুব জরুরী

১। কারা মূলত জঙ্গি হচ্ছে?
যদি তরুণরা হয় তবে একধরনের ব্যবস্থা, যদি মাঝবয়সী কারো হয় তবে আরেকধরনের দাওয়াই। আর যদি বৃদ্ধরা হয় (যদিও এমনটি এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি) তাহলে অন্যধরনের দাওয়াই।

২। কারা মূলত জঙ্গি তৈরি করছে?
জিনিসটা কি সম্পূর্ণ নতুন নাকি অন্য কোন জায়গা থেকে এসেছে? উৎস এবং গন্তব্যের কানেক্টিভিটিকে নষ্ট করে দিতে না পারলে জঙ্গি উৎপাদন ঠেকানো যাবে না।

৩। জঙ্গি তৈরি বা এর মদত দাতাদের সাথে পুঁজিবাদের বিস্তারের কোন সম্পর্ক আছে কি ?
বহু সুবিধাবাধি গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠান আছে যারা তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে জঙ্গিবাদের আশ্রয় নেয়। তাই এই ধরণের গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে নজরদারি বাড়াতে হবে।

৪। রাজনৈতিক প্রান্তিকিকরন বিদ্যমান কিনা?
রাজনৈতিকভাবে কাউকে নিষিদ্ধ করে দিলে জঙ্গিরা তাদের উপর খুব সহজেই ভর করে তাদেরকে ব্যাবহার করতে পারে। তাই সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা জঙ্গিবাদের উত্থানকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে সক্ষম।

খ। জঙ্গিবাদের বিস্তার
রাষ্ট্রের গুটিকয়েক লোক জঙ্গি হয়ে যাওয়া মানে কিন্তু জঙ্গিরাষ্ট্র নয়। তাহলে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, আমেরিকাও জঙ্গিরাস্ট্র কেননা এসব দেশের নাগরিকরা যেমন বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে জড়িত ঠিক একইভাবে নিজেদের দেশগুলাতেও এরা জঙ্গি হামলা চালাচ্ছে। তাই বাংলাদেশ কোন জঙ্গি রাষ্ট্র নয়- এই বিষয়টিতে আমাদের মাথায় রাখতে হবে। তানাহলে স্বার্থান্বেষী দেশগুলোর লোলুপ আগ্রাসন থেকে আমরা বাঁচতে পারবো না। তাই জঙ্গিবাদের বিস্তাররোধে নীতিনির্ধারণে যে বিষয়গুলা ভেবে দেখা দরকার সেগুলো হতে পারে এইরকম-

১। দুর্বল গণতন্ত্র কিনা?
যেসব দেশগুলাতে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছে, তার সবগুলাতেই দুর্বল গণতন্ত্র বিদ্যমান ছিল। কিন্তু প্রকট ছিল স্বৈরতন্ত্র। তাই গণতন্ত্রকে সবল জায়গায় না নিয়ে আসলে জঙ্গিবাদের উত্থান ও বিস্তারকে দমিত করা যাবে না।

২। ধর্মান্ধতা আছে কিনা?
ধর্মের প্রতি অজ্ঞতা থেকে তৈরি হয়, ধর্মান্ধতা। তাই ধর্মান্ধতাকে দূরীকরণে কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে জঙ্গিরা সহজেই এই ধর্মান্ধ মানুষগুলাকে ব্যবহার করবে।

৩। ক্ষমতা বা সম্পদের বণ্টন সুষম কিনা?
ক্ষমতা বা সম্পদ যদি গুটিকয়েক মানুষের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে, তবে তারা তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য নিজস্ব জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ´রুল এন্ড ডিভাইড´কে সক্রিয় রাখতে জঙ্গিবাদকে পুঁজি হিসাবে ব্যবহার করতে পারে। মূলত এরাই প্রকৃত জঙ্গি- এরাই কখনো শক্তি, কখনো ভীতি বা কখনও বা ধর্মকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে।

তাই জঙ্গিবাদের স্বরূপ এবং বিস্তার বুঝে দ্রুত কার্যকরী ভূমিকা নিতে সংশ্লিষ্ট হবেন এটাই আমাদের কামনার বিষয়। আর ব্যক্তিগত বা সামাজিক পর্যায়ে সচেতনতা এবং কাজের মাধ্যমে উপরের সংক্রমণ থেকে দূরে থাকার প্রত্যয় করি।

০ টি +০/-০