নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কখনও আমি অথবা আমার মন অথবা আমরা দুজন মিলে অনুসন্ধান করে বেড়াই সত্য ও সুন্দরের; যা শুধু গুটিকয় মানুষের স্বার্থের জন্য নয়, বরঞ্চ এই সমগ্র মানবতার জন্য।

আবীরের ঘোড়া

আবীরের ঘোড়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

হুযুররে বইলা দিছি, জানা নয় মানার নামই ইসলাম!!!

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৫:২৯



সেদিন জুম্মাবার, হঠাত করে মনে হলো আজ আমি সবার আগে মসজিদে যাব। বয়স তখন ১০, ক্লাস ফাইভে পড়ি। ক্লাসের ফার্স্ট বয়। তাই জুম্মাবারেও ফার্স্ট হবার খায়েশ জন্মাল। সকাল সকাল ইস্ত্রি করা পাঞ্জাবি আর সুগন্ধি মেখে দিলাম ছুট। যাইয়া দেখি তখনও মসজিদের দরজা-ই খোলা হয় নাই। আমারে দেখে মুয়াজ্জিন সাহেব বলল, "কি মিয়া এতো সক্কাল বেলা কি মনে কইরা?" আমি আসল কথা মনে চাপা রেখে বললাম,´ না, হুজুরই তো বলছে আগে আসলে বহুত সওয়াব!´ তালা খোলা মাত্রই সামনের লাইনের এক্কেবারে মাঝখানে গিয়ে বসলাম। আজান দেয়া শেষ হলে নামাজ পড়া শুরু করে দিলাম। কিসের নামাজ যে পরতাছি অতো কিছু জানি না। খালি পড়ছি তো পড়ছিই। বড় হুজুর ও আসলো, এসে সামনে আমাকে দেখে আমার দিকে বাঁকা চোখে চাইলো। মনে হয় আমার কাছ থেকে একটা সালাম আশা করছিল। আমিও বুঝতে পেরেই দিয়া দিলাম সালাম। সেও খুব ভাবের সাথে উত্তর দিলো ওয়ালাইকুম আসসালাম। কিছুক্ষণপর এলাকার মেম্বার আর গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আসলো। পেছনের এত্তগুলা মানুষ ডিঙাইয়া যখন প্রথম সারিতে এসে হাযির হইলো, তখন আমারে দেখে একটা ঝাড়ি। বলল, "কি মুয়াজ্জিন সাব, বাচ্চা পোলাপান সামনে ক্যান?" আমারে অন্যান্য মুরুব্বিরা কইলো, যাও পেছনে গিয়া বসো। সামনের মেম্বার আর সুদখোর আলম সাহেবরে দেখে হুজুরও সালাম দিয়া উঠলো। এরপর হুজুর আরবিতে কী কী বলল তার কিছু বুঝতে না পারলেও, এখনও মনে মনে দ্বিতীয় সারিতে বসতে পারার আনন্দতেই চুপচাপ শুনে যাওয়ার ভাব ধরে আছি। খুৎবা প্রায় শেষের দিকে, হঠাত করে মোটা মতন এক লোক এসে আমারে উঠায় দিয়ে বলল, বাচ্চা পোলাপান পিছনে যাও। ততক্ষণে পেছনটাও কানায় কানায় পূর্ণ। আমার পরে এসে যারা শেষের সারিগুলাতে ছিল আমি তাদের সাথেও বসতে পারলাম না। আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল, শেষমেশ আধা চট আর আধা মাটিতে নামাজ পড়ে, কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে এলাম।

বাবার কাছে বললে বাবা বললেন, "এইটা ঠিক হয়নি। আমাদের রাসুল সবসময়ই বাচ্চাদেরকে মসজিদে যাবার ব্যপারে বেশ উৎসাহ দিতেন। এবং কাউকে ডিঙিয়ে সামনের সারিতে বসার কোন রেওয়াজও ছিল না।" আমি বাবাকে বললাম, "কিন্তু আমাকে তো হুজুরের সামনে থেকেই উঠিয়ে দিলো উনি তো কিছু বললেন না?" বাবা তখন বললেন, "হুজুর হয়তো চাকরি হারানোর ভয়ে প্রতিবাদ করেন নি।" সেদিন থেকে আমি হুজুরের উপর ভীষণ রাগ। এতো কিছু জানার পরও উনি কিছু বললেন না! আমি ভাবলাম একদিন হুজুরকে শিক্ষা দিবো। একদিন হুজুরের সাথে দেখা, উনাকে বললাম হুজুর দাঁড়ান। হুজুর দাঁড়ালো। দাঁড়ানোর পর থেকেই উনি খুসখুস কাশি দিয়ে কিছু বুঝাতে চাইছিলেন। আমি বুঝতে পেরে বললাম, আসসালামু আলাইকুম। হুজুর উত্তর দিলেন। আমি বললাম, হুজুর ঐদিন আপনি কিছু বললেন না কেন যখন আমাকে সামনের সারি থেকে উঠিয়ে দেয়া হলো। হুজুর বললেন, "উনারা তো ম্যানেজিং কমিটির সদস্য তাই ভয় করছিলো।" "আচ্ছা হুজুর আমাদের মহানবী (স) ছোটদের সাথে দেখা হলে কী করতেন?" হুজুর বড়বড় করে বলতে শুরু করলেন, "প্রথমেই সালাম দিতেন, এরপর...... " আমি বললাম, "হুজুর আমি কি ছোট?" হুযুর বললেন, "আলবত তুমি ছোট।" তখন আমি বললাম, "তাহলে তো আপনিই আমাকে আগে সালাম দেবার কথা!" হুজুর যেন আসমান থেকে পড়লেন! "আমাকে সালাম দিতেও কি আপনার ভয়? শয়তান ইবলিশের চাইতে বেশি জানা লোক এই দুনিয়ার কোন হুজুরই না, কিন্তু তাই বইলা সে কিন্তু সবচেয়ে বড় মুসলমান না। সে মানে না বলেই শয়তান উপাধি পাইছে। মানুষ ছোট হইলেও একটা জিনিস বুইঝা গেছি, জানা নয় মানার নামই ইসলাম।"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.