![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কামালের ধারণা সিগারেট জিনিসটা খারাপ। তাই খারাপকে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেবার জন্যই তার যত আয়োজন। এই আয়োজনে সে চেষ্টা করে তার অন্য সব কলিগদেরও শামিল করতে। ব্যক্তি থেকে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলবার একটা প্রাণান্তকর চেষ্টা। এই মুহূর্তে তারা একসাথে বাতাস টানছে। যারা একই আন্দোলনের কর্মী তাদের সাথে সদ্ভাব থাকাটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি এই টানতে আসা সহকর্মীদের মধ্যেও এক অন্য ধরনের টান, সেইটা সহজেই আঁচ করতে পারে অফিসের অন্যসব না-টানা কলিগেরা। আজ তাদের বক্তব্যের বিষয় টান। যাদের বিয়ের সংসার ৫ বছরের অধিক তারা নাকি তাদের স্ত্রীদের ব্যাপারে তেমন একটা টান অনুভব করছে না। সুনির্দিষ্ট কারণ না থাকলেও সংসারে নাকি সবসময়ই একটা টানাটানি থাকে তাদের। আর এর কারণেই হয়তো টানটান উত্তেজনায় গড়ে উঠা সংসারে নিত্য টানাটানির কারণে ইলাস্টিসিটি বেড়ে গিয়ে আগের মতন সম্পর্কটা আর সটান নাই-এইটা কামালের বিশ্লেষণ। কামালের এই বিশ্লেষণে একটা যুক্তির পক্বতা আছে। এইজন্য অন্য সহকর্মীরাও তাকে খুব সমীহ করে। এইসময় বয়োজ্যেষ্ঠ সহকর্মী হাসান বলে উঠলো, বউকে সেদিন বললাম
- এইবার কোথাও ঘুরতে গেলে তোমাদেরকে টানতে পারবো না। এরপরের সবই ইতিহাস।
মানে? বলে সবাই চেঁচিয়ে উঠলো। অবিবাহিতদের আগ্রহটা একটু বেশি। তাই তাদের শব্দটা একটু জোরেই এলো।
হাসান আবার শুরু করল। শায়লা বললো
-হুম আমাদের নিয়ে তো তুমি টানতে টানতে শেষ। তুমি এতো বড় কথা বলতে পারলে আমি কি কিছুই করি না? ছোটলোক কোথাকার। একটু লাগেজটা ধরো, তাই এতো বড় কথা। আমি আর কখনই তোমার সাথে কোথাও যাবো না। আমাদেরকে তোমার বোঝা মনে হয়। ঠিক আছে আমরা আর বোঝা হতে চাইনা তোমার।
হাসান সাহেব ভেবেছিলেন, টানার কথাটা বলে এইবার বউকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাবলম্বী করে তুলবেন। খোঁচানোর কোন নিমিত্ত ছিল না তার। কিন্তু শব্দটাকে শায়লা পুরোই অন্যভাবে নিয়েছে। সেই কথার যের ধরে আজ সপ্তাহখানেক হলো তাদের মধ্যে কোন কথাবার্তা নেই।
সিগারেট টানার বিরতি শেষ। তাই হাসান সাহেবের কাছ থেকে আর বিস্তারিত শোনা গেলো না, বর্তমানে সম্পর্কের টানাটানিটা কোথায় এসে ঠেকল।
কামাল অফিস শেষে বাড়ি ফেরার পথে গাড়ির জানলা দিয়ে তাকিয়ে আছে দূরের নৌকার দিকে। নদীর পার ধরে একজন গুন টেনে মালবোঝাই নৌকাটাকে নিয়ে যাচ্ছে হয়তো কোন গন্তব্যে। যে বৈঠা হাতে সেও হয়তো ভাবছে কতোই বা আর টানবে বেচারা! অথবা গন্তব্যটাই আসল। শব্দকেও হয়তো আমরা ধারণ করি আমাদের পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে। তবে কি আমি যা বলি অন্যে সেটাকে সেই অর্থে বুঝে না। অথবা অন্যে যা বলে আমিও সেইটাকে তার মতন করে ধারণ করতে পারি না। আর বেশি কিছু চিন্তা করতে পারছেনা কামাল। হঠাৎ ড্রাইভার বলল,
-স্যার, নামবেন না? আইসা পড়ছি। বড় সাহেব টানবাজারে গেছে, উনারে নিয়া আসতে হইব ৭টার মধ্যে। এখন টাইনা না গেলে বড় সাবের ঝাড়ি খাইতে হইব।
গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে, কামাল ড্রাইভারকে ডেকে বলল,
-ফেরদৌস, আগে জীবন, তাই গাড়িটা সাবধানে টেনো!
কামালের হাতটা এর মধ্যেই চলে গিয়েছে সিগারেটের খাপে। একটা বের করতে গিয়ে মনে হলো, না আজ আর কিছু টানবে না।
©somewhere in net ltd.