নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কখনও আমি অথবা আমার মন অথবা আমরা দুজন মিলে অনুসন্ধান করে বেড়াই সত্য ও সুন্দরের; যা শুধু গুটিকয় মানুষের স্বার্থের জন্য নয়, বরঞ্চ এই সমগ্র মানবতার জন্য।

আবীরের ঘোড়া

আবীরের ঘোড়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

অলৌকিক

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:৪২

এক বৃদ্ধকে ২৫ বছর বয়সী এক যুবক নিয়মিত প্রহার করে ফেলে রাখতো পাশের রাস্তায়। বৃদ্ধ তার ধূলিমলিন জামা মুছতে মুছতে বাড়ির ভেতর ঢুকে যেত। কোন কান্নার শব্দ শুনতে পেত না কেউ কখনও। বৃদ্ধের বয়স ৮০ এর উপর হবে। এখনও শুভ্র ধবধবে ঝাঁকড়া চুল। কারণ জিজ্ঞেস করলে পথচারীদের কিছু না বলে, একটা ছোট্ট হাসি দিয়ে খুব সাবধানে দেয়াল ধরে ধরে বাড়ির প্রবেশদ্বার দিয়ে ভেতরে ঢুকে যান। বৃদ্ধকে গত এক বছরে তার ছেলে কোন খাবার দেয়নি, প্রতিবেশীদেরও ছেলে বারণ করে দিয়েছে। ঝামেলা এড়ানোর ভয়ে কেউ খাবার নিয়ে আসে না। কিন্তু বৃদ্ধ দিব্যি বেঁচে আছে। ছেলে জিজ্ঞেস করলে বৃদ্ধ বলে, সে এসবের কিছু জানে না। খুব খিদেয় ঘুমিয়ে পড়লে, ঘুম থেকে উঠে দেখে তার পেট ভরা। ছেলে তাঁর এসব কথায় বিশ্বাস করে না। ছেলে আবার জিজ্ঞেস করে, এবারও একই উত্তর। ছেলে তখন তাকে প্রহার করতে করতে রাস্তায় ফেলে দেবার আগ পর্যন্ত নিস্তার দেয় না। ছেলে কয়েকবার গলা টিপে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে কিন্তু কাজ হয়নি। আশেপাশের সমবয়সী কোন বৃদ্ধ আর বেঁচে নেই, কিন্তু এই বৃদ্ধ কিছুতেই মরছে না। তাঁর ওপর এতো প্রহার। বিষয়টা সবার কাছেই কেমন যেন একটা জমাট বাঁধা বিস্ময়ের তৈরি করেছে। বৃদ্ধকে স্বপ্নে এসে কেউ একজন বলে গেছে ছেলে তাঁকে যতদিন পেটাবে, ততদিন তাঁর আয়ু বেড়ে যাবে। বুড়ো এই কথা তাঁর ছেলেকে বলতে চেয়েও বলতে পারে না। কেননা, বললেই সেদিনই তাঁর ছেলের মৃত্যু ঘটবে বলে সতর্ক করে গেছে স্বপ্নের সেই একজন। ছেলের মৃত্যু চাইতে পারে না, আবার ছেলেকে তাঁর উপর কঠোর হওয়া থেকে থামাতেও পারে না। অগত্যা প্রহার হজম করতে হয়, প্রহারে প্রহারে বেহুঁশ হবার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত খুব কাতরান উনি। হুঁশ ফিরলে আর কোন ব্যথা অনুভব করেন না। বৃদ্ধকে তাঁর ছেলে ঘৃণা করে, সে চায় বৃদ্ধ মরলে বাড়িটা সে বিক্রি করে দিয়ে শহরে একটা ফ্ল্যাট কিনে বিয়ে করবে। কিন্তু বৃদ্ধ না মরায় তাঁর স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না।

খুব কম দামে একটা ফ্ল্যাট পাওয়া যাচ্ছে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন এসেছে। তাই আজ ছেলে আর কোন মতেই নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, প্রথম থেকেই কাঠের চলা দিয়ে পেটানো শুরু করেছে। কেটে রক্ত বেরিয়ে আসছে কয়েক জায়গা থেকে, বৃদ্ধ খুব অনুনয় বিনয় করে বলছে আমাকে আর মারিস না বাবা তোর অনেক কষ্ট হচ্ছে। এই কথা শুনে সে বেহুঁশ হবার আগে হয়তো বলে দিয়েছিলো তাঁকে যত মারা হবে সে ততদিন বেশি বাঁচবে। হুঁশ ফিরে এসে বৃদ্ধ বাড়ির ভেতর আসতেই দেখে দুয়ারে পড়ে আছে তাঁর একমাত্র সন্তান। বৃদ্ধের এই প্রথমবারের কান্না শুনে প্রতিবেশীরা এসে ভিড় করলো। ছেলের এই মৃত্যু দেখে বাবা, বাবা করে বৃদ্ধ যেন অস্থির হয়ে উঠছে। আকাশের দিকে নিঃপলক দৃষ্টি কিন্তু চোখ বেয়ে শুধু অশ্রুর ধারা। সে তাঁর সন্তানকে প্রতিদিন দেখতে পারবে না। এমনকি দেখতে পারবে না কোনদিন। আরও এক বছর বেঁচে থাকতে হবে ছেলেকে না দেখে।

লাশ দাফন হয়ে গেছে, বৃদ্ধ বসে আছে কবরের পাশে। এক আলো পূর্ণিমায় মেঘের ছায়া পড়লো কবরের উপর। বৃদ্ধ কেবল ভাবছে কিছু উত্তর না জানলে খুব কি ক্ষতি!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.