![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি হলাম তারকাঁটা, নই রক্তজবা ফুল //// আমি সেই পথের মাঝে, তুই করবি যেথায় ভুল।।
আমার বাবা ছিলেন আমার চোখে দেখা সব থেকে সাধারণ মানুষ। ভর্তি পরীক্ষার সময় তার সাহায্য না পেলে হয়ত আমি সুইসাইডই করতাম। তিনিই আমার জীবনের সব থেকে আপন মানুষ। আর আজ তাকে ছাড়াই আমাকে চলতে হয়, পাড়ি দিতে হয় হাজার মাইল পথ। আজও আমার সকল ভালবাসা তাকে ঘিরেই।
২৫ শে অক্টবর, ২০১০
“মেডিকেল এ চান্স পাস নাই তো কি হইছে, বাসায় চলে আয়। ভার্সিটিতে পরীক্ষা দে। এতো চিন্তার কি আছে” বলেছিলেন আমার বাবা। সময় অনুযায়ী কথাটা মোটেও সহজ কোনো কথা ছিল না। ছোট বেলা থেকেই কেন জানি বাবাকেই আমার কাছে সব থেকে আপন মনে হতো। বাসায় থাকতে আমায় একটু পড়তে দেখলেই বাবা দমক দিয়ে বলতো একটু বাইরের বাতাস শরীরে লাগা। নয়তো একদিন পাগল হয়ে যাবি।
প্রতিদিন দুপুরে বাবার বাজার থেকে ফেরার সময় আমার জন্যে মুখোরচক খাবার আনা আর তা খেয়ে বাবার আঙ্গুল ধরে লাফাতে লাফাতে খালে স্নান করতে যাওয়াটা মোটামুটি রুটিনের মতোই ছিল। ক্লাস টেন পর্যন্ত এর ব্যাতিক্রম হয়নি। এসএসসি আর এইসএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়ার পর বাবা শুধু আমায় একটি কথাই বলেছিল, আর তা হল ‘আমি জানতাম’। সে আসলে কি জানতো এটাই বুঝতাম না।
২৫ মে ২০১১, রাত ২ টা ১৫ মিনিট
বাসা থেকে দাদা কল করে আমায় বলল বাবা ভাল নেই তুই তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আয়। দাদার ম্যানেজ করে দেয়া এম্বুলেন্স আর ক্যাম্পাস এর আপনজনদের সহযোগিতায় সকাল ৫ টার দিকে বাসায় পৌছে দেখলাম বাড়ির বাইরে একটা এম্বুলেন্স দাড়া করানো। ভাবছিলাম বাবাকে এখনি মনে হয় ঢাকায় কোন হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হবে তাই আমিও মেনটালি প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।
তাড়াতাড়ি বাসার ভিতরে যেয়ে দেখলাম জনবহূল বাড়িটায় নিরবতা আকরে ধরে আছে। ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখি কে যেন শুয়ে আছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই মা আমায় জড়িয়ে ধরে কি বলছিল, বুজছিলাম না। শুধু মাকে বলছিলাম চিন্তা করোনা মা, বাবা “সুস্হ” হয়ে যাবে।
বাবার পাসে বসে বাবার হাত আমার গালে লাগালাম। যে বাবা আমি বাসায় আসলে আনন্দে আত্নহারা হয়ে যেত সে আমায় কিছুই বলছে না। আমার চরম রাগ লাগতেছিল। বাবা এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে ভাবতেই পারি নাই। বাবার মাথার উপর থেকে কাপড় সরিয়ে দেখলাম বাবা ঘুমাচ্ছে। আমি বড় হয়ে গেছি ভেবেই হয়তো বাবা আমায় রেখে ঘুমিয়ে গেছে। তাকে ডেকেও আমি উঠাতে পারছি না। একটা মানুষ কিভাবে এতো নিষ্ঠুর হতে পারে ভেবে পাচ্ছি না। আমায় রেখে কিভাবে সে ঘুমাতে পারে। বাবারা কেন এতো নিষ্ঠুর হয়, কেন? আমি কি সত্যি তার কাছে বড় হয়ে গেছি? কিন্তু আমি তো সেটা হতে চাইনি, বলিওনি। তবে কি তার চিরতরের ঘুম আমায় নির্ঘুম রেখে সুখ খুজে নিল তার কোন আপন ঘরে???
আমার চোঁখ সেদিন এক ফোটা জলও ফেলেনি। নিরর্থক জল, বাবার আমায় ছেড়ে চলে যাওয়াকে অর্থবহ করেছিল আর আমায় করেছিল নিষ্ঠুর পাথর। কান্না সেদিন জিতে হার মানিয়েছিল আমার হাসিকে। “বাবার ভালবাসাকে কান্নায় ধুয়ে দেই নাই, যত্ন করে রেখেছি ভবিষ্যৎ এর কান্নার জন্যে”।
বাবার দেয়া কষ্ট আজ কষ্টি পাথর হয়ে বাসা বেধেছে আমার বুকের মাঝে আর বাকি কষ্ট গুলো নিরর্থক হয়ে পথ খুজে নিয়েছে জানালার ফাঁকে। আমার এই কষ্টের কাছে বাকি সব কষ্টই পরাজিত।
এপারের দায়িত্ব আর বাধা আমায় ওপারে যেতে দেয় না। বাবার মৃত্যুর পর যতবার চোখের জল ফেলেছি সবটাই বাবার জন্যে। অনেক হাসি আনন্দের মাঝেও বুকের ক্ষতটা যে কষ্ট দেয় তা শেষ হয় নিরব কান্নায়। এই হারানো যে, কেন ফেরানো যায় না। মাঝে মাঝে সৃষ্টিকর্তার উপর খুব রাগ হয়। এপারের আপন মানুষ গুলোকে তিনি কেড়ে নিয়ে নিজের আপন করে নেন আর এপারের মানুষ গুলোকে ভাসিয়ে দেন কান্নার সাগরে।
নিরব অশ্রু যখন আয়না হয় তখন প্রতিবিম্বটাকে অস্বচ্ছই লাগে। বাবার প্রতি নিরব ক্ষোভই আজ কাদায় আমায়। তার প্রতি অন্ধ ভালবাসাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে আমার জীবনে। আজও সপ্ন দেখে আঁতকে উঠতে হয় আমায়। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, মাসের পর মাস আর বছরের পর বছর বাবার সাথে আমার লাখো স্মৃতি আজ পথ খুজে নেয় আমার ডায়রির পাতায়।
গত ২৫ মে ২০১৫ এ ছিল বাবার চতুর্থ মৃত্যু বার্ষিকি। বছর বছর তার এই দিনটি যত বাড়ছে, আমার তাকে কাছে পাওয়ার দিন তত কমছে। I’m just waiting to catch his hand again and again……
©somewhere in net ltd.