নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ। আমার ইচ্ছে করে একটা সুন্দর স্বপ্নের বাংলাদেশের ছবি আঁকতে, পাখির মতো উড়তে আবার কখনও রেলস্টেশনের মেঝেতে শুয়ে থাকা মানুষটি হতে। কখনও ইচ্ছে করে কোন যুদ্ধ বিদ্ধস্ত নগরীতে শান্তির যোদ্ধা হতে। ভাল লাগে একা থাকতে।

অভিরাম কর্মকার

আমি হলাম তারকাঁটা, নই রক্তজবা ফুল //// আমি সেই পথের মাঝে, তুই করবি যেথায় ভুল।।

অভিরাম কর্মকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

“ধর্ম, বিজ্ঞান আর কিছু প্রশ্ন”

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:২২

বিজ্ঞান আধুনিকতার সাথে সাথে দিয়েছে হিংস্রতা, হিংসা, বিদ্বেষ, মারামারি, কাটাকাটি আর ধীর্ঘায়ুকে করেছে স্বল্পায়ু। আধুনিক বিজ্ঞান দুই মিনিটের শান্তির সাথে দিয়েছে দুই ঘন্টার অশান্তি। পাশাপাশি মানব জীবনকে করেছে আতংকগ্রস্ত। অল্প সার্থের জন্যেও মানুষ একজন আরেকজনকে হত্যা করতেও ধিদ্বাবোধ করে না। তবে এটাই কি বিজ্ঞান এর চাওয়া, এখানেই কি বিজ্ঞান এর সাফল্য, নাকি আমরাই ভুল পথে হাটছি?

অন্ধ ধর্মীয় চেতনা আর কুসংস্কার মানব জীবনের বাকি অংশটাকেও করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। নাস্তিকতা আর আস্তিকতার যাতাকলে আজ বিলুপ্তির পথে শান্তি নামক শব্দটি। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় এই দুনিয়াতে আমাদের উদ্দেশ্য কি? শান্তি নাকি অশান্তি? ধর্মীয় চেতনা আর বিজ্ঞান কোনটিকে স্থায়ী রূপ দিচ্ছে আর কেড়ে নিচ্ছে কোনটি? নাকি যে কোন একটির (বিজ্ঞান/ধর্ম) বিলুপ্তি দরকার এই শান্তির স্থায়ী রূপের জন্যে?

আদিমকালে না ছিল বিজ্ঞান এর এতো ঝংকার না ছিল ধর্মীয় বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে কারও ব্যবসা করার ধান্দা। তখন মানুষ এতটা হিংস্র ছিল না। তবুও তারা বর্তমান সময়ের তুলনায় অনেক শান্তিতে থাকতো। অল্প স্বার্থের জন্যে একজন আরেকজনকে হত্যা করতো না। ধীর্ঘায়ু জীবন যাপন করতে পারত। বর্তমান সময়ের মানুষদের মতো এতো হতাশায় জীবন পার করতো না।

আদিমকালে মানুষের যে কাজটি করতে দিন রাত পার হয়ে যেতো সেই কাজ এখন আমরা মুহূর্তের মাঝেই শেষ করতে পারি। এই ধ্বংসাত্নক বিজ্ঞান এর সাহায্যেই। অল্প সময়ের মাঝে দিনের সব কাজ শেষ করে যার যার ধর্ম পালনেও মন দিতে পারি। পৃথিবীতে চার হাজারেরও বেশী ধর্ম আছে। আবার আধুনিক বিজ্ঞানেও ছেঁয়ে গেছে চারদিক। সেই অনুযায়ী বর্তমান পৃথিবী হওয়া উচিত পরকালের স্বর্গ। কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় তা হচ্ছে না। তাহলে দোষটা কার? বিজ্ঞান, ধর্ম নাকি মানুষের?

মানুষ সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ট জীব। তাদের সবকিছু নিজেদের আয়ত্বে নেয়ার ক্ষমতা আছে। পৃথিবীর সবকিছু গড়ে উঠেছে মানুষের দ্বারা আর মানুষের জন্যেই। এতো হানাহানি আর মারামারি বাদ নিয়ে ধর্মীয় চেতনা আর বিজ্ঞান এর সফলতাকে কাজে লাগিয়ে সুন্দর একটা পৃথিবী গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। ভুল পথে পা দিয়েই আমরা করে ফেলি ভুল। নিজের স্বার্থের জন্যে আমরা একটুও ছাড় দিতে রাজী নই। আর তাই ধীরে ধীরে পৃথিবী আমাদের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। সময় এখনি সামনে তাকানোর।

অনেকের মাঝেই রয়েছে ধর্মীয় গোড়ামী। যারা সময়ের ব্যবধানে মানুষ হত্যার মতো কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করে না। মানুষে মানুষে এই হানাহানি, মারামারি, একজন আরেকজনকে হঠিয়ে উপরে উঠার প্রবনতা, অন্যের সম্পত্তি দখল করা, অন্যের টাকা মেরে নিজে ধনী হওয়া, মানুষের দিকে কূ-দৃষ্টি দেওয়া, সুদ গ্রহন, ঘুষ, যৌতুক নেওয়া, খাদ্যে ভেজাল দেওয়া, মানুষকে ঠকানো ইত্যাদি কাজ বন্ধ করা সম্ভব শুধু মাত্র মানুষের মনে ভয়ের সঞ্চার করে। আর এর একমাত্র সমাধান সম্ভব শুধুমাত্র সঠিকভাবে ধর্মীয় পথে চললে। মনে পরকালের ভয় থাকলে। সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস থাকলে। আর এই বিশ্বাস যদি মানুষ হারিয়ে ফেলে তাহলে কোনদিনই এই দুনিয়াতে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আর যারা এই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে তাদেরকেই আমরা বলি নাস্তিক। উপরের আলোচনা এটাই প্রমান করে যে ধর্মীয় ভয় থাকলে, সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস থাকলে মানুষ যেমন আস্তিক হয় তেমনি উপরের খারাপ কাজগুলোও করতে পারে না।

বাংলাদেশের পেক্ষাপটে এবার আলোচনায় আসি। ৯২% মুসলিম জনসংখ্যা (প্রায় ১৪ কোটি ৭২ লক্ষ) নিয়ে গঠিত আমাদের এই দেশ। এই দেশে এখন নাস্তিক ট্যাগ দিয়ে ব্লগার হত্যাকান্ড একটা মামুলি বিষয়। নাস্তিকরা যারা মানুষের ধর্মীয় অনুভুতিতে (আমাদের দেশের পেক্ষাপটে ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের) আঘাত করে তারা অবশ্যই খারাপ কাজ করে। প্রশ্ন থেকে যায় এই ৫০-৬০ জন নাস্তিক কি করে এই ১৪ কোটি মানুষের ধর্মীয় অনুভুতি ধ্বংস করে দিতে পারে? আর যদি পারেও তাহলে এই ১৪ কোটি মানুষের ধর্মীয় অনুভুতি কতটা মজবুত সেটাও প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়, চ্যালেঞ্জেরও। আর তাদেরকে মেরে ফেলাও নাকি জায়েজ। তাহলে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে যে বিখ্যাত হুজুররা হিন্দুধর্ম সহ বাকি ধর্ম নিয়ে, আঘাত দিয়ে কথা বলেন তাদের বিচার কি হওয়া উচিত নয়? নাকি এরা সংখ্যালঘু বলে সমস্যা নাই? নাকি এদের ছোটজাত বলাটা ইসলাম ধর্মে আছে? নাকি এদেরও একই কায়দায় হত্যা করা উচিত? আর যদি করে তাহলে কি সংখ্যালঘুরা থাকতে পারবে এই দেশে? নাকি জোর যার মুল্লুক তার? মানুষকে মেরে ফেলার মাধ্যমে সুস্থতা বয়ে আনা সম্ভব নয়। তাতে হিংসা বিদ্বেষ কমবে না বরং বাড়বে। একমাত্র মানুষকে ভালবাসার মাধ্যমেই সঠিক পথে নিয়ে আসা সম্ভব।

মানুষ যতো খারাপ কাজই করুক তাকে হত্যা করা কোন ভাবেই গ্রহনযোগ্য না। আইনের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই শুধুমাত্র তাদের বিচার হওয়া উচিত। অন্যথায় ধর্মকে সঠিক পথে চালনা করা সম্ভব হবে না।

ফিরে আসি আগের আলোচনায়- ধর্মের সৃষ্টি মানুষের কল্যানের জন্যে, ধ্বংসের জন্যে নয়। বিজ্ঞানের ভয়াবহতা যেমন খারাপ তেমনি ধর্মীয় কুসংস্কার আর ধর্মীয় অন্ধ অনুকরন একই রকমের ভয়াবহতা বয়ে নিয়ে আসে। মানুষকে ধর্মের মাধ্যমে ব্রেইন ওয়াশ করে মানুষ হত্যায় লিপ্ত করলে তা ধর্মের জন্যে ভাল না হয়ে খারাপই হবে। তাই বিজ্ঞানের আধুনিকতাকে মাথায় রেখে, আধুনিক শিক্ষায় মনোনিবেশ করে ধর্মীয় দিক মেনে চললে তা ধর্মের ভিত্তিটাকে মজবুত করার পাশাপাশি মানুষের মনেও একটা গ্রহনযোগ্য অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হবে। আর খুন-হত্যা ধর্মের উল্টো পথে হাটতে মানুষকে উৎসাহিত করবে।

বর্তমান সময়ের একের পর এক এই ব্লগার হত্যাকান্ড কোন ধর্মীয় ভাবধারাকে উজ্জল করতে পারে না। বরং তা কোন বৃহৎ পরিকল্পনারই অংশ বিশেষ। যা হয়তো অদূর ভবিষ্যতে এই সোনার বাংলাদেশকে ১০০% মুসলিমের দেশ হিসেবে ঘোষনার পাশাপাশি কোন ধ্বংসস্তুপে পরিনত করবে। পৃথিবীর অধিকাংশ সাম্প্রদায়িক দেশগুলোই তার প্রমান বহন করে। আর যদি মানুষ হত্যা করলেই পরকালের স্বর্গের চাবি পাওয়া যেতো তাহলে এইসব হত্যাকান্ড পরিকল্পনাকারীরা নিজেরা হত্যা না করে তাদের শিষ্যদের দিয়ে করাতো না। কারন পরকালের স্বর্গের সোনার চাবি কেউ হারাতে চাইবে না।

একটা গল্প বলি- কলকাতার একটা বাংলা সিনেমা দেখেছিলাম যেখানে নায়ক, নায়িকা ভেবে ভুল করে ভিলেনের বউয়ের ছবি তুলে আর এই জন্যে ভিলেন নায়ককে বাজারে সবার সামনে ডেকে এনে বিচার করে বিষয়টা দামাচাপা দিতে। বিষয়টা বর্তমান সময়ের বাংলাদেশ আলকায়দা শাখার কার্যকর্মের মতো। কথিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) অনন্ত বিজয় দাস, অভিজিত রায়, রাজিব হায়দার শোভন (থাবা বাবা), নীলয় নীল সহ যাদেরকে নাস্তিকতার দায়ে হত্যা করে অধিকাংশ মানুষকে তাদের লেখা পড়তে সহযোগীতা করেছে তা কখনই ইসলাম ধর্মের জন্যে ভাল ফল বয়ে আনবে না। কারণ আমার মতো যারা এদেরকে চিনতো না তারাও আজ চিনে গেল। হয়তো তাদের মাঝেও কেউ কেউ এইসব বিষয়ে উৎসাহিত হয়ে যাবে। হয়তবা একটা নাস্তিকের লাশের পরিবর্তে দুইটা নাস্তিক বেড়ে যাবে। তখন কি হবে? মানুষ শান্তি চায়, শান্তির দিকে চলতে চায়। কোন ধ্বংসস্তুপে গড়া দালানে নয়।

পরিশেষে- সবাই শান্তি চায়। সবাই চায় তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে একটা সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে। আমরাও চাই আমাদের দেশটা হয়ে উঠুক সবার জন্যে অনুসরনীয়। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে, আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষার সঠিক দিক গ্রহন করে, আইনের শাসন মেনে, সাম্প্রদায়ীকতাকে বর্জন করে সুস্থ-সবল ভাবে টিকে থাকার মাধ্যমে এই দেশটাকে সুন্দর ভাবে গড়ে তোলাই আমাদের ব্রতী হওয়া উচিত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.