নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Ami Abir

পরে সময় করে কিছু লিখব

Ami Abir › বিস্তারিত পোস্টঃ

||| ইশান ||| (সায়েন্সফিকশন)

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৫

নিঝুম রাত্রি চারদিক অন্ধকার একফোঁটা জোৎস্নার আলোও নেই এরমাঝে খোলা আকাশের নিচে বসে আছে ইশান, ওর মাঝে কোন ভাবান্তর নেই। হঠাৎ করে ওর মাঝে একটা পরিবর্তন আসে ও উঠে দাড়ায় এবং হাটতে থাকে কোথায় যাবে জানেনা, এখানে ওর কেউ নেই সবাইকে ছেড়ে চলে এসেছে। এই মুহুর্তে যদি ও বাসায় যায় তাহলে সবাই ভয় পেয়ে যাবে, ও চিন্তা করল রিমির কাছে যাবে কিন্তু রিমিও যদি ভয় পায় তাহলে ও কি করবে কোথায় যাবে। তবুও রওয়ানা হল।


রিমি বারান্দায় বসে আছে কয়েকদিন ধরে ওর মন ভালোনা, ওর ভালবাসার মানুষ ইশান কয়েকদিন আগে এক্সিডেন্টে খুব ভয়াবহ ভাবে মারা গেছে, লাশের অবস্থা খুবই বীভৎস নিচের দিক পুরো থেঁতলে গেছে মুখের একপাশে গর্ত হয়ে গেছে। রিমি এগুলো কোনভাবেই মাথা থেকে সরাতে পারছেনা রিমি ওকে খুব ভালবাসতো। লাশের ভিতর রক্তের সাথে ও আরেকটা তরল পদার্থ দেখে খুব অবাক হয়েছে ও মেডিকেল কলেজের ছাত্রী এরকম পদার্থ আগে কখনো দেখেনি। অজানা এক ভয়ও মনের ভিতর দানাবেঁধেছে। এমন সময় কলিংবেলের শব্দ হল, রিমি আঁৎকে উঠেছে এতরাতে কে এল, ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে যাকে দেখল তাকে ও একেবারেই প্রত্যাশা করেনি ভয়ে ওর শরীরের প্রত্যেকটা পশম খাড়া হয়ে গেল। ওখানে ইশান দাড়িয়ে আছে। কেমন আছো রিমি? তু-তুমি ইশান না? তু-তুমি না মা-মারা গেছ? এই বলেই রিমি অজ্ঞান হয়ে যায়। ইশান রিমিকে ওই অবস্থায় রেখেই চলে আসে অন্যকেউ ওকে দেখলে ঝামেলা হবে।

ইশানের মন খারাপ রিমি ওর সাথে এমন করছে যেন ও আসলেই মারা গেছে। রিমির কোন দোষ নেই ইশানের নিজেরও বিশ্বাস হচ্ছেনা যে ও বেঁচে আছে ও নিজের চোখে দেখেছে যে ওর উপর দিয়ে ট্রাক উঠে গেছে আর ও মারা গেছে এরপর ওর লাশকে ঘিরে ওর মা ও অন্যরা অনেক কেঁদেছে তারপর ওর জানাজা পড়িয়ে ওকে কবরও দিয়েছে। তাহলে ও এখন কোথা থেকে আসল পৃথিবীর সব মানুষ কি তাহলে দুজন করে? নাকি ও একটি আত্মা? বেঁচে থাকতে ছোটবেলায় শুনেছিল যারা অপঘাতে মারা যায় তাদের আত্মা নাকি পৃথিবীতে ঘোরাফেরা করে আর আত্মীয়স্বজন কে ভয় দেখায় কিন্তু ও এটা কখনোই বিশ্বাস করেনি এখন নিজেই কি আত্মা হয়ে পৃথিবীতে ফিরে এসেছে। তাহলে ও কি এখন আত্মীয়দের ভয় দেখাবে? এর জন্যই কি রিমি কে ভয় দেখাতে গিয়েছিল? না এটা কখনোই হয়না ও আত্মা না আত্মাদের কেউ দেখতে পারে না অথচ রিমি ওকে দেখেছে। তাহলে ও কে? এর রহস্য ভেদ করতেই হবে তা নাহলে ওর শান্তি নেই আজীবন এভাবেই কাটাতে হবে। অথবা এর থেকে বাঁচতে চাইলে আত্মহত্যা করতে হবে।


প্রফেসর হাসান নতুন বিজ্ঞানী, ঢাকা ভার্সিটির অধ্যাপক সাইকোলজি নিয়েও গবেষণা করে। ইশান তার প্রিয় ছাত্র ছিল তিনি একটা রক্তমাংসের হাইব্রিট রোবট বানান যেটার চেহারা ও শরীর পুরোপুরি ইশানের মতো। কেউ কোন ভাবেই বুঝতে পারবেনা যে এটা মানুষ নাকি রোবট। ইশান একটি পদার্থ আবিষ্কার করেছিল যার মধ্যদিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় অথচ ধরলেও শক্ করেনা তিনি সেই পদার্থের দ্বারাই এটা তৈরি করেন। কিন্তু ইশানকে আর চমকানো হলনা তার আগেই তার কাছ থেকে নকল ইশান কোন ভাবে পালিয়ে বের হয়ে যায়। আর এক্সিডেন্টে মারা যায়। বিজ্ঞানী প্রফেসর হাসান এখন আসল ইশানকে খুঁজছে তিনি বুঝতে পারছেন যে আসল ইশান ভয়ে কোথাও লুকিয়ে আছে নয়তো সবাই ওকে অশরীরী ভাববে, এভাবে কিছুদিন থাকলে মানুষিক চাপ সহ্য করতে না পেরে ইশান আত্মহত্যাও করতে পারে। তিনি নিজেকে এরজন্য দায়ী করলেন এখন যেভাবেই হোক ওকে বের করতে হবে।

সরাসরি ইশানের কথা বললে সবাই তাকে পাগল ভাবতে পারে। তাই তিনি ইশানের পরিবারের কাছ থেকে কৌশলে খবর নিলেন ইশান এর মতো দেখতে কেউ এসেছিল কিনা। কিন্তু জানতে পারলেন আসেনি, তারপর ইশানের বন্ধুদের নিকট খবর নিলেন কারো কাছে ইশানের মতো কেউ গেছে কিনা, নাহ কারো কাছেই যায়নি তিনি ভয় পেলেন তাহলে সত্যিই কি ইশান আত্মহত্যা করেছে। তিনি বন্ধুদের নিকট খবর নিলেন ইশান কাউকে ভালবাসতো কিনা খবর নিয়ে রিমির কথা জানলেন। তাই তিনি রিমির কাছে গেলেন।

রিমির কাছে এসে জানতে পারলেন ইশান এসেছিল। তখন তিনি রিমিকে সত্যি কথাটা জানিয়ে বললেন এখন কাউকে এটা বলবেনা, আগে ইশান কে খুজে বের করি নইলে কেউ বিশ্বাস করবেনা কেননা ইশান শুধু তোমার কাছেই এসেছে অর্থাৎ তুমিই শুধু ইশানকে দেখেছ আর কেউ দেখেনি এখন আগে আসল ইশান কে বের না করলে আমাদের কথা কেউ বিশ্বাস করবেনা। রিমি প্রফেসর হাসানের কাছে জানতে চাইল ওই পদার্থের কথাটা যা লাশের মাঝে দেখেছিল। তিনি রিমিকে ইশানের আবিষ্কারের কথাটা জানালেন। প্রফেসর হাসান রিমির কাছে জানতে চাইল যে ইশান তোমাকে এমন কোন জায়গার কথা বলেছে যেই জায়গাটা ওর পছন্দ ছিল? রিমি ঢাকার বাহিরের একটা জায়গার কথা বলে বলল ও আমাকে একবার ওখানে নিয়ে গিয়েছিল। প্রফেসর হাসান বললেন তাহলে চল এখনি রওয়ান দেই যত দ্রুত যাওয়া যাবে ততই ভালো।


ইশান ঢাকার বাহিরে একটা বাংলোতে এসেছে এটা তার সবচে' প্রিয় জায়গা ও এক্সিডেন্টে নিজের মারা যাবার রহস্য ভেদ করতে পারেনি তাই ও স্থির করেছে একটু পর ও আত্মহত্যা করবে। মায়ার পৃথিবীতে আর থাকবেনা যেখানে এখন ওর কোন মূল্য নেই রিমিও ওকে ফিরিয়ে দিয়েছে যাকে ও নিজের চেয়েও বেশি ভালবাসতো। ও শেষ বারের মতো আকাশের তারা দেখছে একটু পর হয়তো নিজেই আকাশের তারা হয়ে যাবে। দরজায় শব্দ হচ্ছে কে আসল এই নির্জন বাংলায় কেউতো এর কথা জানেনা। ও নিচে যাবেনা যে আসে আসুক ওর কাছেতো আসছেনা কেননা সবাই জানে ও মারা গেছে। ইশান বিষের বোতল হাতে নিল।


প্রফেসর হাসান আর রিমি এসে পরেছে দরজায় শব্দ করেছে কেউ সাড়া দেয়নি। ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেল বাড়ির ভিতর তন্নতন্ন করে খুজেও কাউকে না পেয়ে প্রফেসর হাসানের মন ভেঙে গেল তাহলে ইশান আর বেঁচে নেই। হঠাৎ ছাদ থেকে রিমির চিৎকারের আওয়াজ শুনল, রিমি কখন ছাদে গেছে বলতে পারবেনা সে এসেই ঘরগুলোর মধ্যে ইশানকে খোঁজা শুরু করে দিয়েছিল। তারাতারি ছাদে গেল গিয়ে দেখে ইশান আর রিমি দুজন দুজনকে জরিয়ে ধরে কাঁদছে। ইশানকে বেঁচে থাকতে দেখে আনন্দে প্রফেসর হাসানের চোখেও পানি এসে পড়ল।

---Foysal Hosain Abir

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.