![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Even an ugly truth is better than a beautiful lie....
বুক অব দ্য ডেড- বাংলায় যাকে বলে মৃতদের বই। রহস্যে ঘেরা মিশরীয় সভ্যতার আরেকটি রোমাঞ্চের নাম। এমনিতেই প্রাচীন ইজিপশিয়ানদের পিরামিড, সভ্যতা সবই রহস্যে ঠাসা। তার উপর মৃত্যুর মতন হিম শীতল অজানা ব্যাপারটাকে নিয়ে তাদের ততোধিক রহস্যে ঘেরা রীতিনীতি পুরা ব্যাপারটাকে একেবারে এপিক পর্যায়ে পৌছে দিয়েছে।
প্রাচীন মিশরীয়রা মৃত্যু পরবর্তী কি হবে তা নিয়ে বিশেষ চিন্তিত ছিল বলে মনে হয়। হয়ত এর কারন তারা জীবনকে ভালোবাসত। হয়ত সেজন্যই মৃত্যুর পরে কিভাবে আবার অনন্ত জীবন লাভ করবে তা নিয়ে তাদের চিন্তা। এখানে বলে রাখা ভালো, মৃত্যু পরবর্তী অনেক কিছু নিয়ে তাদের চিন্তার সাথে বর্তমানে একেশ্বরবাদী ধর্ম গুলোরও মিল পাওয়া যায়।
প্রাচীন ইজিপশিয়ানরা ফারাও বা অভিজাত কেউ মারা গেলে তাদের শরীর মমি করে রাখত যাতে শরীরটা অবিকল থাকে। কারন তারা ভাবত শরীর নষ্ট হয়ে গেলে পুনরুত্থান সম্ভব হবে না। কাজেই মৃত্যুর পর আবার জীবিত হতে হলে শরীর সংরক্ষন করা লাগবে।
তারা মনে করত মানুষের আবেগ-অনূভূতি, বিবেচনা সব কিছুই হচ্ছে হার্টে। এজন্য মমিফিকেশনের সময় শরীরের সব পচনশীল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বের করে ফেলত, শুধুমাত্র হার্ট রেখে দিত। এমনকি চোখে একটা ফুটা করে নাক দিয়ে মস্তিষ্ক বের করে আনত!!
একেশ্বরবাদী ধর্মের মতনই ইজিপশিয়ানদের ধারনা ছিল মৃত্যুর পরবর্তী কঠিন একটা সময় পার করতে হবে, অনেকটা পুলসিরাতের মতন।
মৃত্যু পরবর্তী পুনরুত্থানের পর মৃত ব্যক্তি কি করবে তা বুঝতে পারবে না। এজন্যই তাদের জন্য এই বুক অব দ্য ডেড। খৃষ্টর জন্মেরও ১১৫০ বছর আগ থেকে ইজিপশিয়ানরা মৃতের সাথে এই বুক অব ডেড দিয়ে দিত। কখনও সেটা মমির ঘরের চারপাশের দেয়ালে হায়ারোগ্রিফিক্স করে লিখে দেয়া হত। কখনও বা প্যাপাইরাসে লিখে এরকম একটা জারে ভরে দেয়া হত যাতে মৃত মানুষটা পুনরায় জীবিত হয়ে সাথে সাথেই হাতের নাগালে সেটা পায়।
জারের ভেতর বুক অব দ্য ডেড এর স্ক্রল।
বুক অব ডেড-এ ছিলো মোট ১৯২ টার মতন অধ্যায়। তাতে থাকত বিভিন্ন মন্ত্র আর কোন অবস্থায় কি করতে হবে তার পথ নির্দেশনা। তবে একজনের জন্য সব গুলি চ্যাপ্টারই দেয়া হত না।ব্যাক্তিভেদে তার প্রয়োজন অনুসারে দেয়া হত।
বুক অব দ্য ডেড অনুসারে, পুনরুত্থানের পর প্রথমেই আনুবিস এসে হাজির হয় মৃতের সামনে। ওই অবস্থায় মৃত কথা বলতে পারে না। আনুবিস মৃতের মুখ খুলে দেয়, সে কথা বলতে পারে। আনুবিস মৃতের চোখ কানও খুলে দেয়, সে দেখতে ও শুনতে পারে। আক্ষরিক ভাবেই যেন মৃতের পুনরুত্থান ঘটে, তার সেন্স গুলি ফিরে আসে।
আনুবিস।।
মৃতের সামনে এসে হাজির হয়েছে আনুবিস, তাকে পুনরায় জাগ্রত করছে।।
মৃতকে সেন্স ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।।
মৃতের পুনঃরুত্থানের পর আনুবিস খুবই গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। মৃতকে পথ দেখিয়ে অনন্ত জীবন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া তার দায়িত্ব।
একে একে মৃতকে ৪১ জন দেবতার মুখোমুখি হতে হয়। তার সাথে থাকে নানা বিপদ আপদ। যেমন কালো বিটলসের আক্রমন আসতে পারে। সেক্ষেত্রে বুক অব দ্য ডেডে দেয়া মন্ত্র পড়লেই সেই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এরকম শাপ জাতীয় নানা বিপদও আসতে পারে।
কালো বিটলস থেকে মুক্তি পাওয়ার মন্ত্র।।
ওদিকে এক এক করে ৪১ জন দেবতার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এক এক দেবতা এক একটা প্রশ্ন করবে। যেমন চুরি করেছো কিনা?? মানুষকে ঠকিয়েছো কিনা। বুক অব দ্য ডেড এর সহায়তায় মৃত ব্যক্তিকে সবগুলো প্রশ্নের না বোধক উত্তর দিয়ে আসতে হবে। ধরা খেলে গেট খুলবে না, পরের দেবতার কাছে যাওয়া যাবে না। আর পার পেয়ে গেলে গেইট খুলে যাবে, পরের দেবতার কাছে গিয়ে প্রশ্নর উত্তর দেয়া যাবে।
বিভিন্ন দেব-দেবতা আর তাদের জন্য মন্ত্র।।
ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, মোসেস/মুসা(আঃ) এর টেন কমান্ডমেন্ট এর সাথে দেবতাদের প্রশ্নের মিল আছে।। যেমন, টেন কমান্ডমেন্ট এ আছে সৃষ্টিকর্তার নির্দেশঃ Thou shalt not steal.
আবার বুক অব দ্য ডেড অনুসারে এক দেবতা প্রশ্ন করবেন চুরি করেছো কিনা?? উত্তর না বোধক আসলে মৃত পরের স্টেজে যেতে পারবে।
যাইহোক, এভাবে সব পেরিয়ে ৪২ নাম্বার স্টেজে একজন মৃতকে অসিরিস দেবতার শেষ বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এটাই শেষ স্টেজ এবং খুবই কঠিন। অদ্ভূত ব্যাপার, এখানেও দাড়িপাল্লা দিয়ে মাপার ব্যাপার আছে, যেটার সাথে কিনা আমরা বেশ পরিচিত।
জাজমেন্ট চলছে। মাঝখানে দাড়িপাল্লা।
এই পর্যায়ে একটা দাড়িপাল্লা থাকবে। মৃতর হৃদপিন্ড সেখানে মাপা হবে। মাপার কাজের জন্য আছে দেবী মা’ত। তিনি একপাল্লায় মৃতের হৃদয় রাখবেন আরেক পাল্লায় রাখবেন পালক।
দেবী মা'ত।।
মা'তের পালক হচ্ছে সত্য, ন্যায়ের প্রতীক। পাল্লার ওজন দুইদিকেই সমান হতে হবে। যদি হৃদপিন্ডের পাল্লা ভারী হয় তাহলেও হবে না, আবার কম হলেও হবে না। এ এক অদ্ভূত সিম্বলিক ব্যাপার। আমরা বাস্তব জীবনেও ভারী মনের বা হালকা মনের মানুষদের ভালো বলি না। এক্ষেত্রেও তাই। দুইএর মাঝামাঝি পারফেক্ট একটা ব্যাপার হলেই সে উতরে যাবে।
উতরে যতে না পারলে আছে ভয়াবহ শাস্তি। আম্মিত নামের এক জন্তু এসে মুহুর্তে তাকে খেয়ে ফেলবে। পুরো স্বত্বা যাবে হারিয়ে। অনন্ত জীবন লাভ ত হবেই না উল্টা ধ্বংস হয়ে যাবে সে। প্যাথেটিক!!
আম্মিত নামের জন্তু!!
আর উতরে যেতে পারলে অনন্ত জীবনের অধিকারী হবে। বাগানে বা হ্যাভেনে চলে যেতে পারবে যেখানে কিনা অনন্ত শান্তি!!
সবশেষে একটা কথা বলতে চাই। আমাদের কাছে প্রাচীন ইজিপশিয়ানদের ধর্ম বিশ্বাস হাস্যকর লাগতে পারে, কিন্ত তাদের কাছে তা বিশ্বাস যোগ্যই ছিলো, সেজন্যই তারা এত আয়োজন করত। নিজেদের দেহ মমি করে রাখত। পরকালের জন্য স্ক্রলে মন্ত্র লিখে রাখত বিশ্বাস থেকে। আজ আমরা তাদের মমি গুলি মিউজিয়ামে প্রদর্শন করছি। তারা যে মন্ত্র গুলি তাদের পরকালের অবলম্বন ভেবে সাথে রাখত সেগুলো এখনকার ‘সভ্য’ মানুষেরা তাদের পাশ থেকে সরিয়ে মিউজিয়ামে ঝুলিয়ে রেখেছে। জানিনা এতে সেই মানুষ গুলোকে কতটা সম্মান করা হল।মৃত মানুষকে ওই আমলের ইজিপশিয়ানরা যতটা সম্মান করত এই আমলের সভ্যরা তার কত টুকু করে?
প্রাচীন ইজিপ্ট নিয়ে আরো লেখাঃ
১।আখেনাতন- ইজিপ্টের প্রথম একেশ্বরবাদের প্রবক্তা
২।ফ্রি ম্যাসন:: all seeing eye
০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৩৮
এস.বি.আলী বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:১২
শের শায়রী বলেছেন: লেখায় ভালো লাগা জানবেন।
১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৮:১০
এস.বি.আলী বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:০৩
আদম_ বলেছেন: অসাধারণ হয়েছে। পোস্ট প্রিয়তে থাকলো।