নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...............

শ্রাবণধারা

" আমাদের মতো প্রতিভাহীন লোক ঘরে বসিয়া নানারূপ কল্পনা করে, অবশেষে কার্যক্ষেত্রে নামিয়া ঘাড়ে লাঙল বহিয়া পশ্চাৎ হইতে ল্যাজমলা খাইয়া নতশিরে সহিষ্ণুভাবে প্রাত্যহিক মাটি-ভাঙার কাজ করিয়া সন্ধ্যাবেলায় এক-পেট জাবনা খাইতে পাইলেই সন্তুষ্ট থাকে......."

শ্রাবণধারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী অপশক্তি, হুঁশিয়ার!

২৩ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:১৪



কল্পনা করুন, আজ থেকে ৫০ বছর পরে স্বাধীন দেশ প্যালেস্টাইনের একজন গাজাবাসীর সাথে আপনার দেখা হয়েছে। ধরা যাক, তার নাম মাহমুদ, বয়স ৬৮। ইসরাইল যখন ৫০ বছর আগে তার দেশ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করছিল, তখন মাহমুদের বয়স মাত্র ১৮। নরকের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মাহমুদের বেঁচে থাকার কথা ছিল না। প্রতিদিন মাথার উপর বোমা পড়ার আতঙ্ক, আইডিএফের গুলি যেকোনো সময় তার বুক ঝাঁঝরা করে দিতে পারত। মাসের পর মাস ধরে বোমা বর্ষণ, নির্বিচারে গুলি - চলছিল পরিকল্পিত গণহত্যা আর দুর্ভিক্ষ। সেই হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পায়নি সদ্যোজাত শিশু পর্যন্ত।

১২ বছরের এক কিশোরকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল চল্লিশটিরও বেশি গুলি। ১৩ বছরের স্কুলগামী এক কিশোরীকে হত্যার জন্য স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের সবগুলো গুলি খরচ করা হয়েছিল। ত্রাণ আনতে যাওয়া ১২ বছরের এক ছেলেকে আটার বস্তা মাথায় নিয়ে ফেরার পথে পশুর মতো নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। সেই গণহত্যা থেকে রক্ষা পায়নি গর্ভবতী নারী, অশীতিপর বৃদ্ধ, ১, ২, ৫ বছরের শিশু, ১০ বছরের কিশোর, ১২ বছরের কিশোরীরা। ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, মসজিদ, গির্জা, প্রতিটি দালান, রাস্তা, পার্ক, অফিস, দোকান।

এই সব ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী মাহমুদ। আপনি তাকে প্রশ্ন করলেন, “ইসরাইল-হামাসের সেই যুদ্ধে তো মাত্র ৬০ হাজার মানুষ মারা গেছে, রেকর্ড তো সে কথাই বলে। এই যুদ্ধ হামাসের প্রপাগাণ্ডা নয়তো, তাদের ক্ষমতাকে পাকা করার একটা কৌশল?” মাহমুদের মুখে সেদিন আর কোনো কথা বেরোল না। শুধু নীরবে ব্যথিত হলেন তিনি। কী এমন বাক্য আছে, যা দিয়ে এই গোঁয়ার ও অমানবিক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব?

মাহমুদ জানেন, গাজার গণহত্যায় নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার নয়। এটা ইসরাইলি নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার তৈরি ভুয়া সংখ্যা। প্রকৃত সংখ্যা অন্তত চার লাখের বেশি। কিন্তু সংখ্যাটা আসল বিষয় নয়। তিনি যে ধ্বংসযজ্ঞ, যে গণহত্যা নিজের চোখে দেখেছেন, তার বেদনা, ক্ষোভ, দুঃখ আর হতাশা কোনো সংখ্যায় প্রকাশ করা যায় না। সন্তানের মৃত্যু কখনোই কোনো সংখ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। পুরো পরিবার হারানোর যন্ত্রণা কোনো পরিসংখ্যান দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো সম্ভব নয়।

কোনো গণহত্যাকেই সংখ্যা দিয়ে বিচার করা যায় না। রাজাকার-আলবদরেরা যখন মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তখন তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট। মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করা, ব্যঙ্গ করা। যেমন তারা বলে, “হেমা মালিনির নাচ দেখে বীর মুক্তিযোদ্ধা।” আমরা জানি, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে হেমা মালিনির নাচের কোনো সম্পর্ক নেই। আর মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছে বলেই ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে ব্যঙ্গ করার জন্য এটি একটি বানানো বয়ান, যাতে বোঝানো হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ কোনো বাস্তব ঘটনা নয়, বরং একটি তুচ্ছ বিষয়।

মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহিদ হত্যার কথা বহু আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এ সংখ্যা হয়ত কমবেশি হতে পারে, কিন্তু তাতে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব কোনোভাবে কমে যায় না। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে দুর্বৃত্তায়ন ও লুটপাটের রাজনীতি, দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। কিন্তু রাজাকার-আলবদরেরা সচেতনভাবেই এই দুই ঘটনাকে একসাথে মেশাতে চায়।

মুক্তিযুদ্ধ ছিল অসাম্প্রদায়িক, মুক্তিযুদ্ধ বাতিল করেছিল ধর্মের নাম করে অধর্মের, ধর্মব্যবসার রাজনীতিকে। মুক্তিযুদ্ধ আধুনিকতা আর প্রগতিশীলতার প্রতীক। ধর্ম-বর্ণ-জাতপাত নির্বিশেষে আমরা সবাই এতে অংশগ্রহণ করেছিলাম। ব্যক্তি-মানুষের ধর্মের সাথে বা ধর্ম পরিচয়ের সাথে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধ নেই। আধুনিক রাষ্ট্রের মতই ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা একটি ধর্মনিরপেক্ষ, সেকুলার সমাজ গঠন করতে চেয়েছিলাম।

অর্থনৈতিক স্বাধীনতার লড়াইও মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ দিক। কেননা এটি কেবল যুদ্ধ নয়, ছিল জাতির মুক্তির আকাঙ্ক্ষা - বিশ্বমানুষ হওয়ার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন আজ ধূলিসাৎ হতে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে, মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। যাতে আমাদের আত্মশক্তি হারিয়ে যায় এবং আমরা প্রাগৈতিহাসিক নিওনথার্ডাল পাকিস্তানি বানরে পরিণত হতে পারি।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:২৯

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: যেখানে পৃথিবী প্রতিনিয়ত জ্ঞান ও বিজ্ঞানে অগ্রসর হচ্ছে, সেখানে আমরা তর্কে লিপ্ত হচ্ছি মুক্তিযুদ্ধে কতজন মানুষ শহীদ হয়েছিলেন তা নিয়ে। এর একমাত্র কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরের দ্বিচারিতা। ২০২৪ সালের যে অভ্যুত্থান হয়েছে, তা মূলত মাফিয়া শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে নয়। আওয়ামী লীগ এখন আর মুক্তিযুদ্ধের মূল ধারকশক্তি নয়; কারণ একটি দল নিজের দেশের টাকা এভাবে লুটপাট করতে পারে না যদি তারা সত্যিই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থেকে থাকে। আজকের আওয়ামী লীগের ভেতরে প্রচুর জামায়াতপন্থী রয়েছে যা প্রমাণ করে যে দলটি টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। সমস্যাটা হচ্ছে, অভ্যুত্থানে জড়িত একটি অংশ আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করতে গিয়ে আড়ালে মুক্তিযুদ্ধকেও খাটো করে দেখায়। আসলে তারা তাদের পূর্বপুরুষদের মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পরাজয়ের ইতিহাস ভুলতে পারছে না।বাংলাদেশের অদূর ভবিষ্যতে যদি আবার কোনো স্বৈরশাসক জন্ম নেয়, তবে তার বিরুদ্ধেও অভ্যুত্থান ঘটতে পারে। এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক ব্যাপার, এর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করার কোনো সম্পর্ক নেই।

২| ২৩ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:৩৬

খাঁজা বাবা বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে নতুন কোন বিতর্ক সৃষ্টি করা উচিত নয়। এতে জাতী বিভক্ত হবে, জাতীর মর্যাদা ক্ষুন্ন হবে।
হসিনার পক্ষ বিপক্ষ বয়ান যেভাবে জাতীকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে, এটাও একই রকম ক্ষতিকর।

৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:৪১

মাথা পাগলা বলেছেন: সংখ্যা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আসলে শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। এই ধরনের অপচেষ্টা কেবল বিভ্রান্তি ছড়ায় এবং মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদাকে আঘাত করে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালির অস্তিত্বের লড়াই, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে রাজনীতি করা মানে শহীদের আত্মত্যাগকে অসন্মান করা। মহান মুক্তিযুদ্ধকে যারা রাজনীতির হাতিয়ার বানায়, তারা মূলত বাংলাদেশের শত্রু। এসবকে কোনভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।

৪| ২৩ শে আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:২২

সামছুল আলম কচি বলেছেন: ৫৫ বছর ধরে শুনি এক প্যাচাল; মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মহান সংবিধান, অমুক নেতা, অমুক মাতা, স্বামী-বাপ-ভাই-বোন !!! কান-মগজ পঁচে গিয়েছে !!! বন্ধ করেন এই সব ডায়লগ !!!
-মুক্তিযুদ্ধে প্রকৃত নিহতের সংখ্যা ; জানেন না।
-প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ; জানেন না।
-মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ; জানেন না।
পক্ষ-বিপক্ষ গুষ্টির সব স-ব রাজনীতিবিদ গুলা চোর-ডাকাত, লুটেরা, খুনী !!! দোহাই দেয় জনগন, মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতার; আর দেশবিরোধী গোপন চুক্তি করে নীচে নীচে !!
কতটা নীচ, কদাকার আর দেশপ্রেমবর্জিত হলে এ দেশের এক রাজনীতিক বলে; ভারত অনুমতি না দিলে কিছু বলা যাবে না !!!! বাংলাদেশের সংবিধান গেলো-সংবিধান গেলো বলে যে সব কীটগুলো রাতদিন চিল্লায় ওরা কেন বলেনা ছি ছি এম কাদের একজন দেশদ্রোহী !!! হাফপ্যান্ট-ফুলপ্যান্ট সব নীরব পা চাটার দল !!! জঘন্য সব মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাজ !!! ভারতের বিরুদ্ধে কিছু বল্লেই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী-পাকিস্তানী রাজাকার !!!
চিরকালের জন্য এসব ভাষন বন্ধ করেন !!!

৫| ২৩ শে আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:২৩

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



আপনার এই লেখার চাক্ষুষ সাক্ষী আমি নিজে। বৃদ্ধ হয়েছি কান্নার মতো চোখে আর পানি হয়তো নেই তারপরও আপনার লেখা পড়ে কখন যে চোখ ভিজে উঠেছে আমি জানি না। আমি কৃতজ্ঞচিত্তে আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আপনি আমার স্মৃতি লিখেছেন। আল্লাহপাক আপনার নেক হায়াত দান করুন।

সম্ভব হলে আপনার সম্পূর্ণ লেখা আমার পোস্টে মন্তব্য আকারে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। এটি আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া হবে।

৬| ২৩ শে আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সামছুল আলম কচি@জাপা কে সরকার কেন ban করে না ? জাপার সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কি রিলেশন ? জাপা কি চেতনা বেচে খায় ? জাপার সাথে ভারতের পাশাপাশি পাকি কানেকশান ও আছে। এরশাদ কে নিয়ে পাকি নিউজ পেপারে পজেটিভ কথা বলেছে। জাপার কাতার-কুয়েত কানেকশান ভালো। চরমোনাই কেন জাপার সাথে পিরিতি ? চরমোনাই কে নিয়ে কিছু বলেন । /:)

৭| ২৩ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৫

অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: সামছুল আলম কচি নামের এই রাজাকারের শাবকের তো দেখি মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনলেই জ্বলুনি শুরু হয়।

৮| ২৩ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:২২

কামাল১৮ বলেছেন: একটি মানবিক লেখা।মানুষের জন্য লেখা।আমাদের অবস্থাও গাজার মতো না হয়ে যায়।বৃহত শক্তির খেলা শুরু হয়ে যেতে পারে আমাদের নিয়ে।আমেরিকাকে করিডোর দিলে চীন ভারত সহ্য করবেনা।দেশ আছে এক মহা সংকটে।

৯| ২৩ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:৪১

বিজন রয় বলেছেন: কিছু একটি করুন। মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের ঠেকান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.