নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার ওপর মানুষ সত্য

আবু আফিয়া

আবু আফিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

নতুন আতঙ্ক

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:৫৪

নতুন আতঙ্ক



গত কয়েকদিন ধরে দেশ বিদেশের সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে চলন্ত বাসে যৌন হয়রানির বিষয়টি বিশেষ স্থান দখল করেছে। একের পর এক দেশের বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহনে নারীরা যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ধর্ষণের পর হত্যা ও নিষ্ঠুরতা। সময়ের সঙ্গে সভ্যতায় অনেক পরিবর্তন আসলেও কমেনি নারীর প্রতি সহিংসতা বরং সহিংসতার নতুন রূপ প্রকাশ পাচ্ছে।
এইতো গত ২১ এপ্রিল রাজধানী ঢাকার উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে উঠলে চালকের সহকারী ও কন্ডাক্টর তাকে যৌন হয়রানি করার চেষ্টা করে। তাদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে ছাত্রীটি একপর্যায়ে বাসচালকের সহকারী ও কন্ডাক্টরকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে বাস থেকে নেমে যান। যার সংবাদ আমরা সবাই অবগত। চলতি এপ্রিল মাসেই লাব্বাইক পরিবহনের একটি বাসে বাংলাদেশ লেদার টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন পরিবহন শ্রমিকেরা। গত মার্চ মাসে নিউ ভিশন নামে একটি বাসে দুই নারীকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করা হয়।
এছাড়া ২১ জানুয়ারি রাজধানীর দারুসসালামে চলন্ত বাসে যৌন হয়রানির অভিযোগে গাবতলী-নবিনগর রুটের বাসচালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে দারুসসালাম থানায় মামলা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। গত বছরের আগষ্টে গাজীপুর থেকে নারায়নগঞ্জ আসার পথে ট্রাকের চালক মেহেদী হাসান ও হেলপার সোহান মিলে এক কিশোরীকে চলন্ত ট্রাকে ধর্ষণ করে।
বছর দুয়েক আগে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডে এক গারো তরুণীকে মাইক্রোবাসে তুলে চোখ-মুখ বেঁধে ধর্ষণ করে একদল যুবক, এই ঘটনার পর চারিদিকে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল। এর আগেও সাভার ও মিরপুরে বাসে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এরপর টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী থেকে ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহী বাসে একই কায়দায় ধর্ষণের শিকার হন এক নারী। আর গত বছরের ২৫ আগষ্ট বাসে করে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে খুন হন জাকিয়া সুলতানা রূপা নামের এক তরুণী।

এছাড়া তিন বছর পূর্বে টাঙ্গাইলে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিল নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী। দরিদ্র পরিবারের মেয়েটিকে তার এক বান্ধবী প্রলোভিত করে নিয়ে যায় মধুপুরের এক নির্জন বাড়িতে। সেখানে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকা কয়েকজন পালাক্রমে ধর্ষণ করে মেয়েটিকে। তারা এটুকু করেই ক্ষান্ত হয়নি। ভিডিও ক্যামেরায় ধর্ষণের চিত্রও ধারণ করে। কয়েকদিন ধরে চলে এ নারকীয় তান্ডব। পরে অজ্ঞান অবস্থায় মেয়েটিকে ফেলে রেখে যায় রেললাইনের ওপর। তারপর রাজধানীর মিরপুরস্থ শাহআলীতে দশ বছরের শিশু চাঁদনী গ্যাংরেপের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে। আড়াই বছরের শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ভারতসহ বিশ্বব্যাপী তোলপাড় করা দিল্লিতে চলন্ত বাসে ধর্ষণ ঘটনার চার দিন পর রাঙ্গামাটির কাউখালীতে অষ্টম শ্রেণীর এক আদিবাসী ছাত্রীকে ধর্ষণের পর খুনের ঘটনাও আমাদের দেশে ঘটেছে। এমনই ধর্ষণের ঘটনা প্রচুর রয়েছে।

একের পর এক এসব ঘটনা যেন একই সূত্রে গাঁথা। রাস্তার যানবাহন যে নারীদের জন্য চরম অনিরাপদ সেই বিষয়টিই যেন বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় এসব ঘটনা। এছাড়া যাত্রী ওঠানো-নামানোর সময় কৌশলে নারীদের গায়ে হাত দেওয়া শুধু নয়, রাতে নারী যাত্রীকে একলা পেলে তার সম্ভ্রমহানির ঘটনাও অহরহ ঘটছে। এমনকি দলবেঁধে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাও ঘটছে যা পূর্বে আমাদের দেশে ঘটতো না বললেই চলে। কিন্তু এখন যেন এসবকে কোন বিষয়ই মনে করছে না। পৃথিবীর জঘন্যতম বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম ধর্ষণ। আর সেই জঘন্য বিষয়টি আরো বেশি ঘৃণ্য হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনার মধ্য দিয়ে।

সম্প্রতি চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর রূপার নৃশংস হত্যাকা-ের বিষয়টি পুরো দেশবাসীর বিবেককে নাড়া দিয়েছে ঠিকই কিন্তু গণপরিবহনে যৌন হয়রানি না কমে বরং অধিকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বছর কয়েক পূর্বে যেমন দিল্লি¬তে চলন্ত বাসে ৬ নরপশুর গণধর্ষণের কবলে পড়ে মেডিকেল ছাত্রির মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা শুধু ভারতকেই নয়, বরং কাঁপিয়ে দিয়েছে গোটা উপমহাদেশ ও বিশ্ববাসীকে। তেমনি জাকিয়া সুলতানা রূপার ঘটনাও আমাদের হৃদয়কে প্রকম্পিত করেছিল। শাস্তিও দেয়া হয়েছে অপরাধিদের। ভারতের ঘটনাগুলো শুনে মনে হত আমাদের দেশে হয়ত এমনটি করা সম্ভব হবে না কিন্তু আমাদের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হয়। আমাদের দেশেও এখন প্রতিনিয়তই দিল্লির ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। আমাদের দেশে এখন নারীকে ধর্ষণ করে তার দেহ টুকরো টুকরো করে ভিন্ন স্থানে ফেলে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সুন্দরভাবে বাঁচার কাম্য কার না রয়েছে। সবাই চায় এ সুন্দর পৃথিবীতে সম্মানের সাথে বাঁচতে। সবার মত দিল্লির সেই তরণী আর আমাদের দেশের জাকিয়া সুলতানাও চেয়েছিল বাঁচতে কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলেন না। তাদের সাথে যে ধরণের কাজ করা হয়েছিল এমন কাজতো কোন জঙ্গলী পশুর দ্বারাও সম্ভব নয়। শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের আজ হয়েছে কি? ধিক্ শত ধিক্ এসব মানুষ রূপী অমানুষদের।

এদেশের নারীরা আজ নির্মমভাবে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার। ঢাকা মেডিক্যালের বার্ণ ইউনিটে কতই না নারী স্বামী কতৃক আগুনে পুড়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করে। প্রত্যেহ কতই না এমন খবর প্রকাশিত হয় যে, শিশু ধর্ষিত, ধর্ষণের পর হত্যা, গ্রামের পাটের ক্ষেতে, ভূট্টার ক্ষেতে বা ডোবা-নালায় ধর্ষিতা নারীর লাশ পাওয়া গেছে বা দুই বছরের শিশুকে পা দিয়ে গলায় টিপে ধরে গৃহ বধুকে ধর্ষণ এধরণের খবর পত্রিকার নিয়মিত আয়োজন।

একের পর এক এমন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে আর অপরাধিরা পারও পেয়ে যাচ্ছে। পার পেয়ে যাচ্ছে বলেইতো এধরনের জঘন্য কাজটি করতে অপরাধিদের মনে কোন ধরণের ভীতির সঞ্চার হয় না।
প্রশ্ন হল আর কত দিন এভাবে তুরাগ পরিবহনের মত গণপরিবহনগুলো নারীরা নির্যাতিত হতে থাকবে? নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হলে কঠোর আইনের বিকল্প নেই। নারীদের ওপর নির্যাতনকারীদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় যত দিন না আনা হবে তত দিন সম্ভব নয় নারী নির্যাতন বন্ধ করা। ধর্ষণ নামের এই সামাজিক ব্যাধি নির্মূল করতে ধর্ষকের দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তাদেরকে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে যাতে অন্যান্য অপরাধিরাও সচেতন হয়ে যায়। এছাড়া প্রত্যেক পরিবারকেও হতে হবে সচেতন। যারা এধরণের অপকর্মে লিপ্ত তারাতো আপনার আমারই সন্তান, তাই নিজের পরিবারের দিকে সবার দৃষ্টি দেয়া উচিৎ।

ছবি: গুগল

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৯

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: বাংলাদেশের মানুষগুলো দিনে দিনে খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৮

আবু আফিয়া বলেছেন: আসলেই তাই, লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ

২| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:২৪

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: পাঠক লজ্জিত।:(


নৈতিকতার বিকাশ ঘটুক। যানবাহন সকলের জন্য নিরাপদ হোক।।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:২৮

আবু আফিয়া বলেছেন: অত্যন্ত আনন্দ লাগে তখন যখন নিজাম ভাইদের মত কেউ আমাদের লেখা পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে

৩| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:৩৪

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: নির্যাতন প্রতিরোধের জন্য নারীদের আরো প্রতিবাদী ও সচেতন হতে হবে।


আমি ছবি দেখে চলি। আপনার ফুলের ছবিটা কেন জানি চোখে পড়ে না। তাই....?:(

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:১৯

আবু আফিয়া বলেছেন: কেন বুঝতে পারছি না

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.