নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার ওপর মানুষ সত্য

আবু আফিয়া

আবু আফিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

নির্বাচন হোক রাজাকারমুক্ত

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:১৭

Click This Link


thesangbad

নির্বাচন হোক রাজাকারমুক্ত

| ঢাকা , রবিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০১৮
৩০ লাখ শহীদের রক্তের বন্যায় এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া আমার প্রিয় এ বাংলাদেশ। বিজয়ের ৪৬তম বছরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় সরাসরি তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না, যা দেশ ও জাতির জন্য প্রশান্তির কারণ ছিল। রাজাকারমুক্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে এটাই সবার কাম্য কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিএনপির প্রতীক ‘ধানের শীষ’ নিয়ে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তথা রাজাকার দল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাকি তারা ২৫টি আসনে লড়বে আর এতে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলেও প্রার্থী থাকছেন। যুদ্ধাপরাধীরা নির্বাচনের প্রার্থী হচ্ছেন ঠিক আছে কিন্তু আমাদের উচিত হবে তাদের ভোট না দিয়ে উচিত শিক্ষা দেয়া, কেননা এবারকার নির্বাচন হবে রাজাকারমুক্ত নির্বাচন। কোন রাজাকারকে আমরা পবিত্র সংসদে আর দেখতে চাই না।

যদিও এ রাজাকারদের এ দেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার পূর্বে ছিল না, বিএনপিই মূলত এদের এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল। আমরা জানি, ১৯৭৬ সালের আগস্টে রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ ঘোষিত হয়। এ সুযোগে স্বাধীনতাবিরোধী দলগুলোও সামরিক সরকারের স্বীকৃতি নিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ লাভ করে। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতাসীন হন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার প্রথম কাজ ছিল সংবিধান থেকে ধর্মনিরেপক্ষতাকে বিদায় দেয়া। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রাপ্ত সে সময়ের রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ছিল ২১টি। এদের মধ্যে মাত্র ৫টি দল জিয়াউর রহমানের নীতির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। এ দলগুলো হলোÑ মুসলিম লীগ, ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম ও খেলাফতে রব্বানী পার্টি। বলাবাহুল্য, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে গণবিরোধী ভূমিকার জন্য ১৯৭২ সালে এসব দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কাজেই দেখা যায়, জিয়াউর রহমানের আমলেই এ দলগুলোর পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়। তখন থেকে শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে স্বাধীনতাবিরোধী ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পুনরুত্থান। আর আজ তা ব্যপক আকার ধারণ করেছে।

জিয়াউর রহমান নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনৈতিক পুনর্বাসনের সুযোগ করে দিলেও জামায়াতীরা প্রথমে স্বনামে মাঠে নামার সাহস করেনি। তারা গণপিটুনি এড়ানোর কৌশল হিসেবে ‘ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক লীগ’ সাইনবোর্ড নিয়ে সংগঠিত হয়। তথাকথিত ইসলাম পছন্দ দুটি দলের সমন্বয়ে ১৯৭৬ সালের ২৪ আগস্ট আইডিএল গঠিত হয়। সাবেক নেজামে ইসলাম পার্টির নেতা মওলানা সিদ্দিক আহমদকে দলের সভাপতি করা হয়। মওলানা আবদুর রহিম তার জামায়াতের গোপন কাঠামো ঠিক রেখে আইডিএলের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৭ সালের ২০ অক্টোবর মওলানা সিদ্দিক আহমদ ও অন্যান্য অ-জামায়াতপন্থি দলগুলো হস্তক্ষেপের দরুন বেরিয়ে যান। এরূপ পরিস্থিতিতে ১৯৭৮ সালের ১১ জুলাই গোলাম আযম পাকিস্তানি নাগরিক হিসেবে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তিনি অসুস্থ মাকে দেখার জন্য ৩ মাসের ভিসা নিয়ে ঢাকায় আসেন। সে সময় থেকে তিনি বাংলাদেশে জেঁকে বসে। মুক্তিযোদ্ধা জিয়ার সরকারই গোলাম আযমকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি প্রদান করে। (জামায়াতের আসল চেহারা)

১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যেমনভাবে জামায়াতীরা বিরোধিতা করেছে একই কায়দা এদেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর জন্য এ জামায়াতীরা মেতে উঠেছে। আর পাকিস্তানও এটা চায় যে, এদেশে যেন তাদের চেলারা পাকিস্তানের জন্য কাজ করে, যার ফলে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের বিরুদ্ধে তারা তাদের সংসদে প্রস্তাব পাস করে। পাকিস্তানের সঙ্গে ’৭১-এ যেমন এই যুদ্ধাপরাধীরা সহযোগী ছিলেন ঠিক এখনও তেমনি সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। এ ধর্মান্ধদের মাথায় তোলার পরিণাম পাকিস্তান এখন টের পাচ্ছে।

বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে পাকিস্তানি জঙ্গিদের কানেকশন বরাবরই ছিল অত্যন্ত গভীর। কারণ পাকিস্তানি জঙ্গিদের কৌশলই বাংলাদেশি জামায়াতে ইসলামীর জঙ্গিরা অবলম্বন করে থাকে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায় যে, পাকিস্তান থেকে জঙ্গি নেতাদের বাংলাদেশে এনে এ দেশের জামায়াতে ইসলামীর জঙ্গিদের বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণও দেয়া হতো। যেমন ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে জোট সরকারের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামীর আমন্ত্রণে পাকিস্তান থেকে পাকিস্তানি জামায়াতে ইসলামীর নেতৃস্থানীয় সদস্য বাংলাদেশে সফর করেন। ঢাকায় তারা ইসলামী ছাত্র শিবিরের বার্ষিক শুরায় অংশগ্রহণ ছাড়াও তৎকালীন সরকারের দুই মন্ত্রী আলী হাসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে সাক্ষৎ করেন। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম উপদেষ্টা ও সদস্য শাহ আবদুল হান্নানের সঙ্গে তারা মিলিত হন। সে সময় তারা জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা ও মতবিনিময় করেন। এছাড়া পাকিস্তানি জামায়াতের প্রতিনিধিরা বগুড়ায় গিয়ে পাকিস্তান আমলে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের নিহত নেতা আবদুল মালেকের দেশের বাড়ি যান এবং তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পাকিস্তানি এ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্র শিবিরের তৎপরতা বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দখলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা সম্পর্কে বিশদ আলোচনাও করেন। (সূত্র : মাসিক হাম কাদাম, অক্টোবর ২০০৪, পাকিস্তান)

বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানানোর প্রচেষ্টারত পাকিস্তানের কুখ্যাত জঙ্গি মৌলবাদী নেতা মঞ্জুর আহমদ চিনিউটি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সফর করে ব্যাপক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন। ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দৈনিক ভোরের কাগজ, জনকন্ঠ, সংবাদ ইত্যাদি পত্রিকায় তার সাক্ষ্য হয়ে আছে। জামায়াতে ইসলামীর মৌলবাদীদের দ্বারা প্রফেসর হুমায়ুন আজাদ যখন আক্রমণের শিকার হন তার পরপরই মঞ্জুর আহমদ চিনিউটি আবার গোপনে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তখন মঞ্জুর আহমদ চিনিউটি ঢাকায় এসেই খতিব উবায়দুল হক, মুফতি আমিনী ও শায়খুল হাদিস এবং জামায়াতে ইসলামী গংদের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে গোপনে বৈঠকও করেছেন। যদিও এ জঙ্গি নেতা মঞ্জুর আহমদ চিনিউটি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন তার পরেও এদেশে এসে তার কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। তার সম্পর্কে সে সময়ে দেশের পত্র-পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে।

মঞ্জুর আহমদ চিনিউটি যে একজন জঙ্গি নেতা ছিলেন তা খোদ পাকিস্তানেরই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা তার সাক্ষ্য। পাকিস্তানের একটি দৈনিকে বলা হয়, মঞ্জুর চিনিউটি নিজ এলাকায় ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক হিংসার বিষ তৈরি করে পরিবেশকে দূষিত করেছেন। (দৈনিক মসাওয়াত, ২৩ ডিসেম্বর ১৯৮৮) এছাড়া বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকে উল্লেখ ছিল, ‘মওলানা মঞ্জুর আহমদ চিনিউটি ধর্মের নামে মানুষকে প্রতারণা করেছে, সে একজন ফতোয়াবাজ হিসেবে চিহ্নিত।’ (দৈনিক দিনকাল, এপ্রিল ১৯৯৪)

কুখ্যাত এ জঙ্গি নেতার নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে ইইঈ তে প্রচারিত উর্দু সংবাদে বলা হয় ৪৫০ জন ধর্মীয় নেতার ওপর নিষেধাজ্ঞা। পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার মহররম মাসে ৪৫০ জন বিভিন্ন ধর্মীয় নেতার ওপর বিভিন্ন স্থানে সফরের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এ নিষেধাজ্ঞার কারণ হলো, তারা যেন এমন বক্তৃতা না করতে পারে যার দ্বারা শান্তি, শৃঙ্খলা ও জানমালের নিরাপত্তা বিঘিœত হয়। এ নেতাদের মধ্যে মঞ্জুর আহমদ চিনিউটি অন্যতম।

পাকিস্তান থেকে যেভাবে নিয়মিত জঙ্গি মৌলবাদী নেতারা এদেশে এসে তথাকথিত জিহাদি বক্তৃতায় মাঠ গরম করতেন, ঠিক তেমনি এদেশের জামায়াতে ইসলামীর নেতারা পাকিস্তানে গিয়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়ে আসতেন। যেমন ৫ ডিসেম্বর ১৯৯৩ সালের দ্য ডেইলি পাকিস্তান, লাহোর পত্রিকার একটি খবর ছিলÑ মজলিসে তাহাফুজে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশের আমির মাওলানা উবায়দুল হক করাচি পৌঁছে গেছেন। তিনি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়াত সম্মেলনের প্রস্তুতি বিষয়ে নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করেন।

এছাড়া মাওলানা সুবহানের তালেবান কানেকশন প্রসঙ্গে দৈনিক সংবাদে ২৩ জুন ২০০৭ প্রকাশিত সংবাদটির শিরোনাম ছিল “মাওলানা সুবহানের তালেবান কানেকশন ছিল প্রকাশ্য’। সংবাদটিতে উল্লেখ করা হয়, ত্রাণের টিন আত্মসাতের দায়ে আটক ‘সৎ লোকের দল’ জামায়াতে ইসলামী নেতা এবং সাবেক এমপি মাওলানা আবদুস সুবহানের তালেবান কানেকশন ছিল প্রকাশ্য। তিনি নিজেই পুস্তিকা ছাপিয়ে তা প্রচার করেছেন। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জঙ্গি কানেকশন ব্যাপক প্রচারিত হলেও তারা সব সময় নিরাপদ অবস্থানে ছিলেন। বিগত জোট সরকারের সময় জামায়াতী এক মন্ত্রী পাকিস্তানে সরকারি সফরে গিয়ে সেই সফর শেষ হওয়ার পর ব্যক্তিগত কাজে দু’দিন অবস্থান করেন পাকিস্তানে। জানা যায়, সে সময় তিনি বৈঠক করেন পাকিস্তানে তালেবানপন্থি জঙ্গিদের সঙ্গে। তার এই তৎপরতা প্রকাশ্য না হলেও জামায়াতের তালেবান নেতা মাওলানা সুবহান তালেবানের সঙ্গে তার প্রকাশ্য সম্পর্কের কথা ঘোষণা করেছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি যে পুস্তিকা প্রকাশ করেন তাতে তার নানা কৃতিত্বের সচিত্র বিবরণ দেয়া হয়। এতে একটি ছবিতে দেখা যায় পাকিস্তানের পেশোয়ারে তালেবান নেতা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের সঙ্গে বৈঠক করছেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে আরও কিছু জামায়াতি নেতাকেও চিত্রে দেখা যায়। এ সূত্রগুলো জানায়, সুবহান তার এ তালেবান কানেকশনের কথা কখনও গোপন করেননি বরং জামায়াতকে সেই তালেবানি ধারায় পরিচালনার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল খুবই সক্রিয়” (সংবাদ ২৩/৬/২০০৭)।

আওয়ামী লীগ সরকার রাজাকারদের বিচারের আওতায় এনে একেক করে ফাঁসির দন্ডে দন্ডিত করে ইতোমধ্যে জাতিকে অনেকটাই কলঙ্কমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে, এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা চাই এ রাজাকারের দল জামায়াতে ইসলামীর শুধু নিবন্ধন বাতিল নয় বরং এদেশে তাদের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে জাতিকে সম্পূর্ণভাবে কলঙ্কমুক্ত করা। সেই সঙ্গে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান, এবারের একাদশ নির্বাচনে কোনভাবেই যেন আপনার মূল্যবান ভোটটি রাজাকারের পক্ষে না যায়। এবারের নির্বাচন হবে রাজাকারমুক্ত নির্বাচন।

[লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট ]

[email protected]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.