![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেদিন আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। খেয়ালও করিনি কোন দিকে যাচ্ছি। একে তো বেকার মানুষ তার ওপর আমার চেহারা খারাপ। নেই পোশাক পরিচ্ছদের শ্রী। তবু মামা আমায় পাকড়াও করলেন পথের মাঝখানে। আমি এত বড় ছেলে, অন্যের চোখে ’বড় ব্যাটা’, তার কান ডলতে ডলতে বললেন, বলি তোকে দিয়ে হবেটা কি? অকর্ম্মার ধাড়ি! জীবনভর শুধু গিলে গেলি আর আমার সহজ সরল বোনটার হাড়মাস চিবিয়ে খেলি। ফুটপাথের ওপর আমাকে ঠেসে বসিয়ে দিলেন। তার হাতের কাগজটা আমার মুখে ছুড়ে দিয়ে বললেন, নে, দেখ। তোর জন্য একটা চাকরীর বিজ্ঞাপন। আমি ভাবলাম, লে হালুয়া! পড়া গেল এবার ফাঁপরে!
অনেক খুঁজে যখন কিছুই পেলাম না মামা ধমকে উঠলেন, ওরে শুয়ার! ওরে হতচ্ছাড়া! তোর হবেটা কি? কপালে যে তোর খাওয়ার মতো নুন-ভাতেরও বরাদ্দ নেই! তিনি ঠোট দুটো একটু ফাক করে অর্ধেক হাসি মেলে ধরে বিজ্ঞাপনটা আঙুল দিয়ে দেখালেন। বললেন, কিরে,পারবিনা? আমি দেখেই বুঝেছি এবার তোর হবে। না হয়ে যাবে কই? ভাগ্নেটা কার দেখতে হবে না? জোরে চিৎকার করে ফুটপাথের চায়ের দোকানে অর্ডার চালালেন তিনি, চা হবে দুইটা Ñ ভালো কইরা, বেশি দুধ কম চিনি।
তার কথার তোড় থামলে বললাম, মামা! একি আমি পারব? হারামি, তিনি ফুসে উঠলেন, চা খাওয়ার মুডটা অহনই নষ্ট করিস না। না পারলে না পারবি। আইজ অহনই দরখাস্ত পাঠায়া দে। দরখাস্ত এমনভাবে লিখবি, তেল এমন দেয়া দিবি যে সেই তেলে ভাসতে ভাসতে তোর এই দরখাস্ত তোকে চাকরি পাইয়ে দেবে। কি যেন ভেবে মামা বললেন, না, তোর মতো হাঁদরাম এটা পারবে না। ফুড়–ৎ শব্দে চায়ে চুমুক দিয়ে চায়ের দোকান থেকেই মামা কাগজ কলম জোগাড় করলেন।
লিখলেন,
প্রিয়তম পরম ভাগ্যবিধাতা!
এ অধম আপনার মহিমান্বিত চরণে নিজেকে নিবেদন করতে পেরে মহাধন্য। সমস্ত জীবন ধরে এই দীনতমের একটাই সাধনা, আর তা হলো আপনার মতো একজন মহামানবের চরণ চেটে জীবন যাপন করা। হীনতম এ অধম আপনার মহামহিম জীবনের সেবক হবে এই আশায়।
এসব তুমি কি লিখেছ মামা? আমি আপত্তি করলাম। কোথাকার কোন লোক, হয়ত চূড়ান্ত শয়তান মূর্খের শিরোমণি, সে আমার ভাগ্যবিধাতা হতে যাবে কেন? মামা বললেন, ভাগ্নে, টাকা হলো আসল মাল! সেইডা হাতে পাওনের লাইগাই তো ...।
আমি বললাম, সেটা হাতে পাওয়ার কোন দরকারই আমার নেই। এ কথায় মামা তেড়ে ফুঁড়ে উঠলেন। আমার পিঠে কয়েকটা কিল ঘুষি চালিয়ে বললেন, তাইলে বাড়ি থাইকা বার হয়ে যা। ভিক্ষে করে খাগে। পেটে নেই ভাত আবার চটাং চটাং কথা! এখন আমি যা বলব তুই তাই করবি। আমি ’যদি না করি’ বলার আগেই তিনি বললেন, যদি না করিস তাহলে তোর কোমরে দড়ি দিয়ে হাজতে পাঠাব। আমার যে একজন পুলিশ বন্ধু আছে তা কি তুই ভুলে গেলি? বিনা অপরাধেও যে কারও পিঠের ছাল তুলে নেয়া যায় সেই বোধ কি তোর এখনও জন্মায়নি?
মামার কথায় আমি সুড় সুড় করে রাজি হয়ে গেলাম কারন বিশ্বজুড়ে আইনের হাত সীমিত কিনÍু বে-আইনের ক্ষমতা অপরিসীম।
এখন আমার কাজ হবে চটকদার সব তেল উদ্ভাবন করা। যেমন, কথার তেল কাজের তেল অকাজের তেল ভাবের তেল অভাবের তেল এবং অনুভবের তেল। এসব তেলে আবার আমি রঙ চড়িয়ে এমন কান্ড ঘটাব যে তেলের নানান রঙের রকমারী কান্ড দেখে সকল তেল বিসর্জনকারী টাকমাথারা পর্যন্ত তাদের টাকে তেল ঘষার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়বে। এমন তেলেসমাতি ম্যাজিক আনব যে রাস্তার ফকির পর্যন্ত নিদেন পক্ষে দুটো করে কলুর বলদ পুষবে প্রতিদিন তেল ভাঙাবার জন্য!
আমার কথা শুনে মামা একেবারে থ। নিজেকে সামলে নিয়ে গদগদ হয়ে বললেন, এই তো ভাগ্নে, আমার ভাগ্নের মতো কথা! হাসিতে খলখল করে নিজের ভুড়িটা সামলে আমার পিঠে চেপে বসলেন তিনি। পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে বললেন, তাক ধিনাক ধিনাক ধিন ... ধিন তাক তাক ... তাক ধিন।
চাটুকারিতায় যেদিন যোগ দিলাম ’পরম ভাগ্যবিধাতা’ আমায় ডেকে বললেন, বুঝেছেন? মানুষ জীবটাই এমন পৃথিবী জায়গাটাই এরকম যে সবাই প্রশংসা পেতে চায়। যখন কেউ প্রশংসা করে মনে হয় যে হাওয়ায় ভেসে স্বর্গের পথে চলেছি! তা ব্যাপারটা যখন এতই মনোহর ভাবলাম যে আমার অফিসেই কেন একটা চাটুকারের পদ রাখিনা? তাই আপনাকে রাখা। অবশ্য কেউ কেউ বলে, চাটুকার পদ সৃষ্টি করে আমি নাকি টাকা অপচয় করছি! অধস্তনরা সবাই নাকি কম বেশি চাটুকার! যাই হোক, এখানকার কাজের নিয়ম কানুন তো সব বুঝে গেছেন? ’ইয়েস স্যার’ বললাম আমি। তিনি উপসংহার টানতে বললেন, তবে মূল কথা সেই একটাই। মানুষ জীবটাই এমন পৃথিবী জায়গাটাই এরকম যে সবাই প্রশংসা পেতে চায়। যখন কেউ প্রশংসা করে মনে হয় যে হাওয়ায় ভেসে স্বর্গের পথে চলেছি! অবশ্য ব্যাপারটা একটু মনস্ততাত্বিক। আমি আবার মনোবিজ্ঞানের খুব ভক্ত।
তা বলেন তো শুনি আপনার কাজটা আপনি ঠিক কিভাবে করবেন? এমন চাটুকারিতা করব স্যার, আমি বললাম, যে আপনি কেনো আপনার চেয়ারশুদ্ধ বাতাসে ভাসতে থাকবে। তিনি হে হে করে হাসলেন। আর আমি একা যদি না পারি আমার মামা এসে আমার সাথে যোগ দেবে। তবে স্যার অসুবিধা হচ্ছে যেখানে চাটুকারিতা বেশি সেখানে নিন্দায় কান পাতা দায়। কারন আপনার শত্রুর বিরুদ্ধে সত্য মিথ্যা যাই বলব আপনি খুশি হয়ে যাবেন। তা বটে, তিনি বললেন, এটা একটা তাজ্জব কথা বটে, অন্যের নিন্দা শুনলে মানুষ খুশী হয়। এও মনস্তত্ত্ব। কি বলেন, অ্যাঁ?
তিনি খানিকক্ষণ হেসে বললেন, আমার সেই বড় শত্রু বেয়াদব বেজন্মাটার নিন্দা করেন তো শুনি কেমন লাগে। আমি কয়েক ডজন গালি কষে ’বেজন্মাটার’ বিপক্ষে সব ধরনের বাজে কথা বলতে থাকলাম। খেয়াল করে দেখি যে ’ প্রিয়তম পরম ভাগ্যবিধাতা’ হাঁসের ছানার মতো খুশীতে প্যাঁক প্যাঁক করছে।
আমার বলা শেষ হলে তিনি বললেন, এটাও জব্বর জিনিস! তা এক কাজ করেন - আপনার বেতন দেব বাড়িয়ে Ñ আপনি চাটুকারিতাও করেন আবার নিন্দাও করতে থাকেন। আপনার পদবী হবে ’চাটুকার কাম নিন্দুক’। আমি বললাম, স্যার দুটো তো একসাথে হবে না। বরং আমার সেই মামাকে নিয়ে আসি। সে করবে চাটুকারিতা আর আমি করব নিন্দা। তিনি হেসে বললেন, তা বেশ বেশ - এইতো আমার দরদী বন্ধুর মতো কথা।
একথা শুনে মামা দশ হাত শূন্যে লাফিয়ে উঠলেন। বললেন, রসো বাছা! আমি তোমাকে এমন খেলা দেখাব যে তুমি দিশা খুঁজে পাবে না। এমন চাটুকারিতাই করব যে আমার জুতোর শুকতলা শুকে শুকে তোমার বাকি জীবনটা ক্ষয়ে যাবে তুমি রোধ করতে পারবে না।
জন্ডিসে ভুগে ও অন্যান্য কাজের কারনে মাস ছয় অফিসে যাইনি। ভেবেছিলাম চাকরিটা মনে হয় আর নেই - মামাকে তো আমি বিলক্ষণ চিনি। সেখানে গিয়ে আমি রীতি মতো থমকে গেলাম। যাওয়ার সাথেই আদর আপ্যায়ন। শুনলাম দলিল দস্তাবেজ সব দখল করে জায়গা মতো ঘুষ মেরে মামা সব হাতিয়ে নিয়েছেন। আর তিনি? আমি প্রশ্ন করলাম। আমার প্রশ্নে সবাই আৎকে উঠলেন, ও হারামখোর তো এখন বড় হুজুরের জুতো সাফ করে।
মামার ঘরে ঢুকে আমি সত্যিই অবাক। সেদিনের সেই ভাগ্যবিধাতা মামার জুতো হাতে কার্পেটের ওপর বসে। তাকে দেখে মনে হলো যে ছলে বলে কৌশলে মামা তাকে পাগল বানিয়ে ফেলেছে। আমার খুব অনুতাপ হলো, কোন কুক্ষণে এখানে আমি চাকরির আবেদন করেছিলাম? না হলে মামা আজ এই অপকর্ম করার সুযোগ পেত না। আমি বললাম, আমি যাই মামা পরে কথা হবে। তুমি অযথা মন খারাপ করছ ভাগ্নে; আমার মতো বহু লোক এই পৃথিবীতে আছে। তার প্রমাণ আমি তোমাকে হাতে নাতে দেব। মামা একটা গান চালু করলেন। বললেন, এ গানটা কিন্তু আমি লিখি নি, অবশ্য আমার বিদ্যার দৌড় তোমার ভালোই জানা আছে। তা শুনে দেখ বিদ্যা বুদ্ধিওয়ালারা কেমন চিন্তা-ভাবনা করছে আজকাল -
আমি তেলের কারবারী,
এমন তেলের ঘটাব আমদানী
যার মাজা-ঘষায় উতরে যাবে
নষ্ট ভ্রষ্ট সঠিক বলে
তবু সে কথা কেউ জানবে না।
আমি তেমন কারবারী,
মিথ্যাটাকে সত্য চালে
চালিয়ে দিয়ে যে করবে
সকল কারবার-ই
তবু তার তুলনা মিলবে না।
বুদ্ধি যতই থাকুক ঘটে
সেই তেলের ফাঁদে পিছলে গিয়ে
আছড়ে যাবে
তামাম বুদ্ধিজীবী
বুদ্ধি কিছুই খাটবে না।
আমি এমন পরজীবী,
যে পরিপোষক সকলকে তার
রক্ত শুদ্ধ চোষণ করে
সকলই তার নেবে শুষে
অস্থিটুকু ছাড়বে না
তবু সেকথা কেউ বুঝবে না।
২| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:০৯
ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: চাটুকার ????????????????!!!!!!!!!!!!!!!!!!????????????
৩| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৪৮
আজমান আন্দালিব বলেছেন: হাহাহাহা ...বেশ হয়েছে ...
৪| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:১১
অতৃপ্ত অনুভূতি ! বলেছেন: ভালো ।
৫| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩০
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
ধন্যবাদ, আবু সিদ।
৬| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:৫০
আবু সিদ বলেছেন: প্রিয় পাঠক ও লেখক বন্ধুরা, আপনাদের মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৩৪
লেখোয়াড় বলেছেন:
একজন চাটুকার চাই’............... আমি আছি, কি করতে হবে কন।