নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু সিদ

আবু সিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের শ্রেষ্ঠত্ব ও শ্রেষ্ঠ জীবন

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪৫

মানুষ বিশ্বজগতের আর সবার থেকে শ্রেষ্ঠ। তার এই শ্রেষ্ঠত্ব তার চেতনার ঐশ্বর্য্য,ে মননের শক্তিতে। তার চিন্তার খনি তাকে ঋণী করে আসছে হাজার হাজার বছর ধরে। বিশ্বজগতে আর যে কারও কথা বলিনা কেন তাদের কোন ধরনের বিকাশ আমাদের চোখে পড়েনি। আজকের গরুরা হাজার বছর আগেকার গুরুগুলোর মতোই। কোন চিড়িয়াখানার একটি বাঁদর আর সব বাঁদরেই মতো। কিন্তু মানুষের বেলায় তা খাটে না। প্রতি দিনের প্রতিটি ঘন্টায় সে নিজেকে নতুন নতুন চিন্তায় ও রকমারী স্বপ্নে মহিমান্বিত করে তোলে। সে মহাজগতের প্রান্তে প্রান্তে নিরীক্ষণ করে বের করে আনে অজ¯্র অজানা। খুঁজে নেয় সে অসংখ্যা অস্তিত্বের ভিতরকার সূক্ষèতম ঘটনা। চোখে দেখা যায় না এমন অগণিত কিছুকে সে দেখে। কানে শোনা যায় না এমন অজস্র সুর সে শোনে। প্রকৃতি তাকে যা দিয়েছে তার থেকে অনেক বেশি কিছু সে নিজের করে পায়। নিজের অর্জন যেহেতু তার দিনে দিনে বেড়ে যায় কর্মের ভান্ডার তার তাই তেমনি ভারী হয়ে ওঠে। মরতে বসেছে এমন মানুষটিও চায় জীবনে উন্নতি করতে। এই যে সে উন্নতি করতে চায় সেটা কি ধরনের উন্নতি? অর্থাৎ, তার মনে উন্নতির ধারনাটা কিরকম?



উন্নতি বলতে আমরা বেশির ভাগ মানুষ ব্যক্তিকেন্দ্রিক উন্নতিকে বুঝিয়ে থাকি। আর বর্তমান কালে ব্যক্তিকেন্দ্রিক উন্নতি হলো, ধন-জন-মান আর শক্তির মালিক হওয়া, তা যে প্রকারে হোক। ফলে অজস্র খারাপ বুকের গভীরে গজিয়ে মস্তিস্কের থেকে লাফিয়ে পড়ে ঘরে-বাইরে, পথে-ঘাটে-প্রান্তরে। এভাবে অবিচার আর নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়ে মানুষের সমাজে। আমরা ভাবি, অন্যের ক্ষতি করেও যদি জীবনে উন্নতি আসে তবে সে জীবনও উন্নত জীবন। আবার এসব উন্নত জীবনের ভিতর যদি কেউ কোন ভাবে নিজের নাম-পরিচয়টা অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন তবে তার জীবন শ্রেষ্ঠ জীবন। বিখ্যাত অভিনেতা অভিনেত্রী খেলোয়াড়ের জীবন, রাজনীতিবিদ রাষ্ট্রশাসকের জীবন, কবি শিল্পীর জীবন এসব শ্রেষ্ঠ জীবন! আর কৃষক তাঁতী জেলের জীবন, ব্যবসায়ী চাকুরীজীবি শ্রমিকের জীবন ব্যর্থ জীবন। পৃথিবীর পাড়ায় পাড়ায় এই মতামত খুব প্রশংসনীয় ও গ্রহণযোগ্য। সে গ্রহণযোগ্যতা এতটাই যে হাতে গোনা গুটিকয় মানুষ ছাড়া অন্যেরা ভাবেন না যে একজন তাঁতী বা কেরানীর জীবন অথবা ফুটপাথের এক ফেরীওয়ালার জীবনও হয়ে উঠতে পারে শ্রেষ্ঠ জীবন।



আসলে আমরা অন্ধকারের মোহে আলোর ভোরকে দেখে উঠতে পারিনি। মানব জীবনের চেতনার আলোয় আমাদের ঘুমই ভাঙে না। ঘুমের নেশা চোখে নিয়ে আমরা মধ্যদুপুর পার করে ঢুলতে ঢুলতে বেলার শেষে চমকে উঠে আবোল তাবোল বলি। শেষবেলার এতটুকু ম্লান আলোকে ভাবি দিনের সবটুকু আলো, রাতের স্মিত আলোকে মনেকরি শ্রেষ্ঠ আলো।



একজন লেখক যিনি সচেতনভাবে তার লেখাকে করে তুললেন স্রেফ পণ্য, একজন রাজনীতিদি যার লক্ষ্য জনতার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়া তাদের জীবন কি কারনে শ্রেষ্ঠ জীবন? তার থেকে অনেক ভালো পথের ফেরিওয়ালা কিংবা অফিসের পিয়নটা যারা সততার সাথে সংসারে নিজের নিজের দায়িত পালন করেন। সাবার অজান্তে মরেও যান তারা একদম নীরবে। অথচ এসব জীবন আমাদের চোখে হীন, এসব মানুষেরা আমাদের দৃষ্টিতে ছোটলোক। এরা নিজেরাও সঙ্কুচিত থাকেন তাদের পেশাগত কারনে। মানুষ হিসাবে সব মানুষের যে সম্মান প্রাপ্য আমরা অন্যকে তা দিতে কুণ্ঠিত। আমরা নিজেরা নিজেরদেকে খুব বড় ভাবি। আর এতটাই বড় ভাবি যে অন্যেরা আমাদের চোখে কেবলই হীন। হায়, কী দীনতা আমাদের জীবনে!



এই দীনতা দিনে দিনে ক্রমে ক্রমে বেড়ে চলেছে। মানুষ এখন পৃথিবীকে দেখে বাণিজ্যের আলোয়, মুনাফা-র চশমা চোখে পরে। মানুষ মানুষকে চেনে না, সে জানে না সেবার মাহাত্ম্য। সে তার সব কাজে যদি সেবার মহান অনুভূতির যোগ ঘটাত তাহলে বিক্রেতা ক্রেতার সাথে, শিক্ষক ছাত্রের সাথে, চিকিৎসক রোগীর সাথে, রাজনীতিক জনতার সাথে, মন-ভোলানো আচরণ করতো। কোন কজেই আজ আমরা তা করছি না। রোমে রোমে মানুষের নির্দয় লোভ। লোভের কারনে আজ আমরা অন্ধ বধির। বাজার অফিস মন্ত্রণালয় শিক্ষালয় হাসপাতাল কোথাও মানুষ মানুষকে সেবা দেয়ার মন নিয়ে বসে নেই। সব ছাদের নিচে একই মন্ত্র: টাকা-ই ঈশ্বর। আমরা সেই ঐশ্বর্যমন্ডিত ঈশ্বরের ক্রীতদাস। একটু ভাবলে বুঝতে পারি যে আমরা সবাই সবার। আমরা একে অন্যের সাথে হাজারো সম্পর্কে সংযুক্ত। এসব ভুলে আজ আমরা ধন জন মানের মিথ্যে মোহে মুখর। আমরা অর্থহীনতার পিছনে জীবনের অর্থ খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত। আমরা জীবনের সেই শ্রেষ্ঠত্বকে বুক পেতে ব্যাকুল হয়ে বরন করি যা অন্য অনেকের ক্ষতির কারন।



বাস্তবে মানুষ নিজের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দেয় পারমাণবিক বোমা ফুটিয়ে উল্লাস করে। আমরা ভুলতে বসেছি যে পৈশাচিক আচরণের দ্বারা পশুত্বই প্রকাশিত হয়, শ্রেষ্ঠত্ব নয়। তা যদি কোনো ধরনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করে তবে তা মানুষ্যত্বের নয়, অমানবিকতার। অমানবিকতা এখন মানুষের জগতে প্রশংসনীয়। অমানবিক হওয়ার কারনে মানুষ আজ পুরস্কৃত অভিনন্দিত । মনুষ্যত্বকে আমরা ভীরুতা ভেবে ভীত। এভাবে জীবনের শত অর্থকে ঢেকে দিয়ে অজস্র অনর্থ প্রকাশিত হচ্ছে প্রতিদিন আমাদের জীবনে। আজ জগতের পথে পথে অসংখ্য মূক জড় অগণিত পশু-পাখি-প্রাণ সবাই এই কথা বলছে।



আমাদের এই হীনতা স্বজাতীয়ের প্রতি যেমন তেমনি তা আর সব প্রাণি-উদ্ভিদের সাথেও। আমাদের দুর্বৃত্ত প্রাণের শিকার হয়ে অসংখ্য প্রাণী প্রজাতি এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আরও অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। আমরা সবাই বড় হতে চাই, জীবনে উন্নতি করতে চাই, শ্রেষ্ঠ মানুষ হতে চাই। আমাদের চাওয়া খ্বু উত্তম। কিন্তু এ চাওয়া নিছক লোক দেখানো। যদি সত্যিই আমরা উত্তম হতে চাইতাম, হতে চাইতাম শ্রেষ্ঠ তবে তা নীরব কর্ম হয়েও ধ্বণিত হতে জীবনে। তার ফল দেখা যেত আমাদের নিজের জীবন ছাড়িয়ে অন্য অনেক জীবনে। কিন্তু আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব যেন শুধু বন্দী আর্তনাদ, অন্যের শোনার মতো শব্দ বা সুর নয়।



আমরা সত্য থেকে যত দুরেই থাকতে চাই না কেন তা বাঁধভাঙা আলো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে আমাদের দেহে প্রাণে। জীবনের অসংখ্য ঘটনায় আমরা বুঝি, মনুষ্যত্বেই নিহিত মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব। এ সত্য আজ প্রতিষ্ঠিত না থাকলেও তা আছে আমাদের অবচেতনে। অবচেতনের সেই অতল সাগর হতে তুলে আনতে হবে তাকে, দিতে হবে সম্মান। কারন দুর্বৃত্ত যখন প্রশংসা পেতে থাকে তখন সমাজ দুর্বৃত্তেরই জন্ম দেয়। আবার মনুষ্যত্ব সম্মান পেলে বিকাশ ঘটে মানবিকতার, ঘটে আপামর মানুষের কল্যাণ। মানব জীবন অর্জন করে তার শ্রেষ্ঠত্ব।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.