নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু সিদ

আবু সিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৭

বাঙলা ভাষার অভিধানগুলোতে ‘সাহিত্য’ শব্দের নানান অর্থ পাওয়া যায়। বাংলা একাডেমীর ব্যবহারিক বাংলা অভিধানের মতে, সাহিত্য হলো সহিতের ভাব বা মিলন। [সপ্তদশ পুনর্মুদ্রণ: জানুয়ারি ২০১৪]। আকাদেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধানে বলা হচেছ, সাহিত্য (সং)= সহিত+য (ব)- সংসর্গ, মিলন। [পশ্চিবঙ্গ বাংলা একাডেমী। প্রথম প্রকাশ ২০মে ১৯৯৯।]। এই অর্থ থেকে আমরা বলতে পারি যে সাহিত্য হলো সংসর্গ (সং (সম+  সৃজ+অ)বি-একত্র মেলামেশা, সঙ্গ, মিলন, সম্পর্ক, সংস্রব)। অর্থাৎ, সাহিত্য হলো সঙ্গ; এবং, সর্বোপরি, সাহিত্য হলো মিলন। এই মিলন, এই সঙ্গ, এই সংসর্গ কার সাথে কার? কোন সময়ের সাথে কোন সময়ের? এর স্থানই বা কোথায়?



এ মিলন মানুষের সাথে মানুষের। চলতি কালের সাথে চলতি কালের, বিগত কালের সাথে এই কালের এবং কখনো বর্তমানের সাথে ভবিষ্যতের। এর স্থান ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের মন। কিসের মাধ্যমে ঘটে এই মিলন? কে বা ঘটায় তা?এই মিলন ঘটে অজস্র ঘটনার ঘনঘটার মধ্য দিয়ে । যে ঘটনা ঘটে যা ঘটছে বা ঘটা সম্ভব, অথবা যা কিছু ঘটতে পারে আমাদের বোধের সীমানার ভিতর তার মাধ্যমে ঘটে এই মিলন। ঘটনার ঘনঘটাগুলো দলে দলে এসে মেঘের মতো জড়ো হয় যে কোন সাহিত্য। পরে সেই ঘটনার মেঘ ঘনীভূত হয়ে বর্ষণ করে অনুভবের বৃষ্টি বিন্দু বারি। কোন ঘটনার অংশ না হয়েও অংশীদার হতে পারে মানুষ তার চির ‘কল্পনাপ্রবণতা’র দ্বারা। সাহিত্যিকেরা যেমন কল্পণাপ্রবণ সাহিত্যের পাঠকেরাও তেমনি। কল্পনার এই অংশীদারিত্বই লেখক ও পাঠককে এক সূতোয় বাঁধে। বিশেষ ঘটনাটা তাই কোথাও কোন কালে না ঘটলেও সংঘটিত হয় তা আমাদের মনে।



মানুষের অনুভব অদৃশ্য, অশ্রুত। তা স্পর্শের অতীত, অতীত ঘ্রাণেরও। তাকে অনুমান করতে পারে না কোন চোখ, বরণ করতে পারেনা কোন কান বা নাক অথবা কোন সংস্পর্শ। কেবল অনুধাবন করা যায় তাকে মেধায় ও মননে। সাহিত্য হলো সেই শক্তি যা নিজ নিজ জীবনের বাইরেও অসংখ্য জীবনকে ঘটনা, গল্প বা বক্তব্যের মাধ্যমে অনুধাবন করাতে পারে আমাদের। সাহিত্য তার অপূর্ব শক্তি দিয়ে আমাদেরকে অত্যন্ত সহজে পৌঁছে দিতে পারে আমাদের দূর যেকোন সময়ের যেকোন স্থানের মানুষের ভূবনে। তাদের সুখ-দুঃখের বর্ণনার মধ্য দিয়ে দোলাতে পারে আমাদের হৃদয়। পাঠক যখন পড়ছেন কোন সাহিত্য তখন তিনি তার অনুভবের নৌকায় ভেসে চলছেন সাহিত্যেকের সৃষ্ট জীবন-সাগরের স্রোতে। সেই সাগর পাড়ি দিতে তিনি অক্লান্ত, এবং অনেক সময়ই, আনন্দিত।



যখন তিনি সেই পথে ভেসে চলেন তখন তিনি একাতœতা অনুভব করেন। বিশেষ ঐ সাহিত্যকর্মটির পাত্র-পাত্রীর সাথে। হয়ত পাত্র-পাত্রীরা অতীতে ছিলেন। ধরা যাক, জীবনীমূলক কোন উপন্যাস বা ঐতিহাসিক উপন্যাসের কথা। এখানে ভাবতে পারি ওৎারহম ঝঃড়হব এর উপন্যাস ঞযব অমড়হু ধহফ ঃযব ঊীংঃধপু-র কথা। মাইকেল এঞ্জেলোর জীবনকে কেন্দ্রে লেখা হয়েছে উপন্যাসটি। ভাস্কর ও চিত্রকর মাইকেল এঞ্জেলো বাস্তবে পাঠকের জীবনে জড়িত না থাকলেও উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রকে যেন চেনা-জানা মনে হয়। তাদের দুঃখে আমরা দুঃখিত হই, আনন্দ লাগে তাদের আনন্দে। যদি বলা হয় এ্যালেক্স হ্যালির ’ঞযব জড়ড়ঃং’এর কথা যেখানে রয়েছে আফ্রিকার মানুষদের ক্রীতদাস হবার বিবরন, অথবা, আন্তন চেখভ এর ছোটগল্প যা আমাদের মনে জাগায় বেদনার প্লাবন। এসব সাহিত্য আমাদের বোঝায় যে বোধের সংক্রমণ অবিশ্বাস্য দ্রুতিতে জয় করে সহস্র হৃদয়! সাহিত্যের চরিত্রের দ্বারা পাঠক যেমন বিচলিত হন তেমনি আক্রান্ত হন তাদের জীবনের সংকট দ্বারা। এস্কাইলাসের নাটক ’শৃঙ্খলিত প্রমিথিউস’ যখন পড়ি বা তার অভিনয় দেখি তখন আমরা আক্রান্ত হই মানুষের মুক্তির স্বপ্নে। কোলরিজের এনশিয়েন্ট মেরিনার কবিতা আমাদের মনে জাগায় ন্যায়রায়ণতার স্বপ্ন।



অর্থাৎ, সাহিত্য আমাদেরকে প্রথমত আক্রান্ত করে অনুভবে। পরে তা আমাদের চেতনাকে নিয়ে যায় জীবনের পথে। আর আমাদের চেতনা নিয়ে সাহিত্যের কাজটি এক ধরনের মানবিক কর্ম। সাহিত্য তাই সব মানুষের জন্য নির্মাণ করে মানবিকতার মহান সৌধে পৌছানের এক উন্মুক্ত দুয়ার। তবে ব্যাপারটা সবসময় যে মানুষকে মানবিকতার পথে আন্দোলিত করে এমন নয়। পরোক্ষ উদ্দেশ্য যাই হোক প্রত্যক্ষ ও সরাসরি অনুভবের সংক্রমণ ঘটানোও হয়ে উঠতে পারে সাহিত্যের মুখ্য উদ্দেশ্য। যেমন, সোফোক্লিসের ‘ইডিপাস রেক্স’ আমাদের অনুভবের মহাবিশ্বকে কেবল আন্দোলিতই করেনা, তা আমাদের মানব-বিশ্বাস ও মানব-আচারকে শিহরিত করে। আমাদেরকে জানায় যে মানব জীবনের ঘটনা রাশির সব কিছুতে যেমন আমাদের হাত নেই তেমনি অনুভবের দুনিয়াটাও আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সেখান থেকে বুঝি জীবনের এক অভাবনীয় দর্শন। সাহিত্যিক হয়েও তিনি হয়ে ওঠেন শিক্ষক। তার কাজ হয়ে ওঠে মানব জাতির চিরকালীন সম্পদ।



মানব-প্রাণ আর সব প্রাণের মতো নিজেকে প্রকাশ করতে চায় প্রতি নিমেষে। কিন্তুতার নিজের কি আছে যা সে প্রকাশ করবে? সে প্রকাশ করতে চায় অপ্রকাশিতকে, মূর্ত করতে চায় বিমূর্তকে। অর্থাৎ, যত কিছু মানুষ প্রকাশ করে তার সবই এক সময় ছিলো অপ্রকাশিত। অপ্রকাশিতকে প্রকাশ করার এই আয়োজনে অংশ নিয়েছে মানব ভাষা। শিল্পকলা। ভাষা কেবল অপ্রকাশিতকে প্রকাশ করেনা, তা প্রকাশ করা সম্ভব এমন বিষয় বা ঘটনাকে সহজে প্রকাশ করে ও পৌঁছে দেয় মানুষের চেতনায়। ভাষা তাই সাহিত্যের শরীর। তার মাঝে প্রাণ সঞ্চার করে পাঠকের কল্পনা। যে কোনো সাহিত্য কর্মকে তাই ব্যাখ্যা করা যায় ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। একই সাহিত্য পাঠ করে বিভিন্ন পাঠক তাই অর্জন করেন বিভিন্ন অনুভূতি। সাহিত্য তাই লেখক ও পাঠকের যৌথ প্রয়াস; তাকে স্রেফ লেখকের ভূবন ভাবার কোন সুযোগ নেই।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০৩

সরদার হারুন বলেছেন: ++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++

২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:২৮

সুমন কর বলেছেন: ভালো বলেছেন।

৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৬

মুহম্মদ ইমাম উদ্দীন বলেছেন: সাহিত্য তাই লেখক ও পাঠকের যৌথ প্রয়াস; তাকে স্রেফ
লেখকের ভূবন ভাবার কোন সুযোগ নেই।

চমৎকার বিশ্লেষণ।

৪| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩০

বাংলার পাই বলেছেন: সাহিত্য আমাদেরকে প্রথমত আক্রান্ত করে অনুভবে। পরে তা আমাদের চেতনাকে নিয়ে যায় জীবনের পথে। আর আমাদের চেতনা নিয়ে সাহিত্যের কাজটি এক ধরনের মানবিক কর্ম। সাহিত্য তাই সব মানুষের জন্য নির্মাণ করে মানবিকতার মহান সৌধে পৌছানের এক উন্মুক্ত দুয়ার।-----------------সহমত।

৫| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫৯

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: চমৎকার বিশ্লেষণ। ৩য় প্লাস।

৬| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:২৯

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
সুন্দর পোস্ট ৷

৭| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:১৬

আবু সিদ বলেছেন: মতামতের জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.