![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ সকালটা রোদে ধুয়ে যাচ্ছে। সূর্যের তাপে জ্বলে যাচ্ছে গা। আমি বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নেমেছি মাত্র। কিছু দূর হেটে গিয়ে বাসে চড়ব। খান-খন্দে ভরা গর্তে গত রাতের বৃষ্টির পানি জমে আছে এখনও। হাঁটা অবস্থাতেই অবিবেচক এক গাড়ি গায়ে আমার কাদা-পানি ছিটিয়ে ছুটল সামনে। আমি কিছু বলার অবসরও পেলাম না। আর বলার আছেই বা কি! কি বলব? কাকে বলব? কথা আজ আর ভালো বা মন্দে বিভক্ত নয়। আজ যুক্তিবোধ ও অযৌক্তিকতা মূল্যহীন। কথা আজ ¯্রফে দুই ধরনের, ক্ষমতাবানের কথা আর অক্ষমের কথা!
রাষ্ট্র ও সমাজের নিরিখে আমি এক অক্ষম মানুষ। আমার কথা তাই যে কোনো খারাপ কথার থেকেও খারাপ। অন্যদিকে ক্ষমতাবানের মুখ থেকে প্রতি মুহূর্তে নিঃসৃত হয় কস্তুরিগন্ধময় বাণী।
সিটিং সার্ভিস বাসে উঠে বসতে বসতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষে ভরে গেল গাড়িটা। ভাড়া দেয়ার সময় কেউ কেউ বলল, সিটিং এর ভাড়া নিতাচ আবার দাঁড়া করায়াও লোক নিতাচ - ব্যাপারটা কি? কন্ট্রাকটর বলল, ভাড়া তো মালিকে নিব; আমরা চলুম কেমন তারা? আরেক জন যাত্রী বলল, মালিক তগো পয়সা দেয় না? যেন শোনেনি এমন ভাবে সে ভাড়া কেটে চলল।
কিছু দূর গিয়ে এক মহা যানজট। কোন মহামানুষ চলেছেন এ পথে, আর তার চরণ ধূলায় ধূলায় ধন্য হতে হতে আশপশের রাস্তা-ঘাট সব উপচে উঠেছে জ্যামে। এ জট যে কখন ছাড়বে তার ঠিক নেই। জ্যামের এ অবস্থা দেখে আৎকে উঠলাম আমি। অফিসে কোনো মাসে তিন দিন লেট হলে এক দিনের বেতন কাটা। মুখ ফসকে কথাটা বেরিয়ে পড়ল আমার। পাশের যাত্রী ওদিকের এম্বুলেন্স দেখিয়ে বললেন, আপনার তো এক দিনের বেতন! ওর যে জীবনটাই যেতে পারে!
কথা ঠিক। এক দিনের বেতন কেন পুরো এক দিনের অনাহারও পুষিয়ে নেয়া যাবে। কিন্তু জীবনটা গেলে? অফিসের দূরত্ব এখান থেকে দু-এক কিলো মিটার হলে হাঁটা শুরু করতাম! কিন্তু দূরত্ব এখনও পাঁচ কিলো মিটারের বেশি।
অফিসের দেরি এড়াতে পারলাম না। কিন্তু এখনও সুযোগ আছে বসের নির্দয় দৃষ্টি এড়াবার। বাস থেকে নেমে কিছু না ভেকে তাই এক লাফে রিক্সায় উঠে পড়লাম। রিক্সা থেকে নেমে রিক্সাওয়ালাকে বিশ টাকা দিতে সে যেন মহাসাগরে পড়ল। ’ঠকায়েন না ভাই’ সে বলল, ’আর দশ ট্যাকা দেন’। প্রতিদিন বিশ টাকায় আসি, বললাম আমি। আমরাও আসি, সে বলল,কী রোদ পড়ছে দেখছেন? শুধু বাহানা! রোদ হলে বেশি বৃষ্টি হলে বেশি শীত হলেও বেশি। কম কোন দিন? রিক্সাওয়ালা যেন নাছোড় বান্দা, তাইলে ভাড়া না জিগায়া উটলেন ক্যান? সে বলল, আমার টাইম লস করায়েন না।
অফিসের সামনে এরকম একটা বিতর্কে আমি জড়াতে চাই না। মানে মানে দশ টাকা বেশি দিয়ে এ যাত্রা রেহাই পেলাম।
অফিসে ঢুকে কাজের চাপে পিষে যেতে হলো দুপুর পর্যন্ত। কোন ফুরসত নেই এক কাপ চা খাবারও। অবশেষে বেলা দেড়টায় পাওয়া গেল লাঞ্চ-ব্রেক।
খাওয়ার আগে এখানে টিকিট কাটতে হয়। টিকিট কিনে মিনিট দশেক দাড়িয়ে থেকে বসার একটা জায়গা পেলাম। তীব্র ক্ষুধায় খাওয়াও শুরু করলাম গো-গ্রাসে। কিছুটা খেয়ে মনে হলো, তরকারীটা যেন বাসি! খাওয়া না থামিয়ে পারলাম না এবার। খাবারের থালা নিয়ে সোজা কাউন্টারে হানা দিলাম। মিয়া ফাজলামি করেন, না? পঁচা বাসি খাওয়াইতেচেন? আশেপাশের আরও কয়েকজন এসেছেন একই অভিযোগ জানাতে।
অভিযোগের পর অভিযোগ শুনে শুনে লোকটার চোখ মুখ কপাল কুচকে গেল। চেহারা যেন উত্তপ্ত কয়লা। সে চিৎকার দিয়ে উঠল, আপনারা আমারে ধরেন ক্যান? আমি কি করুম! জি. এম. স্যাররে প্রতি মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেওন লাগে। পত্যেক বেলায় ফাউ খায় বিশ পঁচিশ জন। আমার তো ব্যবসা চালান লাগবো!
আবার মনে হলো, কি বলব? কাকে বলব? চুপচাপ হাত ধুয়ে আমি বেরিয়ে এলাম বাইরে। বিশ টাকা দিয়ে রুটি কলা কিনলাম। পান-বিড়ির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট-বিড়ির ফ্রি ধোঁয়ার সাথে গিললাম সেগুলো। এর বেশি কিছু করার সুযোগ আমার নেই। আরও অনেক কাজ পড়ে আছে অফিসে। আর যাই হোক বেতনটা যেন ঠিক মতো পাই। প্রতি মাসে মায়ের ওষুধের টাকাটা যেন ঠিক ঠিক পাঠাতে পারি। বাসা ভাড়ার টাকাটাও দিতে হবে। আর আমার স্ত্রী বলছিলো যে কিছু দিন হলো তার শরীরে কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে, বমি বমি লাগছে। তার প্রেগনেন্সি টেস্টও করাতে হবে।
১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:০৫
আবু সিদ বলেছেন: মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:১৫
বাংলিশ বাবু বলেছেন: রোদ হলে বেশি বৃষ্টি হলে বেশি শীত হলেও বেশি। কম কোন দিন?
ভাল লেগেছে ।।
১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:০৫
আবু সিদ বলেছেন: মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
৩| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২৭
আমিনুর রহমান বলেছেন:
বাস্তব চিত্র +
১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:০৬
আবু সিদ বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৫৬
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অসহ্য ব্যাপারসেপার!
আপনার কিছুবাক্য বেশ কাব্যিক| ভাল লেগেছে