নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু উবাইদাহ আল হিন্দী আমি ইসলামী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখা লেখি করি

আবু উবাইদাহ আল হিন্দী

লেখক, দ্বায়ী, এক্টিভিস্ট

আবু উবাইদাহ আল হিন্দী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিয়ানমারে চীন আমেরিকার লড়াই, ভারত রাশিয়ার অবস্থান

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:৪৭




মিয়ানমারে চীন যুক্তরাষ্ট্র দেশ দুটিরই বেশ শক্ত প্রভাব রয়েছে। এটি শুধু ভূরাজনীতিকে কেন্দ্র করে নয় বরং এর পেছনে ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, এবং অর্থনৈতিক কিছু বিষয়ও রয়েছে। মিয়ানমারে চীনের প্রভাব কেন বেশি শক্তিশালী, অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র কেন তুলনামূলকভাবে দুর্বল এর কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসবে।
--
চীনের প্রভাব মিয়ানমারে:
১. ঐতিহাসিক সম্পর্ক:
চীনের সাথে মিয়ানমারের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ৪৮ সালে ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা লাভের আগ থেকেই চীনের সমাজতান্ত্রিক দল সেখানকার সমাজতান্ত্রিক ধারার আদর্শে পরিচালিত বিদ্রোহী দলগুলোর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। চীনের জন্য মিয়ানমার একটি কৌশলগত অবস্থানে থাকা দেশ, কারণ এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ পথ। চীন চায় মিয়ানমারের ভূমি ব্যবহার করে বঙ্গোপসাগরে নিজের নৌবাহিনীর প্রভাব বৃদ্ধি করতে এবং ভারত মহাসাগরের দিকে নিজের প্রবেশদ্বার খুলে রাখতে।
-
বিদ্রোহী দলের সাথে সম্পর্ক: মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে চীনের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে, United Wa State Army (UWSA) এবং Kachin Independence Army (KIA) এর মতো বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো চীনের কাছ থেকে অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা পেয়ে আসছে। চীন এই বিদ্রোহী দলগুলোকে ব্যবহার করে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব খাটায় এবং সরকারকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে। বর্তমানে যেসব গণতন্ত্রপন্থী দল সশস্ত্র ট্রেনিং নিচ্ছে তারাও চীনপন্থী দলগুলোর কাছ থেকে ট্রেনিং নিচ্ছে বলা জানা যাচ্ছে।
-
২. অর্থনৈতিক প্রভাব:
চীন মিয়ানমারের অন্যতম অর্থনৈতিক অংশীদার। মিয়ানমারের বিভিন্ন খাতে চীনের অনেক বিনিয়োগ রয়েছে, এরমধ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জ্বালানি পাইপলাইন, এবং খনিজ সম্পদ খাত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মিয়ানমারের মোট ঋণের ৪০ শতাংশ চীনের কাছ থেকে নেয়া, এরফলে মিয়ানমারকে চীনের কাছে একপ্রকার দায়বদ্ধই বলা যায়।
-
বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI): মিয়ানমার চীনের "বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ" এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই প্রকল্পের আওতায় চীন মিয়ানমারের সাথে অবকাঠামো, সড়ক ও রেলপথ উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে, যা মিয়ানমারকে চীনের অর্থনৈতিক করিডোরে পরিণত করছে। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে চীন মিয়ানমারে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি করছে।
জ্বালানি পাইপলাইন: চীন মিয়ানমারের বঙ্গোপসাগর অঞ্চল থেকে উত্তোলিত তেল গ্যাস চীনের ইউনান প্রদেশে সরবরাহের জন্য পাইপলাইন তৈরি করেছে, এর ফলে চীনের মালাক্কা প্রণালীর উপর নির্ভরতা কমেছে। যা একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পদক্ষেপ।
-
৩. রাজনৈতিক সম্পর্ক:
শাসকগোষ্ঠী জান্তার সাথে চীনের সম্পর্ক বহু পুরনো। আমেরিকা এবং পশ্চিমা দেশগুলো যখন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে জান্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছিল চীন তখন তাদেরকে বিভিন্নভাবে সমর্থন দিয়ে গেছে। এই সমর্থনের ফলে চীনের সাথে জান্তার সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
-
জাতিসংঘে চীনের ভেটো: জাতিসংঘ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যখনই কোনো পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করেছে অধিকাংশই চীনের ভেটোর কারণে আটকে গেছে। এই কারণে মিয়ানমার জানে যে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে চীনের সমর্থন তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
--
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মিয়ানমারে:
-
১. মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের এজেন্ডা:
যুক্তরাষ্ট্র সারাবিশ্বেই গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের সবক শুনিয়ে আসছে। এই নীতির ফলে তারা মিয়ানমারের সামরিক শাসনকে সমর্থন করেনি। বরং তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ১৯৯০-এর দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সামরিক সরকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছিল, যার ফলে দুই দেশের সম্পর্ক ছিল খুবই দুর্বল।
-
অং সান সুচির সাথে সম্পর্ক: ২০১৫ সালে মিয়ানমার যখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং নির্বাচনে অং সান সুচির দল জয়লাভ করে, তখন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে। কিন্তু ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর সেই সম্পর্ক পুনরায় অবনতির দিকে যায়।
-
২. অর্থনৈতিক বিনিয়োগের ঘাটতি:
মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের পরিমাণ খুবই অল্প, মানবাধিকার ইস্যুতে একেরপর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে তারা মিয়ানমারের অবকাঠামো ও খনিজ শিল্পে উল্লেখযোগ্য কোনো বিনিয়োগ করতে পারেনি। ফলে, চীনের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রভাব অনেক কম।
-
৩. কৌশলগত গুরুত্ব:
যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের প্রভাব খর্ব করার জন্য নানানভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু এরজন্য তারা মিয়ানমারকে কৌশলের অংশ মনে করেনা। এই কারণে মিয়ানমারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ এবং বিনিয়োগ দুটিই কম। পক্ষান্তরে চীনের জন্য মিয়ানমার গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ, বিভিন্ন কারনে চীনের জন্য মিয়ানমার বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
--
কেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব চীনের তুলনায় কম?
-
১. ভৌগলিকভাবে মিয়ানমার চীনের প্রতিবেশী-
মিয়ানমার চীনের প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় চীনের জন্য প্রভাব বিস্তার করা সহজ। চীনের সাথে মিয়ানমারের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, ভৌগলিক দিক থেকে পাশাপাশি হওয়ার কারণে চীনের জন্য প্রভাব বিস্তার করা সহজ হয়েছে।
-
২. অর্থনৈতিক বিনিয়োগের তারতম্য:
চীন মিয়ানমারে বিপুল পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করেছে। চীনের Belt and Road Initiative (BRI)-এর অধীনে মিয়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং অনেকগুলো প্রকল্পে চীন হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা তাদের প্রভাবকে আরো মজবুত করেছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার ইস্যু এবং সামরিক শাসনের কারণে এত বড় বিনিয়োগ করেনি।
-
৩. রাজনৈতিক অবস্থান:
যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই সামরিক সরকারের সমালোচনা করেছে এবং তাদের উপর বিভিন্ন ধরণের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। অপরদিকে চীন তাদের পাশে থেকেছে এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়েছে।
-
৪. সামরিক ক্ষেত্রে চীন নির্ভরতা
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা চীনের সামরিক সহায়তা এবং তাদের অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল। চীন মিয়ানমারের অন্যতম অস্ত্র যোগানদাতা, চীনের সাথে মিয়ানমারের বিশাল অস্ত্র বাণিজ্য রয়েছে। চীনের পাশাপাশি রাশিয়াও মিয়ানমারে বিপুল অস্ত্র সরবরাহ করে। এই কারনে মিয়ানমারের জন্য চীনা বলয়ের বাইরে যাওয়ার তেমন কোন সুযোগ নেই।
--
মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের সুবিধা করার সম্ভাব্য যা কিছু সুযোগ ছিল বা আছে:
-
মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্র কখনও চীনের মতো শক্তিশালী প্রভাব প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি, তবে কয়েকবার তাদের সামনে সম্পর্কোন্নয়নের সুযোগ এসেছে। বিশেষত যখন অং সান সুচির দল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় এসেছিল এবং মিয়ানমার গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে শুরু করেছিল তখন এমন একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিল। সেসময় যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকটি খাতে বিনিয়োগও করেছিল। কিন্তু ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের কারনে সে সম্পর্ক বেশিদূর এগুতে পারেনি। সামরিক শাসকেরা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিয়ানমারের সম্পর্ক উন্নত হতে দেয়নি।
-
আমেরিকা মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকার (NUG)-কে কিছুটা সমর্থন দিলেও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে এই ক্ষেত্রে আমেরিকার প্রভাব চীনের তুলনায় অনেকটা কম, কারণ চীনের সমর্থন ছাড়া মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো অনেক ক্ষেত্রেই অস্ত্র বা প্রশিক্ষণ পেতে সমর্থ হতো না।
--
মিয়ানামারে চীনের প্রভাব এতই বেশি যে, তাদের জন্য এখনো পর্যন্ত স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। অবস্থা এমন যে, সরকার চাইলেও এটি করতে পারবেনা, নানান ধরণের বাধার সম্মুখীন হবে।
-
অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা: চীন মিয়ানমারকে যেভাবে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করে আসছে, সেটি যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে মিয়ানমার অর্থনৈতিকভাবে বড় ঘরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। কারণ তাদের অবকাঠামো ও জ্বালানী খাত সহ অর্থনীতির বৃহদাংশ চীনা বিনিয়োগের উপর নির্ভরশীল।
-
বিদ্রোহীদের সক্রিয়তা বৃদ্ধি: চীন যদি মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন আরো বৃদ্ধি করে তাহলে মিয়ানমারে সংঘাত আরো বাড়বে যা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা অনেকাংশে চীনের উপর নির্ভরশীল। কারণ মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে চীনের সম্পর্ক রয়েছে, তারা তাদেরকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করে। চীন এই গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারে। যদি মিয়ানমার চীনের ব্যাপারে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করতে চায় তাহলে চীন এই গোষ্ঠীগুলোকে ব্যাবহার করে বিদ্রোহকে আরো উস্কে দেবে।
United Wa State Army (UWSA) এবং Kachin Independence Army (KIA) চীনের সমর্থনে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে সক্ষম। তাই সরকার চীনের সাথে সম্পর্ক অবনতি করতে চাইলে এই বিদ্রোহীরা আরও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে, যা মিয়ানমারের সরকারকে অভ্যন্তরীণভাবে দুর্বল করে দিতে পারে।
--
রাশিয়া-চীন সম্পর্ক এবং মিয়ানমার:
মিয়ানমারকে অধীনে রাখতে চীন রাশিয়া একযোগে কাজ করছে। কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী চীনের অধীনে কাজ করছে, রাশিয়ার অধীনে কোন গোষ্ঠী না থাকলেও তারা সামরিক সহায়তার মাধ্যমে গোষ্ঠিগুলোর পাশে দাঁড়াচ্ছে। সামরিক জান্তার উপর আন্তর্জাতিক চাপ ও নিষেধাজ্ঞা এড়াতে দেশদুটি এক সাথে কাজ করছে। তাদের এই সমন্বিত পদক্ষেপের ফলে আমেরিকা খুব বেশি সুবিধা করতে পারছেনা, ফলে ধীরে ধীরে তাদের প্রভাব কমে গেছে।
--
মালাক্কা প্রনালি এবং ভারতের অবস্থান আর এই ক্ষেত্রে আমেরিকার সাথে সম্ভাব্য সহযোগিতা:
মালাক্কা প্রণালীকে ঘিরে চীন, ভারত, এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা বেশ জটিল এবং বহুমুখী। চীন তার "বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ" (BRI) এর মাধ্যমে কৌশলগতভাবে মিয়ানমারের মাধ্যমে বিকল্প সামুদ্রিক রুটগুলো তৈরি করছে, যার উদ্দেশ্য মালাক্কা প্রণালীর উপর তার নির্ভরশীলতা কমানো। মালাক্কা প্রণালী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি চীনের বাণিজ্যিক এবং সামরিক জাহাজগুলোর প্রধান নৌপথ। কিন্তু এই প্রণালীটি ভূ-রাজনৈতিকভাবে সংকটপূর্ণ এবং দক্ষিণ চীন সাগরে বিরোধের কারণে চীন সবসময় এই রুটে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাচ্ছে না।
-
মিয়ানমারের উপর চীনের বিপুল বিনিয়োগের একটি প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশটির ভৌগোলিক অবস্থানকে ব্যবহার করে ভারত মহাসাগরে প্রবেশের বিকল্প রুট তৈরি করা, যা মালাক্কা প্রণালীর উপর নির্ভরশীলতাকে হ্রাস করবে। চীন ইতিমধ্যেই মিয়ানমারে বন্দর নির্মাণ এবং পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করছে। বিশেষ করে, চীন-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডোরের মাধ্যমে (CMEC), ইউনান প্রদেশের সাথে মিয়ানমারের কিয়াউকফিউ বন্দর সংযুক্ত করা হচ্ছে, যা চীনের বাণিজ্যিক এবং সামরিক সুবিধা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
-
অন্যদিকে, ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ মালাক্কা প্রণালী এবং ভারত মহাসাগরের প্রবেশদ্বার হিসেবে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দ্বীপপুঞ্জ থেকে ভারত মালাক্কা প্রণালীতে নজরদারি চালিয়ে চীনের সামুদ্রিক চলাচলের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। ভারত ইতিমধ্যেই এই দ্বীপপুঞ্জে তার সামরিক উপস্থিতি জোরদার করছে, যা মালাক্কা প্রণালীতে চীনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, দ্বীপপুঞ্জের পরিবেশগত ও সামরিক অবকাঠামো উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে, যা বর্তমানে সীমিত।
-
ভারতের জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো চীনের সঙ্গে অরুণাচল প্রদেশ, নেপাল এবং ভূটানে সীমান্ত বিরোধ। বিশেষ করে অরুণাচল প্রদেশে চীনের দাবি এবং নেপাল ও ভূটানে চীনের প্রভাব বাড়ানো ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয়। ভারতের এই অঞ্চলে চীনের সামরিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব ঠেকাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতা জোরদার করতে হচ্ছে, তবে তা এখনও সীমিত পর্যায়ে রয়েছে।
-
ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর নিরাপত্তার জন্য মিয়ানমারে স্থিতিশীলতা জরুরী। এই কারণে ভারত জান্তার সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে এবং তাদেরকে বিভিন্নভাবে সামরিক সহায়তা দিচ্ছে, তাদের সাথে যৌথ সামরিক মহড়ার আয়োজন করছে, সেনাদের প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা করছে। ভারতের এসব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হল চীনের প্রভাব কমানো। কিন্তু চীন ধীরে ধীরে প্রভাব বাড়িয়েই যাচ্ছে।
--
মিয়ানমারে চীন, ভারত এবং আমেরিকার প্রভাব এই অঞ্চলের জন্য জটিল সমীকরণ সৃষ্টি করেছে। সামরিক বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে সুসম্পর্কের মাধ্যমে চীন মিয়ানমারের ভূরাজনীতেতে বেশ শক্তভাবে প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পুনর্গঠনের সময়কালকে কাজে লাগিয়ে কিছুটা প্রভাব বিস্তার করলেও বর্তমানে সেটি চীনের তুলনায় অনেক দূর্বল।
--
এই ভূরাজনৈতিক লড়াই অব্যাহত থাকলে মিয়ানমারে বড় আকারের সংঘাতের সম্ভাবনা থেকেই যায়। ভারতের জন্য মিয়ানমার একটি কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে, কারণ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত নিরাপত্তা এবং চীনের প্রভাব কমাতে মিয়ানমারের স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। রাশিয়াও সামরিক সাহায্যের মাধ্যমে জান্তাকে সমর্থন দিয়ে তাদের প্রভাব বজায় রাখছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর ওপর প্রভাব বাড়াতে চেষ্টা করে বা ভারত মিয়ানমার সরকারের আরও ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠে, তাহলে আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকি আরও বাড়বে। বিশেষ করে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সক্রিয়তা বাড়লে এবং চীন-রাশিয়া মিলে সামরিক সহায়তা বৃদ্ধি করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.