নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আদ্রিজা

অথই জলে খুঁজে বেড়াই পূর্ণিমারই চাঁদ।

আদ্রিজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ...২

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২২

১১) এ কেমন ভ্রান্তি আমার



এ কেমন ভ্রান্তি আমার !

এলে মনে হয় দূরে স’রে আছো, বহুদূরে,

দূরত্বের পরিধি ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে আকাশ।

এলে মনে হয় অন্যরকম জল হাওয়া, প্রকৃতি,

অন্য ভূগোল, বিষুবরেখারা সব অন্য অর্থবহ-

তুমি এলে মনে হয় আকাশে জলের ঘ্রান।



হাত রাখলেই মনে হয় স্পর্শহীন করতল রেখেছো চুলে,

স্নেহ- পলাতক দারুন রুক্ষ আঙুল।

তাকালেই মনে হয় বিপরীত চোখে চেয়ে আছো,

সমর্পন ফিরে যাচ্ছে নগ্ন পায়ে একাকী বিষাদ- ক্লান্ত

করুণ ছায়ার মতো ছায়া থেকে প্রতিচ্ছায়ে।

এলে মনে হয় তুমি কোনদিন আসতে পারোনি..



কুশল শুধালে মনে হয় তুমি আসোনি

পাশে বসলেও মনে হয় তুমি আসোনি।

করাঘাত শুনে মনে হয় তুমি এসেছো,

দুয়ার খুল্লেই মনে হয় তুমি আসোনি।

আসবে বললে মনে হয় অগ্রিম বিপদবার্তা,

আবহাওয়া সংকেত, আট, নয়, নিম্নচাপ, উত্তর, পশ্চিম-

এলে মনে হয় তুমি কোনদিন আসতে পারোনি।



চ’লে গেলে মনে হয় তুমি এসেছিলে,

চ’লে গেলে মনে হয় তুমি সমস্ত ভূবনে আছো।



১২) উল্টো ঘুড়ি



এতো সহজেই ভালোবেসে ফেলি কেন!

বুঝি না আমার রক্তে কি আছে নেশা-



দেবদারু-চুলে উদাসী বাতাস মেখে

স্বপ্নের চোখে অনিদ্রা লিখি আমি,

কোন বেদনার বেনোজলে ভাসি সারাটি স্নিগ্ধ রাত?



সহজেই আমি ভালোবেসে ফেলি, সহজে ভুলিনা কিছু-

না-বলা কথায় তন্ত্রে তনুতে পুড়ি,

যেন লাল ঘুড়ি একটু বাতাস পেয়ে

উড়াই নিজেকে আকাশের পাশাপাশি।



সহজে যদিও ভালোবেসে ফেলি

সহজে থাকি না কাছে,

পাছে বাঁধা পড়ে যাই।

বিস্মিত তুমি যতোবার টানো বন্ধন-সুতো ধ’রে,

আমি শুধু যাই দূরে।



আমি দূরে যাই-

স্বপ্নের চোখে তুমি মেখে নাও ব্যথা-চন্দন চুয়া,

সারাটি রাত্রি ভাসো উদাসীন বেদনার বেনোজলে…



এতো সহজেই ভালোবেসে ফ্যালো কেন?







১৩) চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়



চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- বিচ্ছেদ নয়

চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা আর্দ্র রজনী

চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে

আমার না-থাকা জুড়ে।



জানি চরম সত্যের কাছে নত হতে হয় সবাইকে-

জীবন সুন্দর

আকাশ-বাতাস পাহাড়-সমুদ্র

সবুজ বনানী ঘেরা প্রকৃতি সুন্দর

আর সবচেয়ে সুন্দর এই বেঁচে থাকা

তবুও কি আজীবন বেঁচে থাকা যায়!

বিদায়ের সেহনাই বাজে

নিয়ে যাবার পালকি এসে দাঁড়ায় দুয়ারে

সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে

এই যে বেঁচে ছিলাম

দীর্ঘশ্বাস নিয়ে যেতে হয়

সবাইকে

অজানা গন্তব্যে

হঠাৎ ডেকে ওঠে নাম না জানা পাখি

অজান্তেই চমকে ওঠি

জীবন, ফুরালো নাকি!

এমনি করে সবাই যাবে, যেতে হবে…







১৪)মনে পড়ে সুদূরের মাস্তুল



পেছনে তাকালে কেন মূক হয়ে আসে ভাষা !

মনে পড়ে সেই সব দুপুরের জলাভূমি,

সেই সব বেতফল, বকুল কুড়ানো ভোর,

আহা সেই রাঙাদির আঁচলতলের উত্তাপ,

মনে পড়ে…….

মনে পড়ে, বন্দরে সেই সব কালোরাত,

ঈগলের মতো ডানা সেই বিশাল গভীর রাতে,

একটি কিশোর এসে চুপি চুপি সাগরেরকূলে

দাঁড়াতো একাকী

তন্ময় চোখে তার রাশি রাশি বিস্ময়নিয়ে।

কবে তারে ডাক দিয়ে নিয়ে গেলো যৌবন সুচতুর,

কবে তারে ডেকে নিলো মলিন ইটের কালো সভ্যতা !

সবুজ ছায়ার নিচে ঘুমে চোখ ঢুলে এলে

মা যাকে শোনাতো সেই তুষারদেশের কথা,

তার চোখে আজ এতো রাতজাগা ক্লান্তির শোক !

পেছনে তাকালে কেন নিরবতা আসে চোখে !

মনে পড়ে- জ্যোৎস্নায় ঝলোমলো বালুচর,

একটি কিশোর- তার তন্ময় দুটি চোখে

রাশি রাশি কালোজল- সুদূরের মাস্তুল

মনে পড়ে…..







১৫) গুচ্ছ কবিতা





১.



থাকুক তোমার একটু স্মৃতি থাকুক



একলা থাকার খুব দুপুরে



একটি ঘুঘু ডাকুক



২.



দিচ্ছো ভীষণ যন্ত্রণা



বুঝতে কেন পাছো না ছাই



মানুষ আমি, যন্ত্র না!



৩.



চোখ কেড়েছে চোখ



উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক।





১৬)ব্যথা দাও,বুকে রাখবো



ব্যথা দাও,বুকে রাখবো

ব্যথার জন্যই তো হৃদয়

আঘাতে বুক ভাঙবে না

বুকে ব্যথা আছে।



গলিত লাভাগুলো বেদনার

যেন ঘনীভূত পাথরের দেহ

আঘাতে পাথর কখনো গলে না

গলে না হৃদয়।



পাহাড়ে ধস নামলে কখনো

মা্টি অনায়াসে পেতে দেয় বুক।

তুমি যাবতীয় দুঃখকে ছুঁড়ে দাও

আমি বুক পেতে নেবো

বুক ভাঙবে না।



দুয়ার বন্ধ করলেই

আমি ফিরে যাবো নির্বিকার,

অস্বীকার করো মেনে নেবো।



এলবামে স্মৃতি নেই বলে

আদৌ দুঃখ করি না,

সোনালি নিসঙ্গতায় আমার

বিচিত্র দুঃখের সমাবেশ সঞ্চয় ।



ব্যথা দাও,বুকে রাখবো

ব্যথায় ভাঙবে না বুক

বুকে ব্যথা আছে





১৭)পুনর্বার ফিরে যাওয়া



যাবো না বলে সিদ্ধান্ত স্থির

তবু যেতে হলো তার কাছে

যেতে হলো,যেতে যেতে

যেতেই হলো,

অনুগত ভৃত্যের মতো দাঁড়াতে হলো

করজোড়ে বিড়ম্বিত বিবেকের বুক

রক্তাক্ত করে তবু যেতে হলো।

আবার ধরা দিতে হলো

ফেলে আসা স্মৃতির বাহুবেষ্টনে

পুনর্বার রোমন্থন এসে নিবিড়

আলিঙ্গনে হয়ে গেল সংলগ্ন ।



অভিমান ভাঙা সন্তান যেমন

অনায়াসে ফিরে যায় মায়ের বুকে

আমাকেও তেমনি ফিরে যেতে হলো

তার কাছেই ফিরে যেতে হলো।



ব্ল্যাকবোর্ডে পুরাতন লেখার মতো

মুছে ফেলতে হলো দগ্ধ দ্বিধা

মনরোম ডাস্টারে ।



তবু ফিরে যেতে হলো, ফিরে

যেতে যেতে যেতে হলো,

ফিরে যেতে হলো।



১৮) তুমি বরং কুকুর পোষো

(তসলিমা নাসরীন এর একটি কবিতার বিপরীতে রুদ্র এ কবিতাটা লিখেছিলেন)





তুমি বরং কুকুর পোষো

প্রভুভক্ত খুনসুটিতে কাটবে তোমার নিবিড় সময়,

তোর জন্য বিড়ালই ঠিক,

বরং তুমি বিড়ালই পোষো

খাঁটি জিনিস চিনতে তোমার ভুল হয়ে যায়

খুঁজে এবার পেয়েছ ঠিক দিক ঠিকানা



লক্ষী সোনা, এখন তুমি বিড়াল এবং কুকুর পোষো

শুকরগুলো তোমার সাথে খাপ খেয়ে যায়,

কাদা ঘাটায় দক্ষতা বেশ সমান সমান।

ঘাটাঘাটির ঘনঘটায় তোমাকে খুব তৃপ্ত দেখি,

তুমি বরং ওই পুকুরেই নাইতে নামো

উংক পাবে, জলও পাবে।

চুল ভেজারও তেমন কোন আশঙ্কা নেই,

ইচ্ছেমত যেমন খুশি নাইতে পারো।



ঘোলা পানির আড়াল পেলে

কে আর পাবে তোমার দেখা।

মাছ শিকারেও নামতে পারো

তুমি বরং ঘোলা পানির মাছ শিকারে

দেখাও তোমার গভীর মেধা।



তুমি তোমার স্বভাব গাছে দাঁড়িয়ে পড়ো

নিরিবিলির স্বপ্ন নিয়ে আর কতকাল?

শুধু শুধুই মগজে এক মোহন ব্যধি

তুমি বরং কুকুর পোষো, বিড়াল পোষো,

কুকুর খুবই প্রভুভক্ত এবং বিড়াল আদরপ্রিয়

তোমার জন্য এমন সামঞ্জস্য তুমি কোথায় পাবে ?





তসলিমা নাসরিন'র নিচের কবিতাটির বিপরীতে কবির জবাবঃ



“তার চেয়ে কুকুর পোষা ভাল

ধূর্ত যে শেয়াল, সেও পোষ মানে

দুধ কলা দিয়ে আদরে আহলাদে এক কবিকে পুষেছি এতকাল

আমাকে ছোবল মেরে

দেখ সেই কবি আজ কিভাবে পালায়” -(তসলিমা নাসরিন)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.