![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ৫ আগস্ট ২০২৪ একটি মাইলফলক। এই তারিখের পর দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে হাজার হাজার মানুষের জীবনযাত্রা, চিন্তাভাবনা এবং কর্মকাণ্ড রাতারাতি বদলে গেছে। এর মধ্যে একটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো ঝিনাইদহের মহেশপুরের ইমাম হামিদুর রহমান রানার গল্প। একুশে টেলিভিশনেও তার সম্পর্কে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে।
হামিদুর রহমান রানা একজন সাধারণ ইমাম ছিলেন। তার জীবনযাত্রা ছিল অত্যন্ত সাদামাটা। মাসিক বেতন মাত্র ৩,০০০ টাকা, মসজিদের এক কোণায় ছোট্ট একটি কক্ষে বসবাস, রান্নাঘর নেই, নিয়মিত আয়ের অন্য কোনো উৎস নেই। খাবারের জন্য সম্পূর্ণভাবে এলাকাবাসীর দয়ার থালার উপর নির্ভরশীল। তার দৈনন্দিন জীবন ছিল সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয় কাজকর্মে ব্যস্ত - পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরিচালনা, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, তসবি জপা, ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান। এই ছিল তার পুরো দুনিয়া। তিনি একজন নিষ্ঠাবান ধর্মীয় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন এলাকায়।
রানা গত কয়েক বছর ধরে ২৬ জুন বৈষম্যবিরোধী সংগঠনের সাথে সমন্বয়ক হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন। তখনও তার জীবনযাত্রায় বিশেষ কোনো পরিবর্তন আসেনি। তিনি এখনও সেই একই ছোট্ট কক্ষে থাকতেন, সেই একই ৩ হাজার টাকা বেতনে চলতেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর তার জীবনে যে পরিবর্তন এলো, তা বিস্ময়কর এবং একই সাথে উদ্বেগজনক।
সরকার পতনের পর হুজুর যেন রাতারাতি "সমন্বয়ক সাহেব" হয়ে গেলেন। মসজিদ, নামাজ, কুরআন পড়া, আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ভাগ্য ফেরার অপেক্ষা - এসব কিছু বাদ দিয়ে তিনি নিজেই ভাগ্য ফেরাতে মাঠে নেমে পড়লেন "দলবল" নিয়ে। তার নতুন তৎপরতা শুরু হলো একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে। প্রথমে তিনি তার এলাকার একটি বিস্তারিত তালিকা তৈরি করলেন - কে আওয়ামী লীগ করে, কার ব্যবসা-দোকানপাট আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত, কার বাড়িঘর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। সব তথ্য সংগ্রহ করে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করলেন। তারপর শুরু হলো অভিযান। এই তালিকার ভিত্তিতে চাঁদা চাওয়া হতে লাগলো।
রানা চাইলে মসজিদের ইমামতি করার পাশাপাশি একটি মাদ্রাসা খুলে মোটামুটি আয় বাড়াতে পারতেন। এটি একটি বৈধ এবং সম্মানজনক পথ হতো। কিন্তু তিনি সেই পথ না বেছে নিলেন আওয়ামী লীগের যত অবৈধ ব্যবসা রয়েছে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অভিযোগ এসেছে তার বিরুদ্ধে। এটি শুধু রানার একার গল্প নয়, সারাদেশেই একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।
আরও আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, রানার বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন কিন্তু এখন আর ভালো লাগে না বলে জানিয়েছেন। অথচ ছেলে এখন সেই একই কাজে জড়িয়ে পড়েছেন যার বিরুদ্ধে তারা আন্দোলন করেছিলেন। বেশিরভাগ সমন্বয়ক ও ছাত্র উপদেষ্টাদের বাবাদের দেখা যায় প্রাক্তন আওয়ামী লীগ। এটা যেন এক নতুন প্রজন্মের কুইসলিং অপারেশন ! এতে অবশ্য তাদের পক্ষে সুবিধা জানা যে কোথায় আওয়ামী লীগের অবৈধ ব্যবসা চলছে, কোন জমিগুলো দখলযোগ্য, কোন এলাকায় কী ধরনের চাঁদাবাজি চলতো - এসব তথ্য তাদের কাছে আগে থেকেই আছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন আওয়ামী লীগের ঠিকাদারের কাজের তদবির করতে গিয়েছে। এদের কে এসব কাজে কারা যুক্ত করলো? আন্দোলন সফল হওয়ার পর তাদের এখন প্রধান কাজ পড়াশোনা করা। কিন্তু তারা অন্যের জন্য তদবির করছে কিসের বিনিময়ে? এখন আবার এসব সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে মাদক সিন্ডিকেটের অভিযোগ উঠেছে। যারা মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিল, তারাই মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে।
মাদক অভিযান কি তাদের কাজ না প্রশাসনের কাজ? প্রশাসন প্রতিদিন হাজার-বারোশো লোক ধরে জেলে পুরছে। তাহলে এরা কারা? নাকি জেলে যাওয়ার আগেই এসব অভিযুক্তদের অবৈধ ব্যবসা সমন্বয়কদের দিয়ে যাচাই করানো হচ্ছে? তারা জেলে বসে এসব সমন্বয়কদের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করবে? আগে জমি দখল করতো আওয়ামী লীগ নেতারা, এখন নতুন দলের নেতার বাবা সেই কাজে ট্রায়াল দিতেছে। ক্ষমতায় গেলে পাক্কা সফল হবে সেই দলের বাবারা।
মানুষের জমি দখল করা, সরকারি জমি দখল করা - এসব কাজ কোনো সাধারণ জনগণ পারবে না। একমাত্র যারা ক্ষমতাশীন তারাই পারবে। এনসিপি এখন যৌথভাবে জামাতের সাথে মিলে অন্তর্বর্তী সরকার চালায়। সেটা নেতার বাবার হেডম দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এনসিপি করছেই ছেলে যাতে বাবার জায়গা দখল করতে পারে। সমন্বয়কদের এসব কাজে কারা জড়িত করলো? বৈষম্যবিরোধী কেন্দ্রীয় কমিটি কেন বিলুপ্ত হলো না? এদের বিরুদ্ধে তদবির বাজির অভিযোগ আছে।
সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ যথার্থই বলেছেন, যাদের এখন পড়াশোনা, খেলাধুলা এসবে ব্যস্ত থাকার কথা তারা এখন মাদক সিন্ডিকেটের অংশ। আগে বড়রা যেসব অপকর্ম করতো এখন সেগুলো করছে ছোটরা। অবশ্য ডিজিটাল বাংলাদেশে ছোটরা বড়দের চেয়েও আরো দ্রুততর। এক বছরে বাংলাদেশে যেগুলি অবৈধ কাজ হিসেবে বিবেচিত হয় সেগুলোর অংশীদার হয়েছে। তাদের এসব কাজে যাতে উন্নতি করতে পারে তাই ইউনূস সাহেবকে আরো ৫ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই। হোম অ্যাডভাইজারকে নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই পরের বার। বড় ভাগ্য গুণে এমন লোক পেয়েছি আমরা।
এই পরিস্থিতি একটি গভীর সামাজিক সংকটের ইঙ্গিত দেয়। ক্ষমতার স্বাদ কীভাবে একজন নিষ্ঠাবান ধর্মীয় ব্যক্তিকে রাতারাতি দুর্নীতিগ্রস্ত করে তুলতে পারে, হামিদুর রহমান রানার গল্প তার জ্বলন্ত উদাহরণ। যে মানুষটি কিছুদিন আগেও আল্লাহর রহমতের উপর ভরসা রেখে দিন কাটাতেন, তিনিই আজ নিজের হাতে "ভাগ্য পরিবর্তন" করতে গিয়ে সেই একই অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন যার বিরুদ্ধে তিনি একসময় আন্দোলন করেছিলেন।
এটি শুধু একজন ব্যক্তির পতনের গল্প নয়, এটি একটি পুরো প্রজন্মের নৈতিক অবক্ষয়ের গল্প। যে তরুণরা দেশ পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল, তারাই আজ সেই একই ব্যবস্থার অংশ হয়ে গেছে যার বিরুদ্ধে তারা লড়েছিল। আর এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে তাদের পূর্বের প্রজন্মের প্রভাব - যারা নিজেরা একসময় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, এখন তাদের সন্তানরাও সেই একই পথে হাঁটছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে এর চেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় আর কী হতে পারে?
০২ রা আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:০১
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এসব লিখে পড়ে যদি কোনো লাভ না থাকে সামুতে আপনার কি কাজ ? সোশাল মিডিয়া কিভাবে চলছে ?
২| ০২ রা আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:১৪
কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: অল্প বয়সে এতো টাকা পয়সা, ক্ষমতার মধ্যে দিয়ে গেলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল।
তোরা খাবি তো একটু রয়ে সয়ে-খা.... এমন ভাবে খাচ্ছে; যে দারিদ্রর গন্ধ গা থেকে মুছে নতুন এলিট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চাইছে।
০২ রা আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:১৯
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: একটা বিষয় এদের সবার কমন সেটা হলো সবাই লিগের এক্স । কেবল মাহফুজ আলম কে পেলাম বাবা বিএনপি করে ।
৩| ০২ রা আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০০
কামাল১৮ বলেছেন: এটাই স্বাভাবিক।বরং অন্য কিছু হলে তা হতো অস্বাভাবিক।।শ্রেনী চরিত্রের বাইরে কেউ যেতে পারে না।এরা ছিলো লুম্পেন শ্রেনীর লোক।
০২ রা আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৭
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এদের বেশিরভাগ লীগের পলিটিক্সের সাথে জড়িত।
৪| ০২ রা আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:৫৩
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আপনার কি মনে হয় এরা নিঃস্বার্থভাবে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল? ভাগ-বাঁটোয়ারা ঠিকমতো পেলে আন্দোলনই করত না।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৬
Akasher tara বলেছেন: এগুলোো বলে লিখে আপনার আমার কি লাভ