নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আদ্রিজা

অথই জলে খুঁজে বেড়াই পূর্ণিমারই চাঁদ।

আদ্রিজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

পূর্ণেন্দু পত্রীর কথোপকথন___(২৬-৩০)

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩১

কথোপকথন ২৬





—আমার চিঠিটার জবাব কই?

যদি না এনে থাকো তাহলে আজ

তুলবো দুই হাতে এমন ঝড়

বসন উড়ে যাবে চণ্ডীগড়

খোঁপার খিল খুলে বন্দী চুল

হানবে চোখে মুখে আক্রমণ।

কেউটে সাপ হবো। সাত পাকে

নগ্ন দৃশ্যের চূড়া ও তল

জড়াবো, এমনই সে আলিঙ্গন

ভাঙবে হাড়-গোড়। আমার কি?



—এমন ছটফটে ধৈর্যহীন

মানুষ কোনদিন দেখিনি আর।

শুনেছি আজকাল বোদলেয়ার

রাঁবো ও ভের্লেন পড়ছো খুব।

এখন সেই সব আগুন-তাপ

আমারই ঘাড়ে বুঝি আছড়াবে?

চিঠিটা নাও, নিয়ে শান্ত হও।

আমার হাড়গোড় ভেঙো না আর।

ভাঙলে কার ফুল তুলবে রোজ

শুনি মশাই?





কথোপকথন – ২৮



- আমার আগে আর কাউকে ভালোবাসনি তুমি?

- কেন বাসব না? অনেক।

কৃষ্ণকান্ডের উইলের ভ্রমর

যোগাযোগের কুমু

পুতুলনাচের ইতিকথার কুসুম

অপরাজিত –র



- ইয়ার্কি করো না। সত্যি কথা বলবে।

- রোগা ছিপছিপে যমুনাকে ভালোবেসেছিলাম বৃন্দাবনে

পাহাড়ী ফুলটুংরীকে ঘাটশিলায়

দজ্জাল যুবতী তোর্সাকে জলপাইগুড়ির জঙ্গলে

আর সেই বেগম সাহেবা, নীল বোরখায় জরীর কাজ

নাম চিল্কা



- আবার বাজে কথার আড়াল তুলছ ?

- বাজে কথা নয়। সত্যিই।

এদের কাছ থেকেই তো ভালোবাসতে শেখা।

অনন্ত দুপুরে একটা ঘাস ফড়িং-এর পিছনে

এক একটা মাছরাঙার পিছনে গোটা বাল্যকাল

কার্পাস তুলো ফুটেছে

সেইদিকে তাকিয়ে দুটো তিনটে শীত–বসন্ত।

এইভাবে তো শরীরের খাল–নালায়

চুইয়ে চুইয়ে ভালোবাসার জল।

এইভাবে তো হৃদয়বিদারক বোঝাপড়া।

কার আদলে কী আর কোনটা মাংস, আর কোনটা কস্তুরী গন্ধ।



ছেলেবেলায় ভালোবাসা ছিল

একটা জামরুল গাছের সঙ্গে।

সেই থেকে যখনই কারো দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই

জামরুলের নিরপরাধ স্বচ্ছতা ভরাট হয়ে উঠেছে

গোলাপী আভার সর্বনাশে,

অকাতর ভালোবেসে ফেলি তত্ক্ষনাত্

সে যদি পাহাড় হয়, পাহাড় নদী হয়

নদী কাকাতুয়া হলে, কাকাতুয়া নারী হলে - নারী ।





কথোপকথন – ২৯



- দূরে চলে যাও। তবু ছায়া

আঁকা থাকে মেঘে। যেন ওড়ে

বাতাসের সাদা বারান্দায়

বালুচরী বহু বর্ণময়।

গান শেষ তবু তখনো তার

প্রতিধ্বনিরা দশ দিকে।

যেন শুধু তুমি তোমারই সব

মূর্তিতে ঠাসা মিউজিয়াম

ট্রাম লাইনের, ছাইগাদার

গর্তে গভীর কলকাতায়।

কী করে এমন পারো তুমি

নন্দিনী?



- সহজ ম্যাজিক। শিখবে কি?

রুমালটা দাও, ঘন গিঁটে

চোখ দুটো বাঁধি। তারপরে

যাদুকাঠিটাকে ছুঁইয়ে দি,

কাছে এসো।



- অত বোকা নই নন্দিনী।

খানিকটা জানি, পুরুষকে

কী করে বানাও পোষা পাখি।

ঝর্না দেখাবে, কখনো তার

উৎসের চাবি খুলবে না।

বিছানা পাতবে মখমলের

কিন্তু বসতে দেবে চেয়ার।

সাজানো দোকানে থাক্কে থাক্

উর্বরতার বীজ ও সার

অথচ দুবেলা বন্ধ ঝাঁপ।

জলের যা খেলা, ভাসিয়ে সুখ

গাছ ডুবে গিয়ে মরে মরুক

জলের কী?



- মিথ্যে! মিথ্যে! শুভঙ্কর?

তোমারই ভুলে গাছকে মেঘ

বানিয়ে চেয়েছো বৃষ্টিজল।

যে-মোমবাতির ক্ষণজীবন

তারই কাছে এসে কেবলি চাও

এমন আলো যা অন্তহীন।

তোমরা বুনছো কল্পনায়

আমরা যা নই তারই ছাঁদে

সোনালী সুতোর লম্বা লেস।



- নন্দিনী! হায় এইটুকু

যথেচ্ছাচার আছে বলেই

এই মরা-হাজা পৃথিবীটার

মৃত্যু চাইনি এখনো কেউ।

নইলে তো কবে কড়িকাঠে

ঝুলিয়ে দিতাম। এবং এর

কৃতিত্বটুকু সবই তোমার

তুমি মানে নারী, যার ছোঁয়ায়

ঘুঁটে পুড়ে হয় গন্ধ ধূপ।



- চুপ করো তুমি, চুপ করো

পেয়েছে তোমাকে বাচালতায়।



- এটাও তো মজা। যতক্ষণ

তুমি পাশে থাকো, আমি নদী

নৌকোর পাল, ঝোড়ো হাওয়া।

তুমি চলে গেলে আমি পাহাড়

তাও নয়, যেন ইঁট বা কাঠ

কাঠের টেবিল, বইয়ের র্যাক

এত বোবা থাকি, লোকে ভাবে

মরে গেছি বুঝি অনেকদিন।

একটু আগে যে বললে না

সোনালী সুতোর লম্বা লেস্,

আসলে তখন সেইটাকেই

বুনি, যাতে লোকে দেখতে পায়

যে-যার বুকের সঙ্গোপন

উপনিবেশ।





কথোপকথন –৩০



তুমি আমার সর্বনাশ করেছ শুভঙ্কর

কিচ্ছু ভাল লাগে না আমার কিচ্ছু না

জ্বলন্ত উনুনে ভিজা কয়লার ধোঁয়া

আর শ্বাস কষ্ট ঘিরে ফেলেছে আমার দশ দিগন্ত

এখন বৃষ্টি নামলে

কানে আসে নদীর পাড় ভাঙ্গার অকল্যাণ শব্দ

এখন জোছনা ফোটলেই

দেখতে পাই অন্ধকার শশান যাত্রীর মত ছুটে চলেছি মৃতদেহের খোজে

কিচ্ছু ভাল লাগে না, আমার কিচ্ছু না

আগে আয়নার সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাজগোজ

পাউডারে সাবানে সেন্টে সুরমায়

নিজেকে যেন ফর্সা করে তোলার মত সুখ

এখন প্রতিবিম্বের দিকে তাকালেই সমস্ত মুখ ভরে যায়

গোল মরিচের মত ব্রুনে বিষাদে বিষণ্ণতায়

এখন সমস্ত স্বপ্নই যেন বিকট মুখোশের বিকট হাসাহাসি

দুঃস্বপ্নকে পার হওয়ার সমস্ত সাকো ভেঙ্গে চুরমার

কিচ্ছু ভাল লাগে না আমার কিচ্ছু না।



-তুমিও কি আমার সর্বনাশ করোনি নন্দিনী

আগে গোল মরিচের মত

এতটুকু ছিলাম আমি

আমার এক ফোটা খাঁচাকে

তুমি করে দিয়েছ লম্বা দালান

আগাছার জমিতে ভুনে দিয়েছ

জ্বলন্ত উদ্ভিদের দিক চিহ্নহীন বিছানা

এখন ঘরে টাঙ্গানোর জন্য

একটা গোটা আকাশ না পেলে

আমার ভাল লাগে না

এখন হাঁটা চলার সময়

মাথায় রাজ ছত্র না ধরলে

ভাল লাগে না

পৃথিবীর মাপের চেয়ে

অনেক বড় করে দিয়েছ আমার লাল বেলুন,

গোল মরিচের মত

এই একরতি পৃথিবীকে আর ভাল লাগে না আমার

কিচ্ছু ভাল লাগে না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.