নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আদ্রিজা

অথই জলে খুঁজে বেড়াই পূর্ণিমারই চাঁদ।

আদ্রিজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

"পরানের গহীন ভিতর"

০৯ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১:৫৩





আঞ্চলিক ভাষায় আবেগ–অনুভূতি সহজ করে সাহিত্যের ফ্রেমে বন্দী করা আর তা সবার বোধগম্য করে সাবলীলভাবে উপস্থাপন করা রীতিমত দূরহ কাজ, আর এই কঠিন কাজটিই অত্যন্ত সুনিপুনভাবে করে গেছেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। তাঁর লেখনীতে সমসাময়িক বাংলাদেশই উঠে এসেছে সব সময়। গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, চলচ্চিত্র, মঞ্চনাটক, চিত্রনাট্য সব ক্ষেত্রেই ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। তাঁর কলম চলেছে সবখানে, সমানভাবে।তাই তিনি সব্যসাচী।

সার্থক শব্দ বিন্যাস ও ব্যবহার, কাব্যময়তায়, শব্দের কৌশলী রূপায়ণ তাঁকে দিয়েছে একটি একক কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিচিতি।
"পরানের গহীন ভিতর" তাঁর একটি সম্পূর্ন ভিন্নধর্মী উপস্থাপনা।
আনন্দ, বেদনা, জীবন, প্রেম, প্রকৃতি, জাতি, ভাষা, সমাজ, দেশ এই বিষয়গুলোকে তিনি খুব সুন্দরভাবে একীভূত করেছেন কাব্যের শৈল্পিক ছোঁয়ায়। আঞ্চলিক ভাষার প্রাঞ্জল বিন্যাসে অনুভূতিগুলোকে বেঁধেছেন আষ্টেপৃষ্ঠে, মুগ্ধতায় ছুঁয়ে দিয়েছেন হৃদয়ের গহিন; যেখানে শুদ্ধতম ভালবাসার বসবাস!!!


পরানের গহীন ভিতর-১
- সৈয়দ শামসুল হক

জামার ভিতর থিকা যাদুমন্ত্রে বারায় ডাহুক,
চুলের ভিতর থিকা আকবর বাদশার মোহর,
মানুষ বেকুব চুপ,হাটবারে সকলে দেখুক
কেমন মোচড় দিয়া টাকা নিয়া যায় বাজিকর ৷
চক্ষের ভিতর থিকা সোহাগের পাখিরে উড়াও,
বুকের ভিতর থিকা পিরীতের পূর্ণিমার চান,
নিজেই তাজ্জব তুমি – একদিকে যাইবার চাও
অথচ আরেক দিকে খুব জোরে দেয় কেউ টান৷
সে তোমার পাওনার এতটুকু পরোয়া করে না,
খেলা যে দেখায় তার দ্যাখানের ইচ্ছায় দেখায়,
ডাহুক উড়ায়া দিয়া তারপর আবার ধরে না,
সোনার মোহর তার পড়া থাকে পথের ধূলায় ৷
এ বড় দারুণ বাজি, তারে কই বড় বাজিকর
যে তার রুমাল নাড়ে পরানের গহীন ভিতর ৷


পরানের গহীন ভিতর-২
- সৈয়দ শামসুল হক

আন্ধার তোরঙ্গে তুমি সারাদিন কর কি তালাশ?
মেঘের ভিতর তুমি দ্যাখ কোন পাখির চক্কর?
এমন সরল পথ তবু ক্যান পাথরে টক্কর?
সোনার সংসার থুয়া পাথারের পরে কর বাস?
কি কামে তোমার মন লাগে না এ বাণিজ্যের হাটে?
তোমার সাক্ষাৎ পাই যেইখানে দারুণ বিরান,
ছায়া দিয়া ঘেরা আছে পরিস্কার তোমার উঠান
অথচ বেবাক দেখি শোয়া আছে মরনের খাটে।
নিঝুম জঙ্গলে তুমি শুনছিলা ধনেশের ডাক?
হঠাৎ আছাড় দিয়া পড়ছিল রূপার বাসন?
জলপির গাছে এক কুড়ালের কোপের মতন
তাই কি তোমার দেহে ল্যাখা তিন বাইন তালাক?
এমন বৃক্ষ কি নাই, যার ডালে নাই কোন পরী?
এমন নদী কি নাই, যার বুকে নাই কোন তরী?


পরানের গহীন ভিতর-৩
- সৈয়দ শামসুল হক

সে কোন বাটিতে কও দিয়াছিলা এমন চুমুক
নীল হয়া গ্যাছে ঠোঁট, হাত পাও শরীল অবশ,
অথচ চাও না তুমি এই ব্যাধি কখনো সারুক।
আমার জানতে সাধ, ছিল কোন পাতার সে রস?
সে পাতা পানের পাতা মানুষের হিয়ার আকার?
নাকি সে আমের পাতা বড় কচি ঠোঁটের মতন?
অথবা বটের পাতা অবিকল মুখের গড়ন?
তুঁতের পাতা কি তয়, বিষনিম, নাকি ধুতুরার?
কতবার গেছি আমি গেরামের শ্যাষ সীমানায়
আদাড় বাদার দিয়া অতিঘোর গহীন ভিতরে,
কত না গাছের পাতা কতবার দিয়াছি জিহ্বায়,
এমন তো পড়ে নাই পানি এই পরানে, শিকড়ে।
তয় কি অচিন বৃক্ষ তুমি সেই ভুবনে আমার,
আমারে দিয়াছো ব্যাধি, নিরাময় অসম্ভব যার?


পরানের গহীন ভিতর-৪
- সৈয়দ শামসুল হক

আমি কার কাছে গিয়া জিগামু সে দুঃখ দ্যায় ক্যান,
ক্যান এত তপ্ত কথা কয়, ক্যান পাশ ফিরা শোয়,
ঘরের বিছান নিয়া ক্যান অন্য ধানখ্যাত রোয়?
অথচ বিয়ার আগে আমি তার আছিলাম ধ্যান।
আছিলাম ঘুমের ভিতরে তার য্যান জলপিপি,
বাঁশির লহরে ডোবা পরানের ঘাসের ভিতরে,
এখন শুকনা পাতা উঠানের পরে খেলা করে,
এখন সংসার ভরা ইন্দুরের বড় বড় ঢিপি।
মানুষ এমন ভাবে বদলায়া যায়, ক্যান যায়?
পুন্নিমার চান হয় অমাবস্যা কিভাবে আবার?
সাধের পিনিস ক্যান রঙচটা রদ্দুরে শুকায়?
সিন্দুরমতির মেলা হয় ক্যান বিরান পাথার?
মানুষ এমন তয়, একবার পাইবার পর
নিতান্ত মাটির মনে হয় তার সোনার মোহর।।


পরানের গহীন ভিতর-৫
- সৈয়দ শামসুল হক

তোমার দ্যাশের দিকে ইস্টিশানে গেলেই তো গাড়ি
সকাল বিকাল আসে, এক দন্ড খাড়ায়া চম্পট,
কত লোক কত কামে দূরে যায়, ফিরা আসে বাড়ি-
আমার আসন নাই, যাওনেরও দারুন সংকট।
আসুম? আসার মতো আমি কোনো ঘর দেখি নাই।
যামু যে? কোথায় যামু, বদলায়া গ্যাছে যে বেবাক।
কেমন তাজ্জব সব পাল্টায়া যায় আমি তাই
দেইখাছি চিরকাল। পরানের ভিতরে সুরাখ-
সেখানে কেবল এক ফরফর শব্দ শোনা যায়,
পাখিরা উড়াল দিয়া গ্যাছে গিয়া, এখন বিরান,
এখন যতই আমি ছড়া দেই কালিজিরা ধান,
সে কি আর আঙিনায় ফিরা আসে? আর কি সে খায়?
সকাল বিকাল গাড়ি, চক্ষু আছে তাই চক্ষে পড়ে;
পলকে পলকে গাড়ি সারাদিন মনের ভিতরে।।


পরানের গহীন ভিতর-৬
- সৈয়দ শামসুল হক

তোমার খামাচির দাগ এখনো কি টকটাকা লাল,
এখনো জ্বলন তার চোৎরার পাতার লাহান।
শয়তান, দ্যাখো না করছ কি তুমি কি সোন্দর গাল,
না হয় দুপুর বেলা একবার দিছিলাম টান?
না হয় উঠানে ছিল লোকজন কামের মানুষ,
চুলায় আছিল ভাত, পোলাপান পিছের বাগানে,
তোমারে পরান দিছি, তাই বইলা দেই নাই হুঁশ,
আমি তো তোমারে নিতে চাই নাই ঘরের বিছানে।
হ, জানি নিজের কাছে কোনো কথা থাকে না গোপন।
দিনের দুফুর বেলা যেই তুমি আসছিলা ঘরে
আতখা এমন মনে হইছিল- আন্ধার যেমন,
আতখা এমন ছায়া সোহাগের আর্শির ভিতরে।
আবার ডাকলে পরে কিছুতেই স্বীকার হমু না
বুকের পাষাণ নিয়া দিমু ডুব শীতল যমুনা।।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৩:৩১

মোঃ মঈনুদ্দিন বলেছেন: ধন্যবাদ সৈয়দ শামসুল হক স্যারের কবিতাগুলোকে ফ্রেমবন্দি করে ব্লগে দেয়ার জন্য।

০৯ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৩

আদ্রিজা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও। :)

শুভকামনা রইল। ভাল থাকবেন।

২| ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮:৩২

মিরোরডডল বলেছেন: চার নাম্বার টা ভালো লেগেছে

০৯ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৩

আদ্রিজা বলেছেন: পড়োর নাম্বার টা ই আমি প্রথম পড়ি।। সেখান থেকেই বাকিগুলো পড়ার আগ্রহ বোধ করি।।

মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

৩| ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:৫৬

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: নামকরণ আর পাঠপ্রতিক্রিয়া এক হয়ে গেল...

০৯ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৯

আদ্রিজা বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৪| ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: কবিতা গুলো বেশ লাগল।

০৯ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৭

আদ্রিজা বলেছেন: ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম ।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৫| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৮:৪২

খায়রুল আহসান বলেছেন: সব্যসাচী কবির অসাধারণ কয়েকটি কবিতা এখানে উপস্থাপন করার জন্য ধন্যবাদ। + +
আপনার প্রথম পোস্টটা পড়েও একটা মন্তব্য রেখে এসেছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.