নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বাগতম অদৃশ্যের এই ব্লগে।।আসবেন , দেখবেন , ঘুরবেন ,বুঝবেন - হারিয়ে যাবেন এই তো দুনিয়ার খেলা। আমি শুধু রুপক মাত্র ।

অদৃশ্য পথিক ০০৭

সবাইকে একদিন এই মায়া ছেড়ে হতে হবে অদৃশ্য।স্বাগতম অদৃশ্যের এই রহস্যময় ব্লগে্‌।জাতিকে লেখনীর মাধ্যমে সঠিক পথ দেখানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস আমার এই ব্লগ।

অদৃশ্য পথিক ০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চুন্নি , আমার আর জান্নাতে যাওয়া হইলো না রে...

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২৪

মন মেজাজ প্রচন্ড গরম থাকা অবস্থায় বাসায় ঢুকতেই যদি মাংসের গন্ধ পান, আপনার কেমন লাগবে? লিটন বুঝতেছে না তার এখন কেমন লাগছে।

বাসায় ঢুকে সোজা হেঁশেল ঘরে গেল সে। দেখে তার চুন্নিবিল্লি বউ- মিম, মাংস রান্না করছে। চোখ পাঁকিয়ে বললো,

- আমার তো মনে পরতিছে না এই বছরে কুনোদিন মাংস কিনছিলাম। তুই এই মাংস পালু কতি?

- চুরি করছি।

মিম কখনো লিটনের কাছে মিথ্যা বলেনা। সে যখন বলছে চুরি করছে, তারমানে সে আসলেই চুরি করছে। এইটা অবশ্য নতুন কিছুনা। সে একটা জাত চুন্নি, ছোট বেলায় ছিল পাকা পকেটমার।

- কি কইলি? তোরে আমি নিষেধ করছিলাম না চুরিচামারি করবি না?

- তুমার না জানি মাংস খাইতে মুন চায়না। কিন্তু আমার তো চায়।

- কুত্তি, তোরে কইছি তুই এইসব চুরি চামারি করবিনা, নামাজ কালাম পরবি। আমি জান্নাতে যামু কেমনে তুই এইসব করলে?

- এহহ আর নিজে মনে হয় হুজুর-মাওলানা আইছে। নিজে তো মাইনষের মুবাইল ছিনতাই কইরা বেড়াও।

কথা সত্য। লিটন "টানা-পার্টি"-র সদস্য। তার কাজ হলো মানুষের মোবাইল টান দিয়া ছিনতাই করে পালানো।

তাকে চুপ দেখে মিম বললো,

- যাও, হাত মুখ ধুইয়া বসো। খাইতে দেই।

এতক্ষণ মেজাজ গরম থাকলেও মাংসের গন্ধে পেট টা মোচড় দিলো লিটনের। টিউবওয়েল এ গেল হাত মুখ ধুতে।

খেতে বসে মিম কে বললো,

- ক্যান করতে গেলি চুরি? আমারে কইতি। কোন ভাবে কিইনা আনতাম।

- আমি তো জানি আমার ভাতারের কুটি-কুটি ট্যাকা ইনকাম প্রত্যেকদিন। আমি কইলেই সে আমারে হাতি জবাই কইরা আইনা দিতো!

- দ্যাখ আমারে পুংটাইবি না। মন মেজাজ গরম এমনিতেই।

- ক্যান? কিইসে? আমারে কও।

- আর কইস না, সব গুলান বাটপার চইলা গেছিলো আগেই, যাইয়া দেখি আমার কপালে পরসে নুরু। ওস্তাদ কইলো ওরে নিয়াই আইজকা কামে নামতে।

- নুরু? মানে ওই পটেটু-পাগলা?

- হ বাল, ব্যাটায় পারেনা কুনো কাম, যা পারে খালি পটেটু খাইতে।

- তো সে কি করছে? আইজকা টাইনতে পারোনাই কুনো মুবাইল?

- ওইডার জন্যই তো মেজাজডা গরম হই আছে। শুন কি হইসে আইজ...

তারপর মিম রে বলা শুরু করললো লিটন আজকের ঘটনা।

ওস্তাদের মোটরসাইকেল টা নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল সে আর নুরু। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এমন কোন অটো বা সিএনজি বা বাস খুঁজে বের করা যার জানালার পাশে এমন কেউ আছে যার হাতে মোবাইল আছে। অনেকক্ষণ পর একটা অটো পাইছিলো যার ডান পাশের সিটে এক ছেলে বসে ছিল এবং মোবাইল টিপছিল।

কিন্তু সেই সকাল থেকেই নুরু ঘ্যানঘ্যান শুরু করছে ওকে একটা পটেটো চিপস কিনে দিতে...চিপস না খেলে বলে ওর দিন ভাল যায়না। লিটন ওকে বললো যে একটা টান দিতে পারলে ওরে কিনে দিবে, তাও ওর ঘ্যানঘ্যান থামেনা।

কিন্তু অটো টা দেখার পরে ওকে জোর করে বাইকে তুললো সে। নুরু আবার বাইক চালাতে পারেনা, বলদ একটা। তাই টানার মত কাজ বলদটাকেই করা লাগবে।

লিটন ওরে বললো যে, অটোটার পেছন নিবে তারা, ফাঁকা জায়গা দেখে ছেলেটার হাত থেকে ফোন টা টান মেরে নিয়ে উলটা দিকে বাইক ছুটাবে।

সব কিছু ঠিকঠাক। পেছন নিলো ওরা অটোটার। ছেলেটা মোবাইল টিপেই যাচ্ছে এক মনে। লিটন বুঝেনা এইসব উঠতি পুলাপাইন ফোনের ভেতর কি পায় যে সারাদিন এত টিপাটিপি করা লাগে!

যাই হোক লোকালয় ছেড়ে ফাঁকা জায়গায় অটো টা আসলে সে স্পিড বাড়িয়ে অটোটার পাশে এলো। লিটন শিষ দিলেই বাইক চালিয়ে একদম অটোটার কাছে চলে আসবে এবং নুরুর কাজ হবে জাস্ট টান মেরে ফোন টা নিয়ে নেয়া।

একটু একটু করে তারা কাছে আসতে লাগলো। ছেলেটার তাদের দিকে মনোযোগ নাই, এমনকি অটোর অন্য কারোও মনোযোগ ছিল না তাদের দিকে।

লিটন সেকেন্ডের মধ্যে একদম কাছে ভিড়িয়ে নিলো বাইক, শিষ দিল....পেছন থেকে বুঝতে পারলো যে হাত দিয়ে টান মারছে নুরু...

নুরু বললো, "ভাইজান নিছি, হুন্ডা ছুট লাগান"

ঘ্যাচাং করে ব্রেক কষে উলটা দিকে মুখ ঘুড়িয়ে বাইক নিয়ে যত জোড়ে পারা যায় টান দিল লিটন। পেছন থেকে শুনা যাচ্ছিলো অটোর লোকজন দের চিল্লানী।

**

মিম- তারপর?

লিটন- তারপর আর কি? লুকানি জায়াগায় আইসা হুন্ডা থামাইয়া দেখি বলদের বাচ্চা নুরু একটা পটেটু খাচ্ছে!

- পটেটু? সে পটেটু কই পাইলো? আর মুবাইলের কি হইলো?

- আরে বলদ টা মুবাইল না টাইনা টানছিলো পুলার কোলে রাখা পটেটু। পটেটু দেইখা বলদের মাথা ঠিক আছিলো না! আমি ওরে মারতে যাচ্ছি আর আমারে কয় ভাইজান এইডা বিদেশী পটেটু, খাইয়া দেখেন...হেব্বি টেস্ট!

- হাহাহাহা...

মিম এবার শুরু করলো হাসা...সে কি হাসি...হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পরলো, কাশতে কাশতে ওর হাসি থামলো। আর লিটনের মেজাজ আবার গরম হয়ে গেলো।

বললো, "কোত্থেকে তুই এই মুরগী চুরি করছোস?"

- কাছ থেইকা না এইটা নিশ্চিন্ত থাকো...দুরের বিলে গেসিলাম টমেটু চুরি করতে। যাইয়া এই মুরগীডারে একলা পাইলাম আর নিয়া আইলাম।

- দেখ বউ, আমি নিজে খারাপ মানুষ, তয় আমি চাই তুই ভালা থাক। তুই আগে যা করছোস, করছোস! কিন্তু এখন ভাল হইয়া যা। নামাজ-কালাম পড়, কুরান শিখ। আমি চাই তুই আমারে জান্নাতে নিয়া যা।

- এই এক কথা কতবার যে শুনা লাগবে আল্লাহ...

- শতবার কমু, হাজার বার কমু... আমি এক মাহফিলে শুনছিলাম এক জান্নাতী মানুষ তার সাথে কইরা আরো ১০ জন রে জান্নাতে নিয়া যাইতে পারবি। তাই আমি চাই তুই জান্নাতী হইয়া আমারেও তোর সাথে কইরা নিয়া যাবি...

- আমি তো ভালা হইয়াই গেছি, কিন্তু আগের অভ্যাস মাঝে মইধ্যে মাথাচাড়া দিয়া উঠে...

- কিন্তু বউ, এগুলা ভালা কাজ না। ছাইড়া দে এসব।

- আইচ্ছা ছাড়ুম, তয় একটা শর্ত রইছে আমার।

- কি শর্ত রে, ক।

- আমার বহুত দিনের ইচ্ছা তুমার লগে একবার টানার কাম করতে যামু...

- এই কাম তোগ মাইয়াগো লাইগা না, এইডা পুরুষ গো কাম। আর ম্যালা বিপদ আছে একটু এমন তেমন হইলেই...

- আমি মাইয়া হইলেও তুমার নুরু থেইকা পাকা আছি। ওই পটেটুখোরের থেইকা ভালা পারুম আমি।

- না, আমি আমার লগে তুরেও রিস্কে ফেলামু না।

- তাইলে আমিও চুন্নিগিরি থামামু না...

- উফফ রে... তাইলে কথা দে, মাত্তর একদিন?

- আইচ্ছা একদিনই মাত্তর। আর কুনোদিন এসব কামে যাইতে চাইমু না।

- আর সব ছাইড়া নামাজ কালাম ধরবি?

- কসম খোদার, ধরমু।

- ঠিক আছে। কাইলকাই বাইর হমু তোরে লইয়া যাহ...

**

মিম কে তার একটা জিন্সের প্যান্ট দিল লিটন পড়তে। মিমের ফিগার ভাল। তার প্যান্টও হইসে ওর কোমড়ে। আর লিটন ওরে শিখাইয়া দিল কখন কি করা লাগবে।

ওস্তাদ লিটনের সাথে তার বউ কে দেখে বললো,

- বাহহ, এক নাম্বার চুন্নি আমার এক নাম্বার চোরের লগে আইজ কামে নামবে। নিশ্চিত আইজকা আমার ব্যাবসা লালে-লাল হইয়া যাইবে।

লিটন- ওরে চুন্নি কইবেন না, সে আর চুরিচামারি করে না।

- হেহে, আগে তো করতো, আর আইজকা তোর লগে কি পিরিত করতে বাইর হইছে ক?

- আইজকাই ওর পরথম, আইজকাই ওর শেষ কাম হইবো এইডা।

- হ হ, যা, দেখা যাইবো! আমার হুন্ডা টার যেন কিছু না হয়...

- কিছু হইবেনা, আইজকা তো আর নুরুরে নিয়া যাইতেসি না।

- হ, শুনসি হ্যাতে কি করসে কাইল। ওরে ধইরা কয়েকটা পটেটুর প্যাকেট চিবাইতে দিসি, হালার ব্যাটা হালা দেখি ছাগলের লাহান ওইগুলা চাবাইলো, এইরাম বলদ দেখিনাই দুনিয়ায়।

- সে কই এহন?

- হইবে কোথাও, পটেটু খাইতেসে...

যাই হোক, মিম কে নিয়ে সে বের হল বাইকে করে। তাদের পরিচিত বিশ্বরোডের মোড়ে আসলো। এবার খোঁজার পালা।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হলে মিম নিজেই লিটনকে একটা বাস দেখালো। যে বাসের জানালার পাশে একটা লোক বসে মোবাইলে কথা বলছে।

লিটন বললো "আরেহ জানালা বন্ধ করি রাখসে। এইটা টানা যাইবেনা।"

মিম- টানা যাইবে,

- হ তুই আমার বাল জানোস, কেমনে টানবি তুই?

- চুরিচামারির লাইনে তুমার থেইকা আমি বেশি দিন ছিলাম, আমি জানি কেমনে ওই ব্যাটার কাছ থেইকা ফুন ডা টানা যাবি।

- চুরিচামারির লাইনে ছিলি, কিন্তু "টানা-পার্টির" লাইনে তো আর ছিলিনা। এই কাম অত সহজ না।

- হইয়া যাক বাজি? যদি ওই ফুন আমি নিবার পারি, ফুন ডা আমার, ওস্তাদ রে দিবানা। রাজি?

- যেইডা পারবিনা ওইডা নিয়া বাজি ধরিস না কইলাম!

- আমি কইছি তো পারমু!

- ঠিকাছে, না পারলে?

- কুরান শিখতে যামু ছখিনা বুর কাছে।

- সত্যি? কসম?

- কসম।

- ঠিক আছে লে। দেহি তোর চুন্নিগিড়ি আইজ কেমুন কামে দেয়।

লিটনের বিশ্বাস আছে যে ওই দশাসই লোকের কাছ থেকে ফোন টা টান দেয়া অসম্ভব হবে। একে তো জানালা বন্ধ, তারপর ফোন রে মনে হচ্ছে নিজের বউ ভেবে চেপে ধরে আছে।

বাস চলছে...তারাও পেছন পেছন যাচ্ছে। কিছুদূর আসার পরে মিম বলল, "ওই ব্যাটার জানালার পাশে নাও হুন্ডা!"

সে পাশে নিলো, কিন্তু জানালা বন্ধ, লোকটা তখনও ফোনে কথা বলেই যাচ্ছে।

বাসের পাশে লিটন এখন বাইক চালাচ্ছে, মাঝে মাঝে গাড়ি আসলে তাকে পেছনে চলে আসতে হচ্ছে সাইড দেয়ার জন্য।

মিম এবার বললো," হুফফ হইতেছেনা এমনে, তুমি এক বারে কাছে নাও লোকটার"

- হ মরার লাইগা?

- আমি কইছি তুমি নাও!

বউ এর হুকুম। না নিয়ে পারলো না সে। নিলো পাশে। বুঝতেছেনা কেমনে মিম বন্ধ জানালার এপাশ থেকে ফোন টা টান দিবে।

কিছুক্ষণ পর তাকে অবাক করে দিয়ে দেখে যে লোকটা জানালা খুলছে!

আরো কিছুক্ষণ পর তাকে অবাকের সাগরে ভাসিয়ে দেখলো লোকটা জানালার বাইরে দিয়ে হাত বের করে ফোন পাতালি করে ধরে রাখছে তাদের উপর। মনে হচ্ছে তাদের হয় ভিডিও করছে না হয় ছবি তুলছে।

একটু পরে সে বুঝলো যে লোকটা তাদের না, শুধু মিমের দিকে তাক করে ছবি তুলছে। এবার সন্দেহ হওয়ায় ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছনের দিকে তাকালো লিটন।

যা দেখলো তাতে মেজাজ গরম হয়ে গেলো...মিম ওর ওড়না তুলে গলায় পেঁচিয়ে রেখেছে। আর লুচ্চা লোকটা এসবেরই ছবি তুলছে।

সে কিছু বলতে যাবে মিম কে আর ওমনি সে ছোঁ মেরে ফোন টা কেড়ে নিলো লোকটার কাছ থেকে। লোকটার সাথে সাথে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল লিটনও, মিমের এমন তড়িৎগতি দেখে।

সে জোরে জোরে বলছে, "হুন্ডা ঘুড়াও, হুন্ডা ঘুড়াও..."

লিটনেরও মনে হলো সে তার চেতনা ফিরে পেল। বুঝতে পারলো যে মিম এসব করছেই ফোন জানালা খুলে লোকটার হাত থেকে নেয়ার জন্য। দ্রুত ব্রেক কষে উলটা দিকে ছুট দিলো সে বাইক।

কিন্তু ওদিকে ওই লোকটা বাসও থামিয়েছে। একটু পর মিম জানালো, লোকটা নাকি একটা সিএনজি তে উঠে তাদের পেছন নিয়েছে।

এরকম কখনো হয়নি। ভয় পেল লিটন মনে মনে। যত দ্রুত পারলো বাইক ছুটালো, কিন্তু মাহিন্দ্রা সিএনজি টা মনে হচ্ছে দ্রুতই তাদের দিকে ধেয়ে আসছে...

**

মোড়ে এসে পৌছাল তারা। সৌভাগ্য বশত নুরুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। দ্রুত লিটন ওর কাছে গিয়ে বললো, "হুন্ডা নিয়া গিয়া ওস্তাদ রে দিয়া আয়"

- টানতে পাইরছেন কিছু?

- পারছি, পারছি...তুই জলদি যা...

- তাইলে আমারে একটা পটেটু কিইনা দেন...

- বলদের বাচ্চা পরে দিমুনি, কত পটেটু চাস তুই দিমু, এহন জলদি বাইক ডা দিয়া আয় লক্ষ্মী ভাই আমার...

বাইক টা এক্স-এল। তাই সহজেই চিনে ফেলার ভয় ছিল। মিম কে বললো সে মোড়ে থেমে থাকা কোন বাসে উঠে পরতে দ্রুত। যাতে লোকটা মোড়ে নেমে তাদের হদিস না পায়।

মিম একটা বাসে উঠে পরলো, লিটন দূর থেকে মাহিন্দ্রাটা দেখতে পেল। আর দেরী না করে বাসে উঠে পরলো সেও। বাস টা ফাঁকাই ছিল, গিয়ে মিমের পাশের ছিটে বসে পরলো।

এবং তাদের সৌভাগ্য, প্রায় সাথে সাথেই বাস টা ছেড়ে দিলো।

মিম জানালা খুলে মাথা বের করে পেছন দিকে তাকিয়ে দেখলো। লিটনের মুখের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে বললো "নাই, ব্যাটা বুঝতেই পারেনাই আমরা বাসে উঠসি...হিহিহি"

লিটন বুঝেনা এমন সময়ে একটা মানুষ কেমনে হাসতে পারে... সে বলেই চলছে..

- আহা...এই ফুন ডা এখন আমার...এইডার ঝিলিক বাত্তিও আছে দেখতাছি... খানকি জরিনা ওর ফোনের ঝিলিক বাত্তি দিয়া রাইতে ছবি তুইলা আমার সামনে ঢঙ করে...এইবার আমিও আমার ফুনের ঝিলিক বাত্তি দিয়া ওর চোখ আন্ধার কইরা দিমু...

মিম ব্যাস্ত হয়ে পরলো ফোন খুলে সিম পাল্টানোর কাজে। আর এদিকে কন্ডাক্টর এসে ভাড়া চাইলো লিটনের কাছে।

কন্ডাক্টর কে দেখে কিছুটা সন্দেহ লাগলো তার কাছে। বললো,

- অন্য সব বাসের কন্ডাক্টর গো হাতে ট্যাকা থাকে, আপনার হাতে নাই ক্যা? আপনে বাসের কন্ডাক্টর তো?

- ভাই, আমি অন্য বাসের কন্ডাক্টর গো লাহান অশিক্ষিত মূর্খ না, আমি স্মার্ট, ক্লাস টেন ফেইল করা শিক্ষিত আমি, আমি মানিব্যাগে আমার সব ভাড়ার ট্যাকা রাখি, এই যে দেহেন।

লোকটা লিটনকে তার মানিব্যাগ বের করে দেখালো যে সেখানে সব টাকা রাখে। একটু অবাকই হলো সে এমন স্মার্ট কন্ডাক্টর দেখে। ওদিকে মিম সিম পাল্টিয়ে কাকে জানি ফোনও দিছে, মনে হচ্ছে জরিনারে দিছে এইটা জানাইতে যে সেও আজকে ফোন পাইসে যেইটায় ঝিলিক বাত্তি আছে।

কন্ডাক্টর কে ভাড়া দিয়ে দিল সে। মনে মনে ভাবছে সেই দশাসই লোকের কথা...

কিন্তু একটু পরেই পুরা বাস কাঁপিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠলো মিম...চমকে গিয়ে লাফিয়ে উঠলো লিটন।

- কি হইসে বউ? কি হইলো হঠাৎ?

- আমার ফুন...আমার ঝিলিক বাত্তিওয়ালা ফুন...

- কই ফোন? কি হইসে?

- ওগো...আমার হাত থেইকা টান দিয়া নিয়া গেলো এহন কুত্তার বাচ্চারা...ও আম্মাগো...আমার কি সর্বনাশ হইলো গো...

ব্যাপার টা বুঝতে সময় লাগলো না লিটনের...তারই মত অন্য কোন টানা-পার্টি মিমের হাত থেকে ফোন টা টান দিয়ে নিয়ে গেছে খোলা জানালা দিয়ে।

সে দ্রুত উঠে বললো, "ড্রাইভার... বাস থামা...এক্ষুনি..."

**

রাস্তার পাশে লিটন আর মিম বসে আছে, টানা-পার্টি উধাও, কোথাও দেখা যাচ্ছেনা। মাথা নিচু করে সে ভাবছে মিমের মনের অবস্থা। কত আশা ছিল ঝিলিক বাত্তি মেরে জরিনার চোখ ঝালাপালা করে দিবে। বেচারী...

মিম ফুৎ ফুৎ করে কাঁদসে এখনো...

সে বললো,

- কাঁদিস না বউ, ভবের মাল ভবেই যায়...আমি আর এই কাম করুম না। সৎ হইয়া যামু...

- সত্যি কইলা.??

- হ রে হাছাই কইলাম...এই যে তুই কষ্ট পাইলি..আমরা যাগো মাল টানি, তাগোও এইভাবে কষ্ট লাগে...নাহহ.. আর করুম না এই কাম...

মিম কান্না থামিয়ে দিয়েছে এতক্ষণে...বললো,

- আমার আর দুঃখ লাগতিসে না গো, আমার খুশি লাগতিসে এখন। চলো আমিও চুরিচামারি করুম না, তুমিও এগুলান করবানা। দরকার হইলে মাটি কাইটা মুরগী খাওয়াইবা আমারে...

- হ রে বউ, তয় এইডা ভাইবা খারাপ লাগতিসে তোরে কোন ফুন দিতে পারলাম না আমি, ভাবসিলাম ওই ফুনডা তোরে দিতাম...

মিম এবার লিটনের কাছ ঘেষে বললো, "তুমি চাইলে এহনো কিন্তু আমারে একটা ফুন দিতে পারো!"

অবাক হয়ে সে বললো, "কেমনে রে?"

মিম চোখ টিপে বললো, "এমনে!"

লিটন এবার যারপরনাই টাশকি খেয়ে দেখলো মিমের হাতে একটা পেট মোটা মানিব্যাগ!

- মানিব্যাগ? কই পাইলি তুই...

- পকেট মারছি...পুরানা অভ্যাস ছাড়তে পারিনাই...

- কিহ কইলি? কার পকেট মারছিস?

- কার আবার? ওই কন্ডাক্টরের!

লিটন হা করে প্রায় এক মিনিট মিমের মুখের দিকে তাকিয়ে নিশ্চুপ হয়ে থাকলো...ঢোক গিলে শেষ যে কথাটা বের হলো তার তা হলো,

"আমার আর জান্নাতে যাওয়া হইলো না রে..."

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.