নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যখন সবাই ভাবত পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র তখন বিজ্ঞান বিপ্লবী জিওর্দানো ব্রুনো সূর্যকে সৌরজগতের কেন্দ্র বলেন। এজন্য তাকে ১৬০০ সালে আগুণে পুড়িয়ে মারা হয়। আজ ব্রুনোর মৃত্যুবার্ষিকীতে আরেকজন বিজ্ঞান বিপ্লবী ব্লগার অভিজিৎ রায় এর হত্যাকারীদের শাস্তির খবর বাংলাদেশের সব পত্রিকার হেডলাইন। What a match !
দেশের জন্য, ভাষার জন্য কত মানুষই না জীবন দিয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানের জন্য কয়জন মানুষ জীবন দেয় ? একজন মানুষ দিয়েছিল। তাঁর নাম জিওর্দানো ব্রুনো এবং তিনি একজন জন্মগত বিপ্লবী।
1600 সালের এই দিনে তিনি বিজ্ঞানের জন্য শহীদ হয়েছিলেন। তিনি ইটালীর নেপল শহরের একজন তরুণ সন্ন্যাসী ছিলেন। চার্চ কর্তৃক নিষিদ্ধ করা বইগুলো পড়ার সাহস করেছিলেন। ব্রুনোর সময় থেকে 1500 বছর আগের ঐ বইয়ের লেখক পাঠককে কল্পনা করতে বলেছিলেন, ''ধরুন আপনি মহাবিশ্বের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন। এখন আপনি যদি একটি তীর ছুড়েন তবে দুটি সম্ভাবনা সামনে আসে হয় তীরটি যেতেই থাকবে অথবা কোন দেয়ালে আঘাত করবে। যদি কোন দেয়ালে ঠেকে যায় তবে নিশ্চয়ই সেটা আপনার কল্পিত মহাবিশ্বের প্রান্ত। এখন ঐ দেয়ালের উপর উঠে যদি আবার তীর ছুড়েন তবে সেই দুটা সম্ভাবনাই সামনে আসে। আবারও হয়ত কোন দেয়ালে তীরটি আঘাত করবে এবং সেই দেয়ালের উপর উঠে আপনি আরেকটা তীর ছুড়তে পারবেন। অর্থাৎ সোজাকথায় মহাবিশ্ব অসীম।''
এ কথা শুনে ব্রুনোর মনে হল মহাবিশ্ব যদি অসীম হয় তবে মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর কিভাবে সসীম হতে পারে ? তখনকার দিনে ধারণা ছিল ঈশ্বরও সসীম, ঈশ্বরের সৃষ্টিও সসীম ( বাইবেলের ঈশ্বর আর কি )। ব্রুনোর নিষিদ্ধ বই পড়া টের পেয়ে চার্চ তাঁকে বের করে দিয়েছিল। ত্রিশ বছর বয়সে ব্রুনো সপ্নে দেখলেন যে, তিনি একটা বিশাল চাদরে ঢাকা জগতে জেগে উঠেছেন। সূর্য, গ্রহরা, নক্ষত্র সব ঐ চাদরে ঝুলানো। ... ব্রুনোর সময় এটাই ছিল ব্রহ্মান্ড। কিন্তু ব্রুনো সাহস করে চাদর উঠিয়ে বাইরে আসলেন। এসে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। তিনি দেখলেন, অন্য তারাগুলো স্রেফ সূর্যমাত্র এবং আমাদের সূর্যও একটা তারা। ঐসব সূর্যের চারপাশেও পৃথিবীর মত গ্রহ আছে, হয়ত জীবনও আছে। এই অনুভূতি অনেকটা প্রেমে পড়ার মত। প্রেমে পড়লে যেমন মানুষ পুরো দুনিয়াকে জানিয়ে বেড়াতে চায়। ঠিক সেরকম ব্রুনোও তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি নিজের মধ্যে চেপে রাখতে পারলেন না। অসীম সৃষ্টি এবং অসীম স্রষ্টার দর্শন ইউরোপে প্রচার করে বেড়াতে লাগলেন। কিন্তু তখন বাক স্বাধীনতা ও চিন্তার স্বাধীনতা ইউরোপে ছিল না। এখন যেমন বাংলাদেশে নাই। সরকার 57 ধারা জারি করে রাখছে, ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু বলতে দেয় না। হ্যা, বাক স্বাধীনতার সীমা আছে। প্রমাণ ছাড়া দোষারোপ করলে ( অবমাননা করলে ) বাক স্বাধীনতার সীমা লঙ্ঘন হয় কিন্তু প্রমাণসহ দোষারোপ করলে ( সমালোচনা করলে ) বাক স্বাধীনতার সীমা লঙ্ঘন হয় না। আমরা নাস্তিক ব্লগাররা ধর্মের সমালোচনাই করি, অবমাননা নয়। যাকগে, ব্রুনো অক্সফোর্ডে একটা বক্তৃতা দেবার সুযোগ পেলেন এবং সেখানে নিজের মতামত খুলে প্রকাশ করলেন। বললেন, ''পৃথিবী ছাড়াও আরো অনেক দুনিয়া আছে। সেখানে জীবন আছে এবং তথাকথিত সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের চেয়ে তারা কোন অংশে কম সেরা নয়। প্রাচীনত্ব. ঐতিহ্য ত্যাগ করুন। কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করতে শিখুন, ঈশ্বর অনেক বড়, আপনাদের ধারণার চেয়েও বিশাল .....।'' এসব কথা শুনে ওখানকার লোকেরা তাকে ধাক্কা মেরে বিদায় করে দিল। স্বদেশে ফিরে এসে ব্রুনো চিন্তা রক্ষীদের খপ্পড়ে পড়ল। যেমন, আজকাল পুলিশরা ধর্মানুভূতি আঘাতের অভিযোগে নাস্তিক ব্লগারদের ধরে। সেরকম আর কি। মানুষের অনুভূতির মূল্য আছে, কিন্তু কেউ যদি প্রমাণ করে দেয় যে আপনার কোন আপনজন বা ধর্ম প্রবর্তক আসলে খুনী বা ধর্ষক তখন অাপনি সত্য জানতে না চেয়ে, চোখ কান বন্ধ রেখে, অনুভূতির দোহাই দিয়ে তাকে জেলে পাঠাতে পারেন না। আপনাকে সাহস করতে হবে, সত্যটা জানার। মনে সন্দেহ আসতে দিন, হতেও তো পারে আপনার ধর্মসহ পৃথিবীর সব ধর্ম মিথ্যা। হতেও তো পারে ধর্মগ্রন্থগুলো মানুষের লেখা। হতেও তো পারে .......। সামান্য একটু সন্দেহ অানুন, বিশ্বাসে একটু ফাটল ধরান। কাজ হয়ে যাবে। ব্রুনোকে আট বছর কারাবন্দী করে রাখা হয়েছিল। আটবছর পর তাকে নিজের দর্শন ফিরিয়ে নিতে বলা হলে তিনি অস্বীকার করেন। বিজ্ঞানীরা খুব একটা সাহসী হয় না কিন্তু ব্রুনো বিজ্ঞানী ছিলেন না বলেই এত সাহসী ছিলেন। ব্রহ্মান্ড সমন্ধে তাঁর দর্শন, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি absolutely সঠিক কিন্তু তিনি তা প্রমাণ করতে পারেননি, এজন্যই তিনি বিজ্ঞানী নন। পরে গিয়ে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও প্রমাণ করেছিলেন। ব্রুনোর মত মানুষদের আমরা বলি বিজ্ঞান বিপ্লবী, বংরা বিজ্ঞানের concept কে ঘিরে আন্দোলন এবং বিপ্লব গড়ে তোলেন ( যেমন - বাংলাদেশের হুমায়ূন আজাদ, অভিজিৎ রায় )। ব্রুনো বেশী সাহস দেখিয়েছেন বলেই ব্রুনোকে সেন্ট পিটার্স স্কয়ার চত্বরে আগুণে পুড়িয়ে মারা হয়। তাঁর মৃত্যুর সময় সবাই উল্লাসে ফেটে পড়েছিল। কি আনন্দ ! ধর্মদ্রোহী মরছে। তখন একটা মানুষও তাঁর জন্য চোখের জল ফেলেনি, কিন্তু এখন আমরা সবাই ফেলি। আমরা যারা Physics এর শিক্ষক - শিক্ষার্থী, বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ ; ব্রুনোর কাহিনী শুনলে ব্রুনোর দুঃখে এবং ধর্মের উপর রাগে আমাদের রক্ত টগবগ করে ফুটতে শুরু করে। আজকের দিনে বিপ্লবী ও সাহসী জিওর্দানো ব্রুনোর জন্য ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা।
কাকতালীয়ভাবে আজকের দিনে ব্রুনোর উত্তরসূরী অভিজিৎ রায়ের হত্যাকারীদের বিচারের খবর বাংলাদেশের সব পত্রিকার হেডলাইন হয়েছে। বাকস্বাধীনতাকে উৎসাহ দেবার জন্য, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্যই ওসব জঙ্গি শাস্তি হওয়াটা খুব দরকার ছিল। বিজ্ঞানের আলোয় দূর হবেই হবে ধর্মরূপী অন্ধকার।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:৫৯
ফড়িং-অনু বলেছেন: সুন্দর লিখা।